আব্বার সাথে শেষ দেখা হলনাঃ
আব্বার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে ১ তারিখে। আব্বা আর মা আমার জন্য মাগুরা বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন, কারন ঐ দিন আমি ঢাকায় আসছি। পরেরদিন আমি বাংককে চলে আসব। আমি শ্বশুরবাড়ি আড়পাড়া থেকে উঠেছি তাই উনারা মেয়েকে দেখার জন্য বাস স্ট্যান্ডে বসে আছেন।কারন বাস ৫ মিনিট বাস স্ট্যান্ডে থামবে। তখন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, বাস থামার সাথে সাথে আমি আবীরকে ( আমার বড় ছেলে) নিয়ে নীচে নেমে এলাম। আম্মা আর আমি কাঁদতে লাগলাম। । আব্বা সান্ত্বনা দিতে লাগলেন। হয়ত তার বুকের ভেতর ভেঙ্গে যাচ্ছিল কিন্তু আমাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ঐ দেখাই আব্বা আর মায়ের সাথে আমার শেষ দেখা।
এর মাঝেই ২০০৯ সালে মা মারা যান। এরপরেই আব্বা যেন ভেঙ্গে পড়েন মনে মনে কিন্তু কাউকে বুঝতে দেন না। ২০১০ সালের জুন মাসের ১০ তারিখের দিকে বড় ভাই ফোন করে বলল আব্বার শরীরটা ভাল যাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে হার্ট এর সমস্যাটা বেড়েছে, আমি বাস্ত হয়ে গেলাম বাড়ী যাবার জন্য। এরই মাঝে বড় আপাকে ফোন করে বললাম তুমি যাও আব্বার কাছে , আমার শাশুড়িকে পাঠালাম, মেজভাই না বলেই কক্সবাজার থেকে রওনা দিয়েছে ( কারন বললে আব্বা বলতেন অত কষ্ট করে আসার দরকার নেই আমি ভালআছি।) রফিকুল ওর বউ নিয়ে মাগুরা হাজির হল। আব্বাকে দেখান হল তাঁরই ছাত্র আমাদের প্রাইমারীর বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান মিলুকে।মিলু সবকিচু চেক করে বলল তেমন কোন সমস্যা নেই। বলল স্যার একটু ভাল ফিল করলে যেন ঢাকায় নিয়ে চেক আপ করাই। আমি ফোন দিলাম, সবার সাথে কথা বললাম, সবাই বলল কোন সমস্যা নেই, আব্বা ভাল আছে। যার যার কর্মস্থলে সেই সেই ফিরে গেল।
আব্বার সাথে শেষ কথা বলি জুন এর ২২তারিখে। তারপর আমার কলিং কার্ড ফুরিয়ে যায়। ২৬ তারিখ বিকাল থেকে আমার কেমন যেন অস্থির লাগছে, অফিসে কিন্তু কাজ করতে পারছিনা,বসে বসে ভাবছি অফিস থেকে বের হয়েই কার্ড কিনে আব্বাকে ফোন দিব। ভাবতে ভাবতে নীচে নামলাম। হঠাত দেখি প্রাইভেট কল, ভাবলাম আব্বা ফোন দিয়েছেন, ধরলাম ফোন দিয়েছে আমার বন্ধু মামুন। কেমন আছি শোনার পর বলল তুমি বাড়ী আসতে চাইলে আসলে না কেন??? আমি বললাম আব্বা ত ভাল আছে তাই গেলাম না। বলল তুমি তোমার মন শক্ত কর, তোমার আব্বা বিকাল ৫টায় মারা গেছেন, ঘুমের ভেতরে স্ট্রোক করেছেন,হাস্পায়ালে নেবার পথে মারা গেছেন।। । আমি তো শুনে কি বলব, কি বলেছিলাম, জানিনা লাইন কেটে গেল!!!! আমার অফিস থেকে নড়ার কোন শক্তি ছিলনা। মনটাকে শক্ত করে ওই সময় দু এক টা ট্র্যাভেল এজেন্টে ফোন দিলাম ফ্লাইট এর ব্যাপারে , তখন বাজে সন্ধ্যা ৬টা , রাত ৮ টায় আছে বাংলাদেশ বিমান এর ফ্লাইট , তাতো ধরা কোনমতেই সম্ভব না। ছেলের বাবা আবার ওইসময় ফুকেটে। আমার দেবর ছিল বাংককে, দেখি ও চলে এসেছে আমার দুই ছেলে নিয়ে। বাসায় গেলাম কল দিলাম বাংলাদেশে, আমরা আট ভাই বোনচাকরি সুত্রে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে। কার সাথে কথা বলব, কেউ কথা বলতে পারছেনা, শুধু কাদছে, কারো কথা বলার শক্তি নেই, আমাদের বাবা যে আমাদের না বলে ঘুমের ভেতরেই চলে গেল। সবাই তখন মাগুরার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে । পরের দিন ২৭ জুন বি এন পির এই সরকারের আমলে প্রথম হরতাল। তাই সবাইকে রাতের ভেতর পোঁছাতে হবে। সবাই রাতের ভেতর পৌছাতে পারবে শুধু মেজভাই ছাড়া।কক্সবাজার থেকে ও ওর পরিবার নিয়ে রওনা দিয়েছে, সকালে ঢাকায় পৌঁছাবে।যেহেতু হরতাল তাই বন্ধুকে বলে একটা এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রেখেছে। শুদু এই হতভাগীআমি বসে আছি এই দূর পরবাসে, আমার আব্বার মুখটা মনে করার চেষ্টা করছি। মনে করছি আব্বার সাথে শেষ কি কথা বলেছিলাম, আর ও কত কথা মনে করছি আর কাদছি । আর কোনদিন আমি সেই প্রিয় মুখ খানা দেখতে পারবনা।
সারারাত কিভাবে কাটালাম জানিনা। ছোট ভাইটার সাথে সারাক্ষণ কথা বলছি। ও আব্বার কাছেই বসে আছে সারারাত। এর মাঝে সবাই পৌঁছে গেছে যে যেখানে ছিল, শুধু মেজ ভাই ছাড়া। ও আসল সকাল ১১ টায়। আব্বার জানাযা হল ২৭ তারিখে জোহরের নামাজের পর। চির নিদ্রায় শায়িত হল আমার মায়ের পাশে। আমি সব খবর পাচ্ছি ফোনে । মনটাকে শক্ত করছি আর আব্বার জন্য দোআ করছি।
পরদিন ২৮ তারিখে সকালে অফিসে এসেই ফোন দিলাম এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল এ টিকেট এর ব্যাপারে। পেয়ে গেলাম ওই দিনের প্রথম ফ্লাইট, জি এম জি এয়ারলাইন্স এ , ৩টায় ফ্লাইট, টিকেট কেটে ফেললাম দুই ছেলে আর আমার জন্য।কোনমতে একটা ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিলাম। অফিস এর গাড়ি এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিল। চেক ইন করেবসে আছি। বড় ছেলে বলছে আম্মু তুমি তো আর কাঁদবে না, কারন তুমি বাংলাদেশ এ যাচ্ছ,ওকে আমি কি ভাবে বুঝাব আমি কি হারালাম, যা আমি আর কোনদিন ফিরে পাবনা। ছোটটা কিছুই বুঝতে পারছেনা , ওর বয়স মাত্র দুই, এই প্রথম ওর বাংলাদেশে যাওয়া। প্লেন নির্দিষ্ট সময়েই ছাড়ল। আমি যখন বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে তখন ৫ টা বাজে। অন্যবার কতজন আসে নিতে এবার কেউ নেই। সবকিচু যেন কেমন ফাঁকাফাঁকা লাগছিল। আমাদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিলেন আমার মেজ জা এর চাচাত দুই ভাই।আমার শ্বশুর ওদেরকে ফোন করে দিয়েছে আসার জন্য। ওদের ভেতরে একজনকে সাথে নিয়ে সোজা গাবতলিতে চলে গেলাম , টিকেট কেটে গাড়িতে বসলাম, ভাবছি কখন বাড়িতে যাব। কতকিছু ভাবছি আমি, সময় যেন ফুরাচ্ছেনা। আমাদের বাড়ি মাগুরার পারনান্দুয়ালি গ্রামের মেইন রাস্তার পাশে, আমি যখন বাস থেকে নামলাম রাত ১২ টা বাজে, আমার সব ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে, আমি নামার সাথে সাথেই সবাই জড়াজড়ি করে কাঁদতে লাগলাম ,এই প্রথম আমি বাড়িতে গেলাম,যে বাড়িতে আমার বাবা মা নেই। রাতে বাবার ঘরেই আমরা সবাই রাত কাটালাম।
সকালে উঠে সবাই মিলে আব্বা আর মাকে দেখতে গেলাম, যেখানে আব্বা আর মাপাশাপাশি শুয়ে আছেন। দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদছি আমরা আর আব্বা ও মার সাথে কথা বলছি। । আব্বা হয়ত বললেন মা তোমরা সবাই এসেছ, কে কি খাবে বল, আমি বাজার করে নিয়ে আসি। আজ আমার সবচেয়ে সুখের দিন। তোমাদের সাথে অনেক কথা আছে মা। আব্বা মনেহয় বললেন কিন্তু আমরা শুনতে পেলাম না। আব্বাকি আমাদের দেখতে পেলেন?
ফেরার পথে আব্বার নিজ হাতে গড়া বসুন্ধরা বিদ্যা নিকেতন স্কুল এ গেলাম।পটিয়া পি ,টি, আই (প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ) থেকে ১৯৯৯ সালে অবসর নেবার পর আব্বা নিজহাতে এই স্কুল গড়েছেন। সারাদিন এই স্কুল নিয়েই বাস্ত থাকতেন। স্কুল টা গোরস্থানের পথেই। গেটে ঢুকতেই লক্ষ্মী দিদির সাথে দেখা, ১০ বছর ধরে উনি এখানে কাজ করছেনঝাড়ুদার পদে। আমাদেরকে দেখেই জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন। আমরা অফিসে গিয়ে বসলাম, সব জায়গায় আব্বার সৃতি।আব্বার একটা ছবি ( বাধাই করা) টানান আছে প্রধান শিক্ষিকার রুমে। আমার বড় আপা বললেন আপা ছবি নামিয়ে রাখলে ভাল হত না??? । আপা বললেন না শামীমা ( আমার বড় আপা), স্যার এর ছবি ওভাবেই থাক , আমাদের মনে হবে স্যার আমাদের সাথে আছেন সব সময়, কোন ভুল হলে দিক নির্দেশনা দেবেন, যেভাবে উনিদিতেন। আমরা উনাকে হারাতে চায়না। মনে মনে ভাবলাম থাক আমার আব্বার ছবি ওই দেয়ালে,যতদিন এই স্কুল থাকবে আমার আব্বা ও ততদিন সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন।
“আজ তিন বছর হল বাবা তোমাকে হারিয়েছি,কিন্তু একবার ও মনে হয়না তুমি নেই, মনে হয় সব সময় তুমি আমাদের সাথে আছ, আমাদের আত্তার সাথে মিশে আছো, তোমাদের ছাড়া একটু ও ভাল নেই বাবা। কেমন করে ভাল থাকি বল। অনেক কস্ট দিয়েছি, ক্ষমা করো আমাদের, আমরাই তো বাবা তোমাদের ছেলে মেয়ে আমাদের দেওয়া কস্ট মনে রেখনা। দোয়া করি সব সময় আল্লাহ যেন তোমাদের বেহেশত নসীব করেন। “
এর মাঝেই ২০০৯ সালে মা মারা যান। এরপরেই আব্বা যেন ভেঙ্গে পড়েন মনে মনে কিন্তু কাউকে বুঝতে দেন না। ২০১০ সালের জুন মাসের ১০ তারিখের দিকে বড় ভাই ফোন করে বলল আব্বার শরীরটা ভাল যাচ্ছেনা। মনে হচ্ছে হার্ট এর সমস্যাটা বেড়েছে, আমি বাস্ত হয়ে গেলাম বাড়ী যাবার জন্য। এরই মাঝে বড় আপাকে ফোন করে বললাম তুমি যাও আব্বার কাছে , আমার শাশুড়িকে পাঠালাম, মেজভাই না বলেই কক্সবাজার থেকে রওনা দিয়েছে ( কারন বললে আব্বা বলতেন অত কষ্ট করে আসার দরকার নেই আমি ভালআছি।) রফিকুল ওর বউ নিয়ে মাগুরা হাজির হল। আব্বাকে দেখান হল তাঁরই ছাত্র আমাদের প্রাইমারীর বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান মিলুকে।মিলু সবকিচু চেক করে বলল তেমন কোন সমস্যা নেই। বলল স্যার একটু ভাল ফিল করলে যেন ঢাকায় নিয়ে চেক আপ করাই। আমি ফোন দিলাম, সবার সাথে কথা বললাম, সবাই বলল কোন সমস্যা নেই, আব্বা ভাল আছে। যার যার কর্মস্থলে সেই সেই ফিরে গেল।
আব্বার সাথে শেষ কথা বলি জুন এর ২২তারিখে। তারপর আমার কলিং কার্ড ফুরিয়ে যায়। ২৬ তারিখ বিকাল থেকে আমার কেমন যেন অস্থির লাগছে, অফিসে কিন্তু কাজ করতে পারছিনা,বসে বসে ভাবছি অফিস থেকে বের হয়েই কার্ড কিনে আব্বাকে ফোন দিব। ভাবতে ভাবতে নীচে নামলাম। হঠাত দেখি প্রাইভেট কল, ভাবলাম আব্বা ফোন দিয়েছেন, ধরলাম ফোন দিয়েছে আমার বন্ধু মামুন। কেমন আছি শোনার পর বলল তুমি বাড়ী আসতে চাইলে আসলে না কেন??? আমি বললাম আব্বা ত ভাল আছে তাই গেলাম না। বলল তুমি তোমার মন শক্ত কর, তোমার আব্বা বিকাল ৫টায় মারা গেছেন, ঘুমের ভেতরে স্ট্রোক করেছেন,হাস্পায়ালে নেবার পথে মারা গেছেন।। । আমি তো শুনে কি বলব, কি বলেছিলাম, জানিনা লাইন কেটে গেল!!!! আমার অফিস থেকে নড়ার কোন শক্তি ছিলনা। মনটাকে শক্ত করে ওই সময় দু এক টা ট্র্যাভেল এজেন্টে ফোন দিলাম ফ্লাইট এর ব্যাপারে , তখন বাজে সন্ধ্যা ৬টা , রাত ৮ টায় আছে বাংলাদেশ বিমান এর ফ্লাইট , তাতো ধরা কোনমতেই সম্ভব না। ছেলের বাবা আবার ওইসময় ফুকেটে। আমার দেবর ছিল বাংককে, দেখি ও চলে এসেছে আমার দুই ছেলে নিয়ে। বাসায় গেলাম কল দিলাম বাংলাদেশে, আমরা আট ভাই বোনচাকরি সুত্রে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে। কার সাথে কথা বলব, কেউ কথা বলতে পারছেনা, শুধু কাদছে, কারো কথা বলার শক্তি নেই, আমাদের বাবা যে আমাদের না বলে ঘুমের ভেতরেই চলে গেল। সবাই তখন মাগুরার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে । পরের দিন ২৭ জুন বি এন পির এই সরকারের আমলে প্রথম হরতাল। তাই সবাইকে রাতের ভেতর পোঁছাতে হবে। সবাই রাতের ভেতর পৌছাতে পারবে শুধু মেজভাই ছাড়া।কক্সবাজার থেকে ও ওর পরিবার নিয়ে রওনা দিয়েছে, সকালে ঢাকায় পৌঁছাবে।যেহেতু হরতাল তাই বন্ধুকে বলে একটা এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রেখেছে। শুদু এই হতভাগীআমি বসে আছি এই দূর পরবাসে, আমার আব্বার মুখটা মনে করার চেষ্টা করছি। মনে করছি আব্বার সাথে শেষ কি কথা বলেছিলাম, আর ও কত কথা মনে করছি আর কাদছি । আর কোনদিন আমি সেই প্রিয় মুখ খানা দেখতে পারবনা।
সারারাত কিভাবে কাটালাম জানিনা। ছোট ভাইটার সাথে সারাক্ষণ কথা বলছি। ও আব্বার কাছেই বসে আছে সারারাত। এর মাঝে সবাই পৌঁছে গেছে যে যেখানে ছিল, শুধু মেজ ভাই ছাড়া। ও আসল সকাল ১১ টায়। আব্বার জানাযা হল ২৭ তারিখে জোহরের নামাজের পর। চির নিদ্রায় শায়িত হল আমার মায়ের পাশে। আমি সব খবর পাচ্ছি ফোনে । মনটাকে শক্ত করছি আর আব্বার জন্য দোআ করছি।
পরদিন ২৮ তারিখে সকালে অফিসে এসেই ফোন দিলাম এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল এ টিকেট এর ব্যাপারে। পেয়ে গেলাম ওই দিনের প্রথম ফ্লাইট, জি এম জি এয়ারলাইন্স এ , ৩টায় ফ্লাইট, টিকেট কেটে ফেললাম দুই ছেলে আর আমার জন্য।কোনমতে একটা ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিলাম। অফিস এর গাড়ি এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিল। চেক ইন করেবসে আছি। বড় ছেলে বলছে আম্মু তুমি তো আর কাঁদবে না, কারন তুমি বাংলাদেশ এ যাচ্ছ,ওকে আমি কি ভাবে বুঝাব আমি কি হারালাম, যা আমি আর কোনদিন ফিরে পাবনা। ছোটটা কিছুই বুঝতে পারছেনা , ওর বয়স মাত্র দুই, এই প্রথম ওর বাংলাদেশে যাওয়া। প্লেন নির্দিষ্ট সময়েই ছাড়ল। আমি যখন বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে তখন ৫ টা বাজে। অন্যবার কতজন আসে নিতে এবার কেউ নেই। সবকিচু যেন কেমন ফাঁকাফাঁকা লাগছিল। আমাদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করছিলেন আমার মেজ জা এর চাচাত দুই ভাই।আমার শ্বশুর ওদেরকে ফোন করে দিয়েছে আসার জন্য। ওদের ভেতরে একজনকে সাথে নিয়ে সোজা গাবতলিতে চলে গেলাম , টিকেট কেটে গাড়িতে বসলাম, ভাবছি কখন বাড়িতে যাব। কতকিছু ভাবছি আমি, সময় যেন ফুরাচ্ছেনা। আমাদের বাড়ি মাগুরার পারনান্দুয়ালি গ্রামের মেইন রাস্তার পাশে, আমি যখন বাস থেকে নামলাম রাত ১২ টা বাজে, আমার সব ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে, আমি নামার সাথে সাথেই সবাই জড়াজড়ি করে কাঁদতে লাগলাম ,এই প্রথম আমি বাড়িতে গেলাম,যে বাড়িতে আমার বাবা মা নেই। রাতে বাবার ঘরেই আমরা সবাই রাত কাটালাম।
সকালে উঠে সবাই মিলে আব্বা আর মাকে দেখতে গেলাম, যেখানে আব্বা আর মাপাশাপাশি শুয়ে আছেন। দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদছি আমরা আর আব্বা ও মার সাথে কথা বলছি। । আব্বা হয়ত বললেন মা তোমরা সবাই এসেছ, কে কি খাবে বল, আমি বাজার করে নিয়ে আসি। আজ আমার সবচেয়ে সুখের দিন। তোমাদের সাথে অনেক কথা আছে মা। আব্বা মনেহয় বললেন কিন্তু আমরা শুনতে পেলাম না। আব্বাকি আমাদের দেখতে পেলেন?
ফেরার পথে আব্বার নিজ হাতে গড়া বসুন্ধরা বিদ্যা নিকেতন স্কুল এ গেলাম।পটিয়া পি ,টি, আই (প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ) থেকে ১৯৯৯ সালে অবসর নেবার পর আব্বা নিজহাতে এই স্কুল গড়েছেন। সারাদিন এই স্কুল নিয়েই বাস্ত থাকতেন। স্কুল টা গোরস্থানের পথেই। গেটে ঢুকতেই লক্ষ্মী দিদির সাথে দেখা, ১০ বছর ধরে উনি এখানে কাজ করছেনঝাড়ুদার পদে। আমাদেরকে দেখেই জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন। আমরা অফিসে গিয়ে বসলাম, সব জায়গায় আব্বার সৃতি।আব্বার একটা ছবি ( বাধাই করা) টানান আছে প্রধান শিক্ষিকার রুমে। আমার বড় আপা বললেন আপা ছবি নামিয়ে রাখলে ভাল হত না??? । আপা বললেন না শামীমা ( আমার বড় আপা), স্যার এর ছবি ওভাবেই থাক , আমাদের মনে হবে স্যার আমাদের সাথে আছেন সব সময়, কোন ভুল হলে দিক নির্দেশনা দেবেন, যেভাবে উনিদিতেন। আমরা উনাকে হারাতে চায়না। মনে মনে ভাবলাম থাক আমার আব্বার ছবি ওই দেয়ালে,যতদিন এই স্কুল থাকবে আমার আব্বা ও ততদিন সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন।
“আজ তিন বছর হল বাবা তোমাকে হারিয়েছি,কিন্তু একবার ও মনে হয়না তুমি নেই, মনে হয় সব সময় তুমি আমাদের সাথে আছ, আমাদের আত্তার সাথে মিশে আছো, তোমাদের ছাড়া একটু ও ভাল নেই বাবা। কেমন করে ভাল থাকি বল। অনেক কস্ট দিয়েছি, ক্ষমা করো আমাদের, আমরাই তো বাবা তোমাদের ছেলে মেয়ে আমাদের দেওয়া কস্ট মনে রেখনা। দোয়া করি সব সময় আল্লাহ যেন তোমাদের বেহেশত নসীব করেন। “
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ইঞ্জিনিয়ার সজীব ইমাম ১১/১১/২০১৪
-
আফিয়া খাতুন মলি ২১/১১/২০১৩চোখে পানি এসে গেল। ভালো লিখেছ।
-
প্রবাসী পাঠক ২০/১১/২০১৩আমিও আমার বাবাকে হারিয়েছি ২০০২ সালে। দীর্ঘ এগারটি বছর পেরিয়ে গেছে। তবুও এখনও কোন সমস্যায় পরলে মনে হয় বাবা যেন আমার পাশে দাড়িয়ে আমার সাহস যোগাচ্ছে। মা বেঁচে আছেন। দেশের বাইরে থাকার কারণে মাকেও দেখিনা প্রায় দু বছর হল। প্রতিদিনই ফোনে কথা বলার চেষ্টা করি।
আমাদের যাদের মা বাবা জীবিত নেই , তাদের সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে বেহেশত নসীব করুন। -
আহমাদ সাজিদ ২০/১১/২০১৩চমত্কার লেখা। সমবেদনার সাথে বলছি_ চোখে পানি এনে দিল এই লেখাটা। ভাল থাকবেন।
-
জহির রহমান ২০/১১/২০১৩আই মিস ইউ বাবা
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু, রহমান খোদা! আয়;
ভেস্ত নসিব করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়!