www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আপনার শিশু কি স্কুল বা বাড়িতে বুলিং এর শিকার হচ্ছে


আবীর (আমার বড় ছেলে) যখন ক্লাস ৪ এ পড়ে, প্রায়ই দেখি ও বাসায় এসে বলে আম্মু আমি আর স্কুলে যাবনা, সবাই আমাকে বলে আমি ভাইরাস। কারন আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। আর ওরা আমার নাম আবর বলে ডাকে। আমি তো পড়লাম মহাবিপদে। ওর সাথে আলাপ করলাম ব্যাপারটা নিয়ে, জানার চেষ্টা করলাম, আসলে কি ঘটছে স্কুলে। বলল আম্মু ওর ক্লাস এ একটা ছেলে আছে,যার কথা অন্যরা  শোনে, অনেকটা লিডার টাইপের। সেই ছেলে লিড দেয়। আর ও বয়সে সবার ছোট। তাই ওকে নানাভাবে বুলিং করে। আমি বললাম টিচার এর সাথে আলাপ করি।করতে দেবেনা, বলে তুমি যদি টিচার কে বল তাহলে টিচার যদি ওদেরকে কিছু বলে, তাহলে ওরা আমার সাথে আর মিশবেনা। মাঝে মাঝে দেখি মন খারাপ, এত কস্ট পেত যে আমার খুব কষ্ট লাগত। এরই মাঝে একদিন বলল আম্মু জেসিকা আমাকে আজকে ভাইরাস বলেছে,বলেছে আবীর এর সাথে কেউ মিশবেনা। আমার কাছে জেসিকার মায়ের ফোন নং ছিল, ফোন দিলাম, কেমন আছে জিজ্ঞাসা করলাম, জেসিকা বাসায় গিয়ে বলে নাকি সারাদিন স্কুল এ কি করেছে। বলল না তো কিছু বলেনি তো। আমি বললাম ও আজকে আবীরকে ভাইরাস বলেছে। আমি অনুরোধ করলাম জেসিকাকে এমনভাবে জিজ্ঞাসা করবেন যেন ও বুঝতে না পারে আমি আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম। ওকে কাছে ডেকে নিয়ে আস্তে আস্তে শোনেন যে স্কুলে কি হয়েছে, তারপর বুঝিয়ে বলেন আবীরকে যেন এই সব কথা না বলে। এর কিছুদিন পরে স্কুলে গেছি কোন একটা কাজে, টিচার এ্যানি  আমাকে দেখে দরজার বাইরে এসে দাঁড়াল এবং বললেন আবীর কিছু বাসায় বলেছে নাকি, আমি তো  বুঝে ফেললাম। ঊনি বললেন, আবীর আমাকে কমপ্লেইন  করেনি,আমি ব্যাপারটা ধরতে পেরেছি,তারপর ওকে আলাদা ডেকে জিজ্ঞাসা করার পর ও সব বলেছে। এরপরে  দেখি অন্যান্য টিচার রা ও এসে দাঁড়ালেন, মিঃ ফ্রাঞ্চিস, মিস ডায়ানা  সবাই আমাকে বললেন ব্যাপারটা, সব টিচার রা মিলে এর সমাধান এর চেষ্টা করছে। মানে ওদেরকে বিভিন্ন গল্পের মাধমে ওদেরকে বুঝনোর চেষ্টা করছে। এর পর থেকে টিচার এর সামনে কেউ কিছু বলেনা,কিন্তু সুযোগ পেলেই ওরা বুলিং করে। আমাকে উনারা আশ্বাস দিলেন এ ব্যাপারে আর বললেন আপনি বাসায় আবীরকে  সব সময় সাহস দেবেন। আমরা স্কুলে দেখব। ও খুব নরম বলে ওর পিছনে সবাই লাগে।
GRADE 5 ও এই সমস্যা হয়েছিল, এখানেও সব টিচার রা এত কঠোর ছিল এ বিষয়ে যে কেউ বললে ও তেমন রকম সুবিধা করতে পারেনি। বরং ও সব সময় টিচারদের সাপোর্ট পেত। কিন্তু আসলেই আমরা খুব খারাপ দিন কাটিয়াছি সেই সব সময়। GRADE 6 এ ওই লিডার অন্য সেকশানে ছিল, তাই ঐ বছর আর এ রকম সমস্যা হয়নি। এখন ও গ্রেড ৭ এ , ও আগে থেকেই ওর স্কুল এ গিয়ে নিজের সেকশান নিজে পছন্দ করেছে। যে সেকশানে বুলিং যারা করে তারা কেউ নেই। এ বছর কোন কমপ্লেইন করেনি আমাকে। কিন্তু এই ধরনের সমস্যা সাধারনত শিশুর মানসিক বিকাশে আঘাত আনে, আমি আজকে সে ব্যাপারেই আলোচনা করব ঃ

বুলিং কি????  
বুলিং হল  INTENTIONALLY শারীরিক বা মানসিক ভাবে কাউকে আঘাত করা. যেমন  মারা , ধাক্কা দেওয়া, হেয় করা,মজা করা, মানুষের  সামনে ছোট করা। এটা এমন যে বুলি করে সে বয়সে বড় হয়, বা তার একটা ক্ষমতা থাকে একটা গ্রুপ তৈরী করার, সেই  গ্রুপ এর সবাই তাকে FOLLOW  করে। বুলিং এমন একটা জিনিস যে বুলি অন্যদেরকে লিড দেয় আমরা সবাই তোমার সাথে মিশবনা বা খেলব না। (বুলি অন্য শিশুদেরকে তার দলে নেয় তার ক্ষমতা বলে)।

আপনার শিশু বুলিং এর শিকার হলে কিভাবে সনাক্ত করবেন???
একটা শিশুর জন্য খুবই খারাপ, কারন এতে তার নিজেকে ছোট মনে হয়। FRUSTRATION এ ভোগে, স্কুলে যেতে চায়না, কারন স্কুলে সে আনন্দ পায়না। বলে পেটে বাথা বা মাথা বাথা,  তার ভেতর  দুঃখ বোধ বাড়ে, বাসায় ছোট ভাই বোনের প্রতি আগ্রাসন মনোভাব দেখায়।পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হতে পারে। সব সময় মন খারাপ থাকবে।  তাই প্রতিদিন আপনার সন্তানের সাথে কথা বলুন,সছুলে কি ঘটছে, কি খাবার সে খেল স্কুলে, দিনের ভাল বা খারাপ দিক কোনটি,। আপনি যত আপনার সন্তান, তার বন্ধু, ক্লাস মেইটস সম্পর্কে জানবেন,  এমনিতেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার শিশুর কোন সমসসা হচ্ছে যদি ওর কোন সমস্যা হয় তাহলে আপনি হচ্ছেন সেই বাক্তি যে ওকে সাহায্য করবেন।

কিভাবে এর সমাধান করবেন???
১। শিশুর সাথে বন্ধুর মত মিশবেন। স্কুল থেকে ফেরার পর প্রতিদিন স্কুল এ কি হচ্ছে না হচ্ছে জিজ্ঞাসা করবেন।
২। বুলিং কি তা আপনার সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন। ওকে বোঝান যেন ও কাউকে কখন বুলিং না করে, এবং কেউ যদি করে তাহলে ও যেন সাথে সাথে টিচারকে বলে (অনেক সময় শিশুরা বলতে চায়না ভাবে এটা কমপ্লাইন হয়ে যাবে। ) ওকে বোঝান এটা কমপ্লাইন না,বুলিকে থামানোর এটা হছে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
৩। যদি আপনি বোঝেন আপনার শিশু বুলিং এর শিকার হয়েছে তাহলে শিশুর হোম রুম টিচার এর সাথে কথা বলুন এবং তাঁকে অনুরোধ করুন যেন তিনি আপনার শিশু এবং ওর সহপাঠীদের এর উপর যেন নজর রাখে। টিচারকে অনুরোধ করবেন সমস্যা কোথায় তা বের করতে এবং প্রয়োজন হলে যেন স্কুল PRINCIPAL  কে যেন  বিষয়টা জানায়।
৪। আর একটা কাজ করা যেতে পারে সেই সব বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে পারেন যারা বুলিং করছে।
৫। আপনার শিশুকে সাহস দেবেন যে ওর বিপদে আপনি সবসময় ওর পাশে আছেন, অবশ্যই  সে যেন সব ঘটনা আপনাকে খুলে বলে। ওকে আরো ভালমত পড়াশুনা করতে উৎসাহ দেবেন। পাশাপাশি ওকে খেলাধুলা, মিউজিক বা অন্যান্য কারিকুলামে ভর্তি করে দিতে পারেন।

বাড়িতে বুলিং ঃ
আমাদের কোমলমতি শিশুরা বাড়ীতে কিন্তু সব সময় বুলিং এর শিকার হয়।কিন্তু আমরা আসলে কিছু মনে করিনা। এই ক্ষেত্রেও দেখা যায় পরিবারের চাচাতো, মামাতো বড় ভাই বোনেরা ,বা পাশের বাড়ির লোকেরা যাদেরকে আসলে কিছু বলা যায়না,  হয়ত বলল তুমি পচা, তোমার নাক বোচা চোখ বড়, তোমার চেয়ে তোমার বোন সুন্দর এই সব ও কিন্তু বুলিং এর ভেতরে পরে। এই সব কথা শিশুর মানশিক বিকাশে  খুব ক্ষতি করে। অনেকে দেখা যায় নামকে বিকৃত করে ডাকে এটা ও বুলিং এর মধ্যে পরে।  আমার এক চাচাত ভাই ছিল যে কিনা সব সময় আমাদেরকে বুলিং করত,আমরা  ছোট ছিলাম তাই কিছু বলতে পারতাম না । পরে আমরা যখন একটু বড় হলাম আমার ছোট ভাইটাকে যখন বুলিং করত, মানে কান ধরে উঠ বস করাত, ওকে খেপাত, খোঁচা মারত ও কান্না করত আমরা ওকে সরিয়ে নিয়ে যাব নিতে দিতনা।কি যে কস্ট লাগত।কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না।  কারন বয়সে অনেক বড় ছিল। আর আমার আম্মা ভয়ে কিছু বলতনা কারন যদি ঝগড়া বেঁধে যায়। তাই আসুন আমরা সচাতন হয় এ বাপারে, আর আমাদের সন্তানকে সচেতন করে তুলি।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১৫১৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • দুরন্ত কবি পাপ্পু ০২/১২/২০১৩
    খুবই ভালো লাগলো কিন্তু আমিও এর শিকার
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০২/১২/২০১৩
      ধন্যবাদ দুরন্ত কবি। ছোট বেলা মনে হয় কম বেশী সবাই এর শিকার হয়, কিন্তু আসলেই এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ব্যাপারটা আমরা বড়রা সহজভাবে নিই, কিন্তু এর ক্ষতিকর প্রভাব আসলে বাচ্চাদের উপর পড়ে। শুভ কামন রইল আপনার জন্য।
  • মহিউদ্দিন হেলাল ০৭/১১/২০১৩
    দারুণ একটা বিষয়, খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। সত্যি এতো গভীর থেকে আগে কখনও এই বিষয়টা নিয়ে ভাবার সময় হয়নি।
    আবারও ধন্যবাদ-
  • আরজু নাসরিন পনি ০৭/১১/২০১৩
    খুব সচেতনতা জাগানো লেখা, ইসমাত ।
    কিছু অভিজ্ঞতা চোখের সামনে ভেসে উঠলো ।

    শেয়ার করার জন্যে অনেক ধন্যবাদ রইল ।।
  • বুলি সম্পর্কে অসাধারন লিখেছেন। আসলে বুলি করা সবাই স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে নিয়েছে। কেউ এটা চিন্তা করেনা যে এই কারনে শিশুটি মানষিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বড়রা ধরেই নেয় যে শিশুটি ওসব ভূলে যাবে কিন্তু এর প্রভাব যে থেকে যায় এ ব্যাপারে বেশীর ভাগই জানেনা আর অনেকে জেনেও ঊদাসীন। ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর করে ব্যাপারটা তুলে ধরার জন্য।
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৭/১১/২০১৩
      ধন্যবাদ দাদা। শিশুরা কিন্তু আসলেই মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের বাবা মাকেই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
  • Înšigniã Āvî ০৬/১১/২০১৩
    khub gurutbopurno lekha...
  • suman ০৬/১১/২০১৩
    শিশু মনস্তত্ত্বকে অজ্ঞানতাবশত আমারা গুরুত্ব দেই না ......খুব প্রয়োজনীয় লেখা ...ভালো লাগলো ...
  • অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো এবং জরুরি একটি বিষয় পোস্ট করার জন্য।আশাকরি সবার খুবই প্রয়োজনে লাগবে।প্রিয় তে রাখলাম।
 
Quantcast