www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শিশুর হেমান জিওমা (ব্লাড টিঊমার) ক্যান্সার নয়


আমার বড় ছেলে আবীর যখন জন্মগ্রহণ করল তখন ওর মুখে কোন দাগ ছিলনা। জন্মের ৪ বা ৫ দিনের মধ্যেই আমরা দেখলাম ওর বাম  চোখের নীচে ছোট একটা লাল দাগ। অনেকটা গোলাকৃতি। প্রথমে মনে করা হল মশার কামড়ের দাগ। দাগটা দিন দিন বাড়তেই লাগল আর টকটকে লাল। আমার মন খারাপ হয়ে গেল। সবাই বলল জন্মগত দাগ। আমি তখন মাগুরাতে, আমার বাবার বাড়ি। মাগুরাই তখন কোন স্কিন ডাক্তার ও নেই সেই সময়। যা হোক কেউ একজন বলল প্রতি মাসে মাগুরার শান্তি ক্লিনিকে একজন স্কিন ডাক্তার আসে, তাকে ডেখাতে পারেন। আমি একমাসের মাথায় ওকে নিয়ে সেই ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার দেখে বললেন জন্মগত দাগ।
আমি বাড়ি ফিরে এলাম। কিন্তু মনের মধ্য থেকে সন্দেহ যাছেনা কারণ দাগটা দিন দিন বাড়ছে, এরই মধ্যে আমাদের ফামিলি বন্ধু ডাক্তার স্বরূপ দা আমাদের বাড়িতে আসেন আমার ছেলেকে দেখতে, ( আবীর এর জন্মের সময় উনি ঢাকায় ছিলেন ট্রেনি এ) ওর মুখে লাল দাগ দেখেই উনি বলে দিলেন, আপা আপনার ছেলের তো হেমান জিওমা হয়েছে। জীবনে এই শব্দ আমি প্রথম শুনলাম। নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম উনাকে। উনি বললেন আপনি মাগুরা লতিফ সাহেবের কাছে যান। দেখেন উনি কি বলেন। মায়ের মন কি বোঝে, আমি সেই দুপুরেই বাচ্চাকে নিয়ে রওনা দিলাম। ডাক্তার ওকে দেখলেন এবং বললেন এটা হেমান জিওমা। বললেন এখন কিচুই করা যাবেনা বড় হবার সাথে সাথে এটা চলে যাবে। চিন্তা করোনা। তবে বাচ্চাকে সাবধানে রাখবেন যাতে ওই জায়গাটাই আঘাত না পায়। এর পরে আমি ছেলেকে নিয়ে খুলনা, ঢাকা, বাংকক সব জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েছি সএকই  কথা, ওয়েট অ্যান্ড সী।
আমার মনে হয় আমার মত অনেক বাবা মার হেমান জিওমা সম্পর্কে কোন ধারনা নেই, তাই মনের তাগিদে সবাইকে জানানোর জন্য লিখতে বসলাম।
হেমান জিওমা কি?
হেমান জিওমা হল ছোট ব্লাড ভ্যাসেলস  যা সাধারনত চামড়ার উপর হয়। এই জায়গাটা খুবই নরম হয় কিন্তু এর সীমানা খুব ধারালো হয়। এটা ভেতরে রক্ত নালীর সাথে যুক্ত থাকে, এবং সবসময় রক্ত সঞ্চালিত হয় বলে লাল দেখায়। এটি শিশুদের জন্য একটি সাধারন জন্মগত টিঊমার। এটি সাধারনত শিশু জন্মের প্রথম দিনে বা জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে আবির্ভূত হয়। ৩০ বা ৪০ % হেমান জিওমা আবির্ভূত হয় দৃশ্যমান দাগ হিসাবে, যা সহজেই কারো দৃষ্টিগোচর হয়। এবং এর রঙ চামড়ার রঙ থেকে ভিন্ন হয়।
৬০ % হেমান জিওমা মাথায় এবং ঘাড়ে হয়। কিন্তু এটা শরীরের যে কোন জায়গায় হতে পারে, খুব কম এরা শরীরের ভেতর হয়। এটি কিন্তু CANCER না।
বাচ্চা বড় হবার সাথে সাথে এটি ও ছোট হয়।
এটা জানার কোন উপায় নেই আসলে হেমান জিওমা কখন বাড়বে।কিন্তু হেমান জিওমা একটা বয়স পর্যন্ত বাড়তে থাকে এবং তারপরে ছোট হতে থাকে। মানে শিশু বড় হবার সাথে সাথে এটা ও ছোট হয়। সাধারনত
০-৯ মাস------- হেমান জিওমা আবির্ভূত হয় এবং বড় হতে থাকে।
৯মাস-২ বছর ---- বড় হতে থাকে, অনেক্ সময় থেমে ্যায়।
২বছর- ৬ বছর......... ছোট হতে থাকে এবং প্রতি বছর ১০ % করে কমে।
হেমান জিওমা যখন ছোট হতে থাকে তখন শিশুর স্কিন ঢিলা হতে পারে এবং লাল রঙ পরিবর্তন হয়ে যাবে।
কি সমস্যা দেখা দিতে পারে হেমান জিওমার জন্য;
যদি আপনার শিশুর হেমান জিওমা চোখ, নাক, ঠোঁট বা ঘাড়ে হয় তাহলে সে অবশ্যই চোখে কম দেখা এবং নিঃশ্বাস নিতে ও সমস্যা হতে পারে।
যদি শিশু হেমান জিওমার জায়গায় আঘাত পায় তাহলে রক্ত ঝরতে পারে। এটা খুবই বিপদজনক। কারন এটা ভেতরে রক্তনালীর সাথে যুক্ত।
কিভাবে রক্ত পড়া বন্ধ করবেন;
যদি আপনার শিশু আঘাত পায় এবং হেমান জিওমা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে, তাহলে প্রথমে ১৫ মিনিট হেমান জিওমার চারপাশে আস্তে আস্তে চাপ দিতে থাকুন রক্ত ভেতরে চলে যাবার জন্য। যদি রক্ত ঝরা এর পরে ও বন্ধ না হয় তাহলে যত তাড়াতাড়ি  পারেন কোন নিকট এমারজেন্সিতে নিয়ে যাবেন।
হেমান জিওমার চিকিৎসাঃ
সাধারনত হেমান জিওমার কোন চিকিৎসা ডাক্তাররা করেন না। এটা আপনা আপনি চলে যায়। ডাক্তার শুধু বলবে, অপেক্ষা করেন, বড় হোক, দেখি কি হয়।
এরপরে ও ডাক্তার হেমান জিওমার অবস্থান দেখে চিকিৎসার পদক্ষেপ নেনঃ
১ঃ শিশুর বয়স
২। হেমান জিওমার অবস্থান
৩। হেমান জিওমার আকার
৪। সুবিধা, অসুবিধা ইত্যাদি।
সাধারনত সার্জারি, লেসার দিয়ে থাকে ডাক্তারেরা যদি দরকার হয়।
আপনার দায়িত্বঃ
যদি আপনার শিশুর হেমান জিওমা হয়, তাহলে অবশ্যই ওকে সাবধানে রাখবেন। শিশু যেন আগাত না পায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। শিশু যখন স্কুল এ যাওয়া শুরু করবে তখন টিচার, অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীর বাবা মার সাথে কথা বলতে পারেন, ব্যাখ্যা করতে পারেন আপনার শিশুর অবস্থা, বলতে পারেন এটা অন্য শিশুদের মাঝে ছড়াবেনা। কেউ যেন আঘাত না করে। এছাড়া আপনি শিশু একটু বড় হলেই হেমান জিওমা নিয়ে  কথা বলতে পারেন, ওকে  সাবধানে থাকতে বলবেন।
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ১৩৩৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • খুব গুরুত্বপূর্ন তথ্য । আপনাকে ধন্যবাদ অভিজ্ঞতা শেয়ারের জন্য। অনেকেরই উপকার হবে আশা করি
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৬/১১/২০১৩
      অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা সব সময় আমাকে উৎসাহ দেবার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
  • সায়েম খান ০৪/১১/২০১৩
    ধন্যবাদ আপু সুন্দর উপস্থাপনার জন্য।
  • জহির রহমান ০৪/১১/২০১৩
    অনেক কিছুই জানলাম। আন্তরিক ধন্যবাদ আপু...
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৪/১১/২০১৩
      আন্তরিক ধন্যবাদ তোমাকে ও। এই হেমান জিওমার জন্য আমার ছেলের চোখের সমস্যা আছে। ও চশমা পড়ে। এখন প্রায় বুঝাই যায়না। দোয়া করো ওদের জন্য।
      • জহির রহমান ০৪/১১/২০১৩
        দোয়াতো অবশ্যই করবো আপু। ভাগিনার জন্য আমি দোয়া অবশ্যই করবো।
        চশমা আমিও পরতে হয়। পেশাগত কারণে... প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও এখন অনেকটা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। চিন্তু করেন আপু, একটা ব্যাটা নাকের উপর বসে কান দুটো টেনে ধরবে- একে কিভাবে সহ্য করি?
  • বরাবরের মতোই একটি ভালো লেখা উপহার দিলেন. ।খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।ভালো লাগলো।অনেক কিছু শিখলাম। ধন্যবাদ আপনাকে
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৪/১১/২০১৩
      তোমাদেরকে সব সময় আমার পাশে পেয়ে ভালই লাগছে, কিছু মনে করোনা আমি যদি উত্তর দিতে বা তোমাদের ব্লগে কমেন্ট করতে দেরী করি, আসলে আমি খুব ব্যস্ত, এই জন্য আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, তবে সময় করে সবার লেখা অবশ্যই পড়ব। শুভকামনা রইল।
  • বরাবরের মতোই একটি ভালো লেখা উপহার দিলেন. ।খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।ভালো লাগলো।অনেক কিছু শিখলাম। ধন্যবাদ আপনাকে
 
Quantcast