www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আইন না দরকার পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষাঃ

আমি প্রতিদিন সকাল ৫.৩০ ঘুম থেকে উঠি। নামায পড়ি, আবীরকে (বড় ছেলে) ঘুম থেকে  উঠাই সকাল ৬ টায়, ওর জন্য নাশ্তা বানায়, ওকে সবকিছু  গুছিয়ে দেই,৬.৩০ এ স্কুলে চলে যায়। তারপর শুরু হয় আমার কাজ। রান্না করা, ঘর মুছা, কাপড় ধোয়া, কত কাজ সংসারে। ০৮.০০ আরীক কে (ছোট ছেলে)  ঘুম থেকে ডেকে তুলি, ওকে গোসল করাই,নাস্তা খাওয়াই, স্কুলে দিয়ে আসি। আমার অফিস ০৯.০০ টা থেকে, সারাদিন অফিসে থাকি,ওরা আসে  ০৪.৩০। তাড়াতাড়ি বাসায় আসি,ওদের খাবার দিই, আবার অফিসে চলে যায়। সন্ধায় অফিস থেকে বের হয়ে ওদের জন্য, দুধ, ফল, আরো যা যা লাগবে তা কিনে বাসায় আসি। বাসায় এসেই বাইরের কাপড় খুলেই আবার কাজে নেমে পড়ি। ওদের হোম ওয়ার্ক দেখা, রাতের খাবার বানানো, কাপড় গুছানো, করতে করতে রাত নয়টা, তারপর রাতের খাবার খেয়ে রাত ১০ টায় ওদেরকে বিছানায় দিয়ে নিজে একটু বিছানায় পিঠ মেলে দেওয়া।
সারাদিন একজন মা, বাবা কত কস্ট করে তার সন্তানের জন্য। নিজে না খেয়ে, নিজে ভাল কাপড় না পড়ে, নিজের জন্য খরচ না করে সব বাচ্চার জন্য করে। অসুখ হলে মা বাবার চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায়।সন্তানের সুখের জন্য বাবা মা কত কষ্টই না করে। আমি জানি বাবা মা হিসাবে এটা আমাদের দায়িত্ত, আমরাই তো ওদের এই পৃথিবীতে এনেছি, তাই ওদের রক্ষনা বেক্ষনের দায়িত্ত আমাদের। এই জন্যই আমার বাবা মা আমাদের জন্য করেছেন,আমরা  আমাদের সন্তানদের জন্য করছি, কস্ট করছি ওদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য।
আর এই সন্তানই যদি বৃদ্ধ বয়সে বাবা মাকে কস্ট দেয়, না খেতে দেয়, বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায় তাহলে কেমন লাগে। আমি এরকম অনেককেই চিনি যারা বাবা মায়ের খোজ খবর নেন না। অনেকে বউ এর কথা শোনেন। খারাপ লাগে আমার সেই সব পুরুষের জন্য ,যারা বউ এর ভয়ে নিজেদের বাবা মায়ের খোজ নেন না। আবার খুব মায়া  হয় ও ওইসব পুরুষের জন্য, হয়তবা সংসার নামক জিনিসটা টিকিয়ে রাখবার জন্য তারা বউ এর কথা শোনে । খারাপ লাগে সেই সব মেয়েদের জন্য, যারা তাদের স্বামীকে এই সব দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখে। মনে হয় এরা কি কোন নৈতিক আর পারিবারিক শিক্ষা পেয়ে আসেনি। এদের বাবা মা এদেরকে কি শিখিয়েছে। আবার এটা ও ঠিক মেয়েদের দোষ দিয়ে লাভ কি, কোন পুরুষ যদি করতে চায় তার বাবা মার জন্য তাহলে কোন বউ এর  কি সাধ্য আছে কিছু  করার।
আবার আমরা যারা মেয়ে, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কোন মেয়ে যদি চাকরী  করে তাও বাবা মাকে কাছে এনে রাখতে পারেনা। পারেনা ভাই বোনদের  জন্য কিছু কিনতে, চাকরী সে করে কিন্তু সেই টাকা তার হাতে আসেনা। আমি বাংলাদেশে এমন একজনের সঙ্গে কাজ করেছি, সে শুধু আমাদের সঙ্গে কাজ করত, স্বামী ব্যাংক থেকে টাকা তুলত, বেচারী সবগুলো টাকা একটু ছুঁয়ে ও দেখতে পারত না। বাবা মা ভাই বোনের জন্য ও কিছু কিনতে পারতনা। মনের কস্ট মনেই রেখে দিত। কারন কথা বললেই সংসার ভাঙ্গার ভয়।
আমি এত কিছু লিখছি কারন কয়েক  দিন আগেই পাশ হল বাবা মায়ের ভরন পোষণের আইন। এই আইনে বলা হয়েছে,  সন্তান যদি বাবা মার ভরন পোষণে ব্যর্থ হয় তাহলে  ১ লাখ টাকা দিতে হবে, আর না দিতে পারলে ৩ মাস কারাভোগ করতে হবে।
আসলে আমরা বাবা মায়ের প্রতি আমরা আমাদের দায়িত্ত , কর্তব্য ভুলতে বসেছি তাই এই আইন। কথা হচ্ছে  কয়জন বাবা মা চাইবেন সন্তানের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে। আমরা কেন ভুলে যাই একদিন আমরা সবাই বৃদ্ধ হব, আমরা আজ যদি আমাদের বাবা মাকে সম্মান না দেখাই বৃদ্ধ বয়সে তাদের যদি না দেখে রাখি, তাদের যদি ভরন পোষণের ব্যবস্থা না করি তাহলে আমার সন্তান যে একদিন আমার সাথে এটা করবে না তার কি কোন গ্যারান্টি আছে।
আমার তো মনে হয় শুধু  আইন করেই হবেনা, দরকার পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষা। সন্তান যদি সত্যিকার অর্থে সু সন্তান না হয় তবে কোন আইন দিয়ে কি কিছু করা সম্ভব।
তারপরে ও এই আইনকে আমি স্বাগত জানায়। অন্তত কারো না কারো জন্য তো একদিন এই আইন কাজে লাগবে। আসুন আমরা সবাই আমাদের বাবা মাকে সম্মান করি, কাছে গিয়ে থাকতে না পারি ,দিনে একবার ফোনে খোজ নেই, বাবা মাকে নিজের কাছে এনে রাখি,একদিনের জন্য হলে ও  বাইরে খেতে নিয়ে যাই। এতে আপনার একটু ও কমবে  না বরং আজ যে সন্তান আপনার ঘরে সে আপনার থেকে শিখবে, আর এর প্রতিদান একদিন ওই সন্তান আপনাকে ফেরত দেবে।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৯২১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৩/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • নৈতিক শিক্ষা ও আইনের য্থাযথ প্রয়োগ দুইটাই দরকার
  • প্রবাসী পাঠক ০৪/১১/২০১৩
    আমাদের সমাজের অনেক সামর্থ্যবান লোক আছে যারা তাদের বৃদ্ধ বাবা মাকে গ্রামের বাড়িতে কিংবা কোন বৃদ্ধাশ্রমে একা ফেলে রাখে। আবার এমনও লোক আছে যাদের দিন আনতে পান্তা ফুঁড়োয় কিন্তু তারা তাদের বাবা মাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাদের সাথেই রাখে। তফাতটা নৈতিকতার আর আইন করে এই নৈতিকতা শেখানো সম্ভব না ।
    আইন না দরকার পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষা ............
    ধন্যবাদ আপনাকে এমন সুন্দর একটি লেখার জন্য ।
  • জহির রহমান ০৩/১১/২০১৩
    অনেক আগে একটা গল্প পড়ছিলাম। গল্পটা ছিল এরকম- ছেলে তার বৃদ্ধ মা'কে কষ্ট দিতো। ঠিকমতো খেতে দিতো না অথচ তারা ভালো ভালো খেতো, ভালো ভালো পরতো। রোগে মার চিকিৎসা করতো না। বৃদ্ধার নাতি-নাতনিকেও তার কাছে যেতে দিতোনা। আর বৃদ্ধার পুত্রবধুও তাকে সহ্য করতে পারতোনা। একদিন ছেলেটি তার বউয়ের পরামর্শে বৃদ্ধ মাকে দুরে ফেলে দিয়ে আসার চিন্তা করে বাজার থেকে বড় একটি ঝুড়ি কিনে আনে। তারপর বৃদ্ধ মাকে যখন ঝুড়ি করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন বুড়ির অবুঝ নাতি- নাতনিরা তাদের বাবাকে ডেকে বলল, আব্বু! দাদীকে ফেলে আসার সময় ঝুড়িটি যত্ন করে নিয়ে এসো। বাবা অনেকটা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল-কেন ঝুঁড়ি নিয়ে আসতে হবে? তখন বাচ্ছারা বললো- তোমরা যখন বৃদ্ধ হবে তখন তো তোমাদেরও দূরে ফেলে আসতে হবে না? তখন যেন নতুন ঝুঁড়ি কিনতে না হয়।

    আজ নৈতিকতার অবক্ষয় হতে হতে আমরা এমন এক পর্যায়ে চলে গেছি যে, জন্মদাতা মা-বাবাকেও পর করে দিতে নূণ্যতম কার্পন্য করিনা। অথচ আমরা ভাবি না এই মা নিজে না খেয়ে আমাদের খাওয়াছেন। বাবা যখন কিছু খাওয়ার জন্য কিনছেন আর আমাদের কথা মনে পড়াতে না খেয়ে পকেটে করে নিয়ে চলে আসছেন, আমাদের আদর করে খাওয়ায়েছেন। আমরা বড় হওয়ার সাথে সাথে তা ভুলে যাই।
    আমরা তখনকার কথাও ভুলে যাই যখন ছোট বেলায় আমরা বাবা অথবা মা'র হাত ধরে জিজ্ঞেস করেছিলাম- আম্মু এটা কি? জবাব দিলো এটা আম। আবারো জিজ্ঞেস করলাম এটা কি করে? আদর করে বলছিল- এটা একটা ফল। খুব মিষ্টি। আবারো জিজ্ঞেস করছিলাম- এটা কি? বলল- আম। অনেকটা উৎসাহিত করে বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলাম এটা কি? তখন আদর করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলছিল বাবা তুমি এটা চিনোনা? এটা আম। এটা খেতে মিষ্টি। অথচ সেই মা অথবা বাবাই যখন একবারের বেশি দু'বার আমাদের কোন কথা জিজ্ঞেস করে তখনি আমরা তাদেরকে ধমক দিয়ে কথা বলি। অথচ কোরআনে আল্লাহ খুব শক্ত ভাষায় আমাদেরকে নিষেধ করেছেন আমরা যেন মা বাবাকে ধমক দিয়ে কথাতো দূরের কথা, আমরা যেন তাদের ব্যাপারে উফ্ শব্দটাও উচ্চারণ না করি।
    আপনার লেখাটি পড়ে চোখে পানি এসে গেল। অনেক সুন্দর করে লিখেছেন আপনি। আমার চোখে অনেকটা পানি এসে গেছে। যে বাবা আমার জন্য এতটা কষ্ট করেছেন সেই বাবার জন্য কি করতে পারলাম। যখনি কিছু করার বয়সে উপনীতি হয়েছি তার অনেক আগেই তাঁকে হারিয়েছি। (হে আল্লাহ! তুমি আমার বাবাকে তোমার রহমতের হাত দিয়ে সেভাবেই লালন-পালন করো যেভাবে তিনি আমাকে লালনপালন করেছেন- আমিন)। মা কে এখনো আমার জন্য কষ্ট করে। এখনো রাত জাগে আমি ফেরার। নিজে না খেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে একত্রে খাবে বলে। অথবা খাবার কম থাকলে মিথ্যে করে বলে আমি খেয়েছি- তুই খেয়ে নে। কখনো কোন অভিযোগ করে না আমার বিরুদ্ধে। এখনো আমার গেঞ্জিটি পর্যন্ত ধুয়ে দেয় নিজ হাতে। খুব কষ্ট লাগে মার জন্য- কিন্তু কিছু করতেও পারছিনা।

    অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য। শুধু এটুকুই বলবো- চলমান শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে যদি ইসলাম ও নৈতিকতার সমন্বয় ঘটে তবে এ অবস্থা থেকে আমরা অনেকাংশে পরিত্রান পেতে পারি। তখন আর বৃদ্ধাশ্রম থাকবে না।
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৪/১১/২০১৩
      জহির ভাই, গল্পগুলো আগে থেকে জানতাম, আপনার লেখা পড়ে আবার নতুন করে জানলাম। আল্লাহ অবশ্যই আপনার বাবাকে তাঁর রহমতের হাত দিয়ে লালন পালন করবেন। আমি বাবা মা দুজনকেই হারিয়েছি। তা নিয়ে আর একদিন লিখব। আপনি আপনার মায়ের চোখের মনি হয়ে থাকেন আপনার ভাল কাজের দারা এই দোয়া রইল।
    • ঠিক বলেছেন আমাদের ধর্মীয় শিক্ষাটা ও জরুরী তাহলে অন্তত একজন ক্ষমতাশালী দেখছেন আর তার কাছে জবাব দিতে হবে এই চিন্তা কাজ করবে আর এতে অন্যায় থেকে দূরে থাকা সম্ভব
  • আহমাদ সাজিদ ০৩/১১/২০১৩
    নৈতিক শিক্ষার সাথে দরকার আইনেরও
    তবে তার আগে দরকার আইনের প্রয়োগের
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৪/১১/২০১৩
      ধন্যবাদ আপনাকে, আসলে আইন তো অনেক আছে, কিন্তু প্রয়োগ কি আসলে হয়, সব তো আইনের ফকর দিয়ে বেরিয়া আসে। ঠিক কথা বলেছে, আইন করলেই হবেনা, দরকার আইনের প্রয়োগের।
  • ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর লেখা উপহার দিয়েছেন বলে। আসলে বাবা-মা'রা পারেন তার সন্তানকে শিক্ষা দিতে নিজেরা দায়িত্ব পালন করে। আর জোর করে সংসার টিকানো যায়না এটা হচ্ছে ভূল শিক্ষার কুফল। তা যদি হয় ভালবাসার কারনে সে অন্য কথা আর যদি পাছে লোকে কিছু বলে হয় তাহলে খুবইঙ্খারাপ ব্যাপার। সংসার করে মানুষ সুখে থাকার জন্য আর সেই সুখ যদি না পাওয়া যায় তবে তা ভেঙ্গে ফেলাই ভাল। আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে মা-বাবা আমাদের জন্য কি করেছেন। যে পুরুষ/মহিলা শ্বশুর-শ্বাশুরীকে সম্মান দিতে পারেনা নিজের মা বাবার সম্মান দিতে পারেনা সে আপনাকে কি সম্মান দিবে; সে সম্পর্কের সম্মান কি দিবে ।
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৩/১১/২০১৩
      দাদা ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা কমেন্ট এর জন্য। একদম সত্যি কথা বলেছেন, যে মেয়ে বা ছেলে তার বাবা , মা, ষশুর, শাশুড়ির সম্মা দিতে পারেনা সে আসলে অন্য মানুষকে কি ভাবে সম্মান দিবে।
  • আসলে আইন করে কখনোই ঠিকমতো কিছু হয়না আমাদের দেশে।যেখানে বিবেক কাজ করে না সেখানে আইন কখনোই কিছু করতে পারবে না।এটা আমাদের. মনুষ্যত্ত্বের প্রশ্ন।মানুষ যখন বিবেক বর্জিত হয়ে যায় তখন তার দ্বারা সবকিছু করা সম্ভব।ধন্যবাদ একটি যুগোপযোগী লেখা পোস্ট করার জন্য।
    • ইসমাত ইয়াসমিন ০৩/১১/২০১৩
      সাখাওয়াত ভাই অনেক অনেক ধন্যবাদ কমেন্ট এর জন্য। দোয়া করি সবার জন্য যেন বৃদ্ধ বয়সে আমরা আমাদের বাবা মা শ্বশুর শাশুড়িকে যেন দেখে রাখতে পারি, আমরা যেন বিবেক বর্জিত হয়ে না যাই।
 
Quantcast