অপেক্ষা
নিয়মের চাকায় চলতে চলতে মানুষের জীবনে কেমন জানি একঘেয়েমি চলে আসে। মানুষ চায় একটু পরিবর্তন। একটু বৈচিত্র্য। একটু নতুনত্ব। পেছনে ফিরে তাকা। অতীত ভেবে কিছুটা রোমাঞ্চিত হওয়া। সুপর্ণাও তার ব্যতিক্রম নয়। দশটা ছয়টা অফিস, সাংসারিক টুকিটাকি কাজ বৃদ্ধ মা বাবার সেবা, সামলাতে সামলাতে সে যেন অনেকটা হাঁপিয়ে ওঠেছে।
আজ পূর্ণিমা রাত। চিকমিক করা জোছনার আলো । আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। চাঁদের উঠোনে তারা, ব্যালকনির টবে সদ্য ফোটা নাইট কুইন, এখানে ওখানে আম, লিচু জামরুলের ছায়া। বাইরে তাকিয়ে দেখে এ যেন আকাশ নয়, আলোর শামিয়ানা। ব্যালকনিতে দাঁড়ালেই আকাশ দেখা যায়। ঝিরিঝিরি মৃদু হাওয়ায় নারকেলের পাতা দোলছে কোমর দোলানো নৃত্যের মত। আর হাসনাহেনার গন্ধে পাগল করা মন।
ব্যালকনির গ্রিল ধরে রোজ আনমনা হয় সুপর্ণা। আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবতে থাকে। হারিয়ে যায় আকাশের বিশলতায় । তখন তার খুব মনে পড়ে তার কথা । ভাবতে ভাবতে হারিয়ে যায় পুরনো দিনে। কখনো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কখনো বিছানায় শুয়ে শুয়ে। যেদিন ঘুম আসতে চায় না, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। একদিন সুপর্ণার মনটা খুব খারাপ ছিলো । ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জোছনার আলো গায়ে মেখে মুঠোভরে জোনাক নিচ্ছিল। হঠাৎ পেছন থেকে এসে কে যেন তার কাধে হাত দিয়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকলো । তার খোলা চুলে মুখ গুঁজিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছিল সে। ডান কানে বড় বড় করে শ্বাস নেয়ার শব্দ শুনে পাচ্ছিল সুপর্ণা। এতদিন পর আসার সময় হলো তোমার? অভিযোগের সুরে প্রশ্ন করে সুপর্ণা। প্রতিদিন আমি তোমার পথ চেয়ে বসে থাকি । বিশ্বাস ছিলো একদিন না একদিন তুমি আসবে। এই তোমার হাতটা একটু ধরতে দেবে? কতকাল তোমার হাত ধরে তোমার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাই নি। মনে আছে তোমার, জলার পানিতে নাও ভাসাতে ভাসাতে কতদূরে নিয়ে যেতে? মাঝে মধ্যে তুমি এমন দুষ্টুমি করতে না, কান মলে দিতে ইচ্ছে করতো। সে দিন জলার পানিতে নাওটা না ডুবালেও পারতে। সেদিন তো আমি ভিজেই একাকার। আমার বুঝি লজ্জা করেনি! ভাগ্যিস জলায় আর কেউ ছিলো না।
হুম আমার সব মনে আছে।
এই আমার চুলগুলো ছেড়ে দাও না। আমার চুলের গন্ধ বুঝি তোমার খুব ভালো লাগে? তবে এতদিন কার চুলের গন্ধ শুঁকেছ ।
আচ্ছা সুপর্ণা, তোমাদের সেই রজনীগন্ধার গাছটি কি এখনো গন্ধ বিলায়? মনে আছে? পুকুরের শান বাঁধা ঘাটে পাশাপাশি দু’জন বসে জোছনার রং গায়ে মাখতাম? রাতভর রজনীগন্ধার মালা গেঁথে পরিয়ে দিতাম তোমার খোঁপায়। ফুলের ঘ্রাণ নেবে বলে তোমার খোঁপায় মুখ গুঁজে নিতাম তোমার চুলের ঘ্রাণ।
জানো সুধীর, তোমাকে নিয়ে আমি কতো স্বপ্ন দেখেছি? বড় কোন স্বপ্ন নয়, ছোট ছোট স্বপ্ন। আমাদের বিয়ে হবে, আমাদের ছোট্ট একটি ঘর হবে , আমাদের ভালবাসায় ঘর হবে আলোকিত। কোন অট্টালিকা বা প্রাসাদের স্বপ্ন নয়, হোক না একটি কুঁড়েঘর , যার আনাচে কানাচে খেলবে ভালবাসার ঢেউ। রোজ ফাস্টফুড কিম্বা বিরিয়ানি খাওয়ার কোন স্বপ্ন দেখিনি, বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু প্রয়োজন, বাকিটুকু তোমার ভালবাসার স্বপ্ন দেখেছিলাম। টোলপড়া দু’গালে সুধীরের হাতের পরশ বেশ ভালই লাগছিলো সুপর্ণার। সুপর্ণা চোখ বন্ধ করে কেবল আদর নিচ্ছিল। সুধীরের হাত ধরে টান দিতেই ব্যালকনির রশি ছিঁড়ে হুড়মুড় করে সব কাপড় পড়ল সুপর্ণার গায়ে। সুধীর, সুধীর বলে ডাকতে থাকে সুপর্ণা। কোথায় সুধীর? কী ব্যাপার এতক্ষণ তো তার সাথেই তো ছিল। পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তাকে। সুপর্ণা তার হাত ধরে দাঁড়িয়েছিল এতক্ষণ। মুহূর্তে হাওয়া হয়ে গেলো? এদিনটির জন্য সুপর্ণা চব্বিশটি বছর অপেক্ষা করেছিলো। সুধীর কি এতক্ষণ সুপর্ণার সাথেই ছিলো? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুধীরের সাখে কথা বলতে বলতে কখন যে রাত পোহাল টেরও পাওয়া গেলো না। ঐ যে মসজিদে মুয়াজ্জিনের আজান শোনা যাচ্ছে।
একি সুধীর কোথায় ? এখানেই তো ছিলো । এতক্ষণ সুধীরের হাত ভেবে যে হাত ধরে টান দিয়েছিলো সেটি ছিলো ব্যালকনির রশিতে শুকাতে দেয়া তার কামিজের হাতা। সুপর্ণা ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসতেই বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেলো তার মন। এতক্ষণ কাকে নিয়ে ভাবছিল সে। সুধীরের কথা? কে সেই সুধীর? সুধীর কি সুপর্ণাকে ভালবাসত? নাকি শুধুই সুপর্ণা? সুপর্ণা সুধীরকে ভালবাসত বলেই বিয়ে না করে অপেক্ষা করে আছে চব্বিশটা বছর।
এই তো সেদিন । একটি শপিং মলে দূর থেকে সুধীরকে দেখে দৌড়ে ঝাপটে ধরতে গিয়েছিলো সুপর্ণা। কিন্তু কাছাকাছি যেতেই সুধীর পরিচয় করিয়ে দেয়-
সুপর্ণা, এই হচ্ছে আমার স্ত্রী সুরাইয়া। সুরাইয়া, এই হচ্ছে আমার আত্মীয়া সুপর্ণা। ....
আজ পূর্ণিমা রাত। চিকমিক করা জোছনার আলো । আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। চাঁদের উঠোনে তারা, ব্যালকনির টবে সদ্য ফোটা নাইট কুইন, এখানে ওখানে আম, লিচু জামরুলের ছায়া। বাইরে তাকিয়ে দেখে এ যেন আকাশ নয়, আলোর শামিয়ানা। ব্যালকনিতে দাঁড়ালেই আকাশ দেখা যায়। ঝিরিঝিরি মৃদু হাওয়ায় নারকেলের পাতা দোলছে কোমর দোলানো নৃত্যের মত। আর হাসনাহেনার গন্ধে পাগল করা মন।
ব্যালকনির গ্রিল ধরে রোজ আনমনা হয় সুপর্ণা। আকাশের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবতে থাকে। হারিয়ে যায় আকাশের বিশলতায় । তখন তার খুব মনে পড়ে তার কথা । ভাবতে ভাবতে হারিয়ে যায় পুরনো দিনে। কখনো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কখনো বিছানায় শুয়ে শুয়ে। যেদিন ঘুম আসতে চায় না, ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। একদিন সুপর্ণার মনটা খুব খারাপ ছিলো । ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জোছনার আলো গায়ে মেখে মুঠোভরে জোনাক নিচ্ছিল। হঠাৎ পেছন থেকে এসে কে যেন তার কাধে হাত দিয়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকলো । তার খোলা চুলে মুখ গুঁজিয়ে ঘ্রাণ নিচ্ছিল সে। ডান কানে বড় বড় করে শ্বাস নেয়ার শব্দ শুনে পাচ্ছিল সুপর্ণা। এতদিন পর আসার সময় হলো তোমার? অভিযোগের সুরে প্রশ্ন করে সুপর্ণা। প্রতিদিন আমি তোমার পথ চেয়ে বসে থাকি । বিশ্বাস ছিলো একদিন না একদিন তুমি আসবে। এই তোমার হাতটা একটু ধরতে দেবে? কতকাল তোমার হাত ধরে তোমার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাই নি। মনে আছে তোমার, জলার পানিতে নাও ভাসাতে ভাসাতে কতদূরে নিয়ে যেতে? মাঝে মধ্যে তুমি এমন দুষ্টুমি করতে না, কান মলে দিতে ইচ্ছে করতো। সে দিন জলার পানিতে নাওটা না ডুবালেও পারতে। সেদিন তো আমি ভিজেই একাকার। আমার বুঝি লজ্জা করেনি! ভাগ্যিস জলায় আর কেউ ছিলো না।
হুম আমার সব মনে আছে।
এই আমার চুলগুলো ছেড়ে দাও না। আমার চুলের গন্ধ বুঝি তোমার খুব ভালো লাগে? তবে এতদিন কার চুলের গন্ধ শুঁকেছ ।
আচ্ছা সুপর্ণা, তোমাদের সেই রজনীগন্ধার গাছটি কি এখনো গন্ধ বিলায়? মনে আছে? পুকুরের শান বাঁধা ঘাটে পাশাপাশি দু’জন বসে জোছনার রং গায়ে মাখতাম? রাতভর রজনীগন্ধার মালা গেঁথে পরিয়ে দিতাম তোমার খোঁপায়। ফুলের ঘ্রাণ নেবে বলে তোমার খোঁপায় মুখ গুঁজে নিতাম তোমার চুলের ঘ্রাণ।
জানো সুধীর, তোমাকে নিয়ে আমি কতো স্বপ্ন দেখেছি? বড় কোন স্বপ্ন নয়, ছোট ছোট স্বপ্ন। আমাদের বিয়ে হবে, আমাদের ছোট্ট একটি ঘর হবে , আমাদের ভালবাসায় ঘর হবে আলোকিত। কোন অট্টালিকা বা প্রাসাদের স্বপ্ন নয়, হোক না একটি কুঁড়েঘর , যার আনাচে কানাচে খেলবে ভালবাসার ঢেউ। রোজ ফাস্টফুড কিম্বা বিরিয়ানি খাওয়ার কোন স্বপ্ন দেখিনি, বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু প্রয়োজন, বাকিটুকু তোমার ভালবাসার স্বপ্ন দেখেছিলাম। টোলপড়া দু’গালে সুধীরের হাতের পরশ বেশ ভালই লাগছিলো সুপর্ণার। সুপর্ণা চোখ বন্ধ করে কেবল আদর নিচ্ছিল। সুধীরের হাত ধরে টান দিতেই ব্যালকনির রশি ছিঁড়ে হুড়মুড় করে সব কাপড় পড়ল সুপর্ণার গায়ে। সুধীর, সুধীর বলে ডাকতে থাকে সুপর্ণা। কোথায় সুধীর? কী ব্যাপার এতক্ষণ তো তার সাথেই তো ছিল। পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তাকে। সুপর্ণা তার হাত ধরে দাঁড়িয়েছিল এতক্ষণ। মুহূর্তে হাওয়া হয়ে গেলো? এদিনটির জন্য সুপর্ণা চব্বিশটি বছর অপেক্ষা করেছিলো। সুধীর কি এতক্ষণ সুপর্ণার সাথেই ছিলো? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুধীরের সাখে কথা বলতে বলতে কখন যে রাত পোহাল টেরও পাওয়া গেলো না। ঐ যে মসজিদে মুয়াজ্জিনের আজান শোনা যাচ্ছে।
একি সুধীর কোথায় ? এখানেই তো ছিলো । এতক্ষণ সুধীরের হাত ভেবে যে হাত ধরে টান দিয়েছিলো সেটি ছিলো ব্যালকনির রশিতে শুকাতে দেয়া তার কামিজের হাতা। সুপর্ণা ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসতেই বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেলো তার মন। এতক্ষণ কাকে নিয়ে ভাবছিল সে। সুধীরের কথা? কে সেই সুধীর? সুধীর কি সুপর্ণাকে ভালবাসত? নাকি শুধুই সুপর্ণা? সুপর্ণা সুধীরকে ভালবাসত বলেই বিয়ে না করে অপেক্ষা করে আছে চব্বিশটা বছর।
এই তো সেদিন । একটি শপিং মলে দূর থেকে সুধীরকে দেখে দৌড়ে ঝাপটে ধরতে গিয়েছিলো সুপর্ণা। কিন্তু কাছাকাছি যেতেই সুধীর পরিচয় করিয়ে দেয়-
সুপর্ণা, এই হচ্ছে আমার স্ত্রী সুরাইয়া। সুরাইয়া, এই হচ্ছে আমার আত্মীয়া সুপর্ণা। ....
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ন্যান্সি দেওয়ান ৩০/১১/২০১৯Nice.
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২৯/১১/২০১৯বেশ তো!