হয় তো এরই নাম ভালবাসা
ডিসেম্বর শেষ, জানুয়ারী শুরু। আমার স্কুল খুলেছে, বাড়ি আসতে হবে। জানুয়ারীর ১ তারিখে রওনা হলাম ঢাকার দিকে। ঐ দিনই বিভা, ওর
বাবাও খুলনা ওদের গ্রামের বাড়ি যাবে । আমি ,মামা, বিভা আর ওর বাবা চরে বসলাম বাসে। বিভা, আমি আর মামা- ওর বাবা পাসা পাসি
সিটে বসলাম। তারা বসলেন ঠিক আমাদের পিছনের সিট দুটোতে। বাহিরে প্রচন্ড শীত। মামা এসে আমাদের দু'জনকে একটি চাদরে
মুরিয়ে দিলেন। কিছুক্ষনের মুধ্যেই বিভা আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরল। আমি তখন খুব ছোট, তাই বেশ কষ্ট হচ্ছিল ওর মাথার ভার
বহন করতে। কিন্তু এক অজানা ভাললাগা আমাকে বিমোহিত করলো। ঘণ্টা দুই পরে ওর ঘুম ভাংল। ও দেখল আমি ওর মাথায় হাত রেখে
আছি আর ও আমার বুকে ঘুমাচ্ছে। ও আস্তে করে বললঃ তোমার কষ্ট হচ্ছে??
-> না।
আর ও আবার অমনি ঘুমিয়ে পরল বিভোর ঘুমে। ঢাকায় এসে আমরা গাড়ি বদল করলাম। ওকে অন্য গাড়িতে তুলে দেবার সময় ওর দু
চোখর কোনে দু'ফোটা অশ্রু দেখেছিলাম । তখন বুঝিনি ঐ দু,ফোটা অশ্রুর মানে কি? কেনই বা ওর চোখে আশ্রু? কিছুক্ষন পরে দেখলাম
আমার চোখেও অশ্রু ঝড়ছে। অশ্রু মুছে গাড়িতে চরলাম, ফিরলাম বাড়ি। হাই স্কুলে ভর্তি হলাম,হাই স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ। কলেজও
শেষ করলাম ভালয় ভালয়।
সম্মান ১ম বর্ষে ভর্তি হলাম। বেশ ভালই কাটতে লাগল দিনগুলো। এরই মধ্যে জুটল অনেক বন্ধুবান্ধব। এদেরই একজন হয়ে উঠল প্রিয়
বন্ধু। ওর নাম রানা, আমার সাথে একই রুমে থাকে।
ও মাঝে মাঝে প্রশ্ন করত, রাইম তুই কি কাউকে পছন্দ করিস বা ভালবাসিস। আমার সাদা মাঠা উত্তরঃ না তো। কিন্তু যখন কলেজ বা স্কুলে
পরতাম। কেউ যদি কোন মেয়েকে সুন্দরী বলত, কেন যেন আমার মনে হত বিভা এর চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী। আজও তাই মনে হয়।
কিন্তু কেন এমন হয় তার উত্তর কখনও খুজিনি কিংবা খুজেছি উত্তর মিলে নি। অথচ আজ আট বছর যাবৎ আমি বিভাকে এক নজরের
জন্যেও দেখিনে, এমন কি ওর কণ্ঠও শুনিনি। কি অদ্ভুদ আমার ধারনা। তাই মনে হল, রানার সাথে আমার ভাবনা গুলো Shaer করি।
সব শুনে ওর এককথা, তুই ঐ মেয়েকে ভালবাসিস।
--> আরে না। আমি কাউকে ভাল-টাল বাসি না।
রানাঃ- শোন, তুই আজ রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভাব। তারপর কাল আমাকে বল তুই কাউকে ভালবাসিস কি না?
রাতে ঘুমাতে গিয়ে দেখলাম, কাউকে না ভাবতেই বিভা বার বার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সকালে ঘুম ভাংতেই রানাকে বললাম, দেখ রানা
তোর কথাই ঠিক। মনে হচ্ছে আমি ওকে ভালবাসি। কিন্তু কিভাবে ওর সাথে যোগাযোগ করব। মামা যে ঐ অফিস থেকে অনেক আগেই
অন্যত্র বদলি হয়েছেন আর বিভার বাবা তারও আগে বদলি হয়েছেন।
হায় রে কপাল !! এত দিন পরে যাকে ভালবাসি বলে আবিস্কার করলাম, তার সাথে কোন যোগাযোগ হবে না, কথা হবে। তাতো মানা যায়
না। উপায়ন্তু না পেয়ে মামাত ভাই মাহিরকে সব বললাম। ও সব কথা শুনে শুধু হাসল।
১০ দিন পর, মাহিরের মোবাইলে ৫০০ টাকা দিয়ে বিনিময়ে পেলাম বাড়ির ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার। তাও তো পেলাম। ফোনে নয়, মনের
কথা বলতে চিঠি লিখলাম ওকে,
----------- বিভা,
আজ এই নীরব নিশিতে তোমার সৃত্মিতে লিখলাম দু'চরন। জানিনা তোমার কেমন লাগবে। আমি ভালবাসার কোন সজ্ঞা জানিনা। তবে
এতটুকু বলতে পারি, যদি ভালবাসা এমন হয় যে, যাকে ভালবাসে তাকে সারাক্ষন মনে পরে, তার সৃত্মি বার বার চোখে ভাসে, তাকে নিয়ে
ভাবতে ভাল লাগে। তবে আমি বলব আমি তোমাকে ভালবাসি। জানিনা তুমি আমার কথাগুলো কোনভাবে নিচ্ছ। হয়তোবা ভাবছ আমি পাগল
না কি? তবে আমি বলব হ্যাঁ। কারন তোমার ভালবাসার এক ধরনের পাগলই আমি। পাগল না হলে কেউকি ৮ বছর আগের সৃত্মিকে এভাবে
মনের মধ্যে পুষে রাখে।
যা-ই হোক, যে দিন তুমি, আমি, মামা, তোমার আব্বু ঢাকায় আসছিলাম। সে তুমি আমি পাশাপাশি বসছিলাম। কিন্তু সেদিন ছিল
প্রচন্ড শীত। তাই তোমাকে আর আমাকে মামা একটা চাদর দিয়ে জড়িয়ে দিয়েছিলেন। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই তুমি গুমিয়ে পরেছিলে
আমার বুকে মাথা রেখে। আমি আজও তা ভুলতে পারিনি। বার বার মনে পরে সেই সৃত্মি। জানি না তুমি মনে রেখেছ কি না?
যা-ই হোক আমি বিশ্বাস করতাম, আমি একদিন না একদিন তোমার খোজ পাবই। আর পেয়েছিও। আমি আরও বিশ্বাস করি তুমি
আমারই হবে। আল্লাহ তা আলা ইনসাল্লাহ তাও পূরন করবেন। তুমি ভাল থেকো আর আমার জন্য দোয়া করো।
শোন তোমার প্রতি আমার অনুভূতিটা ঠিক এমনঃ
There are three part in my heart.
One of my Allah, one of my father & mother.
one of my Teacher.
There are no place in my heart of you.
Because you are my heart beet.........
আমার হৃদয়ে তিনটি আসন। একটিতে আমার আল্লাহ, একটিতে আমার বাবা-মা, আন্যটিতে আমার শিক্ষক। আমার
হৃদয়ের সেখানে তোমার কোন জায়গা নেই। কারন তুমি আমার হৃদয়ের স্পন্দন। স্পন্দন ছাড়া কোন হৃদয়, কোন মানুষ বাচতে পারে না।
তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ- তুমি আমার কতক্ষানি............
ইতি,
রাইম।
এই মহামূল্যবান পত্রখানা campus এ যাওয়ার পথে post করলাম। সাত দিন পরে ফোন করলাম। ও পাশ থেকে
---- হ্যালো।
রাইমঃ এটা কি বিভাদের নাম্বার?
---- হ্যাঁ, আমি বিভার আম্মু।
রাইমঃ আস-সালামু আলাইকুম Aunt আমি রাইম। কেমন আছেন?
----- জ্বি- ভাল। তুমি কেমন আছ বাবা? তোমার বাবা মা ভাল আছে?
রাইমঃ জ্বি, ভাল আছেন। Aunt বিভা আছে ... ওর সাথে একটু কথা বলতাম।
------- হ্যাঁ- ধর ডেকে দিচ্ছি।
আর অমনি আমার হৃদয়ে আনন্দের নহর বইতে লাগল। বহুদিন পরে যাকে নিজের অজান্তে আত্মার সাথে জড়িয়ে নিয়েছি তার সাথে কথা
বলব ভেবে।হৃদয়ের উজার করে দিয়েছি যাকে সেই বুঝি এই মেয়ে। যাকে দেব বলে ভালবাসার পাহাড় জমিয়েছি। পারব কি আজ তার
সামান্যটুকু তাকে দিতে? জানি না হয়তো বা পারব, নয় না। কিন্তু তাকে যে দিতেই। আমি যে আর পারছিনা এই ভালবাসার ভার বইতে।
অবশেষে সে
---- হ্যালো, কে, রাইম ভাইয়া ?
দীর্ঘ্য আটটি বছর যে ভালবাসা কে মনের অজান্তে মনের মধ্যে লালন করেছি ।তার কন্ঠ শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। মনে হল
কোন জল পরী তার সুশীতল কন্ঠে আমাকে বলছে- আমি তো তোমার, তোমারই ছিলাম, আজও তোমারই আছি।
> জ্বি, তুমি কেমন আছ?
বিভাঃ ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? আমাকে এতদিন মনে রেখেছেন?
রাইমঃ আমি ভাল আছি । আর মনে রাখার কথা বলছ- কিছু জিনিস মনে রাখতে হয় না। মন তার আপন তাগিদে মনে রাখে। আমার
বেলায়ও তাই হয়েছে।
বিভাঃ আপনি... পাগল একটা।
রাইমঃ তাহলে তুমি মানছ?
বিভাঃ কি?
রাইমঃ আমি তোমার ভালবাসায় পাগল হয়েছি।
বিভাঃ না, মানি নি। আপনি বদ্ধ পাগল হয়েছেন। শুধু পাগল বললে ভুল হবে।
এর পর চলতে থাকল ওদের ভাললাগা ভালবাসার কথা। প্রতি দিন সকাল, সন্ধ্যা, রাত তিন বেলাতেই কথা হত দু'জনের। ৬ মাস বাদে
দু'জেনের দেখা হল। বেশ পছন্দ করল দু'জন দু'জনকে। শুরু হল স্বপ্ন দেখা। মনে ক্যানভাসে শুরু হল রংতুলির আঁচর। তৈরি হল নানান
রঙ্গের হাজার ছবি। মনে আকাশে হাজার তারার আনা গোনা। পূর্নিমা চাঁদে জ্যোস্না স্নান। মেঘের ভেলায় সমুদ্র পাড়ি। পাখির ডানায় আকাশ
জয়। টুনির বাসায় রাত্রি জাপন। রোদের গুরোয় গরাগরি, রাতের অন্ধ্যকারে সাতার কাটা .........আরও কত কি। এভাবে চলতে থাকল দীর্ঘ্য
১১ মাস।
হঠ্যাৎ একদিন বিভার কান্নাভেজা কন্ঠ......
বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
রাইমঃ বল কি !! Aunt কে সব বলনি?
বিভাঃ বলেছি, কিন্তু বাবা মায়ের কোন কথাই শুনছেন না।
বিভা আবারও কেদে ফেল্ল। শোন আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। রাইম কিছু একটা কর।
ওর সমস্ত কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। দিশে হারা হয়ে গেলাম, পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। ওকে ছাড়া এ জীবন কি
করে চলবে ? কি ভাবে কাটবে আমার আগামী দিন? ও ছারা এই পৃথিবীতে কে আমাকে অমন করে বুঝবে, অমন করে ভালবাসবে ? আমি
কি তবে একা হয়ে যাচ্ছি? হাজারও প্রশ্ন নিয়ে aunt (বিভার আম্মু) কে ফোন কলাম।
ও পাশ থেকে ফোন ধরেই বললঃ কে? রাইম।
আমি নিশ্চুপ, তিনি বলেই চলছেন, বাবা তুমি কেমন আছ ? তোমার শরীর ভাল ? তোমার আব্বু আম্মু কেমন আছেন?
আমি আর কান্না ধরে রাখতে পারলাম না ।aunt আপনি জানেন না আমি বিভাকে ভালবাসি? আমি ওকে ছাড়া কি করে বাচব। ও কি
আমাকে ছাড়া এক মুহূর্তের জন্য সুখে থাকবে?
=> রাইম, আমিই সবই জানি, বাবা। কিন্তু তোমার Unkle কে তো জানো, নিজের কথা ছাড়া কারো কথা শোনেন না।
রাইমঃ aunt তা হলে আমি কি করব? আপনি বলেন আমার কি করা ঊচিত?
=> রাইম, আমি চাই- তুমি বিভাকে নিয়ে সুখে থাক। ও আমার একমাত্র মেয়ে। আর তোমাকেও আমি আমার সন্তানের মত ভালবাসি। শোন
বিয়ের তারিখ আরো পনের দিন পরে । তুমি যদি চাও, যে ভাবেই হোক আমি বিভাকে তোমার কাছে পৌছে দেব। কিন্তু তাতে হয়তো
আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত তোমার হাতে । তোমার বাবা-মা কে আমার সালাম দিও।
যেন কথা বলার সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেললাম। ফোন কেটে টেবিলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলাম। মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব
করলাম। মনে হচ্ছে ঘার থেকে মাথাটা বুঝি ছিরে পরবে। চোখ দিয়ে অঝরে পানি পরছে । এভাবেই অচেতন মনে পরে রইল সারা রাত
টেবিলের উপর।
সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠে রানা দেখল, রাইম টেবিলে ঘূমাচ্ছে । ও রাইমের মাথায় হাত দিতেই শিঊরে উঠল। ওর শরীর শক্ত হয়ে
আছে, আর অস্বাভাবিক রকমের ঠান্ডা। রানা দিশেহারা হয়ে রাইমের গ্রামের বারিতে ফোন করল। আর রাইম কে নিয়ে গেল ঢাকা
মেডিকেলে। দুপুর ১২টার মধ্যে ওর বাবা-মা সহ আত্মিয়স্বজন চলে এল ঢাকা মেডিকেলে। ডাক্টার সোবাহান সাহেব emergency room
থেকে বেরিয়ে, রাইমের দুলাভাইকে দেকে নিচু গলায় বললেনঃ রোগীর অত্যাধিক Hypertentionএর কারনে ঘারের vain ছিরে মারা
গেছে। আপনারা লাশ নিয়ে জেতে পারেন। মুহূতের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলের emergency room এ কান্নার রোল পরে গেল। রাইময়ের
মায়ের সেকি কান্না। তার নারী ছেরা ধন, তাকে আর মা বলে ডাকবে না। আর কোনো আবদার করবে না সে মায়ের কাছে। মাকে আর
বলবে না, মাগো আসি, আমার জন্য চিন্তা করনা, আমি ভাল থাকব।
রাইমকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে অন্তিম শয়নে শায়িত করা হল। রানা তার প্রিয় বন্ধুকে শান্তির নিদ্রায় শুইয়ে দিয়ে তিন দিন পরে ঢাকা
ফিরল। রুমে ঢুকেই চোখ পরল টেবিলে পড়ে থাকা রাইমের মোবাইল এর দিকে। আর এই তিন দিন হাজারও বার ফোন করেও বিভা পেল
না, তার প্রিয় মানুষ রাইমের একটু খোজ। এক সময় চাজ শেষে ওটাও বন্ধ হয়ে গেল।
বিভা পাগল প্রায়, ক'দিন পরেই তার বিয়ে। অথচ রাইমের মোবাইল বন্ধ কোন খোজ নেই। বিভা বেশ জেদি মেয়ে, এ জীবনে রাইমকে না
পেলে অন্য কারো বউও সে হবেনা। তা কাউকে কিছু না জানিয়ে চলেগেল বাড়ি থেকে। ঢাকা এসে অনেক চেষ্টা করেও রাইমের খোজ না
পেয়ে কোন এক বান্ধবীর চাচার মাধ্যমে একটি privet farm এ চাকুরি নিয়ে নিজে কে বাচিয়ে রাখল তার প্রিয় মানুষ রাইমের জন্য।
হায়রে নিয়তি, অথচ রাইম, যে নাকি তার হৃদয় আকাশের হাজার তারার মাঝে একটি চাঁদকে বাঁচিয়ে রাখতে চলে গেছে এই পৃথিবীর বুক
থেকে। তাকে বেঁচে থাকতে দেখতে হয় নি তার আকাশের চাঁদ, অন্য কোন আকাশের বুকে আলো ছরাচ্ছে।
কিন্তু বিভার বাবা, যে মেয়ে বাড়ি থেকে পালাতে পারে তাকে আর বাড়িতে আনবে না পন করেছে। কিছু দিন পরে তারা (বিভার বাবা-মা)
রাইমের মৃত্যুর খবর জানতে পারে। তখনই তারা তাদের মেয়ের খোজে বেরিয়ে পরে। দুই একদিনের মধ্যে পেয়েও যায়। একি হাল হয়েছে
বিভার চোখের নিচে কালি। সুন্দর মুখখানা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। শরৎচন্দ্রের ভাষায়ঃ " ঠিক যেন ফুলদানিতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা
বাসি ফুলের মত। হাত দিয়া একটু স্পর্শ করিলে, এতটুকু নাড়াচাড়া করিতে গেলেই ঝড়িয়া পড়িবে।"
বিভার বাবা এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, চল মা বাড়ি চল, তুই যা চাবি তাই হবে।
বিভাঃ না, বাবা আমি বাড়ি যাব না। আমি এখানে একটা part time job করছি আর রাইম যে কলেজে পড়ে সেখানেই ডিগ্রিতে ভর্তি
হয়েছি। কিন্তু এখনও ওর সাথে আমার দেখা হয় নি। বাবা তুমি চলে যাও, আমি আর বাড়ি যাবনা। আমার জন্য কোন চিন্তা কর না। আমি
ভালই থাকব।
বাবাঃ ঠিক আছে। তুই যা চাস তা-ই করিস। এখন বাড়ি চল, তোর মা তোর জন্য অনেক চিন্তা করতেছে, সে কোন খাওয়া দাওয়া করছে না।
আর তোর ঐ বিয়ে আমরা ভেঙ্গে দিয়েছি। কিছু দিন বাড়ি থেকে ঘুরে আস। তোর কোন চাকুরি কতে হবে না। তুই এখানে হোস্টেলে থেকে
পড়াশুনা করবি আমি সে ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এবার চল মা। কথাগুলো বলতে যেন কষ্টে তার পাজর ভেঙ্গে যাচ্ছে।
বাড়ি থেকে ফিরে এসে যাথারিতি ক্লাস করারা শুরু করল। ক্লাস শেষে রাইমের ক্লাসের সামনে গিয়ে অপেক্ষা করে কখন তার প্রিয়
মানুষটির দেখা পাবে সে আসায়। দেখা মেলে না। ক্লান্ত হয়ে অশ্রু ভেজা নয়নে ফিরে আসে রুমে। কিন্তু রাইমের দেখা সে পাবে কি
কখনও তাও জানে না...........................
বাবাও খুলনা ওদের গ্রামের বাড়ি যাবে । আমি ,মামা, বিভা আর ওর বাবা চরে বসলাম বাসে। বিভা, আমি আর মামা- ওর বাবা পাসা পাসি
সিটে বসলাম। তারা বসলেন ঠিক আমাদের পিছনের সিট দুটোতে। বাহিরে প্রচন্ড শীত। মামা এসে আমাদের দু'জনকে একটি চাদরে
মুরিয়ে দিলেন। কিছুক্ষনের মুধ্যেই বিভা আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরল। আমি তখন খুব ছোট, তাই বেশ কষ্ট হচ্ছিল ওর মাথার ভার
বহন করতে। কিন্তু এক অজানা ভাললাগা আমাকে বিমোহিত করলো। ঘণ্টা দুই পরে ওর ঘুম ভাংল। ও দেখল আমি ওর মাথায় হাত রেখে
আছি আর ও আমার বুকে ঘুমাচ্ছে। ও আস্তে করে বললঃ তোমার কষ্ট হচ্ছে??
-> না।
আর ও আবার অমনি ঘুমিয়ে পরল বিভোর ঘুমে। ঢাকায় এসে আমরা গাড়ি বদল করলাম। ওকে অন্য গাড়িতে তুলে দেবার সময় ওর দু
চোখর কোনে দু'ফোটা অশ্রু দেখেছিলাম । তখন বুঝিনি ঐ দু,ফোটা অশ্রুর মানে কি? কেনই বা ওর চোখে আশ্রু? কিছুক্ষন পরে দেখলাম
আমার চোখেও অশ্রু ঝড়ছে। অশ্রু মুছে গাড়িতে চরলাম, ফিরলাম বাড়ি। হাই স্কুলে ভর্তি হলাম,হাই স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ। কলেজও
শেষ করলাম ভালয় ভালয়।
সম্মান ১ম বর্ষে ভর্তি হলাম। বেশ ভালই কাটতে লাগল দিনগুলো। এরই মধ্যে জুটল অনেক বন্ধুবান্ধব। এদেরই একজন হয়ে উঠল প্রিয়
বন্ধু। ওর নাম রানা, আমার সাথে একই রুমে থাকে।
ও মাঝে মাঝে প্রশ্ন করত, রাইম তুই কি কাউকে পছন্দ করিস বা ভালবাসিস। আমার সাদা মাঠা উত্তরঃ না তো। কিন্তু যখন কলেজ বা স্কুলে
পরতাম। কেউ যদি কোন মেয়েকে সুন্দরী বলত, কেন যেন আমার মনে হত বিভা এর চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী। আজও তাই মনে হয়।
কিন্তু কেন এমন হয় তার উত্তর কখনও খুজিনি কিংবা খুজেছি উত্তর মিলে নি। অথচ আজ আট বছর যাবৎ আমি বিভাকে এক নজরের
জন্যেও দেখিনে, এমন কি ওর কণ্ঠও শুনিনি। কি অদ্ভুদ আমার ধারনা। তাই মনে হল, রানার সাথে আমার ভাবনা গুলো Shaer করি।
সব শুনে ওর এককথা, তুই ঐ মেয়েকে ভালবাসিস।
--> আরে না। আমি কাউকে ভাল-টাল বাসি না।
রানাঃ- শোন, তুই আজ রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ভাব। তারপর কাল আমাকে বল তুই কাউকে ভালবাসিস কি না?
রাতে ঘুমাতে গিয়ে দেখলাম, কাউকে না ভাবতেই বিভা বার বার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সকালে ঘুম ভাংতেই রানাকে বললাম, দেখ রানা
তোর কথাই ঠিক। মনে হচ্ছে আমি ওকে ভালবাসি। কিন্তু কিভাবে ওর সাথে যোগাযোগ করব। মামা যে ঐ অফিস থেকে অনেক আগেই
অন্যত্র বদলি হয়েছেন আর বিভার বাবা তারও আগে বদলি হয়েছেন।
হায় রে কপাল !! এত দিন পরে যাকে ভালবাসি বলে আবিস্কার করলাম, তার সাথে কোন যোগাযোগ হবে না, কথা হবে। তাতো মানা যায়
না। উপায়ন্তু না পেয়ে মামাত ভাই মাহিরকে সব বললাম। ও সব কথা শুনে শুধু হাসল।
১০ দিন পর, মাহিরের মোবাইলে ৫০০ টাকা দিয়ে বিনিময়ে পেলাম বাড়ির ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার। তাও তো পেলাম। ফোনে নয়, মনের
কথা বলতে চিঠি লিখলাম ওকে,
----------- বিভা,
আজ এই নীরব নিশিতে তোমার সৃত্মিতে লিখলাম দু'চরন। জানিনা তোমার কেমন লাগবে। আমি ভালবাসার কোন সজ্ঞা জানিনা। তবে
এতটুকু বলতে পারি, যদি ভালবাসা এমন হয় যে, যাকে ভালবাসে তাকে সারাক্ষন মনে পরে, তার সৃত্মি বার বার চোখে ভাসে, তাকে নিয়ে
ভাবতে ভাল লাগে। তবে আমি বলব আমি তোমাকে ভালবাসি। জানিনা তুমি আমার কথাগুলো কোনভাবে নিচ্ছ। হয়তোবা ভাবছ আমি পাগল
না কি? তবে আমি বলব হ্যাঁ। কারন তোমার ভালবাসার এক ধরনের পাগলই আমি। পাগল না হলে কেউকি ৮ বছর আগের সৃত্মিকে এভাবে
মনের মধ্যে পুষে রাখে।
যা-ই হোক, যে দিন তুমি, আমি, মামা, তোমার আব্বু ঢাকায় আসছিলাম। সে তুমি আমি পাশাপাশি বসছিলাম। কিন্তু সেদিন ছিল
প্রচন্ড শীত। তাই তোমাকে আর আমাকে মামা একটা চাদর দিয়ে জড়িয়ে দিয়েছিলেন। আর কিছুক্ষনের মধ্যেই তুমি গুমিয়ে পরেছিলে
আমার বুকে মাথা রেখে। আমি আজও তা ভুলতে পারিনি। বার বার মনে পরে সেই সৃত্মি। জানি না তুমি মনে রেখেছ কি না?
যা-ই হোক আমি বিশ্বাস করতাম, আমি একদিন না একদিন তোমার খোজ পাবই। আর পেয়েছিও। আমি আরও বিশ্বাস করি তুমি
আমারই হবে। আল্লাহ তা আলা ইনসাল্লাহ তাও পূরন করবেন। তুমি ভাল থেকো আর আমার জন্য দোয়া করো।
শোন তোমার প্রতি আমার অনুভূতিটা ঠিক এমনঃ
There are three part in my heart.
One of my Allah, one of my father & mother.
one of my Teacher.
There are no place in my heart of you.
Because you are my heart beet.........
আমার হৃদয়ে তিনটি আসন। একটিতে আমার আল্লাহ, একটিতে আমার বাবা-মা, আন্যটিতে আমার শিক্ষক। আমার
হৃদয়ের সেখানে তোমার কোন জায়গা নেই। কারন তুমি আমার হৃদয়ের স্পন্দন। স্পন্দন ছাড়া কোন হৃদয়, কোন মানুষ বাচতে পারে না।
তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ- তুমি আমার কতক্ষানি............
ইতি,
রাইম।
এই মহামূল্যবান পত্রখানা campus এ যাওয়ার পথে post করলাম। সাত দিন পরে ফোন করলাম। ও পাশ থেকে
---- হ্যালো।
রাইমঃ এটা কি বিভাদের নাম্বার?
---- হ্যাঁ, আমি বিভার আম্মু।
রাইমঃ আস-সালামু আলাইকুম Aunt আমি রাইম। কেমন আছেন?
----- জ্বি- ভাল। তুমি কেমন আছ বাবা? তোমার বাবা মা ভাল আছে?
রাইমঃ জ্বি, ভাল আছেন। Aunt বিভা আছে ... ওর সাথে একটু কথা বলতাম।
------- হ্যাঁ- ধর ডেকে দিচ্ছি।
আর অমনি আমার হৃদয়ে আনন্দের নহর বইতে লাগল। বহুদিন পরে যাকে নিজের অজান্তে আত্মার সাথে জড়িয়ে নিয়েছি তার সাথে কথা
বলব ভেবে।হৃদয়ের উজার করে দিয়েছি যাকে সেই বুঝি এই মেয়ে। যাকে দেব বলে ভালবাসার পাহাড় জমিয়েছি। পারব কি আজ তার
সামান্যটুকু তাকে দিতে? জানি না হয়তো বা পারব, নয় না। কিন্তু তাকে যে দিতেই। আমি যে আর পারছিনা এই ভালবাসার ভার বইতে।
অবশেষে সে
---- হ্যালো, কে, রাইম ভাইয়া ?
দীর্ঘ্য আটটি বছর যে ভালবাসা কে মনের অজান্তে মনের মধ্যে লালন করেছি ।তার কন্ঠ শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। মনে হল
কোন জল পরী তার সুশীতল কন্ঠে আমাকে বলছে- আমি তো তোমার, তোমারই ছিলাম, আজও তোমারই আছি।
> জ্বি, তুমি কেমন আছ?
বিভাঃ ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? আমাকে এতদিন মনে রেখেছেন?
রাইমঃ আমি ভাল আছি । আর মনে রাখার কথা বলছ- কিছু জিনিস মনে রাখতে হয় না। মন তার আপন তাগিদে মনে রাখে। আমার
বেলায়ও তাই হয়েছে।
বিভাঃ আপনি... পাগল একটা।
রাইমঃ তাহলে তুমি মানছ?
বিভাঃ কি?
রাইমঃ আমি তোমার ভালবাসায় পাগল হয়েছি।
বিভাঃ না, মানি নি। আপনি বদ্ধ পাগল হয়েছেন। শুধু পাগল বললে ভুল হবে।
এর পর চলতে থাকল ওদের ভাললাগা ভালবাসার কথা। প্রতি দিন সকাল, সন্ধ্যা, রাত তিন বেলাতেই কথা হত দু'জনের। ৬ মাস বাদে
দু'জেনের দেখা হল। বেশ পছন্দ করল দু'জন দু'জনকে। শুরু হল স্বপ্ন দেখা। মনে ক্যানভাসে শুরু হল রংতুলির আঁচর। তৈরি হল নানান
রঙ্গের হাজার ছবি। মনে আকাশে হাজার তারার আনা গোনা। পূর্নিমা চাঁদে জ্যোস্না স্নান। মেঘের ভেলায় সমুদ্র পাড়ি। পাখির ডানায় আকাশ
জয়। টুনির বাসায় রাত্রি জাপন। রোদের গুরোয় গরাগরি, রাতের অন্ধ্যকারে সাতার কাটা .........আরও কত কি। এভাবে চলতে থাকল দীর্ঘ্য
১১ মাস।
হঠ্যাৎ একদিন বিভার কান্নাভেজা কন্ঠ......
বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
রাইমঃ বল কি !! Aunt কে সব বলনি?
বিভাঃ বলেছি, কিন্তু বাবা মায়ের কোন কথাই শুনছেন না।
বিভা আবারও কেদে ফেল্ল। শোন আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। রাইম কিছু একটা কর।
ওর সমস্ত কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। দিশে হারা হয়ে গেলাম, পায়ের নিচের মাটি সরে গেল। ওকে ছাড়া এ জীবন কি
করে চলবে ? কি ভাবে কাটবে আমার আগামী দিন? ও ছারা এই পৃথিবীতে কে আমাকে অমন করে বুঝবে, অমন করে ভালবাসবে ? আমি
কি তবে একা হয়ে যাচ্ছি? হাজারও প্রশ্ন নিয়ে aunt (বিভার আম্মু) কে ফোন কলাম।
ও পাশ থেকে ফোন ধরেই বললঃ কে? রাইম।
আমি নিশ্চুপ, তিনি বলেই চলছেন, বাবা তুমি কেমন আছ ? তোমার শরীর ভাল ? তোমার আব্বু আম্মু কেমন আছেন?
আমি আর কান্না ধরে রাখতে পারলাম না ।aunt আপনি জানেন না আমি বিভাকে ভালবাসি? আমি ওকে ছাড়া কি করে বাচব। ও কি
আমাকে ছাড়া এক মুহূর্তের জন্য সুখে থাকবে?
=> রাইম, আমিই সবই জানি, বাবা। কিন্তু তোমার Unkle কে তো জানো, নিজের কথা ছাড়া কারো কথা শোনেন না।
রাইমঃ aunt তা হলে আমি কি করব? আপনি বলেন আমার কি করা ঊচিত?
=> রাইম, আমি চাই- তুমি বিভাকে নিয়ে সুখে থাক। ও আমার একমাত্র মেয়ে। আর তোমাকেও আমি আমার সন্তানের মত ভালবাসি। শোন
বিয়ের তারিখ আরো পনের দিন পরে । তুমি যদি চাও, যে ভাবেই হোক আমি বিভাকে তোমার কাছে পৌছে দেব। কিন্তু তাতে হয়তো
আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত তোমার হাতে । তোমার বাবা-মা কে আমার সালাম দিও।
যেন কথা বলার সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেললাম। ফোন কেটে টেবিলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে রইলাম। মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব
করলাম। মনে হচ্ছে ঘার থেকে মাথাটা বুঝি ছিরে পরবে। চোখ দিয়ে অঝরে পানি পরছে । এভাবেই অচেতন মনে পরে রইল সারা রাত
টেবিলের উপর।
সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠে রানা দেখল, রাইম টেবিলে ঘূমাচ্ছে । ও রাইমের মাথায় হাত দিতেই শিঊরে উঠল। ওর শরীর শক্ত হয়ে
আছে, আর অস্বাভাবিক রকমের ঠান্ডা। রানা দিশেহারা হয়ে রাইমের গ্রামের বারিতে ফোন করল। আর রাইম কে নিয়ে গেল ঢাকা
মেডিকেলে। দুপুর ১২টার মধ্যে ওর বাবা-মা সহ আত্মিয়স্বজন চলে এল ঢাকা মেডিকেলে। ডাক্টার সোবাহান সাহেব emergency room
থেকে বেরিয়ে, রাইমের দুলাভাইকে দেকে নিচু গলায় বললেনঃ রোগীর অত্যাধিক Hypertentionএর কারনে ঘারের vain ছিরে মারা
গেছে। আপনারা লাশ নিয়ে জেতে পারেন। মুহূতের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলের emergency room এ কান্নার রোল পরে গেল। রাইময়ের
মায়ের সেকি কান্না। তার নারী ছেরা ধন, তাকে আর মা বলে ডাকবে না। আর কোনো আবদার করবে না সে মায়ের কাছে। মাকে আর
বলবে না, মাগো আসি, আমার জন্য চিন্তা করনা, আমি ভাল থাকব।
রাইমকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে অন্তিম শয়নে শায়িত করা হল। রানা তার প্রিয় বন্ধুকে শান্তির নিদ্রায় শুইয়ে দিয়ে তিন দিন পরে ঢাকা
ফিরল। রুমে ঢুকেই চোখ পরল টেবিলে পড়ে থাকা রাইমের মোবাইল এর দিকে। আর এই তিন দিন হাজারও বার ফোন করেও বিভা পেল
না, তার প্রিয় মানুষ রাইমের একটু খোজ। এক সময় চাজ শেষে ওটাও বন্ধ হয়ে গেল।
বিভা পাগল প্রায়, ক'দিন পরেই তার বিয়ে। অথচ রাইমের মোবাইল বন্ধ কোন খোজ নেই। বিভা বেশ জেদি মেয়ে, এ জীবনে রাইমকে না
পেলে অন্য কারো বউও সে হবেনা। তা কাউকে কিছু না জানিয়ে চলেগেল বাড়ি থেকে। ঢাকা এসে অনেক চেষ্টা করেও রাইমের খোজ না
পেয়ে কোন এক বান্ধবীর চাচার মাধ্যমে একটি privet farm এ চাকুরি নিয়ে নিজে কে বাচিয়ে রাখল তার প্রিয় মানুষ রাইমের জন্য।
হায়রে নিয়তি, অথচ রাইম, যে নাকি তার হৃদয় আকাশের হাজার তারার মাঝে একটি চাঁদকে বাঁচিয়ে রাখতে চলে গেছে এই পৃথিবীর বুক
থেকে। তাকে বেঁচে থাকতে দেখতে হয় নি তার আকাশের চাঁদ, অন্য কোন আকাশের বুকে আলো ছরাচ্ছে।
কিন্তু বিভার বাবা, যে মেয়ে বাড়ি থেকে পালাতে পারে তাকে আর বাড়িতে আনবে না পন করেছে। কিছু দিন পরে তারা (বিভার বাবা-মা)
রাইমের মৃত্যুর খবর জানতে পারে। তখনই তারা তাদের মেয়ের খোজে বেরিয়ে পরে। দুই একদিনের মধ্যে পেয়েও যায়। একি হাল হয়েছে
বিভার চোখের নিচে কালি। সুন্দর মুখখানা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। শরৎচন্দ্রের ভাষায়ঃ " ঠিক যেন ফুলদানিতে জল দিয়া ভিজাইয়া রাখা
বাসি ফুলের মত। হাত দিয়া একটু স্পর্শ করিলে, এতটুকু নাড়াচাড়া করিতে গেলেই ঝড়িয়া পড়িবে।"
বিভার বাবা এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, চল মা বাড়ি চল, তুই যা চাবি তাই হবে।
বিভাঃ না, বাবা আমি বাড়ি যাব না। আমি এখানে একটা part time job করছি আর রাইম যে কলেজে পড়ে সেখানেই ডিগ্রিতে ভর্তি
হয়েছি। কিন্তু এখনও ওর সাথে আমার দেখা হয় নি। বাবা তুমি চলে যাও, আমি আর বাড়ি যাবনা। আমার জন্য কোন চিন্তা কর না। আমি
ভালই থাকব।
বাবাঃ ঠিক আছে। তুই যা চাস তা-ই করিস। এখন বাড়ি চল, তোর মা তোর জন্য অনেক চিন্তা করতেছে, সে কোন খাওয়া দাওয়া করছে না।
আর তোর ঐ বিয়ে আমরা ভেঙ্গে দিয়েছি। কিছু দিন বাড়ি থেকে ঘুরে আস। তোর কোন চাকুরি কতে হবে না। তুই এখানে হোস্টেলে থেকে
পড়াশুনা করবি আমি সে ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। এবার চল মা। কথাগুলো বলতে যেন কষ্টে তার পাজর ভেঙ্গে যাচ্ছে।
বাড়ি থেকে ফিরে এসে যাথারিতি ক্লাস করারা শুরু করল। ক্লাস শেষে রাইমের ক্লাসের সামনে গিয়ে অপেক্ষা করে কখন তার প্রিয়
মানুষটির দেখা পাবে সে আসায়। দেখা মেলে না। ক্লান্ত হয়ে অশ্রু ভেজা নয়নে ফিরে আসে রুমে। কিন্তু রাইমের দেখা সে পাবে কি
কখনও তাও জানে না...........................
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জয়শ্রী রায় ১৮/০৪/২০১৫গল্পের থিম খুবই ভালো । বাংলা বানানগুলোর প্রতি একটু নজর দিতে হবে আর গল্পের পরিবেশনা উন্নত করতে হবে । এমন ভাবে উপস্থাপনা করতে হবে যেন সামনা সামনি আপনি সকলকে আপনার গল্প শোনাচ্ছেন । মনে কিছু করলেন না তো ? শুভেচ্ছা রইল ।
-
অগ্নিপক্ষ ১৮/০৪/২০১৫