www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

তূমি ভুলিবার নও

লন্ডন প্রবাসি অর্পিতা চৌধুরী। দাদুকে প্রচন্ড ভালবাসে, তাই পরীক্ষা শেষ করে চলে এল অসুস্থ দাদুর পাশে। রাজা-রানী, রাক্ষস- খক্ষস আর বুড়ির গল্প শুনতে। ঢাকা এয়ার পোর্ট এ পৌঁছাল সারে এগারটা নাগাদ। বেরুতে বেরুতে দুপুর ১ টা । এয়ার পোর্ট থেকে বেরিয়ে সোজা এয়ার পোর্ট রেল স্টেশনে,দুপুর ২ টায় আখাঊরার ট্রেন। তাই টিকেট কেটে ট্রেনের অপেক্ষায় waiting room এ বসে আছে। ২ টার ট্রেন অবশেষে আসল বিকাল ৪ টায়। অর্পিতা বেশ ক্লান্ত, দীঘক্ষন প্লেন জার্নি তার পর অপেক্ষা। তবুও মনের ভিতর একটা আনন্দের অনুভূতি। বেশ ভাল লাগছে দাদুর সাথে কাটান ছোটবেলার সমায়গুলো মনে করে। আজ ১০ বছর পরে আবার দাদুর সাথে সামনা সামনি দেখা হবে, কথা হবে ভাবতে ভাল লাগছে। কিন্তু যখনই দাদুর অসুস্থতার কথা মনে পরল অমনি মনটা খারাপ হয়ে গেল। চুপচাপ জানালার বাহিরে মুখ দিয়ে বসে রইল। ট্রেন ৮ টা নাগাদ পৌছাল আখাউরা স্টেশনে।
স্টেশনে নেমে দেখলাম চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। দাদুকে চমকে দেবার জন্য বাড়িতে ফোন করিনি। কিন্তু এখন দেখি ফোন না করেও কোন উপায় নাই। কারন দশ বছর আগের চেনা পথ - তার উপর অন্ধ্যকার। গ্রামের রাস্তা কনো মটরযান নেই, ভ্যান বা রিক্সাই একমাত্র ব্যবস্থা। ফোন করে একটা বেঞ্চের একোনে বসে আছি।
স্টেশন মাষ্টার আর একটু দূরে একটা চায়ের দোকানের দোকানী ছাড়া আর কোন জনমানবের চিহ্ন মাত্র নেই। সঙ্গত কারনেই বেশ নিরব পরিবেশ। হঠাৎ মিউ শব্দ শুনেই চমকে উঠলাম। চমৎকার একটা বিড়াল খেলা করছে। বেশ মগ্ধ হয়ে বিড়ালের খেলা দেখলাম। সোজা হয়ে বসতেই ভূত দেখার মত চমকে গেলাম। আমার সামনে একটা হ্যাংলা পাতলা গড়নের একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে সিগারেট জ্বলছে।কেন জেন ভয় ভয় লাগছে। নিজের অজান্তে প্রশ্ন করলামঃ কে আপনি ?
=> আমি যে ই হই। আমি ভাবছি আপনি কে?
অর্পিতাঃ আমি অর্পিতা চৌধুরি, বোরহান উদ্দিন চৌধুরির নাতনী। এ এলাকার সবাই তাকে চেনে। নিশ্চয়-ই আপনিও চেনেন?
=> দেখুন আমি বোরহান উদ্দিন- টোরহান উদ্দিন কাউকে চিনি না। আর শুনুন এই জাগায়টা বেশি ভাল না । বিশেষ করে আপনি যে বেঞ্চটিতে বসে আছেন তা তো নয়-ই।
অর্পিতাঃ কেন? এখানে কি?
=> এই তো দিন তিনয়েক আগে ঐখানে বসাছিল একজন ভদ্রলোক খুন হয়েছেন। ভাবা যায়!! আমাদের দেশের লোকগুলো কত খারাপ মাত্র ৯৭৬ টাকা আর এক প্যাকেট সিগারেট এর জন্য একজন মানুষকে কি ভাবে খুন করে।
অর্পিতা বেশ ভয় পেল। তবুও মুখে বলল...
দেখুন আমি লন্ডনে বড় হয়েছি i know how can protect myself, you go now otherwise i will shout.
=>হাঁ হাঁ হাঁ হাঁ হাঁ......... লন্ডনে বুঝি জোরে চিৎকার করা শিখায়।
অর্পিতাঃ আমি বিরক্ত হচ্ছি। আপনি জান বলছি।
=>জানেন লোকটাকে না মুখ চেপে ধরে তলপেটে দুই-তিন বার চাকু চালাতেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মারা গেল। শুধুমাত্র ফুশফুশ থেকে বাতাস বের হবার শব্দটুকু হল। আর কোন শব্দই লোকটা করতে পারল না।
অর্পিতা বেশ ভয় পেল, গলা শুকিয়ে গেল, ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। শুকন গলায় বললঃ
Who are you? What you want to me? কে আপনি? কি চান আমার কাছে?
এবার অপু হেঁসে উঠল। দেখুন আমি অপু। গনিতে মাষ্টার্স করতেছি। একটু আধটু শখের কবি। অবসর পেলে ঘুরে বেড়াই। সামনে বন্ধুর বাসা ওখানেই যাব।
অর্পিতাঃ কিন্তু এতক্ষন যা বললেন?
অপুঃ ইচ্ছে হল আপনাকে একটু ভয় দেখাই। তাই কথাগুল বলা।
অর্পিতাঃ কেন? আমি কি আপনার কোন ক্ষতি করেছি?
অপুঃ না তেমন কোন ক্ষতি করেন নি । তবে সিগারেটের পিপাসা পাওয়ায় বিমান বন্দর স্টেশনে নেমেছিলাম সিগারেট খেতে। তখন আপনি - আমাকে দিয়ে আপনার টলি টানিয়েছেন। অবশ্য বিনিময়ে ২০ টাকা দিয়েছেন।
অর্পিতাঃ sorry, আমার ভুল হয়েছে। মাফ করবেন। ভাবুন একটা অসহায় মেয়েকে সাহায্য করেছেন।
কই টাকা ২০টি দিন।
অপুঃ ২০ টাকা !! কোথায়ে পাব? ঐ টাকা দিয়ে তো চারটা সিগারেট কিনেছি। তার থেকে দুইটি খেয়েছি বাকি আছে দুইটি। চাইলে ঐ দুইটি নিতে পারেন।
অর্পিতাঃ আপনি তো বেশ মজার মানুষ।
অপুঃ হয় তো-বা। দেখুন আকাশে কেমন মেঘ করেছে। অর্পিতা আপনি কি রবি ঠাকুরের "বৃষ্টি পড়ে টাপুর টূপুর" কবিতাটা পরেছেন। কত সুন্দর লিখেছেন_
আকাশ জুরে মেঘের খেলা, কোথায় বা সীমানা
দেশে দেশে খেলে বেড়ায়, কেউ করে না মানা।
কত নতুন ফুলের বনে বিষ্টি দিয়ে যায়
পলে পলে নতুন খেলা কোথায় ভেবে পায়!
অর্পিতাঃ--------------------------- মেঘের খেলা দেখে কত খেলা পড়ে মনে,
কত দিনের লুকো চুরি কত ঘরের কোনে!
তারি সঙ্গে মনে পরে ছেলে বেলার গান
বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এল বান।।

অপুঃ আপনার তো দেখছি বিদেশে থেকেও বাংলা কবিতার প্রতি বেশ টান।
অর্পিতাঃ এই একটু আধটু আছে।
চা খাবেন বলেই অপু দোকান থেকে দু কাপ চা নিয়ে হাজির হল।
অপুঃ নিন চা, বেশ ভাল। অনেটা আপনার মত।
দু,জনেই চায়ের কাপে চুমুক দিল। এমন সময় হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল। অমনি অপু বিড় বিড় করে বলতে শুরু করল-----
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘন ঘোর বরিষায়
এমন মেঘস্বরে বাদল ঝরে ঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।।
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারিধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি।
আকাশে জন ঝরে অনিবার জগতে কেহ যেন নাহি আর।।
অর্পিতা অপুর দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে। এই কিছুক্ষন আগে যাকে পৃথিবীর একটা হিংস্র প্রানী মনে হয়েছে- যে নাকি হাঁসতে হাঁসতে খুন করতে পারে। সে এত সুন্দর একটা মানুষ কি করে হয়। নিজের অজান্তেই রবি ঠাকুরের একটা কবিতার কয়েকটা লাইন নারা দিয়ে উঠল----
একদা এলোচুলে কোন ভুলে ভুলিয়া
আসিল সে আমার ভাঙা দ্বার খুলিয়া।
জ্যোৎস্নার অনিমিখ, চারি দিক সুবিজন
চাহিল একবার, আঁখি তার তুলিয়া।
দখিন-বায়ু ভরে থরে থরে কাঁপে বন,
উঠিল প্রান মম তারি সয় দুলিয়া।।


অর্পিতাঃ অপু আপনি কখনও আপনার কোন প্রিয় মানুষের হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজেছেন?
অপুঃ না, তবে একা একা অনেক ভিজেছি।
অর্পিতাঃ আপনাকে একটা অনুরোধ করব রাখবেন?
অপুঃ স্বাধ্যের মধ্যে হলে অবশ্য-ই রাখব। করতে পারেন।।
অর্পিতাঃ আমার হাতটা ধরুন একটু বৃষ্টিতে ভিজব। চলুন না বৃষ্টিতে ভিজি...।
অপুঃ চলুন ভিজি................................।।
এরই মধ্যে অর্পিতার বাড়ি থেকে ওকে নেবার লোক চলে এসেছে। অর্পিতা লোকটির সামনে এসে বলল আপনি আমার ব্যাগ গুলো তুলুন, আমি আসছি...
অর্পিতা অপুর হাত ধরে বলল - আপনাকে আর একটা অনুরোধ করব। যদি রাখেন আমি অনেক খুশু হব।
অপুঃ বলেন কি করতে হবে?
অর্পিতাঃ চলুন আমাদের বাড়ি, আমার সাথে দুই-একটা দিন দেড়াবেন।
অপুঃ দেখুন ক্ষনিকের ভাললাগাটা মানুষের সারাজীবন মনে থাকে। আর দীর্ঘক্ষনের ভাললাগাটা ঐ সমায়টা জুরেই থাকে। আমি সারা জীবন এই সৃত্মিটা মনে রাখতে চাই। ভালথাকবেন আসি.........

অর্পিতা ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আর নজরুলের কবিতার লাইনগুলো মনে করতে লাগল----------
শূন্য ছিল নিতল দীঘির শীতল কালো জল,
কেন তুমি ফুটলে সেথা ব্যাথার নীলোৎপল?
আঁধার দীঘির রাঙ্লে মুখ, নিটল ঢেউ-এর ভাঙ্লে বুক,
কোন পূজারী নিল ছিঁড়ে ? ছিন্ন তোমার দল
ঢেকেছে আজ কোন দেবতার কোন সে পাষান তল?
--------------------------------------------------
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯২৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/০৪/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অগ্নিপক্ষ ১৮/০৪/২০১৫
    ভালোবাসা হলো স্টকস অ্যান্ড শেয়ার্সের মতো - স্পেকুলেটিভ ভেঞ্চার!

    ( কপিরাইট : অগ্নিপক্ষ )
 
Quantcast