www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

লোকে আমায় পাগল বলে

লোকে আমায় পাগল বলে ( গদ্য কবিতা)

নিতাই বাবু হাতে সুটকেস নিয়ে অফিসে যাবার জন্য বাস স্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায়।
এমন সময় উস্কোখুস্কো চেহারা, কুণ্ডলী বেষ্টিত চুল, ক্ষিপ্ত উন্মাদ পাগল এসে তার পাশে দাঁড়ায়।
নিতাই বাবু পাগলের শরীর থেকে ভেসে আসা গন্ধে সেখান থেকে একটু দূরে সরে যায়।
পাগল সেই দৃশ্য দেখে , হেসে হেসে নিতাই বাবুর উদ্দেশ্যে আপনি আমাকে পাগল ভাবছেন।
ভাবাটাই স্বাভাবিক, একমুঠো একবেলা খাবারের জন্য আমাকে হন্য হয়ে ছুটে বেড়াতে হয়।
আমি কবে স্নান করেছি তা আমার মনে নেই,
গ্রীষ্ম, বর্ষা,এমনকি শীত সবসময় একই পোশাকে ঘুরে বেড়াতে হয়।
এমন সাজে নিজেকেই আমার পাগল মনে হয়,
কিন্তু আমার অভ্যস্ত হয়ে গেছে, মেনে নিয়েছি আমি পাগল, তাই লোকেও পাগল বলে।

নিতাই বাবু বিস্মিত হয়, পাগলের কথা শুনতে থাকে,
জানেন বাবু আমার একটা মা মরা মেয়ে ছিল, বয়স তখন আট, সুখে দুঃখে আমি আর আমার মেয়ে একটি ছোট্ট কুটিরে বাস করতাম।
সে কুটির টি ছিল আরামবাগের একটি বট গাছের নিচে।
হঠাৎ একদিন মেয়ে স্কুল থেকে ফিরল না, সেই বিকেল থেকে উন্মাদের মতো খুঁজেছি ,
কোথায় খুঁজে পাইনি , খুঁজে পেলাম ঠিক তিন -দিন পর, উলঙ্গ শরীর, ক্ষতবিক্ষত দেহ, পচা লাশ রূপে।
আমি অপরাধীদের শনাক্ত করলাম, শাস্তির জন্য ছুটে বেড়ালাম, কেউ সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি।
আমি পাগলের মতো আচরণ করতে লাগলাম,
অপরাধী গুলি চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায়, আমি বাবা হয়ে কিছুই করতে পারলাম না।
একদিন পিশাচগুলি আমাকে পাগল বলে আমার গ্রাম থেকে আমাকে তাড়িয়ে দিল।

সেই থেকে আমি পাগল,উন্মাদ।
ভেসে উঠে আমার মেয়ের ছবি, ভেসে উঠে মেয়ের আর্তনাদ, ভেসে উঠে পিশাচগুলির মুখ।
তাই এই সভ্য জগতে ফেরা হয়নি,
ইচ্ছা হয়নি নতুন করে নিজেকে তুলে ধরতে।

পাগল গাইতে গাইতে চলল " হে প্রভু, তুমি ধরণির বুকে তাদের কে মানুষ রূপে পাঠিয়েছ , কিন্তু মানুষ করলে না।
পাগল বেশে আমি,আছি সুখে, থেকে গেছে বুকের যন্ত্রনা "।

নিতাই বাবুর চোখে জল গড়িয়ে এল,
অফিস না গিয়ে, সে বাড়ির দিকে রওনা দিল, তারেও একটা ছয় বছরের মেয়ে আছে।
বিষয়শ্রেণী: কবিতা
ব্লগটি ১১৫৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast