আরও একবার
তখন ১৭, সবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে অভিরূপের । ভাবনাগুলো উড়ে বেড়াচ্ছে, ছুটে বেড়াচ্ছে আলোককণার থেকেও জোর গতিতে, নিমেষে ছড়িয়ে যাচ্ছে গ্রহে গ্রহে সব গ্রহাণুপুঞ্জে । আজ সে ভীষণ এক্সসাইটেড, আর হবেই না বা কেন আজ সে প্রথম এরোপ্লেন বা বিমানে চাপতে চলেছে.. তার অনেকদিনের ইচ্ছে পুরোনের পথে।
কলকাতা থেকে মুম্বাইগামী এয়ার-ইন্ডিয়ার বিকেল ৪.১০ এর ফ্লাইট। প্লেনে ওঠামাত্র সব ভাবনাগুলো কেমন 'থ' মেরে গেছে আর ওড়াউড়ি করছে না । আসলে জানলার পাশে সিট পাইনি আর যেটুকু মুক্ত আকাশ দেখার মেঘের মালা চাক্ষুশ করবার সুযোগ ছিল পুরোটাই মেরে দিয়েছে পাশের মোটা লোকটা, ওকে টপকে কিছুই দেখা সম্ভব নয় তাই চোখ বুঝে একটু ঘুমের চেষ্টায় অভিরূপ ।
এইভাবে কিছুক্ষণ পর একটা মৃদু দুলুনি, চোখ খুলে দেখে একি !! সে একটা বিশাল ইগলজাতীয় কোনও পাখির ওপর বসে, আর পাখিটা নিশ্চিতে উড়ে চলেছে । বেশ ভয় ভয় করতে থাকলো, নিচের অপরূপ মেঘের মালার সারি তার মন ভরিয়ে দিয়েছে । পাখিটা এসে থামল প্রাসাদজাতীয় কোনও বাড়ির সামনে, যদিও গঠনশৈলী অনেকটাই আলাদা। সেখানে এক নীলনয়নাকে দেখে সে ভীষণ মুগ্ধ হলো... আলাপ করতে যাচ্ছিল এমন সময় এক যান্ত্রিক আওয়াজ ,
ধুর, ওটা স্বপ্ন ছিল! সিট বেল্ট বেধে নেওয়ার আনাউন্সমেন্ট হচ্ছে, মুম্বাই এসে গেছে ।
নিশ্চই এই স্বপ্নটা Harry Potter সিনেমাটার এফেক্ট ছিল, যাই হোক অভিরূপ এখন মুম্বাইতে মামাবাড়ির পথে । মামাকে বিগত পুজোর ছবি দেখাতে গিয়ে আরও একটা বড় ধোকা, সেতো কোনদিন নাম্বার লকিং করেনা, তাহলে এটা কার ফোন!! এদিকে মামা ছবি দেখার জন্য বিশেষ উত্সাহি, “আরে মামা ফোনটা বোধহয় বদল হয়ে গেছে”
মামা অবাক, “ফোন বদল এতো সিনেমায় হয়, সত্যি ভাগ্নে তোর ক্যারিসমা বেড়েই চলেছে, নিশ্চই এটা করিশমা কাপুরের ফোন, ওয়েট কর করিশমা কাপুর তোকে ফোন করল বলে”
‘‘ধুর মামা কী যে বল’’ কথাটা শেষ করার আগেই যথারীতি ফোনটা বেজে উঠল, আর একটা মিষ্টি গলা বেশ ঝাঝালো সুরে বলে উঠল “নিজের ফোন চিনতে পারেন না, প্লেনে কিভাবে যাতায়াত করেন @***, কোথায় আছেন বোম্বেতেতো, তাহলে ফোনটা তাড়াতাড়ি ফেরত দিয়ে নিজেরটা নিযে যান, এড্রেস্স বলছি । ’’ আর মামার কী উল্লাস যেন লটারিতে কোটি টাকা পেয়েছে ।
যাই হোক বেশ কয়েকবার বোম্বেতে যাতায়াত এর সুবাধে রাস্তাঘাট ভালই চেনা, যথাসময়ে পৌছে গেল ‘জুহু’র সৈকতে, ইচ্ছে ছিল বেশ কয়েকটা কড়া কথা শোনাবে, কিন্তু প্রথমেই মেয়েটা এমনভাবে ক্ষমা চেয়ে নিলো... “এক্সট্রিমলি সরি, আসলে আমি খুব ওরিড হয়ে পড়েছিলাম, ওটা আসলে আমার মাযের শেষ গিফট’’ ..... এরপর আর কিছু বলা যায়না তাও অভিরূপ খুব মৃদু স্বরে বলার চেষ্টা করেছিল “ আসলে সামসাং এর এনড্রয়েড ফোনগুলোই এরকম, একটার সাথে আরেকটার খুব পার্থক্য করা যায়না, তবু ভুলটা আমার ।’’ এতক্ষন পর মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হল ও তাকিয়ে থাকলো যতক্ষণ না ওপাশ থাকে আসা একটা কন্ঠস্বর.. “ আমার মুখে কী সূর্যাস্তের বিরামহীন গমন দেখছেন নাকি....’’ একটু চমকে উঠে অভিরূপ বলল...
এরকম উত্তরে যথারীতি কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও মোটেও দমবার পাত্রী নয় সেই নীলতনয়া তাই একবারে স্ট্রেটকাট বলল ‘আপনি বেশ ভাল কবি, ফ্লার্টতাও যথেষ্ঠ জানেন, কিন্তু আই রিয়েলি ডোন্ট লাইক ইট। ’ এরপর আর কিছু বলা যায় না নয়ত বলতেই পারত আরও কিছু, কিন্তু অভিরূপ নিজেই বুঝছেনা তার সাথে এসব কী ঘটে চলেছে, ছোট থেকে কো-এড স্কুলতে পড়াশোনা... তার বন্ধু বান্ধবীর সংখ্যা কম নয়, কিন্তু কোনও মেয়েকে দেখে কাব্য করবে লাইন বানিয়ে বলবে এসব কোন যুগের চিন্তা তার মাথায়!! কিন্তু এই নীলনয়নাকে কী করে বলবে একেই সে একটু আগেই ওকে দেখেছিলো স্বপ্নে, ও নয় ওর মতই কেউ। বলেও দরকার নেই তাই যথারীতি নিজের ফোনটা নিয়ে বাড়ি ফিরলো ।
কিছুদিন পর আবার কলকাতায়, কলেজে দেখা সেই নীলনয়নার সাথে... কলেজের পরীক্ষার ফলাফলে বেস্ট স্টুডেন্ট হওয়ার সুবাদে বেশ কাছাকাছি চলে এল, ঘনিষ্টতা আরও বাড়তে থাকলো। ২য় বর্ষ থেকে কলেজ ফেষ্ট থেকে শুরু করে সব জায়গায় তাদের জোড়ায় জোড়ায় দেখা যেত.... পুরো কলেজ অভিরূপ আর বর্ষা সেনগুপ্তর জোরি বলতে অজ্ঞান, বলত তারা সত্যিকারের “রব নে বানা দিয়া জোরি’’
এখন ২৩, একটা মাল্টিন্যাশানাল এভিয়েশান কোম্পানী ‘ব্লূ ঈগল’ এ কর্মরত অভিরূপ, কর্মযোগে এদেশ ওদেশ, দেশের নানা প্রান্তে ঘুরতে হয় । আজ অনেকদিন পর আবার মুম্বাইগামী ফ্লাইট এ, ভীষণ মনে পড়ে যাচ্ছে বর্ষা সেনগুপ্তর সাথে জুহু বীচের আলাপপর্ব, তারপর কলেজ জেভিয়ার্স এ কিভাবে পাশাপাশি চলে আসে, কলকাতায় কোনও পার্ক, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট নেই যা তারা যাইনি....তারপর কোনও একটা পার্কে অভিরূপের প্রথম চুমু তার বর্ষার লাজুক ঠোটে... আর ভালোবাসার স্বপ্নমাখা কিছু জ্যোত্স্না রাত।
ফিরে আসছে স্মৃতিতে অভিরূপের জীবনের সেরা মুহূর্তরা নিশব্দে, সে ডুবে যাচ্ছে চোরাবালিতে আর চোখেরা ভিজতে চাইছে আলতো শিশিরকনায় অকারণ। ভীষণ মনে পড়ছে “আমার দুজনে ভাসিয়া এসেছি” বর্ষার এই আবৃতি ও “সেদিন দুজনে....’’ এই গানটা যা তার সবথেকে প্রিয় ।
অভিরূপ ফিরে গেছে কলেজের সেই লাস্ট দিনে ফ্যাইনাল পরীক্ষার কিছু আগে, একটা উড়ো খবর..... বর্ষার বাবার হার্ট অ্যাটাক, পরিমরি করে দৌড় অভিরূপের বর্ষার বাড়িতে তার বন্ধুদের নিয়ে, কিন্তু বাড়ি খালি কোথাও কেউ নেই। এরপর অনেক ভেবেছে অভিরূপ কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি যেন পুরোটাই ম্যাজিক ছিল..... এক নিমেষে সব হাওয়া,যার উত্তর সে এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছে দেশে দেশে দেশের বিভিন্ন শহরে তার কাজের মাঝে ।
স্মৃতির সাগর পেরিয়ে যথারীতি মুম্বাই এসে গেছে। ফ্লাইট এর ঝক্কি পেরিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে অফিস এর ঠিক করা হোটেলে পৌছাল অভিরূপ, কাল না হয় মামার বাড়িতে যাওয়া যাবে আজ হোটেলেই কাটানো যাক। চোখ বন্ধ করে বিছানায় সবে শুয়েছে যথারীতি ফোনটা বেজে উঠল, হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে একটা চিরপরিচিত ভয়েস আচ্ছন্ন করে ফেলল অভিরূপকে, ৫মিনিটের ওপর হোলো লাইনটা কেটে গেছে, অভিরূপ কেমন নির্বাক... তার সব ভাবনা গুলিয়ে যাচ্ছে । সম্বিত ফিরলে অভিরূপ বুঝতে পারল ওটা বর্ষা ছাড়া আর কর ভয়েস নয়, হতেই পারে না, বর্ষার গলায় আগের মত ঝাঝটা নেই.... যে কারণে তাকে সবাই অহংকারী ভাবতো, সেই ঝাঝটা আর নেই কিন্তু বাকি ভয়েসটা একই আছে।
অভিরূপ ফোনটা নিয়ে দেখল ফোনের মডেলটা চেঞ্জ হয়ে গেছে আর কৌতুহলবশত তাড়াতাড়ি উল্টে দেখল সেখানে লাল মার্কারে বর্ষার হাতে লেখা “ B & A… Borsa loves Avi ”
এ হাতের লেখা কখনোই ভোলবার নয়....... আর মনে পড়ে গেল বর্ষার আবৃতির বাকি কিছু লাইন...
কলকাতা থেকে মুম্বাইগামী এয়ার-ইন্ডিয়ার বিকেল ৪.১০ এর ফ্লাইট। প্লেনে ওঠামাত্র সব ভাবনাগুলো কেমন 'থ' মেরে গেছে আর ওড়াউড়ি করছে না । আসলে জানলার পাশে সিট পাইনি আর যেটুকু মুক্ত আকাশ দেখার মেঘের মালা চাক্ষুশ করবার সুযোগ ছিল পুরোটাই মেরে দিয়েছে পাশের মোটা লোকটা, ওকে টপকে কিছুই দেখা সম্ভব নয় তাই চোখ বুঝে একটু ঘুমের চেষ্টায় অভিরূপ ।
এইভাবে কিছুক্ষণ পর একটা মৃদু দুলুনি, চোখ খুলে দেখে একি !! সে একটা বিশাল ইগলজাতীয় কোনও পাখির ওপর বসে, আর পাখিটা নিশ্চিতে উড়ে চলেছে । বেশ ভয় ভয় করতে থাকলো, নিচের অপরূপ মেঘের মালার সারি তার মন ভরিয়ে দিয়েছে । পাখিটা এসে থামল প্রাসাদজাতীয় কোনও বাড়ির সামনে, যদিও গঠনশৈলী অনেকটাই আলাদা। সেখানে এক নীলনয়নাকে দেখে সে ভীষণ মুগ্ধ হলো... আলাপ করতে যাচ্ছিল এমন সময় এক যান্ত্রিক আওয়াজ ,
ধুর, ওটা স্বপ্ন ছিল! সিট বেল্ট বেধে নেওয়ার আনাউন্সমেন্ট হচ্ছে, মুম্বাই এসে গেছে ।
নিশ্চই এই স্বপ্নটা Harry Potter সিনেমাটার এফেক্ট ছিল, যাই হোক অভিরূপ এখন মুম্বাইতে মামাবাড়ির পথে । মামাকে বিগত পুজোর ছবি দেখাতে গিয়ে আরও একটা বড় ধোকা, সেতো কোনদিন নাম্বার লকিং করেনা, তাহলে এটা কার ফোন!! এদিকে মামা ছবি দেখার জন্য বিশেষ উত্সাহি, “আরে মামা ফোনটা বোধহয় বদল হয়ে গেছে”
মামা অবাক, “ফোন বদল এতো সিনেমায় হয়, সত্যি ভাগ্নে তোর ক্যারিসমা বেড়েই চলেছে, নিশ্চই এটা করিশমা কাপুরের ফোন, ওয়েট কর করিশমা কাপুর তোকে ফোন করল বলে”
‘‘ধুর মামা কী যে বল’’ কথাটা শেষ করার আগেই যথারীতি ফোনটা বেজে উঠল, আর একটা মিষ্টি গলা বেশ ঝাঝালো সুরে বলে উঠল “নিজের ফোন চিনতে পারেন না, প্লেনে কিভাবে যাতায়াত করেন @***, কোথায় আছেন বোম্বেতেতো, তাহলে ফোনটা তাড়াতাড়ি ফেরত দিয়ে নিজেরটা নিযে যান, এড্রেস্স বলছি । ’’ আর মামার কী উল্লাস যেন লটারিতে কোটি টাকা পেয়েছে ।
যাই হোক বেশ কয়েকবার বোম্বেতে যাতায়াত এর সুবাধে রাস্তাঘাট ভালই চেনা, যথাসময়ে পৌছে গেল ‘জুহু’র সৈকতে, ইচ্ছে ছিল বেশ কয়েকটা কড়া কথা শোনাবে, কিন্তু প্রথমেই মেয়েটা এমনভাবে ক্ষমা চেয়ে নিলো... “এক্সট্রিমলি সরি, আসলে আমি খুব ওরিড হয়ে পড়েছিলাম, ওটা আসলে আমার মাযের শেষ গিফট’’ ..... এরপর আর কিছু বলা যায়না তাও অভিরূপ খুব মৃদু স্বরে বলার চেষ্টা করেছিল “ আসলে সামসাং এর এনড্রয়েড ফোনগুলোই এরকম, একটার সাথে আরেকটার খুব পার্থক্য করা যায়না, তবু ভুলটা আমার ।’’ এতক্ষন পর মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হল ও তাকিয়ে থাকলো যতক্ষণ না ওপাশ থাকে আসা একটা কন্ঠস্বর.. “ আমার মুখে কী সূর্যাস্তের বিরামহীন গমন দেখছেন নাকি....’’ একটু চমকে উঠে অভিরূপ বলল...
' তোমায় দেখেছি বলে..
তাকাইনি আর কোনও দিকে '
আদতে বলার ইচ্ছে ছিল ...
‘(“আমার দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগলপ্রেমের স্রোতে
অনাদি কালের হৃদয় উত্স হতে ”)... এই সমুদ্রসৈকতে ’
এরকম উত্তরে যথারীতি কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও মোটেও দমবার পাত্রী নয় সেই নীলতনয়া তাই একবারে স্ট্রেটকাট বলল ‘আপনি বেশ ভাল কবি, ফ্লার্টতাও যথেষ্ঠ জানেন, কিন্তু আই রিয়েলি ডোন্ট লাইক ইট। ’ এরপর আর কিছু বলা যায় না নয়ত বলতেই পারত আরও কিছু, কিন্তু অভিরূপ নিজেই বুঝছেনা তার সাথে এসব কী ঘটে চলেছে, ছোট থেকে কো-এড স্কুলতে পড়াশোনা... তার বন্ধু বান্ধবীর সংখ্যা কম নয়, কিন্তু কোনও মেয়েকে দেখে কাব্য করবে লাইন বানিয়ে বলবে এসব কোন যুগের চিন্তা তার মাথায়!! কিন্তু এই নীলনয়নাকে কী করে বলবে একেই সে একটু আগেই ওকে দেখেছিলো স্বপ্নে, ও নয় ওর মতই কেউ। বলেও দরকার নেই তাই যথারীতি নিজের ফোনটা নিয়ে বাড়ি ফিরলো ।
কিছুদিন পর আবার কলকাতায়, কলেজে দেখা সেই নীলনয়নার সাথে... কলেজের পরীক্ষার ফলাফলে বেস্ট স্টুডেন্ট হওয়ার সুবাদে বেশ কাছাকাছি চলে এল, ঘনিষ্টতা আরও বাড়তে থাকলো। ২য় বর্ষ থেকে কলেজ ফেষ্ট থেকে শুরু করে সব জায়গায় তাদের জোড়ায় জোড়ায় দেখা যেত.... পুরো কলেজ অভিরূপ আর বর্ষা সেনগুপ্তর জোরি বলতে অজ্ঞান, বলত তারা সত্যিকারের “রব নে বানা দিয়া জোরি’’
এখন ২৩, একটা মাল্টিন্যাশানাল এভিয়েশান কোম্পানী ‘ব্লূ ঈগল’ এ কর্মরত অভিরূপ, কর্মযোগে এদেশ ওদেশ, দেশের নানা প্রান্তে ঘুরতে হয় । আজ অনেকদিন পর আবার মুম্বাইগামী ফ্লাইট এ, ভীষণ মনে পড়ে যাচ্ছে বর্ষা সেনগুপ্তর সাথে জুহু বীচের আলাপপর্ব, তারপর কলেজ জেভিয়ার্স এ কিভাবে পাশাপাশি চলে আসে, কলকাতায় কোনও পার্ক, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট নেই যা তারা যাইনি....তারপর কোনও একটা পার্কে অভিরূপের প্রথম চুমু তার বর্ষার লাজুক ঠোটে... আর ভালোবাসার স্বপ্নমাখা কিছু জ্যোত্স্না রাত।
ফিরে আসছে স্মৃতিতে অভিরূপের জীবনের সেরা মুহূর্তরা নিশব্দে, সে ডুবে যাচ্ছে চোরাবালিতে আর চোখেরা ভিজতে চাইছে আলতো শিশিরকনায় অকারণ। ভীষণ মনে পড়ছে “আমার দুজনে ভাসিয়া এসেছি” বর্ষার এই আবৃতি ও “সেদিন দুজনে....’’ এই গানটা যা তার সবথেকে প্রিয় ।
অভিরূপ ফিরে গেছে কলেজের সেই লাস্ট দিনে ফ্যাইনাল পরীক্ষার কিছু আগে, একটা উড়ো খবর..... বর্ষার বাবার হার্ট অ্যাটাক, পরিমরি করে দৌড় অভিরূপের বর্ষার বাড়িতে তার বন্ধুদের নিয়ে, কিন্তু বাড়ি খালি কোথাও কেউ নেই। এরপর অনেক ভেবেছে অভিরূপ কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি যেন পুরোটাই ম্যাজিক ছিল..... এক নিমেষে সব হাওয়া,যার উত্তর সে এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছে দেশে দেশে দেশের বিভিন্ন শহরে তার কাজের মাঝে ।
স্মৃতির সাগর পেরিয়ে যথারীতি মুম্বাই এসে গেছে। ফ্লাইট এর ঝক্কি পেরিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে অফিস এর ঠিক করা হোটেলে পৌছাল অভিরূপ, কাল না হয় মামার বাড়িতে যাওয়া যাবে আজ হোটেলেই কাটানো যাক। চোখ বন্ধ করে বিছানায় সবে শুয়েছে যথারীতি ফোনটা বেজে উঠল, হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে একটা চিরপরিচিত ভয়েস আচ্ছন্ন করে ফেলল অভিরূপকে, ৫মিনিটের ওপর হোলো লাইনটা কেটে গেছে, অভিরূপ কেমন নির্বাক... তার সব ভাবনা গুলিয়ে যাচ্ছে । সম্বিত ফিরলে অভিরূপ বুঝতে পারল ওটা বর্ষা ছাড়া আর কর ভয়েস নয়, হতেই পারে না, বর্ষার গলায় আগের মত ঝাঝটা নেই.... যে কারণে তাকে সবাই অহংকারী ভাবতো, সেই ঝাঝটা আর নেই কিন্তু বাকি ভয়েসটা একই আছে।
অভিরূপ ফোনটা নিয়ে দেখল ফোনের মডেলটা চেঞ্জ হয়ে গেছে আর কৌতুহলবশত তাড়াতাড়ি উল্টে দেখল সেখানে লাল মার্কারে বর্ষার হাতে লেখা “ B & A… Borsa loves Avi ”
এ হাতের লেখা কখনোই ভোলবার নয়....... আর মনে পড়ে গেল বর্ষার আবৃতির বাকি কিছু লাইন...
“ আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা কোটি কোটি প্রেমিকের মাঝে ....
পুরাতন প্রেম নিত্যনতুন সাজে ’’ ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ভানম আলয় ২৮/০৯/২০১৩দারুন অভি......
-
সুবীর কাস্মীর পেরেরা ২৭/০৯/২০১৩অসাধারণ একটি লেখা পেলাম আজ অভি। এভাবে চালিয়ে যাও।
-
אולי כולנו טועים ২৭/০৯/২০১৩vishon sundor !!
-
suman ২৭/০৯/২০১৩Fairy tale এর মতো এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম ...