www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ঈশ্বর কণা ও টু-ইন সিষ্টেম

ছোট গল্প: ঈশ্বর কণা ও টু-ইন সিষ্টেম (কল্প বিজ্ঞান)



ক'দিন ধরে পৃথিবীতে কি যেন ঘটছিল!! আমি কেমন যেন একটা আঁচ করতে পেরেছিলাম। যদিও পার্থিব ব্যস্ততার কারণে নিজের প্রতি খেয়াল রাখতেও ভূলে গিয়েছিলাম। ভুলে যাব না তো কি করবো? স্ত্রী, সন্তান, সংসার-পরিবার, বন্ধুমহল না হয় বাদই দিলাম তার পরেরর অধ্যায়টি হল কর্মব্যস্ততা, যাকে আমরা এক প্রকার যুদ্ধ বা মহা যুদ্ধও বলতে পারি। যাইহোক, সবকিছু মিলিয়ে যেন এই আমি এক আত্ম ভোলা আমি! এ যেন একটি রোবট বা একটি যন্ত্রমানব, যাতে আধুনিক বিজ্ঞানের এ্যালার্ম ফিট করা আছে। সকাল হলেই এ্যালার্ম পেয়ে কর্ম ক্ষেত্রে ঝাপিয়ে পরা এবং রাতে মহাযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে খেয়েদেয়ে শুয়ে পরা, .... পরদিন সকালের জন্য আবার কর্মযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরার প্রস্তুতির জন্য। এসব নিয়মমাফিক হলেও ক'দিন ধরে আমি কেমন যেন আরো এলোমেলো এবং অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম।

:::::::: সেদিন বৃষ্টিস্নাত হয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। এরপর কোনমতে খেয়েদেয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে পড়ছিলাম। তার পর রাতে স্বপ্নে দেখলাম আমাকেই- এক এলোমেলো আমি, এক অন্য আমি। নিজেকে দেখে নিজেই বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। তারপরেও অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিলাম- আচ্ছা, হুবহু দেখতে আমার মত কে তুমি? হাসল....., তারপর উত্তর দিল- আমি তোমার টু-ইন। পার্থিব জগতে তুমি যা কর তার প্রভাব আমার উপর পরে। জানো? তুমি এই পার্থিব জগতে ভালো থাকলে আমিও মহাজগতে ভালো থাকি কিন্তু তুমি আত্মভোলা হলে, তুমি কষ্ট না পলেও আমি ভীষণ কষ্ট পাই! এই যে! ক'দিন যাবত তুমি চুল আঁচড়াও নি, দাড়ি-গোঁফের যত্ন নাওনি, শরীরের যত্ন নাওনি এমন কি ক'দিন যাবত তোমাকে তুমি অায়নার সামনেও যেতো দাড়াতে দাওনি, দেখতো? তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে। একবারের জন্যও তোমার তুমি আমার কষ্টের কথা ভাবোনি। স্ত্রী, সন্তান, সংসার-পরিবার, বন্ধুমহল আর কর্মব্যস্ততার ভারে আমাকে একেবারে ভুলেই গোছো! তাই না? এর পর আরো অনেক কিছু বলল...
বলল, আজ নাকি পৃথিবীতে ঈশ্বর কণার (higgs boson) পরীক্ষা হয়েছে। ঈশ্বরকণা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলল- তোমার ফেসবুক আইডির মেসেজবক্সে বিস্তারিত পাঠানো আছে। এখন উঠো, ঘুম থেকে এক্ষুণি উঠে আয়নার সামনে যাও, তারপর বিচার কর এই আমাকে যে তুমি দেখছো সেটা কি তুমি নাকি আমি? ফেসবুক আইডি চেক করে বল আমি ভুল বলেছি না সঠিক বলেছি? কাল রাতে আবার আসব, নিজের যত্ন নিও। আল্লাহ তোমার  মঙ্গল করুক.. একথা বলেই চলে গেলো।

স্বপ্নটা দেখে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠলাম, পাশে রাখা পানির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর ধীরে ধীরে আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে পরখ করলাম, হ্যাঁ সত্যিই তো? এলোমেলো চুল, দাড়ি-গোঁফে ভরা একটি মানুষ! যেন অন্য গ্রহ থেকে এই মাত্র নেমেছি, নিজেকে দেখে দেখে নিজেই ভয় পাই। নিজেই নিজেকে চিনতে পারিনি, এমতাবস্থায় আমার টু-ইন কষ্ট পাবে না তো অন্য কেউ পাবে? তড়িঘড়ি করে আয়নার সামনে থেকে মুখ সরালাম। এরপর ছুটে গেলাম কম্পিউটার রুমে। ফেসবুক অন করেই জানতে পারলাম- ক'দিন যাবত এই পৃথিবীতে তোড়জোর চলছিল ঈশ্বরকণার পরীক্ষার, যার সফল এক্সপেরিমন্ট হয়ে গেল আ্জ। পদার্থ বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় এবং সফল পরীক্ষা এটি। এর মাধ্যমেই  প্রমাণ মিলবে মানুষের টু-ইন সিষ্টেমসহ আরো অনেক জটিল কিছুর।

..ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে গেল। ফ্রেশ হয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিলাম। যুদ্ধ মানে কর্মযুদ্ধ। না পারলেও অনেকটা স্বতস্ফুর্ত থাকার চেষ্টা করি। কারণটা সেই টু-ইনের জন্য। কেননা অভিমান করে নিজের চেহারাটা আয়নায় না দেখলেও  আমার সে প্রভাবটা টু-ইনের উপর পরবে আর টু-ইনকে কষ্ট করে প্রতি রাতেই আমার কাছে আসতে হবে আমাকে শোধরানোর জন্য। তার চেয়ে বরং আগে থাকতেই একটু কষ্ট হলেও যটতা পারি সবদিকই সাবলে চলব। কারণ এই সন্তান, সংসার, পরিবার, আড্ডা আর কর্মযুদ্ধ এইসব নিয়েই আমাদের পার্থিব জীবন, আর প্রকৃত জীবনের মানে এইখানেই খুজে পাওয়া সম্ভব!!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭০৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/০২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়সাল রহমান ০৭/০২/২০১৭
    খুব ভালো
  • ফয়জুল মহী ০৭/০২/২০১৭
    মনোমুগ্ধকর
  • মোনালিসা ০৭/০২/২০১৭
    সুন্দর হয়েছে
  • সুলতান মাহমুদ ০৫/০২/২০১৭
    ভালো লাগল
 
Quantcast