প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিধিমালা আসছে
প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করার সঙ্গে সঙ্গে এবার এ স্তরে দক্ষ নারী শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যেও আসছে নতুন নিয়োগ বিধি। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে পুরুষ প্রার্থীর মতো নারীদেরও আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা করা হবে স্নাতক ডিগ্রী। বর্তমানে প্রাথমিকে পুরুষ শিক্ষকদের আবেদনের যোগ্যতা স্নাতক হলেও নারীরা উচ্চ মাধ্যমিক পাস হলেই আবেদন করতে পারছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উন্নীতকরণে সম্মত হয়েছে। নতুন বিধিমালায় আসছে আরও বেশকিছু বড় পরিবর্তন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেই বলছেন, এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে এখন অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারীরাই বেশি আসছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে মানসম্মত শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। এখন আর শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আগেই এর পরিবর্তন দরকার ছিল জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অবশ্য বর্তমান বিধিই কার্যকর থাকবে। জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করার ফলে এ স্তরে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ছাড়া বিদেশী উন্নয়ন সংস্থাগুলোও তাগাদা দিয়ে আসছিল।
কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত দুটি কারণে নারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করার প্রভাবের বিষয়টি। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষকের যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক হওয়া উচিতÑ একথা দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বলে আসছের বহুদিন ধরে। এটা না হলে তার পক্ষে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কষ্টকর হয়ে পড়বে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে সহকারী শিক্ষক থেকে ৬৫ শতাংশ পদোন্নতি হওয়ার ঘটনা। প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর। এ পদের জন্য কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রীধারী আবশ্যক বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু নারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকায় তাদের মধ্য থেকে পদোন্নতির হার কম হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিকে নিয়োগের যোগ্যতা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই সমান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিধিটি এখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজও শেষ। এটি চূড়ান্ত করতে গত ১০ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি এখন সচিব কমিটিতে উঠবে। সচিব কমিটির অনুমোদন পেলেই এটি বাস্তবায়ন হবে। সূত্র জানায়, নতুন বিধিমালায় বড় আকারে পাঁচটি পরিবর্তন আসছে। ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধিমালায় পুরুষ ও নারীর জন্য আলাদা শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদে পুরুষের জন্য স্নাতক আর নারীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস হতে হয়। কিন্তু নতুন বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক পদে পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে নারীদের জন্য কোটা বহাল থাকছে।
সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এত দিন স্নাতক পাস হলেই আবেদন করা যেত। নতুন বিধিমালার খসড়ায় এই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ রমজান আলী বলেন, বড় পরিবর্তন হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতায়। এখন আর আসলে এইচএসসি পাস এ নিয়োগে চলে না।
তিনি আরও বলেন, এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে এখন অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারীরাই বেশি আসছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে মানসম্মত শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। ফলে এখন আর শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি চলে না। নতুন বিধিমালা এখন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এটা নিয়ে একাধিক মিটিংও হয়েছে। সংশোধন, পরিবর্তন-পরিবর্ধন চলছে। তবে ২০১৩ সালের বিধিমালা থেকে নতুন বিধিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন আসছে।
এদিকে এত দিন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ছিল ২৫ থেকে ৩৫ বছর। কিন্তু এখন এই পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ায় সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর। তবে আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হওয়ার বিধানও থাকছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে শিথিলযোগ্য। বাকি ৩৫ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হবে। এই পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির পুরো দায়িত্বই থাকবে পিএসসির।
নতুন বিধিমালায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগেও জোর দেয়া হয়েছে। বর্তমানে যে কোনো বিষয়ে পাস করা প্রার্থীর সমান সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এতে মানবিক বিভাগ থেকে আসা শিক্ষকরা গণিত ও বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো সহজে আত্মস্থ করতে পারেন না। এ কারণে নতুন বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট পদের শতকরা ২০ ভাগ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রীধারীদের মধ্য থেকে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্লাস্টার বা উপজেলাভিত্তিক আর্ট ও সঙ্গীত শিক্ষক রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
নতুন বিধিমালা কার্যকর হলে শিক্ষক নিয়োগ আগের মতোই উপজেলা বা থানাভিত্তিক হবে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত সহকারী শিক্ষক নির্বাচন কমিটির সুপারিশ ছাড়া কোন ব্যক্তিকে সহকারী শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে কাউকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এমন ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন অথবা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিকেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না।
নতুন বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, ১৩তম থেকে ১৬তম বেতন গ্রেডের কোন পদে থাকা শিক্ষককে দশম থেকে দ্বাদশ বেতন গ্রেডের কোন পদে পদোন্নতির সুপারিশ করা যাবে। আর দশম থেকে দ্বাদশ গ্রেডে থাকা শিক্ষক নবম বা তদুর্ধ গ্রেডের কোন পদে পদোন্নতির সুপারিশ পেতে পারেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই পিএসসির সুপারিশ প্রয়োজন হবে। ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধিমালায় এসব শর্ত নেই। বর্তমানে কোন ব্যক্তির শিক্ষক পদে যোগদান করার তিন বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ বা উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও নতুন বিধিতে তা থাকছে না।
খসড়া বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, সরকার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ একান্তই অপরিহার্য। বিদ্যমান নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনপূর্বক নতুন এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে প্রণীত বিধিমালায় প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি শতকরা ৩৫ ভাগ এবং সহকারী শিক্ষক থেকে শতকরা ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করার বিধান ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ৯ মার্চ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। ফলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়টি পিএসসির বিবেচনাধীন। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের এটিও অপরিহার্য কারণ।
প্রাথমিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলছিলেন, বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই আমরা নিয়োগ বিধির এ পরিবর্তন আনার কথা বলছি। বর্তমানে নারী শিক্ষকদের বেলায় আমরা উচ্চ মাধ্যমিক চাইলেও অধিকাংশই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন প্রার্থী আবেদন করছেন। কিন্তু অফিসিয়ালি তারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষকের যোগ্যতা স্নাতক থাকা প্রয়োজন। এজন্যই মূলত নারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করার বিষয়ে কাজ চলছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পলিসি উইংয়ের কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত সরকারী প্রাথমিকে পুরুষ শিক্ষকদের আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা হচ্ছে স্নাতক। তবে নারীরা উচ্চ মাধ্যমিক পাস হলেই আবেদন করতে পারচ্ছেন। দেশের নারী অগ্রগতির কথা চিন্তা করেই এমনটা করা হয়েছিল। এখন নারীরাও পুরুষের সমান কোন কোন ক্ষেত্রে সামনের কাতারে চলে এসেছে। আবার প্রাথমিক শিক্ষাকেও উন্নিত করা হচ্ছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। তাই উভয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শুরুতে সরকারী প্রাথমিকে পুরুষ শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক ও নারী শিক্ষকদের যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস চাওয়া হতো। ২০১৩ সাল থেকে পুরুষদের স্নাতক ও নারীদের উচ্চ মাধ্যমিক করা হয়।
তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে : https://jobsresultbd.com/
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেই বলছেন, এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে এখন অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারীরাই বেশি আসছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে মানসম্মত শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। এখন আর শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আগেই এর পরিবর্তন দরকার ছিল জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অবশ্য বর্তমান বিধিই কার্যকর থাকবে। জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করার ফলে এ স্তরে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ছাড়া বিদেশী উন্নয়ন সংস্থাগুলোও তাগাদা দিয়ে আসছিল।
কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত দুটি কারণে নারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করার প্রভাবের বিষয়টি। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষকের যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক হওয়া উচিতÑ একথা দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বলে আসছের বহুদিন ধরে। এটা না হলে তার পক্ষে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কষ্টকর হয়ে পড়বে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে সহকারী শিক্ষক থেকে ৬৫ শতাংশ পদোন্নতি হওয়ার ঘটনা। প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর। এ পদের জন্য কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রীধারী আবশ্যক বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু নারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকায় তাদের মধ্য থেকে পদোন্নতির হার কম হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিকে নিয়োগের যোগ্যতা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই সমান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিধিটি এখন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজও শেষ। এটি চূড়ান্ত করতে গত ১০ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি এখন সচিব কমিটিতে উঠবে। সচিব কমিটির অনুমোদন পেলেই এটি বাস্তবায়ন হবে। সূত্র জানায়, নতুন বিধিমালায় বড় আকারে পাঁচটি পরিবর্তন আসছে। ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধিমালায় পুরুষ ও নারীর জন্য আলাদা শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদে পুরুষের জন্য স্নাতক আর নারীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক পাস হতে হয়। কিন্তু নতুন বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক পদে পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে নারীদের জন্য কোটা বহাল থাকছে।
সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এত দিন স্নাতক পাস হলেই আবেদন করা যেত। নতুন বিধিমালার খসড়ায় এই শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ রমজান আলী বলেন, বড় পরিবর্তন হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতায়। এখন আর আসলে এইচএসসি পাস এ নিয়োগে চলে না।
তিনি আরও বলেন, এমনিতেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে এখন অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রীধারীরাই বেশি আসছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে মানসম্মত শিক্ষকের কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। ফলে এখন আর শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসি চলে না। নতুন বিধিমালা এখন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এটা নিয়ে একাধিক মিটিংও হয়েছে। সংশোধন, পরিবর্তন-পরিবর্ধন চলছে। তবে ২০১৩ সালের বিধিমালা থেকে নতুন বিধিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন আসছে।
এদিকে এত দিন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ছিল ২৫ থেকে ৩৫ বছর। কিন্তু এখন এই পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ায় সরকারী কর্মকমিশনের (পিএসসি) নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ থেকে ৩০ বছর। তবে আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হওয়ার বিধানও থাকছে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে শিথিলযোগ্য। বাকি ৩৫ শতাংশ পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হবে। এই পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির পুরো দায়িত্বই থাকবে পিএসসির।
নতুন বিধিমালায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগেও জোর দেয়া হয়েছে। বর্তমানে যে কোনো বিষয়ে পাস করা প্রার্থীর সমান সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এতে মানবিক বিভাগ থেকে আসা শিক্ষকরা গণিত ও বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো সহজে আত্মস্থ করতে পারেন না। এ কারণে নতুন বিধিমালায় সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট পদের শতকরা ২০ ভাগ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রীধারীদের মধ্য থেকে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্লাস্টার বা উপজেলাভিত্তিক আর্ট ও সঙ্গীত শিক্ষক রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
নতুন বিধিমালা কার্যকর হলে শিক্ষক নিয়োগ আগের মতোই উপজেলা বা থানাভিত্তিক হবে। তবে কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত সহকারী শিক্ষক নির্বাচন কমিটির সুপারিশ ছাড়া কোন ব্যক্তিকে সহকারী শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা না হলে কাউকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এমন ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন অথবা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিকেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না।
নতুন বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, ১৩তম থেকে ১৬তম বেতন গ্রেডের কোন পদে থাকা শিক্ষককে দশম থেকে দ্বাদশ বেতন গ্রেডের কোন পদে পদোন্নতির সুপারিশ করা যাবে। আর দশম থেকে দ্বাদশ গ্রেডে থাকা শিক্ষক নবম বা তদুর্ধ গ্রেডের কোন পদে পদোন্নতির সুপারিশ পেতে পারেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই পিএসসির সুপারিশ প্রয়োজন হবে। ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধিমালায় এসব শর্ত নেই। বর্তমানে কোন ব্যক্তির শিক্ষক পদে যোগদান করার তিন বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ বা উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও নতুন বিধিতে তা থাকছে না।
খসড়া বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, সরকার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ একান্তই অপরিহার্য। বিদ্যমান নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনপূর্বক নতুন এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে প্রণীত বিধিমালায় প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি শতকরা ৩৫ ভাগ এবং সহকারী শিক্ষক থেকে শতকরা ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করার বিধান ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ৯ মার্চ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। ফলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়টি পিএসসির বিবেচনাধীন। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের এটিও অপরিহার্য কারণ।
প্রাথমিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলছিলেন, বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই আমরা নিয়োগ বিধির এ পরিবর্তন আনার কথা বলছি। বর্তমানে নারী শিক্ষকদের বেলায় আমরা উচ্চ মাধ্যমিক চাইলেও অধিকাংশই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন প্রার্থী আবেদন করছেন। কিন্তু অফিসিয়ালি তারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানোর জন্য একজন শিক্ষকের যোগ্যতা স্নাতক থাকা প্রয়োজন। এজন্যই মূলত নারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করার বিষয়ে কাজ চলছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পলিসি উইংয়ের কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত সরকারী প্রাথমিকে পুরুষ শিক্ষকদের আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা হচ্ছে স্নাতক। তবে নারীরা উচ্চ মাধ্যমিক পাস হলেই আবেদন করতে পারচ্ছেন। দেশের নারী অগ্রগতির কথা চিন্তা করেই এমনটা করা হয়েছিল। এখন নারীরাও পুরুষের সমান কোন কোন ক্ষেত্রে সামনের কাতারে চলে এসেছে। আবার প্রাথমিক শিক্ষাকেও উন্নিত করা হচ্ছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। তাই উভয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শুরুতে সরকারী প্রাথমিকে পুরুষ শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক ও নারী শিক্ষকদের যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস চাওয়া হতো। ২০১৩ সাল থেকে পুরুষদের স্নাতক ও নারীদের উচ্চ মাধ্যমিক করা হয়।
তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে : https://jobsresultbd.com/
মন্তব্যসমূহ
-
নাসরীন আক্তার রুবি ২৪/০৫/২০১৯উপকৃত হলাম
-
সেলিম রেজা সাগর ০১/০৩/২০১৯আন্তরিক ধন্যবাদ
-
ন্যান্সি দেওয়ান ২৯/০৮/২০১৮Excellent.
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ০২/০৭/২০১৮ভাল সংবাদ।