টাটকা রস
অর্থমন্ত্রীর কাছে এক টাকার লজেন্সের চিঠি
অর্থমন্ত্রীর কাছে এক টাকার লজেন্সের চিঠিশ্রদ্ধাভাজনেষু,
পত্রের শুরুতে সালাম নেবেন। আমি পাড়ার দোকানের বয়ামে আটকে থাকা এক লজেন্স। আমার দাম এক টাকা। অনেক সময় এক টাকার বদলেও ব্যবহৃত হই।
পর সমাচার এই যে, পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, আপনি প্রশ্ন করেছেন, বাজারে এক টাকার লজেন্স পাওয়া যায় কি না। খুব দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাকে লিখছি। কারণ, বাজারে এক টাকা দামের লজেন্স পাওয়া যায়। কেবল তা–ই নয়, আমরা এই এক টাকা দামের লজেন্সরাই এক টাকার মুদ্রার বদলে সার্ভিস দিয়ে আসছি বেশ কিছু বছর ধরে। দোকানি এক টাকার বদলে আমাদের গছিয়ে দেয় ক্রেতাদের হাতে। তারপর আমরা ঘুরে বেড়াই ক্রেতার পকেটে পকেটে। কখনো পয়সা উশুলের জন্য ক্রেতারা আমাদের খেয়েও ফেলে। তবে বেশির ভাগ সময় পকেটে থাকা অবস্থায় প্যান্ট ধুয়ে ফেলে। আমরা ভিজে নষ্ট হয়ে যাই। অথচ আমাদের পূর্ণ মুদ্রার সম্মান কখনো দেওয়া হয়নি। আমাদের গায়ে কেবল কোম্পানির নাম লেখা থাকে। কত আশা ছিল, ‘চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে’ কথাটা গায়ে নিয়ে দোকানে, মানুষের হাতে হাতে ঘুরব। প্রতিজনের আলাদা আলাদা নম্বর থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সিগনেচারও থাকবে। গর্বে আমাদের পা মাটিতে পড়বে না। আমরা ঘুমিয়ে থাকব দোকানের পুরোনো বয়ামে। এই সুযোগে ৫৫ টাকা দামের চকলেটকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার কথাও ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু হায়! অর্থমন্ত্রী হয়েও আপনি জানেন না, আমরা আদৌ আছি কি না! আমরা কার কাছে যাব?
পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র লজেন্স জাতি, যারা একাধারে দেশের হয়ে মুদ্রার কাজও করে থাকি। প্রথম প্রথম মুদ্রার কাজ ছিল পার্টটাইম। এখন চকলেটের কাজ পার্টটাইম। আমরা এখন ফুলটাইম মুদ্রা। তবু এই রাষ্ট্র, সমাজ আমাদের স্বীকার করে না। স্বীকার করলে আমাদের গায়ে অন্তত কোনো না কোনো নেতার ছবির ছাপ পড়ত। এমনকি কোনো দিন কোনো ছিনতাইকারীও আমাদের কারও পকেট থেকে ছিনতাই করেনি!
মাননীয় অর্থমন্ত্রী, আপনি জানেন না বলে এসব তথ্য জানাচ্ছি।
আপনি শুনে আরও অবাক হবেন যে, জাল নোটের মতো বাজারে জাল লজেন্সও আছে! কিন্তু এই নিয়ে প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ভ্রুক্ষেপ নেই ভেজালবিরোধী অভিযানকারীদের। হায়, আমরা না মুদ্রা, না লজেন্স! না আমাদের চিনলেন খাদ্যমন্ত্রী, না চিনলেন আপনি!
ব্যাংকে থাকা আমাদের ‘মুদ্রাবিক অধিকার’। তাই আশা করি, আমাদের মুদ্রার সম্মান দিয়ে বিশেষভাবে বাধিত করবেন। ব্যাংকে টাকা গণনা করার মেশিনের পাশাপাশি লজেন্স গণনা করার মেশিন বসানোরও জোর দাবি জানাই।
ইতি
জনৈক লজেন্স
সভাপতি
নিখিল বাংলাদেশ এক টাকা দামের লজেন্স সমিতি
ধন্যবাদান্তে: রস-আলো
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোঃ মুলুক আহমেদ ১৮/১১/২০১৫
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ২৭/০৭/২০১৫সময়ের কথা। সময় কথা বলছে। ভারী ভালো লাগছে। লজেন্সের জন্য জিভে জল আসছে আর তার দুঃখের কথা শুনে চোখের জল। কোনটা রাখি আর কোনটা ফেলি। সময় থাকলে বলবেন কিন্তু...
-
সুজন ০৪/০২/২০১৫খুবই সুন্দর দেশ যৌবনের লেখনী ছোঁয়া সময় টা কে ধরে থাকুন।
-
ফিরোজ মানিক ৩০/০১/২০১৫অসাধারণ রস, হাসি আর ধরে রাখতে পারলাম না। হাহাহাহাহা......
-
কুয়াশা রায় ২৯/০১/২০১৫হা হা হা...খুব মজার।খুব ভাল লাগল।
-
তুহিনা সীমা ২৮/০১/২০১৫অল আর রাবিস। সর্যি আপনাকে না অর্থমন্ত্রীর ডায়লগ দিলাম। ভালো লাগলো।
-
স্বপ্নীল মিহান ২৮/০১/২০১৫বোগাস মন্ত্রী একটা। পুরাই ননসেন্স। তার ভাষায় তাকে সাধুবাদ জানালাম। যাইহোক বস দারুণ লিখেছেন।
-
মেহেদী হাসান (নয়ন) ২৮/০১/২০১৫যারা নিজ দেশের খবর জানেনা তারা যে কি করে দেশ চালানোর দায়িত্ব পায় বুঝিনা।
-
অ ২৬/০১/২০১৫হুম ।
ভালো ।
মজার । -
আবু সাহেদ সরকার ২৬/০১/২০১৫দারুন একটি প্রকাশ কবি বন্ধু।
-
ডিবেটার সাদ্দাম হোসেন ২৬/০১/২০১৫যথেষ্ট রম্য রচনা।।
-
সবুজ আহমেদ কক্স ২৬/০১/২০১৫ফাইন বস
আর কথা গুলো কিন্তু সত্য|