হনুফাদের জীবন (ছোট নাটক)
ভোর বেলা মা ঘুমিয়ে বাবা তার ছোট্ট ও একমাত্র ছেলেকে ডাকছে
বাবা ঃ তীর্থ ঘুম থেকে ঊঠ, ঊঠ বাবা। সকাল হয়ে গেছে স্কুলে যেতে হবে না।ওঠ, ওঠ বাবা ঘুম ভাঙ্গ
বলতে বলতে নিজেও ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছিল তীর্থর বাবা। এর আগেই বাসার কাজের মেয়ে হনুফা ঊঠে তীর্থর স্কুলের ড্রেস এবং খাবারের ব্যাবস্থা করছিল যার
বয়স মাত্র সাত বছর যা তীর্থর চেয়ে ও এক বছর কম। দুই তিন বার মোরামুরি দিয়ে ঘুম থেকে ঊঠল তীর্থ ঊঠে সে সোজা বাথরুমে চলে যায় প্রসাব
করার জন্য। প্রসাব করে এসে হনুফাকে বলে
তীর্থ ঃ যা বাথরুমে গিয়ে পানি ঢেলে দিয়ে আয়।
হনুফা তখন অন্ন কাজ করছিল।
হনুফা ঃ ভাইয়া একটু পরে যাই ।
বলতেই তীর্থ তার নিজের ঘর থেকে এসে জোরে হনুফার গালে জোরে মারে এক থাপ্পর। এর আওয়াজ পেয়ে তীর্থর মা ঘুম থেকে ঊঠলেন। তখন
হনুফা ঃ দেখেন আন্টি ভাইয়া খামাখা আমাকে গালে মারলো।
তখন আন্টি তার ছেলে কে না থামিয়ে হনুফা কে বলে
আন্টি ঃ যা কাজ কর গিয়ে তোকে খামাখাই মারে যা বলে তা শুনিস না কেন?
মেয়েটি মন খারাপ করে আবার কাজ করতে চলে যায়। সব কিছু রেডি করে হনুফা বলে
হনুফা ঃ ভাইয়া টেবিলে আসেন নাস্তা দিছি
তীর্থ ঃ যা আসতেছি।
নাস্তা করা শেষে ,বাবা আর তীর্থ নিচে নেমে এল। আর হনুফা তীর্থর স্কুল ব্যাগ নিয়ে এল।
তীর্থ তার বাবার মটর সাইকেলে বসা। সেখানে বসেই সে দেখতে পেল হনুফা তার স্কুল ব্যাগ কাধে নিয়ে নামতেেছ অমনি তীর্থ মটর সাইকেল থেকে নেমে দুইতিনট ত্থাপ্পর ও কিল মারল। মেয়েটি অর্থবের মত শুধু বললো
হনুফা ঃ ভাইয়া আপনি শুধু শুধু আমাকে মারেন কেন?
বলে তীর্থর বাবার দিকে তাকালো।তখন তীর্থর বাবা তার ছেলেকে কিছু না বলে হনুফাকে বলল
বাবা ঃ তোরে শুধু শুধু মারে তুই ওর ব্যাগ কাধে নিয়েছিস কেন যা উপরে যা।
তীর্থ ঃ (বাবার প্রস্রয়ে) যা চাকরের বাচ্চা বাসায় যা।
হনুফা এক ফোটা চোখের জল নিয়ে বাসায় চলে আসল। তাকে দেখে তীর্থর মা বলল
আন্টি ঃ চোখে পানি,কাজে ফাকি দেবার ব্যবস্থা যা থালা বাসন মাজ গিয়ে। এখনো কত কাজ বাকি?
থালা বাসন মাজার পর তাকে খেতে দেওয়া হল কালকের বাসি তরকারি এবং পানতাভাত। তবে তাতে একদম অখুশি নয় হনুফা। কারণ তার আগে
অভ্যাস আছে। খাওয়া শেষে আবার কাজে যুক্ত ঘর ঝাড়– দেওয়া ঘর মোছা এমনি করতে করতে তীর্থকে আনতে যাওয়ার সময় হয়ে গেল হনুফার।
হনুফা ঃ আন্টি আমি ভাইয়া কে আনতে যাই।
আন্টি ঃ যা নিয়ে আয়। আসার সময তোর ভাইয়ার ব্যগ তুই নিয়ে উপরে উঠিস। ওর যেন কষ্ট না হয়।
হনুফা ঃ ঠিক আছে।
হাটতে হাটতে চলে আসে ১কি:মি:পথ।স্কুলে এসে গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকে। ছুটি হতেই তীর্থ তার বন্ধুদের সাথে বের হয় ক্লাস থেকে। তীর্থকে দেখেই হাসিতে মুখটি ভরে ওঠে ছোট্ট মেয়ে হনুফার। কাছে আসতেই হনুফা তীর্থকে বলে
হনুফা ঃ দেন ভাইয়া ব্যাগ দেন আমার কাছে। তখন তীর্থর অন্য বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে
বন্ধুরা ঃ এটা কে তীর্থ তোর ছোট বোন?
তীর্থ ঃ আরে ও তো আমাদের চাকর আমাদের বাসার কাজের মেয়ে।
বলতেই সেই হাসি মুখটি ডুবে যায় অচীনলোকে। হনুফা রিকশা ঠিক করে নিয়ে আসে তীর্থকে। তীর্থ রিকশায় বসে টিফিন খায় হনুফা শুধূ চেয়ে চেয়ে দেখে। চলে আসে তারা বাসায়।এসে হনুফা তার হাত থেকে ভাইয়ার স্কুল ব্যাগ রেখে ভাইয়ার র্শাট ও জুতা খুলে দেয়। জুতা খুলতে গিয়ে র্তীথর পায়ে একটু টান লাগে অমনি র্তীথ তাকে মারধর শুরু করে। হনুফা র্নিবাক হয়ে তার কাজ করতে চলে যায়।
দুপুরের খাবারের সময় হয়ে এল ডাইনিং টেবিলে হনূফা সব খাবার নিয়ে আসে। সে এখনো গোসল করে নি সবাই যখন খেতে বসছে তখন সে বাথরুমের লাইট জ্বালিয়ে গোসলে ঢুকে। র্তীথ বাথরুমের বাতি বন্ধ করে দেয়। তাকে লাইট জ্বালাতে দিবেনা। তখন হনুফা ভিতর থেকে বলে
হনুফা ঃ অন্ধকারতো।
আন্টি ঃ বাতি দিচ্ছি।
ছেলে দিতে দিচ্ছে না। তখন র্তীথর মা তার বাবাকে তাকে শাসন করতে বলে।
আন্টি ঃ ছেলেকে কিছু বলবে সব সময় একি অবস্থা এখন মেয়েটা একটু গোসল করবে তাও লাইট জ্বালাতে দিবে না
বাবা ঃ ওর যা ইচ্ছা করুক। (হনুফা কে) তুই গোসল কর বিদ্যুত চলে গেছে।
হনুফা সবই বুঝতে পারে। কিন্তু সে অনেকটা ছোট তাই অনেক বুদ্ধি ওর হয় নাই তাই ও দরজা খুলে দেখে। সে বাতি জ্বালিয়ে আবার ঢুকে। কিন্তু আবার বাতি বন্ধ করে দেয় র্তীথ। তাই হনুফা অন্ধকারেই গোসল করে চলে আসে। সবার খাওয়া শেষ হলে সে সবকিছু ঠিকমত রেখে নিজের খাবার খায়।
বিকেলে সবাই শুয়েছিল টিভির রুমে। সে ছোট তার একটু টিভি দেখতে মন চায়,তাই সে টিভির রুমে যায় এবং নিচে বসে টিভি দেখতে নেয় কিন্তু র্তীথ তাকে টিভি দেখতে দিবেনা। পা দিয়ে ঠেলা দিয়ে সেই রুম থেকে বের করে দেয়। দিয়ে
তীর্থ ঃ যা কাজ কর গিয়ে।
তখন সে চলে আসে আবার চলে যায় ছাদে কাপর আনতে।
এসে শুনে তার আন্টি র্তীথকে বোঝাচ্ছে
আন্টি ঃ বাবা তুমি ওর সাথে এমন কর কেন? ওতো তোমার মতই ছোট। তুমি ওকে মেরোনা। দেখনা ও তোমার সাথে মাঝেমাঝে খেলা করে।
ছেলে কিছুতেই বোঝেনা। সে বলে
তীর্থ ঃ না ওরা চাকরনা। ওরা টিভি দেখবে কেন?
হনুফা আন্টির কথায় অনেক খুশি হয়।
সন্ধ্যা হয়ে যায় সবাই মোঘলাই কেক পিঠা এক একটা খাচ্ছে আর ছোট্ট হনুফা এনে এনে দিচ্ছে। তখন র্তীথর মা তাকে এক পিছ কেক দিল খেতে। কিন্তু র্তীথ দিতে দিবে না। সে সব একা খাবে। এতে করে তীর্থর মায়ের তীর্থর প্রতি প্রচণ্ড রাগ হয়। সে ছেলেকে ১টি ধমক দেয়। দিলে ছেলের বাবা তাকে রাগ দেয়।
বাবা ঃ ঐ শয়তানের বাচ্চার জন্য তুমি আমার ছেলেকে রাগ করছো।
এ কথা শুনে ছেলে ও আশ‹ারা পেয়ে যায় সে বলে
তীর্থ ঃ ও তো চাকরের বাচ্চা ওর জন্য আম্মু তুমি আমাকে রাগ করলে?
ছেলের কথা শুনে বাবা হাসে।আর মেয়েটি আড়ালে কাঁদে।কিন—ু নিরর্থক।
রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমোতে যায় হনুফা। তার কাজ কর্ম শেষ করে আন্টি আর আঙ্কেলের খাটের পাশে মাদুল নিয়ে শুয়ে পরে। মাদুেল ঘুমালেও শোয়ার পরে ঘুমোতে আর সময় লাগে না হনুফার কারণ মনে অত্যন্ত্য সুখ তাই নয় শরীরটা প্রচন্ড ক্লান্ত তাই।
সকালে ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। হনুফা এত সকালে কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে খুলতে যাচ্ছিল কিন্তুু সে ভয় পেয়ে গেল। কারণ এর আগে আন্টির ও আংকেলের কাছে ডাকাতির গল্প শুনেছে। তাই সে আংকেলকে জাগাল।
হনুফা ঃ আংকেল কে যেন কলিং বেল টিপতাছে।
আংকেল ঃ (গিয়ে বলল) কে।
তনয় ঃ (বাইরে থেকে আওয়াজ আসল) দুলাভাই আমি। আমি তনয়।
দুলাভাইয়ের বুঝতে বা চিনতে কষ্ট হল না সে বুঝতে পারল তার ছোট শালা এসেছে। ঢাকা থেকে। সে বি.এস.সি ইন্জিনিয়ার কম্পিউটারে ১ম বর্ষে পড়ছে। তনয় ভিতরে ঢুকেই তার দুলাভাইকে সালাম দিল। আর সাথে সাথে হনুফা এসে তনয়ের কাছ থেকে তার ব্যাগটা নিয়ে নিল। তনয় হনুফাকে দেখে তার দুলাভইকে জিজ্ঞেস করলো
তনয় ঃ এই মিষ্টি মেয়েটি কে।
কারণ সে আগেরবার যখন এসেছিল তখন হনুফা ছিল না। দুলাভাই তনয়ের কথা শুনে বলল
দুলাভাই ঃ কাকে কি বলছ। আরে ও তো আমাদের কাজের মেয়ে।
কথা শুনেই মেয়েটির চেহারা মলিন হয়ে এল আর তনয় খুব কষ্ট পেল। কিন্তু সে কিছুই বলতে পারলো না কারন সে জানে তার দুলাভই একজন বেরসিক, ননরোমান্টিক এবং অহংকারি লোক ।
এক এক করে তীর্থ, তীর্থর আম্মু সবাই ঘুম থেকে ঊঠল সবার সাথে তার দেখা হল কথা বার্তা কুশল বিনিময় হল।
তনয় সারারাত জার্নি করে এসেছে তাই সে গোসল করে হালকা খাওয়া দাওয়া করে একটি ঘুম দেয়। বেশ ভালোই ঘুমাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ চিল্লাচিল্লিতে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম থেকে ঊঠে সে দেখতে পায় তার ছোট্ট ভাগিনা সমবয়সি কাজের মেয়ে হনুফা কে জোরে জোরে কিল থাপ্পর মারছে আর মেয়েটি কাদতেছে। তার আপা তার ছেলেকে কিছু বলছে না আর দুলাভাই তো অফিসেই। তনয় দৌড়ে চলে আসে ভাগিনা আর কাজের মেয়ের মারামারি থামাতে। এসেই
তনয় ঃ কি হয়েছে বাবু তুমি ওকে মারছো কেন,কি করেছে ও?
তখন হনুফা কিছু বলতে চাইলে তীর্থ তাকে কিছু বলতে দেয় না। সে নিজেই বলে
তীর্থ ঃ দেখো মামা খামাখাই এই চাকরের বাচ্চাটা ফ্যান চালিয়ে তারপর কাজ করতেছে।
তনয় তো ভাগিনার কথা শুনে রীতিমত অবাক। সে বলে
তনয় ঃ ছিঃ বাবু এভাবে বলতে হয়না। ও তোমার সমবয়সি ও তোমার বন্ধুর মত। তুমি ওকে চাকর বললে ওর মনে কষ্ট পাবে।আর ওকে কস্ট দিলে আল্লাহ তোমাকে অনেক কস্ট দিবে।
তীর্থ মামার প্রতি অবাক হয়ে
তীর্থ ঃ ছিঃ মামা তুমি কি যে তুমি ওকে আমার বন্ধুর মত বললে।
হনুফা চলে যায় তার কাজ করতে।
তনয় আরো বেশ কয়েকবার তীর্থর অন্যায় ভাবে হনুফা কে মারতে দেখে।এত তনয়ের খুব কস্ট হয়।
বিকাল বেলা ভাগিনা বাইরে গেছে খেলতে আর দুলাভাই এখনো অফিস থেকে আসেনি। কাজের মেয়ে ছাদে গেছে কাপর আনতে। বাসায় তনয় আর তার বোন ছাড়া কেঊ নেই। আপাকে একা পেয়ে তনয় বলে
তনয় ঃ আপা আমরা একজন আদর্শ স্কুল মাষ্টারের সন্তান শুধু বাবাই নন আমাদের মাও একজন ধর্ম পরায়ন মহিলা। আর আমরা তাদের সন্তান হয়ে কোন অন্যায় করতে পারিনা। বরং কেঊ অন্যায় করলে আমরা তার প্রতিবাদ করবো।
তনয়ের আপা বুঝতে পারে যে হনুফার প্রতি তার ভাগিন আর দুলাভাইয়ের অমানবিক আচরন আর তার নিজের নিরব থাকা তনয়ের খারাপ লাগছে তাকে কস্ট দিচ্ছে।
আপা ঃ ভাই আমরা আদর্শ বাবা মায়ের সন্তান ঠিক আছে কিন্তু তুই আমাকে জানিস আর তোর দুলাভাই কে চিনিস।আমি নিজে তেমন কাজ করতে পারিনা আর তাই সবসময় একটি কাজের মেয়ে আমার লাগে। তাই আমি ওকে রেখেছি। কিনতু আমি ওকে কাজের মেয়ের মত মনে করিনা আর কাজের মেয়ের মতও রাখিনা সাধ্যমত দামী জামাকাপর ওকে দেওয়ার চেস্টা করি কেঊ জিজ্ঞেস করলে বলি ও আমার বোনের মেয়ে আবার কেঊ জিজ্ঞেস করলি বলি আমার ভাইয়ের মেয়ে। আমরা যাই খাই তার কিছুটা হলেও ওকে লুকিয়ে দেওয়ার চেস্টা করি।কিন্তু তোর দুলাভাই আর ভাগিনা কে নিয়ে পারিনা।
তনয় একটু ভেবে বলল
তনয় ঃ বুঝছি ব্যাপারটা আমাকেই দেখতে হবে।
আপা ঃ কি বললি বুঝলাম না।
তনয় হেসে দিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে ঊঠে
তনয় ঃ না আপনাকে বুঝতে হবে। দিন দিলে এক কাপ চা দিন আর ও হ্যা ভার্সিটি থেকে ফোন করেছিল কাল রাতে আমাকে চলে যেতে হবে।
আপা ঃ সেকিরে এতদিন পরে এলি আর এখনি চলে যাবি কেন? এত দুরে আসছিস কয়দিন থাক তারপর না হয় যাওয়ার কথা ভাবা যাবে।
তনয় ঃ না আপা যেতেই হবে। আমার ও ইচ্ছা ছিল এবার অনেক দিন থেকে যাবো কিন্তু তা আর হল না।
যেই কথা সেই কাজ তনয় পরের দিন চলে যায়। তীর্থরা থেকে যায় তাদের বাসায়। পরের দিন সকাল বেলা প্রতিদিনের মত তীর্থর বাবা তীর্থ কে স্কুলে নিয়ে যায় হনুফা তার নিজ নিজ কাজ গুলো করে। আর তীর্থর মা ও তার ব্যতিক্রম নয়। কাজ করতে করতে হনুফার সময় হয়ে গেল তার ভাইয়া কে আনতে যাওয়ার। সে আন্টি কে বলে তীর্থকে আনতে যায়। বাসায় তীর্থর মা টুকটাক কাজ করছেন।
হনুফা বাসা থেকে যায় অনেক ক্ষন হয়ে যায় কিনতু সে বাসায় আসে না ঐদিকে তীর্থ স্কুল থেকে দারওয়ানের নাম্বার দিয়ে তার মাকে মিসকল দেয়। তীর্থর মা তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নেয় হাতে নিয়ে দেখে দাড়ওয়ানের নাম্বার সাথে সাথে ফোন ব্যাক করে সে। ফোন দিয়েই তীর্থর কন্ঠ শুনতে পায়। মা জিজ্ঞেস করে
মা ঃ কি বাবা তুমি এখনো স্কুলে কেন?
তীর্থ ঃ মা হনুফা শয়তানটা যে এখনো আমাকে নিতে এলো না?
মা ঃ (মা রেগে) বাবা শয়তানটা বোধ হয় পথে কোথাও দেরি করছে। আজকে বাসায় আসুক ও। যা হোক তুমি কাজ কর একটা রিকশা নিয়ে বাসায় চলে আসো। পারবেনা বাবা ?
তীর্থ ঃ পারবো মা।
মা ঃ আর পথে আসার সময় যদি হনুফাকে দেখ তাহলে নিয়ে এসো পথে মারামারি করার নাই বাসায় আসলে তোমার আব্বু কে দিয়ে শায়েস্তা করাবো। ঠিক আছে বাবা, এখন ফোন রাখি? বলে ফোন রেখে দেয়।
তীর্থ ঠিকি চলে আসে কিন্তু হনুফা নেই। তীর্থর মা ভাবলেন পরে চলে আসবে। বাসার সবাই তো রেগে শেষ।
বিকাল ৫টা বেজে যায় তির্থর বাবা অফিস থেকে চলে আসে কিন্তু তখন ও হনুফা নেই। এতক্ষন কেঊ কোন চিন্তা না করলেও হনুফার জন্য তীর্থর মা বাবার এখন খুব টেনশন হচ্ছে। তারা ভীষন চিন্তিত চিন্তা আর অপেক্ষা করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল তবুও সে বাসায় এল না । এর মধ্যে তীর্থর মা অলরেডি অন্য সব বাসায় খোজ নিয়ে এসেছেন কোথাও নেই। এবার তীর্থর মা খুবই ঊদ্বিগ্ন সে তার স্বামি কে বলে
তীর্থর মা ঃ কি করবা এখন যাও কিছু একটা কর। প্রয়োজনে মাইকিং কর। যাও----।
তীর্থর বাবা প্রথমে রাজি হয় কিন্তু পরক্ষনেই তার মত পাল্টে যায়।
বাবা ঃ (অফ ভয়েস)মাইকিং করলে সবাই জেনে যাবে আর সবাই জেনে যাবে মানে থানা পুলিশের ঝাামেলা হতে পরে তাই এখন মাইকিং করা ঠিক হবে না।
তীর্থর মা কেদেই ফেললেন। তীর্থর বাবা ও যথেস্ট চিন্তিত। হঠাৎ তীর্থর মায়ের ফোন বেজে ঊঠলো ফোন ধরতেই দেখে হনুফার বড় বোনের নার্ম্বা । তৎক্ষনাত ভয় পেয়ে গেল তীর্থর মা। সে ফোন রিসিভ করে না কারন সে ফোন ধরেই তার বোন কে চাইবে আর তখন তারা তাকে কি বলবে? হনুফার বোন ঢাকায় একটি গার্মেন্টস এ চাকরি করেন। সে মাঝে মধ্যে ফোন করে তার ছোট এবং একমাত্র বোনের খোজ খবর নেয়।চিন্তা ভাবনা করতে করতে নির্ঘুম একটি রাত কেটে যায় তীর্থর মা এবং বাবার।
ভোর হতে না হতেই তীর্থর বাবা মাইকিং করার ব্যাবস্থা করেন। সারা এলাকা রিকশা ভারা করে মাইকিং করা হয়।
তীর্থর মা সকালে ঊঠে ফজর নামাজ পরে সেখানে বসেই তবজি পরেই তার কাজের মেয়ের জন্য দোয়া করে যাতে সে যেন চলে আসে। আর তীর্থ ঘুম থেকে ঊঠেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেয়
হনুফা ঃ কিরে হনুফি তুই কই আমার নাস্তা রেডি করস নাই? আমার স্কুল ব্যাগ গোছাস নাই?
চিল্লাচিলি শুনে রাগে ফেটে পড়লেন তীর্থর মা।সে সোজা তবজি জায়নামাজ রেখে ছেলের ঘরে গিয়ে ছেলেকে মারে দুই গালে দুইটা থাপ্পর। আর ছেলেকে গালাগাল দিয়ে বলে
তীর্থর মা ঃ তোর জন্যই আজ এ দশা।
এতক্ষনে তীর্থ বুঝতে পারলো যে হনুফা এখনো বাসায় আসে নি।
ঐ দিকে র্তীথর বাবা থানায় গিয়ে জি.টি এন্ট্রি করেছেন,মাইকিং এর ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু কোথাও কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা। এভাবে নিখোজেই কেটে যায় সাত দিন। চিন্তায় চিন্তায় র্তীথর বাবা-মার খাওয়া-দাওযা ঘুম শেষ।
এদিকে খবরটি হনুফার একমাত্র বোনও জেনে যায়। সে থানায় র্তীথর মা-বাবার নামে অপহরণ মামলা করে। পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করতে আসে। গ্রেফতার করে তাদেরকে নিয়ে যাবে এই মুহুর্তে একজন উকিল আসেন তাদের জামিনের কাগজ নিয়ে। জামিনের কাগজ দেখে পুলিশ তাদেরকে রেখে যায়। আর উকিল সহ তারা সবাই ঘরের ভেতরে ঢোকে। প্রথমেই র্তীথর মা উকিলের কাছে জানতে চায়
তীর্থর মা ঃ কে আমাদের জামিনের ব্যবস্থা করলো আর কিভাবেই কি হলো?
উকিল ঃ (একটু মুচকি হেসে) কুল ডাউন। এত অর্ধৈয হবার কিছুই নেই জামিন যখন হয়েছে তখন জানতে পারবেন।
তারপর উকিল তার কথাগুলো বলতে শুরু করলেন।
উকিল ঃ এই যে জামিন যা দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে আপনাদেরকে ছাড়িয়ে রাখলাম তা সাময়িক। এখনও চুড়ান্ত জামিন হয়নি। এটা মাত্র সাতদিনের জন্য।
এবার র্তীথর বাবা একটু তড়িঘড়ি করে মুখ খুললেন
বাবা ঃ তাহলে পুরো জামিন হবে কিভাবে।
উকিল ঃ পুরো জামিন চাচ্ছেন তা মেয়েটির উপর তো খুব র্নিযাতন করেছেন। একবারও তো চিন্তা করেননি আপনার সন্তানটি যেমন ছোট তেমনি হনুফা ও।ওরো একটু ভালবাসা-আদর,স্নেহ-মমতার দরকার আছে। কিন্তু ও কি তা পেয়েছে। কখনো কি ওর সাথে অন্যায় ছাড়া ন্যায় ভাবে একটি কথাও বলেছেন। বলেন নি, আজকে যদি আপনি পুরোপুরি জামিন পেয়ে যান তাহলে, কি হবে জানেন, আর একটি কাজের মেয়ে রাখবেন আবার তাকে র্নিযাতন করবেন আবার সে হবে নিখোজ এভাবে কতদিন।
এবার অহংকার ছেড়ে একটু নরম হয়ে...
তীর্থর বাবা ঃ (নিচু স্বরে)আসলে আমি এই জীবনে যা করেছি আজ মনে হচ্ছে তার সবটাই ছিল ভূল,অন্যায়।তবে সে অন্যায় ভবিষ্যতে আর কখনো করবোনা।
তীর্থর মায়ের দুচোখ বেয়ে তখন পানি পড়ছিল।
উকিল ঃ আপনি যে ভবিষ্যতে এ রকম কাজ আর করবেন না তার প্রমান কি?
তীর্থর বাবা ঃ প্রমান চান? বলুন আমাকে কি করতে হবে?
উকিল ঃ আপনাকে তেমন কোন প্রমান দিতে হবে না। আপনাকে শুধু কয়েকটা সহজ শর্ত দেওয়া হবে।শর্ত গুলো মানলেই আপনাকে পুরোপুরি জামিন দেওয়া হবে। তীর্থর বাবা আপনারা পুরো জামিনের ব্যাবস্থা করে দিলে আমি আপনাদের সব শর্তই মেনে নিবো।ঊকিল তাহলে শর্ত গুলো ভালো ভাবে শুনে নিন।
১.হনুফার সাথে কখনো কারনে অকারনে খারাপ ব্যাবহার করতে পারবেন না।
২.খারাপ ভাষায় তার সাথে কথা বলতে পারবেন না।
৩. আপনারা যে সকল ভালো খাবার খান তার কিছুটা হলেও তাকে দিতে হবে।
৪. আপনার ছেলে কখনো তাকে মারতে,রাগ করতে কিংবা খারাপ কথা বলতে পারবে না।
৫. আর আপনি যদি ঊপরোক্ত শর্ত গুলোর কোন একটি ভঙ্গ করেন তা হলে আপনাকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা সহ স্ব ইচ্ছায় জেলে যেতে হবে।
কি আপনি রাজি?
তীর্থর বাবা ঃ আমি রাজি কিন্তু টাকার পরিমানটি একটু কমানো যায় না?
ঊকিল ঃ তার মানে আপনি ঊপরোক্ত শর্ত ভঙ্গ করবেন? তাহলে কিন্তু এখনি জেল।
তীর্থর বাবা ঃ না আচ্ছা ঠিক আছে আমি সবই মেনে নিলাম। তীর্থর বাবার কথা শেষ করতেই ঊকিল তার ফাইল থেকে
একটা ১৫০/= স্টাম্প বের করে। সে বলে সব শর্ত যদি মানেন তা হলে নির্ভয়ে এই স্টাম্পে স্বাক্ষর করেন।
স্বাক্ষর করতে করতেই তনয় হনুফা কে সাথে নিয়ে ঊপস্থিত হয়। হনুফা কে দেখে তনয়ের আপা তাকে জড়িয়ে ধরে। তার চোখ দিয়ে তখনো পানি ঝরছিল। সে হনুফা কে এক একটা জিজ্ঞেস করে। তনয়ের দুলাভাই ও অবাক হয়ে যায়। সে তনয় কে জিজ্ঞেস করে
দুলাভাই ঃ তুমি, তুমি ওকে কোথায় পেলে?
তখন তনয় হাসতে হাসতে বলে
তনয় ঃ দুলাভাই আপনি যতই অহংকারি আর নন রোমান্টিক হন না কেন এবার আর আমার বলতে কোন ভয় নেই সম্পূর্ন ঘটনাটি আমিই ঘটিয়েছি। হনুফার প্রতি আপনাদের অমানসিক অত্যচার আমার খুব লেগেছিল।তাই আপনাদের অত্যাচারের হাত থেকে ওকে বাচানোর জন্য আমি এ কাজটি করেছি। যেদিন আমি ঢাকার ঊদ্দেশ্যে আপনাদের বাসা থেকে চলে যাই সেদিন আমি ঢাকা যাইনি।
দুলাভাই ঃ তাহলে,(খুব অবাক হয়ে বলে ঊঠে তনয়ের দুলাভাই) ?
তনয় ঃ শুনবেন শোনেন তাহলে
তনয় ঃ আমি এখানকার একটি আবাসিক হোটেলে ঊঠেছি, আর আমি আগে থেকেই হনুফা কে বলে রেখেছি আমি তাকে স্কুলের পথ থেকে নিয়ে যাবো যেই কথা সেই কাজ।ওকে নিয়ে সোজা ঢাকায় চলে গেলাম। আর ওর বোন কে দিয়ে আমিই ফোন করিয়ে দিলাম।আর আপনাদের বিরুদ্ধে যে থানা পুলিশ কেইস করা হয়েছে তা সম্পুর্ন মিথ্যা। আর আপনাদের ধরতে যে পুলিশ এসেছিল তাও ছিলো সাজানো।আর আপনার পাশে যে ঊকিল সাহেব বসে আছেন সে হল আমার বন্ধুর বড় ভাই।
এতক্ষন পরে দুলাভাই হেসে ঊঠলো। দুলাভাইয়ের হাসি দেখে
তনয় ঃ এই যে মিঃ এতো হাসির কোন কারন নাই সব কিছু মিথ্যে আর বানোয়াট হলেও আপনার সাইন করা যে স্টাম্প টি রয়েছে সেটি কিন্তু একেবারেই মিথ্যে নয় একে বারে ১০০% খাটি। সো বি কেয়ার ফুল। দুলাভাই প্রথমে একটু ভয় পেয়ে গেলেও পরবর্তিতে আবার হেসে দেয়
দুলাভাই ঃ আরে শালা বাবু আমার আর স্টাম্প লাগবে না আমার ভূল এমনিতেই ভেঙ্গে গিয়েছে। আর তোমার মত ইনটেলিজেন্ট ইয়ং স্মার্ট শালা যার আছে সে কি অন্ধ বোকা থাকতে পারে নাকি?
এবার আপা চোখের পানি মুছে একটু হেসে তার হাসবেন্ড কে
আপা ঃ চিনলানা তো আমার হ্যান্ডসাম ভাইটাকে চিনলাতো-------।
বলতেই সবাই হাসতে থাকে। এভাবেই শেষ হয়ে যায় হনুফাদের জীবনের ছোট্ট একটি নির্মম ঘটনা।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মনিরুজ্জামান শুভ্র ০৮/১০/২০১৪ভাল হয়েছে ।
-
আবু সাহেদ সরকার ২৯/০৯/২০১৪হাতে সময় কম অর্ধেক পড়লাম। বাকিটুকু কাল পড়বো।