সর্বহারা (নাটক)
প্রচন্ড রোদ। বিশাল রাস্তা, রাস্তার পাশে তেমন বড় গাছপালাও নেই যে একটু ছায়া পড়বে।এমন রোদের মধ্যেই বসের সাথে হেটে যাচ্ছিল নিরব। অনেক খোজাখুজি করেও একটা রিকশা পাওয়া যায়নি। তাই হেটে যেতে হচ্ছে তাদেরকে। আর সাথে রয়েছে বসের ব্যাগ। বস তো রোদ ঠেকাতে কপালে হাত দিচ্ছে চোখে সান গ্লাস পড়ছে। আর এদিকে নিরব মনে হয় হাঠতে হাঠতে মাঝে মধ্যে ঘুমিয়েও পড়েছে। স্যার হাঠতে হাঠতে তার সহকারীর দিকে তাকায়। তাকিয়ে তো অবাক।
বস ঃ কি ব্যাপার নিরব তুমি কি ঘুমাচ্ছ নাকি?
নিরব ঃ (ঘোর থেকে ফিরে এসে) না স্যার এমনিই খুব রোদ লাগছে
বলে হেসে দেয়।বসও হেসে দেয়।
বস ঃ নিরব আজ তো কাজ শেষ কালকে তুমি শুধু এসে এই সফট ওয়্যারটা এখানে সেটআপ দিয়ে যেও। বলতেই বস হেসে দেয় তুমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলে। কি রাতে ঘুম হয়নি। নাকি সকালে নাস্তা করনাই। চলো এখনই গিয়ে আগে ভাগে লানচ করে নিও।
তারা একটি কম্পিউটার র্সাভিসিং সেন্টারে চাকরি করে। আর সেই অফিস থেকেই আজকে তারা এসেছে এখানে কাজ করতে। হাটতে হাটতে তারা পৌছে যায় তাদের নির্দিষ্ট স্থানে।লিফট দিয়ে চার তলার উপরে উঠে কাজ করতে।কাজ হল কম্পিউটার এর। তারা কাজ করতে করতে সব কাজ হয়ে যায় কিন্তু একটা সফট্ওয়্যার লাগবে যেটা আনতে মনে নাই। এতক্ষণ বস বসে বসে কাজ করছিল আর নিরব পাশে বসের ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে ছিল।আর দাড়িয়ে দাড়িয়েই ঘুম।
তারা সেখান থেকে চলে আসে।
অফিস করে নিরব বাসায় চলে যায়।পরের দিন ঠিক টাইমে নিরব আবার অফিসে চলে আসে। সে আর তার বন্ধু সানি একই অফিসে চাকরি করে। আর অফিসে তারা বসেও পাশাপাশি। আজো নিরবে একই অবস্থা অফিসের চেয়ারে বসে বসে ঝিমাচ্ছে ।সানি নিরব কে দেখে সে হাসে। সে নিরব কে মামা বলে ডাকে।
সানি ঃ কিরে মামা ঘুমাচ্ছিস নাকি? বসে দেখলে বাস দিবো।
নিরব ঃ কই আমি ঘুমাইতাছি তোরে কে কইলো যে আমি ঘুমাইতেছি? তুই তোর কাজ কর বসে বাস দিলে আমারে দিবো।
তার ঘুমের ঘোর তখন ও ছিলো এই অবস্থা দেখে সানি নিরবের কাছে আসে
সানি ঃ কিরে মামা কি হইছে?তোর শরীর খারাপ নাকি?
নিরব ঃ আরে না আমার শরীর তো ঠিকই আছে।আর শরীর খারাপ হইলে কি অফিসে আসতাম?
সানি ঃ না তাতো ঠিকই কিন্তু মামা তুই যাই কছ আমি তো তোওে দেখতাছি দেখে আমি বুঝতে পারি যে তোর কিছু একটা
হয়েছে। এখন তুই বল তোর কি হয়েছে? আমার সবকিছু তুই জানিস আমি ও তোর সব কিছু জানি সো আমার সাথে কিছু লুকিয়ে তো লাভ নেই।
সানি অনেক রিকোয়েস্ট করার পর নিরব খুব ক্লান্ত ভাব নিয়ে বড় একটি নিশ্বাষ ছেড়ে
নিরব ঃ মামা শোন তোর কাছে তো আমি সবই বলি আর যেহেতু সবই বলি এটাও বলবো।দোস্ত আসলে আমি ইচ্ছা করেই
তো আর অফিসে এসে ঝিমাচ্ছি না। আমার বাসায় সমস্যা চলছে তুইতো জানিস আমার বাবা রিটায়ার্ড মানুষ বড় ভাই
নিজের সংসার নিয়ে ব্যাস্ত আর একমাত্র ছোট বোনের বিয়ের বয়স ও হয়ে গেছে ওকে বিয়ে দিতে হবে। এই নিয়ে
বাবা মা খুব চিন্তিত। এই দিকে আমার পজিশন ও তো ভালো নেই আমাদের অফিসের মালিকের যে অবস্থা কখন
আমার চাকরি চলে যায়? আমি তো আর এতো টাকা সিকিঊরিটি মানি দিতে পারবো না। এই সব বিভিন্ন চিন্তা ভাবনায়
রাতে ঘুম হয় না। খাওয়া দাওয়া ঠিকমত হয় না। আর রাতে না ঘুমিয়ে সকালে যে একটু ঘুমাবো তার ও তো কোন
ব্যাবস্থা নেই সকাল সকাল অফিসে আসতে হয়। আর সেই জন্যই তো বসে বসে ঝিমাচ্ছি।
কথা গুলো বলতে বলতেই বস চলে আসে এসে নিরব কে বলে ।
বস ঃ কি নিরব এখনো যাও নাই? তোমার না সফট ওয়্যার নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।
নিরব ঃ (বসের কথায় সায় দিয়ে)হ্যা বস আমি এখুন্নি যাচ্ছি।
বলে সাথে সাথেই সে সেখান থেকে চলে যায়। সে ব্যাগ নিয়ে সেই অফিসে চলে যায়
অফিসে গিয়ে মাত্র কম্পিঊটারের সামনে বসছে বসতেই যেন তার খুব ঘুম পাচ্ছে। যে ম্যাডামের কম্পিঊটার সে বলে
ম্যাডাম ঃ আপনি বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়ছেন?
নিরব ঃ কই নাতো আমি তো ঘুমাইনি (চোখ মুছতে মুছতে আমার) চোখে কি যেন ঢুকেছে তাই চোখটা যেন কেমন করছে।
সে জন্য চোখ বুঝে রাখছি।
ম্যাডাম ঃ ও তাই তা আপনার চোখে পানি দিয়ে ধুয়ে আসেন কিছু ঢুকলে তা চলে যাবে। রাস্তায় যা ধুলোবালি। রাস্তায় চলতে
গেলে সান গ্লাশ ইঊজ করাই বেটার।
নিরব ঃ ও হ্যা তাইতেি আমার ও তো সান গ্লাষ আছে বলতেই পকেট থেকে সান গ্লাস বের করে অফিসের ভিতরেই চোখে
দেয়।
ম্যাডাম ঃ (হেসে দিয়ে) এখন দিলে কি লাভ?
তখন
নিরব ঃ (বোকার মত হেসে)তাই তো বলেই সান গ্লাস টা খুলে ফেলে।
কথা বলতে বলতে কাজ ও করছিলো সে। আর কথা বলতেই তার কাজ ও শেষ হয়ে যায়। নিরব যখন চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলবে
ঠিক তখনই তার চোখ চলে গেল জানালা দিয়ে বাইরে ঠিক চারতলা থেকে নিচ তলায়। সে যেই বিল্ডিংয়ে কাজ করছে তার পাশেই ছোট বস্তির মত একটা বাড়ি। সেই বাড়িতে চোখ পড়তেই সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সে কয়েক বার ভালা ভাবে চারপাশে তাকিয়ে দেখে কেঊ নেই অফিসে ম্যাডাম ও নেই। তাই সে আরো অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। তাকিয়ে সে দেখতে পেলো ছোট্ট একটা ঘর আর ঘরের চারপাশে কলা গাছের ঝার। যার মাঝখানে একটা লোক কোদাল দিয়ে কি যেন খুড়ছে। আর লোকটির স্ত্রী চার পাশে চোরের মত তাকাচ্ছে যা শুধু চারতলার ঊপর ছাড়া আর নিচের আসে পাশের কেঊ দেখতে পায় না। বাইরের আকাশটা একটু মেঘলা মেঘলা। রোদ নেই আর ঐদিকে এই ছায়ায় ও প্রচুর ঘেমে গেছে। লোকটি যে কি খুড়ছে তা এতো দুর থেকে তা বোঝা যাচ্ছে না। অনেকখানি খোড়ার পর লোকটার স্ত্রী তাকে পানি এনে দেয় সে পানি খায় তার পর আবার তার ঘাম ও মুছে দেয়। স্ত্রী তার নিজের কাপরের আচল দিয়ে স্বামীর শরীর মুছে দিচ্ছে আর তারা কি যেন কথা বলছে আর হাসছে। ঘাম মোছা শেষে স্ত্রী তাদের সেই ছোট্ট ঘরটিতে চলে যায়॥
লোকটা খুরতেছে তো খুরতেছে আর নিরব ও নিশ্চিন্ত মনে দেখতেছে। এর ভিতরে কি রাখা আছে? অফিসের জানালা দিয়েই এসব দেখছিলো সে হঠাৎ পিছন ফিরে অফিসের ভিতরে তাকিয়ে দেখে কেঊ দেখে ফেললো কিনা। পিছন থেকে ফিরে আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েই রইলো।তাকিয়ে দেখে যে লোকটি আর তার স্ত্রী দু জনে কি যেন পিতলের কলসির মত হাতে নিয়ে নিয়ে যাবে এমন অবস্থা কিনতু ভালো ভাবেই কিছু বোঝা যাচ্ছে না কারন আজ আকাসে কোন রোদ নেই।
নিরব ঃ (কৌতুহলি ভাব নিয়ে)আজ রোদ ঊঠতে পারলো ন তাইলে তো জিনিসটা ভালো ভাবে দেখা যেতো।
বলতেই হালকা রোদ উঠে আর রোদ উঠতেই কলসিটি ঝিলিক মেরে উঠে। নিরব আরো কৌতুহলি হয়ে উঠে। এটা হবে সোনা ভর্তি পিতলের কলসি না হয় পুরোনো দিনের সেই পিলার। যার মূল্য কোটি কোটি টাকা। যা এক দুর্লভ অমূল্য সম্পদ্।তাই আর দেরি নয়॥ সে সোজা তার ব্যাগ নিয়ে নেমে যায় সেই অফিস থেকে।
নেমে নিজে নিজে বুদ্ধি করে নেয় ঐ মূল্যবান জিনিসটা কিভাবে নিজের করে নেওয়া যায়॥ বুব্ধি পেয়েও যায় সে । সে তার পকেট থেকে সান গ্লাশটা বের করে চোখো পড়ে। ভাবটাব নিয়ে সোজা চলে যায় সেই কলা গাছের ঝারের ভিতরে। সেখানে গিয়ে দেখে কোন গর্ত নেই।তবে এখান থেকে যে মাটি খোরা হয়েছে তা বোঝা যায়। সে ডানে বামে তাকিয়ে সোজা চলে যায় ঐ ছোট্ট কুরে ঘরটির ভিতরে।
গিয়ে দেখে স্বামী আর স্ত্রী মিলে কথা বলতেছে। সে যাওয়াতে তারা তাদের কথা থামিয়ে দেয়। কথা থামিয়ে একে অন্যের দিকে তাকায়। নিরব সোজা তাদের কাছে চলে যায়। নিরব ঘরে ঢোকাতে তারা কেমন যেন ভয় পেয়ে যায়। নিরব তাদের ভয় পাওয়া দেখে মনে মনে বুদ্ধি পাকায় এইতো সুযোগ তাদের কে বোকা বানানোর জন্য। তখন
নিরব ঃ আপনারা মনে হয় ভয় পাচ্ছেন? ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। আর ভয় পেলেও কিছু করার নেই যেহেতু আমি সবজেনে
ফেলেছি। আর আমি যেহেতু আমি সব জেনেই ফেলেছি তাই আমার কাছে লুকাবে না। আর বোঝেন ই তো লুকালেও কোন ও লাভ হবে না।তাই আমি যা যাজিজ্ঞেস করবো তার ঠিক ঠিক জবাব দিবেন।
লোকটি ঃ হ্যা ঠিক আছে।
নিরব ঃ নাম কি?
লোকটি ঃ কিবরিয়া।
নিরব ঃ কি করেন?
লোকটি ঃ আমি এহানে মাত্র তিন চাইর মাস হয় আইছি তেমন কিছু করি না। মাঝে মধ্যে রিকশা চালাই আর আমনে তো সবই জানেন তাই আপনার কাছে লুকাইয়া তো লাভ নাই। আমরা পালাইয়া বিয়া করে এহেনে আইয়া থাকি। তাই বাড়ি ও যাইতে পারি না। দেশের কেঊ আমাগরে মাইন না নেয় নাই। ছোট ভাই মাঝে মধ্যে দেশ থেকে এহেকটা দিয়া যায় তাই দিয়া কোন মতে সংসার চলে॥
স্ত্রী ঃ হ হেয় যা কইছে তার সবই সত্য।
নিরব তাদের পালানোর কথা শুনে তো আরো খুশি। ভাই¹া বিয়া করছো? ভাই¹া বিয়া কইরা এহেনে আইছো তোমাদের এ এখান থেকে ও ভাগানোর ব্যাবস্থা করতাছি না না এখন কিছু করা যাইবো না এখন তো আমি একলা। একা একা এসবই ভাবতে ছিলো নিরব। ভাবতে ভাবতেই বুদ্ধি এসে যায় নিরবের মাথায়। সে রেগে যায় আর রাগী ভাব নিয়েই
নিরব ঃ হ্যা পালিয়েছ পালিয়ে বিয়ে করেছ আর সেগুলো সব জেনেই আমি এখানে এসেছি। যা হোক শোন এখন আমি যা
বলছি তা কান দিয়ে শোন। এখন থেকে তোমরা এই ঘরের সীমানার বাইরে যাবে না। বাড়ির কোন কিছু বিক্রি করবে
না। আর তোমাদের কাছে তো কোন মোবাইল ফোন নেই? কারো সাথে কোন যোগাযোগ করা যাবে না। তোমাদের
খাবার দাবার যা দরকার হবে তা সব কিছু আমি অথবা আমার লোকজন এসে তোমাদের কে দিয়ে যাবে। আর তোমারা এসব কিছু করতে চাইলে ও পারবে না কারন তোমাদের পাহারায় অনেক লোকজন রয়েছে। বলে সে সেখান থেকে চলে আসে।
তার গেটাপ পুরোপুরি চেঞ্জ। অফিসে এসে পুরোপুরি চাঙ্গা অবস্থ্। ভাবই অন্য রকম। কতক্ষন পরে সে বসের কাছে ছুটি নিয়ে চলে যায় বাসায়। বাসায় গিয়ে দেখে বাবা মা খুবই চিন্তিত সে তাদের কাছে তাদের চিন্তার কারন জানতে চায়।
নিরব ঃ মা, বাবা কি কি হইছে তোমাগো সারাদিন দেখি শুধু ভাবোই কিসের এতো চিন্তা তোমাগো?
বাবা মা ঃ তোর বোনের বিয়ের ব্যাপারেই তো আমাদের যত চিন্তা।
তখন নিরব বাবা মাকে সন্তনা দিয়ে বলে
নিরব ঃ বাবা মা তোমরা এতো চিন্তা কর কেন? আমি তো আছি । বাবা তুমি ঘটক কে ডাকো ওর জন্য ছেলে দেখতে
বলো।তারপর ছেলে পছন্দ হলে বিয়ের ব্যাবস্থা করে ফেলো।
বাবা ঃ বিয়ে ঠিক করবো আসল জিনিসই তো নাই মানে টাকা পাবো কোথায়?
নিরব ঃ টাকা সেটা কোন সমস্যা না। আমার কাছে এখন অনেক টাকা আছে আমি এখন অগনিত টাকার মালিক।
বাবা ঃ কিভাবে তুই এতো টাকা পেলি কোথায়?
নিরব ঃ বাবা মা এখন আমার কাছে রয়েছে সেই মূল্যবান পিলার যার দাম কোটি কোটি টাকা। ছেলের কথা শুনে তো বাব মা
অনেক খুশি।
তারা তাদের মেয়ের বিয়ের জন্য ঘটক কে ডেকে পাঠায়। বাবা ঘটককে বলে
বাবা ঃ আমার মেয়ের জামাই হবে দশ জনের একজন। প্রয়োজনে আমরা বরের যে কোন চাওয়া পুরন করবো। চলতে থাকে
বোনের বিয়ের কথা।
নিরব যায় তার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে আর এই খুশির খবরটা দিতে। তার প্রেমিকা তাকে তেমন পাত্তাই দেয় না কারন তার তেমন টাকা পয়সা নেই। প্রেমিকাকে নিয়ে সে যেখানে সেখানে ঘুরতে যেতে পারে না। আজ ও আগের মত নিরব কে সে তেমন চান্স দেয় না।
নিরব ঃ জান শোন তুমি আমার সাথে এমন করো আর যেমনই করো আমি তাতে কিছু মনে করি নাই কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত
নিয়েছি আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
তার প্রেমিকা তো বিয়ের কথা শুনে বোকা হয়ে যায়।
প্রেমিকা ঃ (মুখ বাকা করে) তুমি করবে বিয়ে তাও আবার আমাকে?তা ভালো কিন্তু খাওয়াবা কি? কি বলতেছো ভেবে চিন্তে
বলতেছে তো?
নিরব ঃ আরে তুমি তো অনেক বুদ্ধিমতি! ঠিকইতো আমি তো এখনো চিন্তাই করি নাই যে তোমাকে কি খাওয়াবো?
প্রেমিকা ঃ তাইলে আর বলছি কি? তার চেয়ে বরং বলি কি আগে টাকা পয়সা যোগার কর তারপর বিয়ে স্বাদির কথা চিন্তাকরো।
নিরব ঃ কারে আমি কি বলতেছি? তোমারে একটু আগে আমি বুদ্ধিমতি বলছিলাম না এখন দেখছি তুমি তো বুদ্ধিমতি না তুমি
তো বোকামতি। আমি তো ভাবছি তোমকে কি খাবো পোলাও না বিরিয়ানি আর থ্রি স্টারে না ফাইভ স্টারে? আর তুমি কি বলছো?
প্রেমিকা ঃ মানে কি?
নিরব ঃ মানে আবার কি? টাকা পয়সা, টাকা পয়সা আমার জন্য এখন কোন সমস্যাই না। কারন আমি এখন অফুরন্ত টাকার মালিক। কত টাকা লাগবে তোমার? কত হাজার কত লাখ, কতকোটি? কত টাকা চাই তোমার?
প্রেমিকা ঃ কি হইছে মনে হইছে টাকার খনি পাইছো?
নিরব ঃ বলতে পারো টাকার খনিই পেয়েছি।
প্রেমিকা ঃ মানে কি? আমাকে খুলে বলবা তো?
নিরব ঃ আমার কাছে এখন আছে সেই দুর্লভ পিলার।
প্রেমিকা ঃ (অবাক হয়ে) কিসের পিলারের কথা বলছো তুমি? তুমি পিলার পাবা কোথায়?
নিরব ঃ সেটা এখন তোমার না জানলেও চলবে শুধু একটা কথা জেনে রাখো সেই দুর্লভ জিনিসটা এখন আমার কাছে। আর
বুঝতেই পারছো আমার পজিশন টা এখন কোথায়?
বলেই নিরব আর তার প্রেমিকা হেসে দেয়। প্রেমিকার ভালো বাসা তার প্রতি আরো বেড়ে যায়।আড্ডা শেস করে তারা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়।
এবার নিরব সেই বাড়িতে যায়। যেখানে পিলার রাখা আছে। সে বাড়িতে স্বামী স্ত্রী বেচারা দুজন তো ভয়ে শেষ। যেভাবে থাকতে বলে এসছে তারা ঠিক সেই ভাবেই ঘরের ভিতরে বসে আছে। নিরব গিয়ে তাদের খাবার দিয়ে আসে।তারা সেখানই খাবার খায়। নিরব তাতে ও নিশ্চিন্ত না সে চিন্তা করে দেখে এখানে সত্যি সত্যি পাহাড়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। নিরব তার কিছু একান্ত ব্যক্তিগত বন্ধুদের সেখানে পাহাড়ায় রেখে যায়। তখন তার বন্ধুরা তার কাছে জানতে চায়
বন্ধুরা ঃ কিরে কিসের জন্য এই পাহাড়া?
নিরব ঃ এতো কিছু জেনে তোদের লাভ নেই পাহাড়া দে গাড়িবাড়ি টাকা পয়সা যা দরকার তাই পাবি।
বন্ধুরা ঃ টাকা পয়সার দরকার এইটুক কাজ কেন আরো বড় কোন কাজ থাকলেও বল করে দিবো।
নিরব সেখান থেকে চলে আসে। বাসায় এসে বাবার সাথে বসে বোনের বিয়ের খরচের বিভিন্ন হিসাব কিতাব করে। ঘটক কে ডাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে
নিরব ঃ (ঘটক কে) বরদের পক্ষ থেকে কি কি চাই? আর আপনার নিজের জন্য কি চাই? যার যা চাওয়ার আছে তা কোন
সংকোচ ছাড়াই চেয়ে নিবেন। এখানে লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই।
পরের দিন নিরব অফিসে যায় কিন্তু প্রতি দিনের মত অফিস টাইমে নয় অফিস টাইম থেকে ঠিক ১ ঘন্টা পরে।এসেই বসের সামনে পরে। বস তার দিকে তাকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে ১০টা বাজে। তখন
বস ঃ নিরব আজ তোমার এতো দেরি কেন?
নিরব ঃ বস আসলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো।
বস ঃ এটা কেমন কথা তাই বলে ১ ঘন্টা? চাকরি থেকে কি ঘুম বড় হয়ে গেলো?
নিরব ঃ আসলে বস চাকরি করি কি জন্যে নিজের সুখের জন্যে আর শরীরের সুখের একটা ব্যাপার আছে না
ঠিকমত না ঘুমাইলে শরীর খারাপ করবে। আর এই সামান্য চাকরির জন্য আমি তো অসুস্থ হয়ে থাকতে পারি না।
বস ঃ (রেগে) সামান্য চাকরি মানে? তুমি কি বলতে চাচ্ছ?
নিরব ঃ বস আমি তো কিছু বলতে চাচ্ছি না বলতে তো চাচ্ছেন আপনি॥
বস ঃ তুমি যে চাকরিটাকে সামান্য চাকরি বলে অপমান করছো তুমি কি ভুলে গেছো যে তোর্মা এই সামান্য চাকরির বেতন
দিয়েই তোমার সংসার চলছে?
নিরব ঃ হ্যা আমি জানি যে এই চাকরির বেতন দিয়ে আমার সংসার চলতো কিন্তু!
বস ঃ চলতো মানে আর কিন্তু কি?
নিরব ঃ মানে হল এই চাকরি না হলে ও আমার চলবে আপনার যদি চাকরিতে আমাকে রাখেন তাও ভালো আর না রাখলে
আল্লাহাফেজ।
বস ঃ (কৌতুহলি হয়ে) কি ব্যাপার নিরব কি হয়েছে? আমাকে খুলে বল?
নিরব ঃ বস পিলারের নাম শুনছেন?
বস ঃ কিসের পিলার?
নিরব ঃ যে পিলার বিভিন্ন দেশের সীমান্ত চিহ্নিত করার জন্য রাখা হতো আর যে গুলো বিশ্ব যুদ্ধের সময় হারিয়ে এক জায়গা
থেকে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলো। যার মুল্য কোটি কোটি টাকা।
বস ঃ হ্যা শুনেছি। পিলারের কথা তো অনেক শুনেছি কিন্তু পিলারের কি হয়েছে?
নিরব ঃ সেই পিলার এখন আমার কাছে। তা বুজতেই পারছেন আমি এখন কোটিপতি।
বস ঃ বিনয়ের সাথে হ্যা দুই একদিন তো অফিসে দেরি হতেই পারে তাতে কোন সমস্যা নেই। আর পিলারের ব্যাপারে আর
কারো সাথে আলাপ করার দরকার নেই আমি তো আছি যা করার আমিই করে দিবো তুমি কোন টেনসন করো না।
আর শরীর খারাপ করে চাকরি করার কোন দরকার নেই।
বস সহ অফিসের সবাই এখন নিরবের ভক্ত। নিরব যেন অফিসের বসের ও বস।
ঐদিকে নিরবের প্রেমিকা তার বাবা মায়ের সাথে নিরবের ব্যাপারে আলাপ করে। নিরবের কথা শুনে প্রেমিকার মা বাবা ও খুব খুশি হয়। তারা মেয়ের পছন্দের প্রশংসা করে।পরের দিন নিরবের বাড়িতে তাদের বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। প্রয়োজনে ছেলেরা যা চায় তাই দিতে রাজি কনে পক্ষ। নিরবের বাবা মা বিয়ের ব্যাপরে নিরবের সাথে কথা বলে নিরব ও রাজি। তাদের বিয়ের কথাবার্তা চলতে থাকে।
ঐদিকে নিরবের বন্ধুরা কড়া পাহাড়া দিতে থাকে। কেউ বাড়িতে ঢুকবে তো দুরের কথা বাড়ির আসে পাশেই আসতে পারে না।ঐদিকে বাড়ির ভিতরের স্বামী আর স্ত্রী দুই বেচারা আছে মহা বিপদে।তারা নিজেরাও জানে না তাদের অপরাধ কি, কি জন্য তাদের কে এভাবে গৃহ বন্দি করে রাখা হয়েছে?
নিরব তাদের সাথে দেখা করতে যায়। নিরব তাদের সামনে গেলে তারা নিরব কে জিজ্ঞেস করে
স্বামী ঃ আমাদের কে আপনি আটকে রেখেছেন কেন? আমরা কি দোষ করেছি? আর সত্যি করে বলুন আপনি আমাদের কাছে
কি চান?
নিরব ঃ আপনারা কিছু জানেন না আমি আপনাদের কাছে কি চাই? কেন আটকে রেখেছি?
স্বামী-স্ত্রী ঃ বিশ্বাষ করেন আমরা কিছুই বুঝতে পারছিনা কেন আপনি আমাদের কে আটকে রেখেছেন?
নিরব ঃ এতো নেকামি করে লাভ নেই। আমি বলছি তো আমি সবই জানি আমি সবই দেখেছি যা হোক এখন বল সেই
জিনিসটা কোথায় রেখেছো?
স্বামী-স্ত্রী ঃ কোন জিনিস?
নিরব ঃ আহা বাচ্চা বাচ্চা ভাব নিলে কোন লাভ নেই। হ্যা আমি কথা দিচ্ছি আমি একাই সবটা মেরে দিবো না। তোমাদের
কে ভাগ দিবো।
স্বামী-স্ত্রী ঃ আরো অবাক হয়ে যায়। তারা বলে ভাই আপনি শুধু শুধু আমাদের সাথে এমন করতেছেন কেন? আমরা কিন্তু এখনো
কিছু জানিনা। আমরা কিছুই বুঝতে পারছিনা। ভাই আমরা পালাইয়া বিয়ে করছি কিন্তু এমন কোন অপরাধ করি নাই
যার জন্য আপনি আমাদের কে ঘরে বন্ধ করে রাখবেন।
নিরব ঃ বুঝতে পারছি আপনারা সহজে বলবেন না॥ সহজে না বললে আমাকে কঠিন হতে হবে। আর আমি বুঝতে পারছিনা
আপনার তো বোকা নন্ আপনারা বুঝতে চাচ্ছেন না কেন আপনাদের পুরো বাড়ি ২৪ ঘন্টা পাহাড়ায় আছে। সো
আপনাদের বাড়ি একবার সার্চ করলে বাড়ির প্রতিটি ধুলোবালি পর্যন্ত সব খুজে পাওয়া যাবে।
স্বামী-স্ত্রী ঃ ভাই আপনাদের যা ইচ্ছা তাই করেন আমাদের বলার কিছু নাই কারন বললেই তো আর আপনি আমাদের কথা
শুনবেন না।
নিরব ঃ বুঝতে পারছি যা করার আমাকেই করতে হবে। বলে সে সেখান থেকে চলে আসে।
এদিকে তার পিলারের ব্যাপারটা এলাকার অনেকেই জেনে যায়। এলাকার মানুষজন নিরবদের বাড়ি আসে তাদের বিভিন্ন অভাবের কথা
জানায় নিরব তাদের কে অভাব পুরন করার আশ্বাস দেয়। যেন সে এলাকার চেয়ারম্যান।
তাদের ফ্যামিলি থেকে অনেক বড় ফেমিলি তার বোনের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসে। সবাই তো অনেক খুশি সবাই রাজি হয়ে যায়। দেখে শুনে একটি বড় পরিবারের সাথে তার বোনের বিয়ে ঠিক।
এদিকে যে প্রেমিকা তাকে পাত্তাই দিতো না সেই প্রেমিকাই তাকে ফোন দেয় ফোন দিয়ে তাকে ঘুরতে নিয়ে যায়॥ যা খরচ সব প্রেমিকাই দেয়।
অফিসে ও সেই একই অবস্থা। যত দেরি করে যাক আর তাড়াতাড়ি চলে আসুক বসের কোন বকুনি নেই। সবাই সুযোগ পেলেই নিরবের সাথে কথা বলে সবাই যেন তার সেবা করার জন্য প্রস্তুত। এমনকি বস নিজেও।
সব কিছু যখন নিজের অনুকুলে চলছিলো ঠিক তখনই বিশাল একটি সমস্যা এলাকায় নিরবদের অনেক শত্র“ ও রয়েছে । আর অনেক শত্র“র মধ্যে একজন অন্যতম শত্র“ হল এলাকার মেম্বার। সেই শত্র“ পক্ষ মেম্বার নিজে গিয়ে পুলিশ কে পিলারের খবর জানায়।
খবরটি দেশের সর্ব উচ্চ স্তরে চলে যায়। পিলারর সংবাদ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে চলে আসে। পিলার উদ্ধার করার জন্য সরকার একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করে। সবাই জেনে যায় পিলারের কথা। এতে নিরব দিশেহারা হয়ে যায়।
দিসেহারা হয়ে সে তাড়াতাড়ি পিলারটি সেখান থেকে উঠিয়ে বিক্রি করবে ভেবে সেই বাড়িতে যায়। গিয়ে এবার সরাসরি বাড়ির ভিতরে বন্দি থাকা স্বামী আর স্ত্রীর কাছে পিলারের কথা জি¹েস করে।
নিরব ঃ পিলার কোথায়?
স্বামী-স্ত্রী ঃ পিলারের কথা শুনে তাড়া তো অবাক। তাড়া যেন আকাশ থেকে পড়লো।
তাদের এই ভাব দেখে নিরব বলে
নিরব ঃ এত ভাব নেওয়ার সময় নাই ঐ দিন মাটি থেকে যে পিলার টি বের করেছেন সেটি কোথায়?
স্বামী-স্ত্রী ঃ (নিরবের কথা শুনে হেসে দিয়ে) ভাইযান এই কথা। এটা আপনি কি বলতেছেন? আমারা তো মাটি খুরে কিছু বের
করিনি। বরং রেখেছি।
নিরব ঃ যেটা রেখেছেন সেটা এখন বের করে দেন।
স্বামী-স্ত্রী ঃ আরে ভাই আমার তো সেখানে পিলার রাখিনি সেখানে মাটির কলসি তে প্লাস্টিকের কাগজ পেচিয়ে সেটা পানি ভরে
সুপারি ভিজিয়ে রেখেছি।
নিরব ঃ আমাকে কি অনেক বোদাই মনে হয়? আমি কিছু বুঝিনা? চলেন সেখানে চলেন।
সবাই মিলে সেখানে যায়। সেই লোকটি যেভাবে মাটি খুড়ে কলস রেখেছিলো ঠিক সেভাবে আবার খুরে মাটির কলস বের করে দেখায় আর মাটির কলসের উপর থেকে পিতলের কালারের প্লাস্টিকের কাগজটা খুলে ফেলে এসব দেখে নিরব দাড়ানো থেকে বসে
পরে। তার বন্ধুরাও সবাই অবাক হয়ে যায়। নিরব সেখান থেকে মন খারাপ করে চলে যায়।
ঐদিকে পুলিশ ও তাকে খোজাখুজি করে। নিরব যখন মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে আসতে ছিলো তখনই পুলিশ খুজতে খুজতে তাকে পেয়ে যায়। পুলিশ তাকে ধরে
নিরব ঃ আরে ভাই আপনারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আর আমাকে নিয়েই বা যাচ্ছেন কেন?
পুলিশ ঃ থানায় নিয়ে গেলেই সব বুঝতে পারবেন। পুলিশ নিয়ে যায় তাকে। মিথ্যা প্রচারনার জন্য তার তিনমাসের জেল হয়।
তিন মাস পরে সে ছাড়া পায়। তিন মাস পরে জেল থেকে বের হয়ে দেখে তার প্রেমিকা অন্যের ঘর করছে তার বোনের বড় পরিবার
বিয়ে ভেঙ্গে গিয়ে গরিব এক পরিবারের সাথে তার বিয়ে হয়েছে।অফিসে গিয়ে দেখে তার চাকরি চলে গেছে। অবশেষে সে হয়ে যায় সর্বহারা।
মোরাল পরে লিখবো। আপনাদরে মন্তব্য চাই।
বস ঃ কি ব্যাপার নিরব তুমি কি ঘুমাচ্ছ নাকি?
নিরব ঃ (ঘোর থেকে ফিরে এসে) না স্যার এমনিই খুব রোদ লাগছে
বলে হেসে দেয়।বসও হেসে দেয়।
বস ঃ নিরব আজ তো কাজ শেষ কালকে তুমি শুধু এসে এই সফট ওয়্যারটা এখানে সেটআপ দিয়ে যেও। বলতেই বস হেসে দেয় তুমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলে। কি রাতে ঘুম হয়নি। নাকি সকালে নাস্তা করনাই। চলো এখনই গিয়ে আগে ভাগে লানচ করে নিও।
তারা একটি কম্পিউটার র্সাভিসিং সেন্টারে চাকরি করে। আর সেই অফিস থেকেই আজকে তারা এসেছে এখানে কাজ করতে। হাটতে হাটতে তারা পৌছে যায় তাদের নির্দিষ্ট স্থানে।লিফট দিয়ে চার তলার উপরে উঠে কাজ করতে।কাজ হল কম্পিউটার এর। তারা কাজ করতে করতে সব কাজ হয়ে যায় কিন্তু একটা সফট্ওয়্যার লাগবে যেটা আনতে মনে নাই। এতক্ষণ বস বসে বসে কাজ করছিল আর নিরব পাশে বসের ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে ছিল।আর দাড়িয়ে দাড়িয়েই ঘুম।
তারা সেখান থেকে চলে আসে।
অফিস করে নিরব বাসায় চলে যায়।পরের দিন ঠিক টাইমে নিরব আবার অফিসে চলে আসে। সে আর তার বন্ধু সানি একই অফিসে চাকরি করে। আর অফিসে তারা বসেও পাশাপাশি। আজো নিরবে একই অবস্থা অফিসের চেয়ারে বসে বসে ঝিমাচ্ছে ।সানি নিরব কে দেখে সে হাসে। সে নিরব কে মামা বলে ডাকে।
সানি ঃ কিরে মামা ঘুমাচ্ছিস নাকি? বসে দেখলে বাস দিবো।
নিরব ঃ কই আমি ঘুমাইতাছি তোরে কে কইলো যে আমি ঘুমাইতেছি? তুই তোর কাজ কর বসে বাস দিলে আমারে দিবো।
তার ঘুমের ঘোর তখন ও ছিলো এই অবস্থা দেখে সানি নিরবের কাছে আসে
সানি ঃ কিরে মামা কি হইছে?তোর শরীর খারাপ নাকি?
নিরব ঃ আরে না আমার শরীর তো ঠিকই আছে।আর শরীর খারাপ হইলে কি অফিসে আসতাম?
সানি ঃ না তাতো ঠিকই কিন্তু মামা তুই যাই কছ আমি তো তোওে দেখতাছি দেখে আমি বুঝতে পারি যে তোর কিছু একটা
হয়েছে। এখন তুই বল তোর কি হয়েছে? আমার সবকিছু তুই জানিস আমি ও তোর সব কিছু জানি সো আমার সাথে কিছু লুকিয়ে তো লাভ নেই।
সানি অনেক রিকোয়েস্ট করার পর নিরব খুব ক্লান্ত ভাব নিয়ে বড় একটি নিশ্বাষ ছেড়ে
নিরব ঃ মামা শোন তোর কাছে তো আমি সবই বলি আর যেহেতু সবই বলি এটাও বলবো।দোস্ত আসলে আমি ইচ্ছা করেই
তো আর অফিসে এসে ঝিমাচ্ছি না। আমার বাসায় সমস্যা চলছে তুইতো জানিস আমার বাবা রিটায়ার্ড মানুষ বড় ভাই
নিজের সংসার নিয়ে ব্যাস্ত আর একমাত্র ছোট বোনের বিয়ের বয়স ও হয়ে গেছে ওকে বিয়ে দিতে হবে। এই নিয়ে
বাবা মা খুব চিন্তিত। এই দিকে আমার পজিশন ও তো ভালো নেই আমাদের অফিসের মালিকের যে অবস্থা কখন
আমার চাকরি চলে যায়? আমি তো আর এতো টাকা সিকিঊরিটি মানি দিতে পারবো না। এই সব বিভিন্ন চিন্তা ভাবনায়
রাতে ঘুম হয় না। খাওয়া দাওয়া ঠিকমত হয় না। আর রাতে না ঘুমিয়ে সকালে যে একটু ঘুমাবো তার ও তো কোন
ব্যাবস্থা নেই সকাল সকাল অফিসে আসতে হয়। আর সেই জন্যই তো বসে বসে ঝিমাচ্ছি।
কথা গুলো বলতে বলতেই বস চলে আসে এসে নিরব কে বলে ।
বস ঃ কি নিরব এখনো যাও নাই? তোমার না সফট ওয়্যার নিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো।
নিরব ঃ (বসের কথায় সায় দিয়ে)হ্যা বস আমি এখুন্নি যাচ্ছি।
বলে সাথে সাথেই সে সেখান থেকে চলে যায়। সে ব্যাগ নিয়ে সেই অফিসে চলে যায়
অফিসে গিয়ে মাত্র কম্পিঊটারের সামনে বসছে বসতেই যেন তার খুব ঘুম পাচ্ছে। যে ম্যাডামের কম্পিঊটার সে বলে
ম্যাডাম ঃ আপনি বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়ছেন?
নিরব ঃ কই নাতো আমি তো ঘুমাইনি (চোখ মুছতে মুছতে আমার) চোখে কি যেন ঢুকেছে তাই চোখটা যেন কেমন করছে।
সে জন্য চোখ বুঝে রাখছি।
ম্যাডাম ঃ ও তাই তা আপনার চোখে পানি দিয়ে ধুয়ে আসেন কিছু ঢুকলে তা চলে যাবে। রাস্তায় যা ধুলোবালি। রাস্তায় চলতে
গেলে সান গ্লাশ ইঊজ করাই বেটার।
নিরব ঃ ও হ্যা তাইতেি আমার ও তো সান গ্লাষ আছে বলতেই পকেট থেকে সান গ্লাস বের করে অফিসের ভিতরেই চোখে
দেয়।
ম্যাডাম ঃ (হেসে দিয়ে) এখন দিলে কি লাভ?
তখন
নিরব ঃ (বোকার মত হেসে)তাই তো বলেই সান গ্লাস টা খুলে ফেলে।
কথা বলতে বলতে কাজ ও করছিলো সে। আর কথা বলতেই তার কাজ ও শেষ হয়ে যায়। নিরব যখন চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলবে
ঠিক তখনই তার চোখ চলে গেল জানালা দিয়ে বাইরে ঠিক চারতলা থেকে নিচ তলায়। সে যেই বিল্ডিংয়ে কাজ করছে তার পাশেই ছোট বস্তির মত একটা বাড়ি। সেই বাড়িতে চোখ পড়তেই সে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সে কয়েক বার ভালা ভাবে চারপাশে তাকিয়ে দেখে কেঊ নেই অফিসে ম্যাডাম ও নেই। তাই সে আরো অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। তাকিয়ে সে দেখতে পেলো ছোট্ট একটা ঘর আর ঘরের চারপাশে কলা গাছের ঝার। যার মাঝখানে একটা লোক কোদাল দিয়ে কি যেন খুড়ছে। আর লোকটির স্ত্রী চার পাশে চোরের মত তাকাচ্ছে যা শুধু চারতলার ঊপর ছাড়া আর নিচের আসে পাশের কেঊ দেখতে পায় না। বাইরের আকাশটা একটু মেঘলা মেঘলা। রোদ নেই আর ঐদিকে এই ছায়ায় ও প্রচুর ঘেমে গেছে। লোকটি যে কি খুড়ছে তা এতো দুর থেকে তা বোঝা যাচ্ছে না। অনেকখানি খোড়ার পর লোকটার স্ত্রী তাকে পানি এনে দেয় সে পানি খায় তার পর আবার তার ঘাম ও মুছে দেয়। স্ত্রী তার নিজের কাপরের আচল দিয়ে স্বামীর শরীর মুছে দিচ্ছে আর তারা কি যেন কথা বলছে আর হাসছে। ঘাম মোছা শেষে স্ত্রী তাদের সেই ছোট্ট ঘরটিতে চলে যায়॥
লোকটা খুরতেছে তো খুরতেছে আর নিরব ও নিশ্চিন্ত মনে দেখতেছে। এর ভিতরে কি রাখা আছে? অফিসের জানালা দিয়েই এসব দেখছিলো সে হঠাৎ পিছন ফিরে অফিসের ভিতরে তাকিয়ে দেখে কেঊ দেখে ফেললো কিনা। পিছন থেকে ফিরে আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েই রইলো।তাকিয়ে দেখে যে লোকটি আর তার স্ত্রী দু জনে কি যেন পিতলের কলসির মত হাতে নিয়ে নিয়ে যাবে এমন অবস্থা কিনতু ভালো ভাবেই কিছু বোঝা যাচ্ছে না কারন আজ আকাসে কোন রোদ নেই।
নিরব ঃ (কৌতুহলি ভাব নিয়ে)আজ রোদ ঊঠতে পারলো ন তাইলে তো জিনিসটা ভালো ভাবে দেখা যেতো।
বলতেই হালকা রোদ উঠে আর রোদ উঠতেই কলসিটি ঝিলিক মেরে উঠে। নিরব আরো কৌতুহলি হয়ে উঠে। এটা হবে সোনা ভর্তি পিতলের কলসি না হয় পুরোনো দিনের সেই পিলার। যার মূল্য কোটি কোটি টাকা। যা এক দুর্লভ অমূল্য সম্পদ্।তাই আর দেরি নয়॥ সে সোজা তার ব্যাগ নিয়ে নেমে যায় সেই অফিস থেকে।
নেমে নিজে নিজে বুদ্ধি করে নেয় ঐ মূল্যবান জিনিসটা কিভাবে নিজের করে নেওয়া যায়॥ বুব্ধি পেয়েও যায় সে । সে তার পকেট থেকে সান গ্লাশটা বের করে চোখো পড়ে। ভাবটাব নিয়ে সোজা চলে যায় সেই কলা গাছের ঝারের ভিতরে। সেখানে গিয়ে দেখে কোন গর্ত নেই।তবে এখান থেকে যে মাটি খোরা হয়েছে তা বোঝা যায়। সে ডানে বামে তাকিয়ে সোজা চলে যায় ঐ ছোট্ট কুরে ঘরটির ভিতরে।
গিয়ে দেখে স্বামী আর স্ত্রী মিলে কথা বলতেছে। সে যাওয়াতে তারা তাদের কথা থামিয়ে দেয়। কথা থামিয়ে একে অন্যের দিকে তাকায়। নিরব সোজা তাদের কাছে চলে যায়। নিরব ঘরে ঢোকাতে তারা কেমন যেন ভয় পেয়ে যায়। নিরব তাদের ভয় পাওয়া দেখে মনে মনে বুদ্ধি পাকায় এইতো সুযোগ তাদের কে বোকা বানানোর জন্য। তখন
নিরব ঃ আপনারা মনে হয় ভয় পাচ্ছেন? ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। আর ভয় পেলেও কিছু করার নেই যেহেতু আমি সবজেনে
ফেলেছি। আর আমি যেহেতু আমি সব জেনেই ফেলেছি তাই আমার কাছে লুকাবে না। আর বোঝেন ই তো লুকালেও কোন ও লাভ হবে না।তাই আমি যা যাজিজ্ঞেস করবো তার ঠিক ঠিক জবাব দিবেন।
লোকটি ঃ হ্যা ঠিক আছে।
নিরব ঃ নাম কি?
লোকটি ঃ কিবরিয়া।
নিরব ঃ কি করেন?
লোকটি ঃ আমি এহানে মাত্র তিন চাইর মাস হয় আইছি তেমন কিছু করি না। মাঝে মধ্যে রিকশা চালাই আর আমনে তো সবই জানেন তাই আপনার কাছে লুকাইয়া তো লাভ নাই। আমরা পালাইয়া বিয়া করে এহেনে আইয়া থাকি। তাই বাড়ি ও যাইতে পারি না। দেশের কেঊ আমাগরে মাইন না নেয় নাই। ছোট ভাই মাঝে মধ্যে দেশ থেকে এহেকটা দিয়া যায় তাই দিয়া কোন মতে সংসার চলে॥
স্ত্রী ঃ হ হেয় যা কইছে তার সবই সত্য।
নিরব তাদের পালানোর কথা শুনে তো আরো খুশি। ভাই¹া বিয়া করছো? ভাই¹া বিয়া কইরা এহেনে আইছো তোমাদের এ এখান থেকে ও ভাগানোর ব্যাবস্থা করতাছি না না এখন কিছু করা যাইবো না এখন তো আমি একলা। একা একা এসবই ভাবতে ছিলো নিরব। ভাবতে ভাবতেই বুদ্ধি এসে যায় নিরবের মাথায়। সে রেগে যায় আর রাগী ভাব নিয়েই
নিরব ঃ হ্যা পালিয়েছ পালিয়ে বিয়ে করেছ আর সেগুলো সব জেনেই আমি এখানে এসেছি। যা হোক শোন এখন আমি যা
বলছি তা কান দিয়ে শোন। এখন থেকে তোমরা এই ঘরের সীমানার বাইরে যাবে না। বাড়ির কোন কিছু বিক্রি করবে
না। আর তোমাদের কাছে তো কোন মোবাইল ফোন নেই? কারো সাথে কোন যোগাযোগ করা যাবে না। তোমাদের
খাবার দাবার যা দরকার হবে তা সব কিছু আমি অথবা আমার লোকজন এসে তোমাদের কে দিয়ে যাবে। আর তোমারা এসব কিছু করতে চাইলে ও পারবে না কারন তোমাদের পাহারায় অনেক লোকজন রয়েছে। বলে সে সেখান থেকে চলে আসে।
তার গেটাপ পুরোপুরি চেঞ্জ। অফিসে এসে পুরোপুরি চাঙ্গা অবস্থ্। ভাবই অন্য রকম। কতক্ষন পরে সে বসের কাছে ছুটি নিয়ে চলে যায় বাসায়। বাসায় গিয়ে দেখে বাবা মা খুবই চিন্তিত সে তাদের কাছে তাদের চিন্তার কারন জানতে চায়।
নিরব ঃ মা, বাবা কি কি হইছে তোমাগো সারাদিন দেখি শুধু ভাবোই কিসের এতো চিন্তা তোমাগো?
বাবা মা ঃ তোর বোনের বিয়ের ব্যাপারেই তো আমাদের যত চিন্তা।
তখন নিরব বাবা মাকে সন্তনা দিয়ে বলে
নিরব ঃ বাবা মা তোমরা এতো চিন্তা কর কেন? আমি তো আছি । বাবা তুমি ঘটক কে ডাকো ওর জন্য ছেলে দেখতে
বলো।তারপর ছেলে পছন্দ হলে বিয়ের ব্যাবস্থা করে ফেলো।
বাবা ঃ বিয়ে ঠিক করবো আসল জিনিসই তো নাই মানে টাকা পাবো কোথায়?
নিরব ঃ টাকা সেটা কোন সমস্যা না। আমার কাছে এখন অনেক টাকা আছে আমি এখন অগনিত টাকার মালিক।
বাবা ঃ কিভাবে তুই এতো টাকা পেলি কোথায়?
নিরব ঃ বাবা মা এখন আমার কাছে রয়েছে সেই মূল্যবান পিলার যার দাম কোটি কোটি টাকা। ছেলের কথা শুনে তো বাব মা
অনেক খুশি।
তারা তাদের মেয়ের বিয়ের জন্য ঘটক কে ডেকে পাঠায়। বাবা ঘটককে বলে
বাবা ঃ আমার মেয়ের জামাই হবে দশ জনের একজন। প্রয়োজনে আমরা বরের যে কোন চাওয়া পুরন করবো। চলতে থাকে
বোনের বিয়ের কথা।
নিরব যায় তার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে আর এই খুশির খবরটা দিতে। তার প্রেমিকা তাকে তেমন পাত্তাই দেয় না কারন তার তেমন টাকা পয়সা নেই। প্রেমিকাকে নিয়ে সে যেখানে সেখানে ঘুরতে যেতে পারে না। আজ ও আগের মত নিরব কে সে তেমন চান্স দেয় না।
নিরব ঃ জান শোন তুমি আমার সাথে এমন করো আর যেমনই করো আমি তাতে কিছু মনে করি নাই কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত
নিয়েছি আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
তার প্রেমিকা তো বিয়ের কথা শুনে বোকা হয়ে যায়।
প্রেমিকা ঃ (মুখ বাকা করে) তুমি করবে বিয়ে তাও আবার আমাকে?তা ভালো কিন্তু খাওয়াবা কি? কি বলতেছো ভেবে চিন্তে
বলতেছে তো?
নিরব ঃ আরে তুমি তো অনেক বুদ্ধিমতি! ঠিকইতো আমি তো এখনো চিন্তাই করি নাই যে তোমাকে কি খাওয়াবো?
প্রেমিকা ঃ তাইলে আর বলছি কি? তার চেয়ে বরং বলি কি আগে টাকা পয়সা যোগার কর তারপর বিয়ে স্বাদির কথা চিন্তাকরো।
নিরব ঃ কারে আমি কি বলতেছি? তোমারে একটু আগে আমি বুদ্ধিমতি বলছিলাম না এখন দেখছি তুমি তো বুদ্ধিমতি না তুমি
তো বোকামতি। আমি তো ভাবছি তোমকে কি খাবো পোলাও না বিরিয়ানি আর থ্রি স্টারে না ফাইভ স্টারে? আর তুমি কি বলছো?
প্রেমিকা ঃ মানে কি?
নিরব ঃ মানে আবার কি? টাকা পয়সা, টাকা পয়সা আমার জন্য এখন কোন সমস্যাই না। কারন আমি এখন অফুরন্ত টাকার মালিক। কত টাকা লাগবে তোমার? কত হাজার কত লাখ, কতকোটি? কত টাকা চাই তোমার?
প্রেমিকা ঃ কি হইছে মনে হইছে টাকার খনি পাইছো?
নিরব ঃ বলতে পারো টাকার খনিই পেয়েছি।
প্রেমিকা ঃ মানে কি? আমাকে খুলে বলবা তো?
নিরব ঃ আমার কাছে এখন আছে সেই দুর্লভ পিলার।
প্রেমিকা ঃ (অবাক হয়ে) কিসের পিলারের কথা বলছো তুমি? তুমি পিলার পাবা কোথায়?
নিরব ঃ সেটা এখন তোমার না জানলেও চলবে শুধু একটা কথা জেনে রাখো সেই দুর্লভ জিনিসটা এখন আমার কাছে। আর
বুঝতেই পারছো আমার পজিশন টা এখন কোথায়?
বলেই নিরব আর তার প্রেমিকা হেসে দেয়। প্রেমিকার ভালো বাসা তার প্রতি আরো বেড়ে যায়।আড্ডা শেস করে তারা নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়।
এবার নিরব সেই বাড়িতে যায়। যেখানে পিলার রাখা আছে। সে বাড়িতে স্বামী স্ত্রী বেচারা দুজন তো ভয়ে শেষ। যেভাবে থাকতে বলে এসছে তারা ঠিক সেই ভাবেই ঘরের ভিতরে বসে আছে। নিরব গিয়ে তাদের খাবার দিয়ে আসে।তারা সেখানই খাবার খায়। নিরব তাতে ও নিশ্চিন্ত না সে চিন্তা করে দেখে এখানে সত্যি সত্যি পাহাড়ার ব্যাবস্থা করতে হবে। নিরব তার কিছু একান্ত ব্যক্তিগত বন্ধুদের সেখানে পাহাড়ায় রেখে যায়। তখন তার বন্ধুরা তার কাছে জানতে চায়
বন্ধুরা ঃ কিরে কিসের জন্য এই পাহাড়া?
নিরব ঃ এতো কিছু জেনে তোদের লাভ নেই পাহাড়া দে গাড়িবাড়ি টাকা পয়সা যা দরকার তাই পাবি।
বন্ধুরা ঃ টাকা পয়সার দরকার এইটুক কাজ কেন আরো বড় কোন কাজ থাকলেও বল করে দিবো।
নিরব সেখান থেকে চলে আসে। বাসায় এসে বাবার সাথে বসে বোনের বিয়ের খরচের বিভিন্ন হিসাব কিতাব করে। ঘটক কে ডাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে
নিরব ঃ (ঘটক কে) বরদের পক্ষ থেকে কি কি চাই? আর আপনার নিজের জন্য কি চাই? যার যা চাওয়ার আছে তা কোন
সংকোচ ছাড়াই চেয়ে নিবেন। এখানে লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই।
পরের দিন নিরব অফিসে যায় কিন্তু প্রতি দিনের মত অফিস টাইমে নয় অফিস টাইম থেকে ঠিক ১ ঘন্টা পরে।এসেই বসের সামনে পরে। বস তার দিকে তাকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে ১০টা বাজে। তখন
বস ঃ নিরব আজ তোমার এতো দেরি কেন?
নিরব ঃ বস আসলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো।
বস ঃ এটা কেমন কথা তাই বলে ১ ঘন্টা? চাকরি থেকে কি ঘুম বড় হয়ে গেলো?
নিরব ঃ আসলে বস চাকরি করি কি জন্যে নিজের সুখের জন্যে আর শরীরের সুখের একটা ব্যাপার আছে না
ঠিকমত না ঘুমাইলে শরীর খারাপ করবে। আর এই সামান্য চাকরির জন্য আমি তো অসুস্থ হয়ে থাকতে পারি না।
বস ঃ (রেগে) সামান্য চাকরি মানে? তুমি কি বলতে চাচ্ছ?
নিরব ঃ বস আমি তো কিছু বলতে চাচ্ছি না বলতে তো চাচ্ছেন আপনি॥
বস ঃ তুমি যে চাকরিটাকে সামান্য চাকরি বলে অপমান করছো তুমি কি ভুলে গেছো যে তোর্মা এই সামান্য চাকরির বেতন
দিয়েই তোমার সংসার চলছে?
নিরব ঃ হ্যা আমি জানি যে এই চাকরির বেতন দিয়ে আমার সংসার চলতো কিন্তু!
বস ঃ চলতো মানে আর কিন্তু কি?
নিরব ঃ মানে হল এই চাকরি না হলে ও আমার চলবে আপনার যদি চাকরিতে আমাকে রাখেন তাও ভালো আর না রাখলে
আল্লাহাফেজ।
বস ঃ (কৌতুহলি হয়ে) কি ব্যাপার নিরব কি হয়েছে? আমাকে খুলে বল?
নিরব ঃ বস পিলারের নাম শুনছেন?
বস ঃ কিসের পিলার?
নিরব ঃ যে পিলার বিভিন্ন দেশের সীমান্ত চিহ্নিত করার জন্য রাখা হতো আর যে গুলো বিশ্ব যুদ্ধের সময় হারিয়ে এক জায়গা
থেকে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলো। যার মুল্য কোটি কোটি টাকা।
বস ঃ হ্যা শুনেছি। পিলারের কথা তো অনেক শুনেছি কিন্তু পিলারের কি হয়েছে?
নিরব ঃ সেই পিলার এখন আমার কাছে। তা বুজতেই পারছেন আমি এখন কোটিপতি।
বস ঃ বিনয়ের সাথে হ্যা দুই একদিন তো অফিসে দেরি হতেই পারে তাতে কোন সমস্যা নেই। আর পিলারের ব্যাপারে আর
কারো সাথে আলাপ করার দরকার নেই আমি তো আছি যা করার আমিই করে দিবো তুমি কোন টেনসন করো না।
আর শরীর খারাপ করে চাকরি করার কোন দরকার নেই।
বস সহ অফিসের সবাই এখন নিরবের ভক্ত। নিরব যেন অফিসের বসের ও বস।
ঐদিকে নিরবের প্রেমিকা তার বাবা মায়ের সাথে নিরবের ব্যাপারে আলাপ করে। নিরবের কথা শুনে প্রেমিকার মা বাবা ও খুব খুশি হয়। তারা মেয়ের পছন্দের প্রশংসা করে।পরের দিন নিরবের বাড়িতে তাদের বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। প্রয়োজনে ছেলেরা যা চায় তাই দিতে রাজি কনে পক্ষ। নিরবের বাবা মা বিয়ের ব্যাপরে নিরবের সাথে কথা বলে নিরব ও রাজি। তাদের বিয়ের কথাবার্তা চলতে থাকে।
ঐদিকে নিরবের বন্ধুরা কড়া পাহাড়া দিতে থাকে। কেউ বাড়িতে ঢুকবে তো দুরের কথা বাড়ির আসে পাশেই আসতে পারে না।ঐদিকে বাড়ির ভিতরের স্বামী আর স্ত্রী দুই বেচারা আছে মহা বিপদে।তারা নিজেরাও জানে না তাদের অপরাধ কি, কি জন্য তাদের কে এভাবে গৃহ বন্দি করে রাখা হয়েছে?
নিরব তাদের সাথে দেখা করতে যায়। নিরব তাদের সামনে গেলে তারা নিরব কে জিজ্ঞেস করে
স্বামী ঃ আমাদের কে আপনি আটকে রেখেছেন কেন? আমরা কি দোষ করেছি? আর সত্যি করে বলুন আপনি আমাদের কাছে
কি চান?
নিরব ঃ আপনারা কিছু জানেন না আমি আপনাদের কাছে কি চাই? কেন আটকে রেখেছি?
স্বামী-স্ত্রী ঃ বিশ্বাষ করেন আমরা কিছুই বুঝতে পারছিনা কেন আপনি আমাদের কে আটকে রেখেছেন?
নিরব ঃ এতো নেকামি করে লাভ নেই। আমি বলছি তো আমি সবই জানি আমি সবই দেখেছি যা হোক এখন বল সেই
জিনিসটা কোথায় রেখেছো?
স্বামী-স্ত্রী ঃ কোন জিনিস?
নিরব ঃ আহা বাচ্চা বাচ্চা ভাব নিলে কোন লাভ নেই। হ্যা আমি কথা দিচ্ছি আমি একাই সবটা মেরে দিবো না। তোমাদের
কে ভাগ দিবো।
স্বামী-স্ত্রী ঃ আরো অবাক হয়ে যায়। তারা বলে ভাই আপনি শুধু শুধু আমাদের সাথে এমন করতেছেন কেন? আমরা কিন্তু এখনো
কিছু জানিনা। আমরা কিছুই বুঝতে পারছিনা। ভাই আমরা পালাইয়া বিয়ে করছি কিন্তু এমন কোন অপরাধ করি নাই
যার জন্য আপনি আমাদের কে ঘরে বন্ধ করে রাখবেন।
নিরব ঃ বুঝতে পারছি আপনারা সহজে বলবেন না॥ সহজে না বললে আমাকে কঠিন হতে হবে। আর আমি বুঝতে পারছিনা
আপনার তো বোকা নন্ আপনারা বুঝতে চাচ্ছেন না কেন আপনাদের পুরো বাড়ি ২৪ ঘন্টা পাহাড়ায় আছে। সো
আপনাদের বাড়ি একবার সার্চ করলে বাড়ির প্রতিটি ধুলোবালি পর্যন্ত সব খুজে পাওয়া যাবে।
স্বামী-স্ত্রী ঃ ভাই আপনাদের যা ইচ্ছা তাই করেন আমাদের বলার কিছু নাই কারন বললেই তো আর আপনি আমাদের কথা
শুনবেন না।
নিরব ঃ বুঝতে পারছি যা করার আমাকেই করতে হবে। বলে সে সেখান থেকে চলে আসে।
এদিকে তার পিলারের ব্যাপারটা এলাকার অনেকেই জেনে যায়। এলাকার মানুষজন নিরবদের বাড়ি আসে তাদের বিভিন্ন অভাবের কথা
জানায় নিরব তাদের কে অভাব পুরন করার আশ্বাস দেয়। যেন সে এলাকার চেয়ারম্যান।
তাদের ফ্যামিলি থেকে অনেক বড় ফেমিলি তার বোনের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসে। সবাই তো অনেক খুশি সবাই রাজি হয়ে যায়। দেখে শুনে একটি বড় পরিবারের সাথে তার বোনের বিয়ে ঠিক।
এদিকে যে প্রেমিকা তাকে পাত্তাই দিতো না সেই প্রেমিকাই তাকে ফোন দেয় ফোন দিয়ে তাকে ঘুরতে নিয়ে যায়॥ যা খরচ সব প্রেমিকাই দেয়।
অফিসে ও সেই একই অবস্থা। যত দেরি করে যাক আর তাড়াতাড়ি চলে আসুক বসের কোন বকুনি নেই। সবাই সুযোগ পেলেই নিরবের সাথে কথা বলে সবাই যেন তার সেবা করার জন্য প্রস্তুত। এমনকি বস নিজেও।
সব কিছু যখন নিজের অনুকুলে চলছিলো ঠিক তখনই বিশাল একটি সমস্যা এলাকায় নিরবদের অনেক শত্র“ ও রয়েছে । আর অনেক শত্র“র মধ্যে একজন অন্যতম শত্র“ হল এলাকার মেম্বার। সেই শত্র“ পক্ষ মেম্বার নিজে গিয়ে পুলিশ কে পিলারের খবর জানায়।
খবরটি দেশের সর্ব উচ্চ স্তরে চলে যায়। পিলারর সংবাদ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে চলে আসে। পিলার উদ্ধার করার জন্য সরকার একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করে। সবাই জেনে যায় পিলারের কথা। এতে নিরব দিশেহারা হয়ে যায়।
দিসেহারা হয়ে সে তাড়াতাড়ি পিলারটি সেখান থেকে উঠিয়ে বিক্রি করবে ভেবে সেই বাড়িতে যায়। গিয়ে এবার সরাসরি বাড়ির ভিতরে বন্দি থাকা স্বামী আর স্ত্রীর কাছে পিলারের কথা জি¹েস করে।
নিরব ঃ পিলার কোথায়?
স্বামী-স্ত্রী ঃ পিলারের কথা শুনে তাড়া তো অবাক। তাড়া যেন আকাশ থেকে পড়লো।
তাদের এই ভাব দেখে নিরব বলে
নিরব ঃ এত ভাব নেওয়ার সময় নাই ঐ দিন মাটি থেকে যে পিলার টি বের করেছেন সেটি কোথায়?
স্বামী-স্ত্রী ঃ (নিরবের কথা শুনে হেসে দিয়ে) ভাইযান এই কথা। এটা আপনি কি বলতেছেন? আমারা তো মাটি খুরে কিছু বের
করিনি। বরং রেখেছি।
নিরব ঃ যেটা রেখেছেন সেটা এখন বের করে দেন।
স্বামী-স্ত্রী ঃ আরে ভাই আমার তো সেখানে পিলার রাখিনি সেখানে মাটির কলসি তে প্লাস্টিকের কাগজ পেচিয়ে সেটা পানি ভরে
সুপারি ভিজিয়ে রেখেছি।
নিরব ঃ আমাকে কি অনেক বোদাই মনে হয়? আমি কিছু বুঝিনা? চলেন সেখানে চলেন।
সবাই মিলে সেখানে যায়। সেই লোকটি যেভাবে মাটি খুড়ে কলস রেখেছিলো ঠিক সেভাবে আবার খুরে মাটির কলস বের করে দেখায় আর মাটির কলসের উপর থেকে পিতলের কালারের প্লাস্টিকের কাগজটা খুলে ফেলে এসব দেখে নিরব দাড়ানো থেকে বসে
পরে। তার বন্ধুরাও সবাই অবাক হয়ে যায়। নিরব সেখান থেকে মন খারাপ করে চলে যায়।
ঐদিকে পুলিশ ও তাকে খোজাখুজি করে। নিরব যখন মন খারাপ করে সেখান থেকে চলে আসতে ছিলো তখনই পুলিশ খুজতে খুজতে তাকে পেয়ে যায়। পুলিশ তাকে ধরে
নিরব ঃ আরে ভাই আপনারা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আর আমাকে নিয়েই বা যাচ্ছেন কেন?
পুলিশ ঃ থানায় নিয়ে গেলেই সব বুঝতে পারবেন। পুলিশ নিয়ে যায় তাকে। মিথ্যা প্রচারনার জন্য তার তিনমাসের জেল হয়।
তিন মাস পরে সে ছাড়া পায়। তিন মাস পরে জেল থেকে বের হয়ে দেখে তার প্রেমিকা অন্যের ঘর করছে তার বোনের বড় পরিবার
বিয়ে ভেঙ্গে গিয়ে গরিব এক পরিবারের সাথে তার বিয়ে হয়েছে।অফিসে গিয়ে দেখে তার চাকরি চলে গেছে। অবশেষে সে হয়ে যায় সর্বহারা।
মোরাল পরে লিখবো। আপনাদরে মন্তব্য চাই।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
তুহিনা সীমা ১৪/০১/২০১৫খুব সুন্দর হয়েছে। পিলারের বিষয়টি আরো তথ্য মূলক হলে ভালো হতো।
-
স্বপন রোজারিও(১) ২৬/০৯/২০১৪সুন্দর হয়েছে।
-
একনিষ্ঠ অনুগত ১৯/০৯/২০১৪জিনিসটাকে পিলার বা গুপ্তধন মনে হওয়ার (নিরবের কাছে) আরও কিছু যুক্তি সঙ্গত কারনের দরকার ছিল। এখানেই গল্পের দুর্বলতা। কিন্তু পরিণতিটা সুন্দর হয়েছে। অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।
-
অ ১৭/০৯/২০১৪কিছু খুড়ে রাখতে দেখেই মনে হয়েছে পিলার । বিষয়াটা অত্যাধিক গোজামিল মনে হয়েছে । পিলারের কাহিনীটা অন্যভাবে হলে ভাল হত ।