সিদ্ধিলাভ
--কী রে। নাম নথিভুক্ত করার জন্য মাইকে ‘এলাউন্স’ করে যাচ্ছে। যা নাম লিখিয়ে আয়। ‘গপ্প’ লিখতে হবে বলছে। রাতদিন তো কথার খই ছুটছে।
-- ইইইইই আআআআআআ আ মাসী জ্বালিও না তো, আর একটু ঘুমাতে দাও। পনের তারিখ অবধি সময় আছে তো, জানি।
-- আরে শুধু লিখলে হবে না। অনেককিছু বলছে। শোন ভাল করে।
-- কী...কী বলছে কী...
-- বলছে গল্পের শেষে মোচড় থাকতে হবে। শোন এরকম মারপিট করে গল্প বাপু লিখতে যাস নি তুই। এ কেমনধারা যে গল্প লেখ তারপরে কারুর হাত মোচড়াও পা মোচড়াও। এত শুধু টিভিতে দেখি, খবরে দেখায়।
-- আর কী বলছে? এ মোচড় সে মোচড় না মাসী! ও তুমি বুঝবে না।
-- অ। চিরকাল ফুটবল খেলে, ব্যাট বল খেলে এলি আর মাসী আজ পা মুচড়ে গেছে, হাত মুচড়ে গেছে চেল্লাস, আর আমি চুন হলুদ গরম করে দি তবে নিশ্চিন্তি। আর এ আবার কী মোচড়! জানি নেকো বাপু!
-- আর কী বলছে?
-- বলছে শব্দ বেঁধে দেবে। দড়ি দিয়ে না সুতো দিয়ে তা বলেনি।
-- মাসী তুমি সক্কাল সক্কাল জ্বালিও না। ছোটবেলা থাকত না অনধিক ৩০০ শব্দে রচনা লেখ! এ অনেকটা তাই।
-- ওমা। গপ্পো লিখবি সেখানেও স্কুল এ লেখা পড়ার মত।
-- স্কুল কী আর শেষ হয় মাসী এই জীবনে। জীবনটাই তো স্কুলের ভেতর এ ক্লাস ও ক্লাস। সবাই কী আর বুদ্ধদেব। পায়েস খেয়ে সিদ্ধিলাভ।
-- বনিক পরিবারের সুজাতা যখন ঐ বৃক্ষে পূজো দিয়ে সন্তান লাভ করলেন, তখন আবার সেখানে তার জন্য খুশী হয়ে পূজো দেবার জন্য এক হাজার গাভীর দুধ নিয়ে আবার তা তার থেকে ৫০০ গাভীকে খাইয়ে তাদের দুধ নিয়ে, আবার তা ২৫০ গাভীকে খাইয়ে সেই দুধ নিয়ে খাইয়ে এমনভাবে শেষে ৮টি গাভীর মিষ্ট দুধ দিয়ে সেই পায়সান্ন পাকিয়েছিলেন। বুঝলি ক্ষ্যাপা। এরপর গোতম বুদ্ধ যখন ঐ পায়সান্ন পেলেন, তিনি তাকে ২৯ ভাগ করলেন প্রতিদিন খাবেন বলে। যেদিন শেষ ভাগ শেষ হল, নদীর জলে পাত্রখানি ছেড়ে বললেন, যদি স্রোতের বিপরীতে যায় তবে তাঁর সিদ্ধিলাভ হয়েছে। পাত্র স্রোতের প্রতিকূলেই গেল। এই হল তাঁর সিদ্ধিলাভ।
-- মাসী আর কতবার বলবে তোমার এই গল্প? বরঞ্চ কাল গনাদার কী হল শোন।
--বল।
-- গনাদা নিতাই কাকার দোকান থেকে দু তিনটে সিদ্ধিগুলি কিনেছে। প্রায় যেমন কেনে আর কী। তারপর দু প্যাকেট দুধ কিনে ক্লাবে গিয়ে ধুম সিদ্ধি বানিয়ে খেয়েছে। গনাদাকে রাস্তায় দেখে বললাম ও গনাদা আজ কী গৌতম বুদ্ধ হয়েছ? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে সিদ্ধিলাভ করেছ। এসো একটু আড্ডা দি। বানী শোনাও। অন্যদিন তো গনাদা স্বাভাবিকভাবেই আসে, আজ কেমন একটু টলে টলে আসছিল। আমরা কয়েকজন বন্ধু বসেছিলাম। ঐ তোমার খেলার মাঠের ধারে যেখানে পতাকা তোলার জায়গা। গনাদা আমাদের পাশটায় এসে বসল। আমরা অনেক করে জানতে চাইতে কী ঘটেছে বলতে থাকল।
বুঝলি প্রতিদিনকার মতো সিদ্ধিগুলি, দুধ ফল এইসব কিনে ফিরতি-পথে একটা আমার মতো মাঝ বয়সী লোকের সাথে দেখা। সে নাকি কদিন খায়নি কিছু। আমার দেখে মনে হল কদিন নয়, লোকটা মনে হয় বেশ কদিন খায় নি। শরীরটা শুখনো লম্বাটে করলার মতো, হাতগুলো সজনে ডাঁটার মত শীর্ন, মুখটা বসে গেছে যেন একটা ভিখারীর বাঁকা এলুমিনিয়ামের বাটি। আমি ওকে ক্লাবে নিয়ে এসে বসাই। তারপর ওকে খানিকটা দুধ আর ফল খেতে দিয়ে বাকীটা আমি সিদ্ধি বানিয়ে নি। কিন্তু লোকটা একটা অদ্ভুত। দুধটা খেলোই-না। ফলটা খেল। দুধ যত্নে রেখে দিল পাশে। আমি বললাম দুধটা খাও।
আগে কাজটা করি। সে বলল।
তুমি আবার কী কাজ করবে?
বাগানে জল দেওয়া, ক্লাবের দেয়ালের ঝুল ঝাড়া, দরজা জানলা পরিষ্কার মায় আপনি যা নির্দেশ দেবেন।
কেন?
বাহ! আপনি আমাকে ডেকে আনলেন খেতে দিলেন আমি খেলাম তার বদলে আমাকে যে কাজ করতে হবে। ভুখা মানুষের ভাত জোটেনা, আপনি তাকে ফল খেতে দিলেন, সারা গায়ে খুব শক্তি দাদা, আপনি আমার শক্তি জুটালেন। এ শক্তি যে আপনার জন্য তাই আপনার কাজ না করলে যে এই শক্তির আবাহন হয়না, বিসর্জন ও হয়না।
ওহ! আচ্ছা বুঝলাম। ঠিকাছে কাজ করখন। দুধটা খেয়ে নাও। তারপর দেখছি।
দুধটা বাড়ি নিয়ে যাব। কাল ওটা খেয়েই কাজে বেরুব। আজগের উদ্বৃত্ত কালকের বেঁচে থাকার সাধনাকে সংঘবদ্ধ করবে।
তোমার নাম কী ভাই?
আজ্ঞে আমার নাম বুদু। অভাবের দুনিয়া। কালকের জন্য শ্রম অর্জনেই জীবন-ধন্য। সিদ্ধিলাভ। তাই বুদ্ধদেব ডাকতে সময়শব্দশ্রম অপচয়। তাই সবাই ডাকে বুদু।
ওর কথাগুলো শুনছিলাম আর বুঝলি ভাই, ভাবছিলাম এত সহজ করে ও জীবনের সিদ্ধিলাভ কিসে বুঝেছে, যে আমি সিদ্ধি খেয়ে বা না খেয়ে তার নাগাল করতে পারলেও এইভাবে সহজ করে বলতে পারব না। অভাব মনে হয় মানুষকে এইভাবেই জ্ঞানী করে রে।
--এই হল গনাদার সেদিনের গল্প। বুঝলে মাসী! এবারে একটু চা খাওয়াও দেখি।
--সত্যি রে আমার পাগলা...দ্যাখ সিদ্ধিলাভই বটে। তুই এই গপ্পোটাই লিখিস না কেন। নাম টা নথিভুক্ত করে আয়। ১৫ তারিখ শেষ দিন। আরে এই আজই তো ১৫ তারিখ।
-- ইইইইই আআআআআআ আ মাসী জ্বালিও না তো, আর একটু ঘুমাতে দাও। পনের তারিখ অবধি সময় আছে তো, জানি।
-- আরে শুধু লিখলে হবে না। অনেককিছু বলছে। শোন ভাল করে।
-- কী...কী বলছে কী...
-- বলছে গল্পের শেষে মোচড় থাকতে হবে। শোন এরকম মারপিট করে গল্প বাপু লিখতে যাস নি তুই। এ কেমনধারা যে গল্প লেখ তারপরে কারুর হাত মোচড়াও পা মোচড়াও। এত শুধু টিভিতে দেখি, খবরে দেখায়।
-- আর কী বলছে? এ মোচড় সে মোচড় না মাসী! ও তুমি বুঝবে না।
-- অ। চিরকাল ফুটবল খেলে, ব্যাট বল খেলে এলি আর মাসী আজ পা মুচড়ে গেছে, হাত মুচড়ে গেছে চেল্লাস, আর আমি চুন হলুদ গরম করে দি তবে নিশ্চিন্তি। আর এ আবার কী মোচড়! জানি নেকো বাপু!
-- আর কী বলছে?
-- বলছে শব্দ বেঁধে দেবে। দড়ি দিয়ে না সুতো দিয়ে তা বলেনি।
-- মাসী তুমি সক্কাল সক্কাল জ্বালিও না। ছোটবেলা থাকত না অনধিক ৩০০ শব্দে রচনা লেখ! এ অনেকটা তাই।
-- ওমা। গপ্পো লিখবি সেখানেও স্কুল এ লেখা পড়ার মত।
-- স্কুল কী আর শেষ হয় মাসী এই জীবনে। জীবনটাই তো স্কুলের ভেতর এ ক্লাস ও ক্লাস। সবাই কী আর বুদ্ধদেব। পায়েস খেয়ে সিদ্ধিলাভ।
-- বনিক পরিবারের সুজাতা যখন ঐ বৃক্ষে পূজো দিয়ে সন্তান লাভ করলেন, তখন আবার সেখানে তার জন্য খুশী হয়ে পূজো দেবার জন্য এক হাজার গাভীর দুধ নিয়ে আবার তা তার থেকে ৫০০ গাভীকে খাইয়ে তাদের দুধ নিয়ে, আবার তা ২৫০ গাভীকে খাইয়ে সেই দুধ নিয়ে খাইয়ে এমনভাবে শেষে ৮টি গাভীর মিষ্ট দুধ দিয়ে সেই পায়সান্ন পাকিয়েছিলেন। বুঝলি ক্ষ্যাপা। এরপর গোতম বুদ্ধ যখন ঐ পায়সান্ন পেলেন, তিনি তাকে ২৯ ভাগ করলেন প্রতিদিন খাবেন বলে। যেদিন শেষ ভাগ শেষ হল, নদীর জলে পাত্রখানি ছেড়ে বললেন, যদি স্রোতের বিপরীতে যায় তবে তাঁর সিদ্ধিলাভ হয়েছে। পাত্র স্রোতের প্রতিকূলেই গেল। এই হল তাঁর সিদ্ধিলাভ।
-- মাসী আর কতবার বলবে তোমার এই গল্প? বরঞ্চ কাল গনাদার কী হল শোন।
--বল।
-- গনাদা নিতাই কাকার দোকান থেকে দু তিনটে সিদ্ধিগুলি কিনেছে। প্রায় যেমন কেনে আর কী। তারপর দু প্যাকেট দুধ কিনে ক্লাবে গিয়ে ধুম সিদ্ধি বানিয়ে খেয়েছে। গনাদাকে রাস্তায় দেখে বললাম ও গনাদা আজ কী গৌতম বুদ্ধ হয়েছ? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে সিদ্ধিলাভ করেছ। এসো একটু আড্ডা দি। বানী শোনাও। অন্যদিন তো গনাদা স্বাভাবিকভাবেই আসে, আজ কেমন একটু টলে টলে আসছিল। আমরা কয়েকজন বন্ধু বসেছিলাম। ঐ তোমার খেলার মাঠের ধারে যেখানে পতাকা তোলার জায়গা। গনাদা আমাদের পাশটায় এসে বসল। আমরা অনেক করে জানতে চাইতে কী ঘটেছে বলতে থাকল।
বুঝলি প্রতিদিনকার মতো সিদ্ধিগুলি, দুধ ফল এইসব কিনে ফিরতি-পথে একটা আমার মতো মাঝ বয়সী লোকের সাথে দেখা। সে নাকি কদিন খায়নি কিছু। আমার দেখে মনে হল কদিন নয়, লোকটা মনে হয় বেশ কদিন খায় নি। শরীরটা শুখনো লম্বাটে করলার মতো, হাতগুলো সজনে ডাঁটার মত শীর্ন, মুখটা বসে গেছে যেন একটা ভিখারীর বাঁকা এলুমিনিয়ামের বাটি। আমি ওকে ক্লাবে নিয়ে এসে বসাই। তারপর ওকে খানিকটা দুধ আর ফল খেতে দিয়ে বাকীটা আমি সিদ্ধি বানিয়ে নি। কিন্তু লোকটা একটা অদ্ভুত। দুধটা খেলোই-না। ফলটা খেল। দুধ যত্নে রেখে দিল পাশে। আমি বললাম দুধটা খাও।
আগে কাজটা করি। সে বলল।
তুমি আবার কী কাজ করবে?
বাগানে জল দেওয়া, ক্লাবের দেয়ালের ঝুল ঝাড়া, দরজা জানলা পরিষ্কার মায় আপনি যা নির্দেশ দেবেন।
কেন?
বাহ! আপনি আমাকে ডেকে আনলেন খেতে দিলেন আমি খেলাম তার বদলে আমাকে যে কাজ করতে হবে। ভুখা মানুষের ভাত জোটেনা, আপনি তাকে ফল খেতে দিলেন, সারা গায়ে খুব শক্তি দাদা, আপনি আমার শক্তি জুটালেন। এ শক্তি যে আপনার জন্য তাই আপনার কাজ না করলে যে এই শক্তির আবাহন হয়না, বিসর্জন ও হয়না।
ওহ! আচ্ছা বুঝলাম। ঠিকাছে কাজ করখন। দুধটা খেয়ে নাও। তারপর দেখছি।
দুধটা বাড়ি নিয়ে যাব। কাল ওটা খেয়েই কাজে বেরুব। আজগের উদ্বৃত্ত কালকের বেঁচে থাকার সাধনাকে সংঘবদ্ধ করবে।
তোমার নাম কী ভাই?
আজ্ঞে আমার নাম বুদু। অভাবের দুনিয়া। কালকের জন্য শ্রম অর্জনেই জীবন-ধন্য। সিদ্ধিলাভ। তাই বুদ্ধদেব ডাকতে সময়শব্দশ্রম অপচয়। তাই সবাই ডাকে বুদু।
ওর কথাগুলো শুনছিলাম আর বুঝলি ভাই, ভাবছিলাম এত সহজ করে ও জীবনের সিদ্ধিলাভ কিসে বুঝেছে, যে আমি সিদ্ধি খেয়ে বা না খেয়ে তার নাগাল করতে পারলেও এইভাবে সহজ করে বলতে পারব না। অভাব মনে হয় মানুষকে এইভাবেই জ্ঞানী করে রে।
--এই হল গনাদার সেদিনের গল্প। বুঝলে মাসী! এবারে একটু চা খাওয়াও দেখি।
--সত্যি রে আমার পাগলা...দ্যাখ সিদ্ধিলাভই বটে। তুই এই গপ্পোটাই লিখিস না কেন। নাম টা নথিভুক্ত করে আয়। ১৫ তারিখ শেষ দিন। আরে এই আজই তো ১৫ তারিখ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ১৯/০৩/২০১৬দারুণ ! আগেও পড়েছিলাম, তবু আরেকবার আমি কিন্তু পড়েই বললাম দাদা। আমার আগের জনের মত শুধু মন্তব্য করতে হবে বলে করি নি।
-
মাহাবুব ১৭/০৩/২০১৬দারুণ কবিতাটা, ধন্যবাদ কবি।
-
দেবজ্যোতিকাজল ১৭/০৩/২০১৬দারুণ! দারুণ !!
-
রুমিয়া দত্ত সিন্হা ১৬/০৩/২০১৬খুব ভালো লাগলো। গল্প বলতে গিয়ে অনেক কিছুই বলে দিলেন ।
-
অভিষেক মিত্র ১৬/০৩/২০১৬দারুণ লাগল দাদা।
-
আজিজ আহমেদ ১৫/০৩/২০১৬দাদা,
খুবই ভাল লাগলো। গল্প বলার ঢং এ অনেক কিছু বলে গেলেন।
বাকি টা পাঠক বুঝে নিক।