ছোটদের গল্প - বোধন।
১
আমার নাম নিখিল। আমার খুড়তুতো দাদার নাম অখিল। আমার থেকে আমার দাদা মোটামুটি এক বছরের বড় হবে। কিন্তু না ও আমাকে কখন ভাই ভেবেছে আর আমিও ওকে কোন দিন দাদা বলে মনে করিনি। ছোটবেলা থেকেই আমরা ঠিক দুই বন্ধু ছাড়া আর কিছু মনে হত না। তাই আমার কোন দিন অখিলদা বলা হয়নি। অখিল বলেই ডাকতাম। আমারা বাবার চাকরী সূত্রে গ্রামের বাইরে থাকতাম। আর অখিলরা আমাদের গ্রামের বাড়ীতেই থাকত। গরমের ছুটি আর পূজোর ছুটিতে আমরা গ্রামের বাড়ীতে এলেই একে অপরের সাথে দেখা হত। গ্রামের বাড়ী পৌঁছে যাবার পর আমাদের দুই ভাই কে আর আলাদা দেখা যেত না। তাই অনেকেই আমদের মানিকজোড় নাম দিয়েছিল।
আমি তখন ক্লাস থ্রিতে কী ফোরে পড়ি। অনেক বছর আগের কথা আর কি। তখন শহরাঞ্চলে ইলেকট্রিক ট্রেন চললেও আমাদের গ্রামের ওখানে চলত কয়লার ইঞ্জিন চালিত ট্রেন। তখনকার দিনে আমাদের বছরে একবারই জামা কাপড় কেনা হত পুরো পরিবারের জন্য। আর পূজোর জুতো হিসাবে কেনা হত কালো জুতো। সেটাই আমরা পুজো কেটে গেলে স্কুলে পড়ে যেতাম। অবশ্য তার সাথে একটা চপ্পল ও কিনে দেওয়া হ’ত। ওটা পরে আমরা এদিক সেদিক করতাম। আর বড়দের মানে বাবা কাকাদের পুজোতে কেনা হত জামা প্যান্টের ছিট কাপড়। তারপর তাঁরা সেটা দর্জির দোকানে দিতেন পছন্দ মত জামা প্যান্ট বানানোর জন্য। তখনকার দিনে আমাদের মনের মধ্যে একটা বেশ বড় হবার বাসনা এরকম থাকত যে আমরা কবে ওরকম কাপড় কিনে দর্জির কাছে জামা প্যান্ট বানাব। তাতে আবার নানারকম পদ্ধতি। একদিন গিয়ে মাপ দিয়ে এস। পরে একদিন গিয়ে কিছুটা বানানো হয়ে যাবে এই অবস্থায় গিয়ে দেখে আসতে হত পরনে ঠিক হচ্ছে কিনা। তখন তাকে বলা হত ট্রায়াল দেয়া আর ট্রায়াল এ ফিটিংস দেখা। ট্রায়াল ও ফিটিংস তাই আমি অনেকদিনই জানতাম বাংলা কথা। প্রতিবারের মত সেবারও আমরা পুজোর ছুটিতে গ্রামের বাড়ীতে পৌঁছে গেলাম একদিন বিকেল বিকেল। দাদু ঠাকুমা কাকীদের সাথে অনেকদিন পর এসে কুশল বিনিময় করতে করতেই সন্ধ্যে নেমে এলো। কাকা বাড়ীতে নেই। অনেক রাতে ফিরবে। আমার কাকা মানে অখিলের বাবা একজন সেকালের নামী দর্জি। সবাই তাঁকে ডাকেন মাষ্টার। তাই ছোট থেকেই ধারনা ছিল যে দর্জি আর শিক্ষক এরা দুজনই মাষ্টার। যা বলছিলাম, সেই জন্য কাকার সাথে তখনও দেখা হলনা। রাস্তার ক্লান্তিতে আমি ঘুমিয়ে পড়ব ভেবে আমাকে আর অখিলকে খেতে দেওয়া হয়ে গেল। ঠাকুমা আমাদের উঠোনের পশ্চিমদিকের রান্না ঘরের পিঁড়েতে গরম গরম রুটি ডাল, বড়ির তরকারি আর আলু-ভাজা খাইয়ে দিল। তখনকার দিনে আটার গুনেই হোক বা ঠাকুমার স্নেহ আদরেই হোক, রুটি সেঁকার সময় খুব সুন্দর একটা গন্ধ ছড়িয়ে পরত চারিদিকে। সেই গন্ধটা বড় হয়ে আর কোথাও পাইনি। আমাদের খাওয়া হলে আমরা শুয়ে পরলাম। শোবার পর কিছুক্ষণ ঠাকুমা, মা কাকীমাদের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম তারপর আসতে আসতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি। কাকা কখন বাড়ী ঢুকেছে টের পাইনি।
২
“প্রভাত হইল পাখির কুজনে
ওগো আর ঘুমাইয়ো না...
আমার শ্যামসুন্দর, মদনমোহন
আর ঘুমাইয়ো না......।“
দাদু কীর্তন গাইছেন। ভোর হয়েছে। পূব দিকটার আকাশ লাল। একটা ঠাণ্ডা হাওয়া খেলে যাচ্ছে। উঠোনের একদম কোনার দিকের টিউবওয়েল এর আওয়াজ আসছে। দাদু সকাল বেলা কীর্তন গাইছেন হয়ত গাইছিলেন অনেকক্ষণ। কিন্তু আপাতত আমাকে আর অখিলকে ঘুম থেকে তোলার জন্যই এই গান। দাদু ছিলেন পূজারী। তাই আমাদের দুই ভাই কে ঠাকুরের নাম দিয়েছিলেন। অখিলের নাম শ্যামসুন্দর আর আমার নাম মদনমোহন। সেই বয়সেই আমার দাদুর উপর মাঝে মাঝে রাগ হত যে আমার নাম শ্যামসুন্দর রাখতে পারতেন। কারণ আমাকে সবাই রাগাত মদন কটকটি বলে। সে সময় একরকম কটকটি বিস্কুট পাওয়া যেত গ্রামের দিকে। তার নাম মদন কটকটি বিস্কুট। যেহেতু আমার মোটেই ভাল লাগত না তাই বড় হয়েও তার ইতিহাস জানার চেষ্টা করিনি। শেষে কিনা একটা বিস্কুটের নাম আমার নাম। আমার তার থেকে নিখিল ঢের ভাল। সে যাই হোক দাদুর কীর্তনের গলাটা ছিল মধুর। মনে হত সকালটা ঐ ভাবেই আটকে থাকুক আর দাদু গেয়ে চলুক। এসব ভাবতে ভাবতে উঠে পরলাম দুজনেই।
সারাদিন হেসে খেলে কেটে যাচ্ছিল বেশ। পাড়ার এক চালার ঠাকুর। তাতেই আমাদের আনন্দ। ঢাক বাজছে। গ্রামের রাস্তাঘাটে শান্তির মধ্যেই একটা জমজমাট আমেজ এসেছে। আমরা ক্যাপ ফাটাচ্ছি। হাতে বন্দুক। মনের মধ্যে যেন কোন অসুর আমাদের শত্রু। ক্যাপের আওয়াজে যেন তাঁকেই পরাস্ত করার একটা রোমাঞ্চে মেতে রয়েছি আমরা। এমনি করে দুদিন কেটে গেছে। অষ্টমীর সকালে অখিল আরও রোমাঞ্চকর এক কথা পারল।
- নিখিল মায়ের জরদার কৌটোতে অনেক টাকা আছে।
- তাতে আমরা কি করব।
- দেখ যদি ওখান থেকে আমরা দু চার টাকা পেয়ে যাই তাহলে আমাদের ঠাকুর দেখতে গিয়ে বেশ মজা করা যাবে। ফুলুরি খাব। চানাচুর খাব। পাঁপড় খাব। বাজী পোড়াব। স্টেশন বাজারের দুটো ঠাকুরই দেখে আস্তে পারব।
- কিন্তু ওখান থেকে পাবি কি করে।
- দুপুরে মায়েরা যখন উঠোনে গল্প করবে তুই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকবি। আমি ঠিক পেরে নিতে পারব।
আমাদের কারুরই কোন বোধ শক্তি নেই যে এটা আদৌ চুরি করার মধ্যে পরে কিনা। আমরা জানি কাকীমার জরদার কৌটোতে টাকা আছে কিছু আর তা দিয়ে আমরা বেশ মজা আহ্লাদ করতে পারব। কিন্তু মনে মনে বেশ একটা শিহরণ টের পেলাম। দুপুরের খাওয়া দাওয়া আমরা বেশ চিন্তিত হয়েই সারলাম। অপেক্ষা করলাম মায়েদের খাওয়া শেষে কখন তাঁরা গল্পে মশগুল হয়। অনেক অপেক্ষার পর সেই সময় উপস্থিত।
আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। দরজার কাছে। একবার গোয়ালে বাছুরের ঝিমোনো দেখছি। একবার গোটা উঠোনটা দেখছি। নারকোল গাছের গুঁড়ি একপাশে, একপাশে সজনে আর নাজনে গাছ আর তার পাশে রান্নাঘর। এসব দেখতে দেখতেই অখিল ভেতরে ডাকল।
- নিখিল কুড়ি টাকা।
- হ্যাঁ...
- হ্যাঁ। একটা কুড়ি টাকা আছে। ওটাই নিলাম।
- কিন্তু এত টাকা দিয়ে আমরা কি করব?
- দেখা যাবে। কাল আমরা যাব বাজারের ঠাকুর দেখতে।
সেই সময় কুড়ি টাকা ঠিক যে কত টাকা আমাদের সে ধারনাটুকুও ছিল না। কারণ আমরা দুজন মাঝে মাঝেই চলে যেতাম বাজার ঘুরতে আর কাকার কাছে পয়সার বায়না করতাম খাওয়া দাওয়া করব বলে। কাকা বেশীর ভাগ দিন কুড়ি পয়সা কি পঁচিশ পয়সা দিতেন। যেদিন চল্লিশ পয়সা পাওয়া যেত আমাদের মনে হত গোটা বাজারটাই বুঝি আজ আমাদের।
৩
নবমীর সকাল আজ। আমরা জল খাবার খেয়ে ঠাকুর তলায় চলে গেলাম। অখিলের পকেটে পকেটেই ঘুরতে লাগল কুড়ি টাকার একটা নোট। সারাক্ষণ আনন্দের শেষ নেই কিন্তু মনে মনে একটাই আকাঙ্ক্ষা কখন যাব বাজারের পুজো দেখতে। বড় পুজো বলে কথা। বড় প্যান্ডেল বড় ঠাকুর বড় লাইট। দেখতে দেখতে দুপুর এসে গেল আমরা বাড়ী ফিরলাম। এবার চান করতে যেতে হবে নদীতে। গ্রামের বাড়ীতে এলে এই নদীতে চান করাটা একটা স্বাধীনতার জায়গা। আমাদের বাড়ীর থেকে এই ঘাটে যাবার রাস্তাটা কিছুটা পথ। যেতে গিয়ে পড়ে কিছু ঘর বাড়ী। আর তারপর মাঠান জমির মাঝ দিয়ে রাস্তা। কিছুটা গেলেই স্যালো মেশিনের জল পড়ার চৌবাচ্চা। যেখান থেকে জল আলের মাধ্যমে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পরে। সেখানে আমরা কিছুক্ষণ বসে সময় কাটাই। পাড়ার সমবয়সী আর একটু বড় বয়সীরাও একসাথে আড্ডা দিয়ে তবে আবার দুপাশের ফসলের মাঝের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যাই ঘাটে চান করতে। আমি সাঁতার জানিনা। কিন্তু তাতে কি এসে যায়। নদীর ঠাণ্ডা জলে নেমে কেউ সাঁতার কাটতে থাকল আর দু একজন যারা আমার মত সাঁতারে অপটু তারা মোটামুটি জলে দাপিয়ে নদীকে যেন পরাস্ত করে নিজেদের চোখকে লাল করে তাতেও শান্তি নেই। কিছু পাড়ার কাকীমা ঠাকুমারা এসে ধমক দিতে আমাদের নিমরাজি হয়ে নদী থেকে উঠতে হল।
অখিল কুড়ি টাকাটা নদীর পারে নদীতে নাবার সময় নিজের হাওয়াই চটির নিচে রেখে দিয়ে ছিল। উপরে এসে সবার আগে আমরা সেটা আছে কিনা দেখব বলে ঝুঁকে পরলাম। আমি নদীর দিকে পেছন করে দাঁড়ালাম যেদিকে সবাই চান করছে পাছে দেখতে না পায় কেউ। আমার মনে হল পুরো নদীটাই যেন আমার শরীর দিয়ে আড়াল হয়ে গেছে। নিমেষেই অখিল তাড়াতাড়ি টাকাটা নিয়ে নিতে আমরা বাড়ীর দিকে চললাম। আবার সেই দুপাশে ফসল। মাঝখানে রাস্তা। তারপর একটু উঁচু ঢিপির মত। সেখান থেকে আবার একটুখানি গ্রামের পাড়ার পথ ধরে আমাদের বাড়ী।
দুপুরে খেয়ে দেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই আমরা বেরোবার জন্য তৈরি হলাম। দুজনেই সবচেয়ে পছন্দের নতুন জামা প্যান্ট আর নতুন কালো জুতো সাদা মোজা। পকেটে একটা করে ক্যাপ ফাটাবার বন্দুক। বেরিয়ে পরলাম বাজারের ঠাকুর দেখতে। স্টেশন বাজার যেতে আমাদের বাড়ি থেকে আধ ঘণ্টা লাগে। বাজারে গিয়েই আমরা দুজন কাকার কাছে হাজির হলাম। খাওয়া দাওয়া বাজি পোড়ান ইত্যাদির জন্য পয়সা পাওয়া যাবে কিছু। কাকা দয়ালু। পুজোর দিনে দশ পয়সা না, পাওয়া গেল পুরো এক টাকা। দুজনে খরচা করতে পারব।
কাকার দোকান থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের মধ্যে যেন একটা বড় পুজো নামানোর পরিকল্পনা করছি এমন ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেল। আগে খাব না বাজী পোড়াব। খেলে মিষ্টি আগে খাব না জিলিপি। না তেলেভাজার দোকানে আগে যাব। এইসব। এক টাকা খরচা করলেই অনেক কিছু মিলবে তার উপর এই পুরো একটা কুরি টাকার নোট। প্রথমে বেশ করে একটু তেলেভাজা খেলাম আমরা দুজন। তারপর কালি পটকা ফাটান হল মনের সুখে। ক্যাপে ঠিক মন ভরছে না। কিছু ক্যাপ রাস্তায় ফাটাব বলে ঢুকিয়ে নিলাম। কিছুদূর গিয়েই মিষ্টির দোকান। দুজনে পছন্দ সই মিষ্টি মনের সুখে খেলাম। বেলুন টীপ কোরে ফাটাতে চেষ্টা করলাম দুজন মিলে। এইরকম মেলাতে যত প্রকার আনন্দের জায়গা আছে প্রায় সব কিছুই আমরা অল্প-বিস্তর চেখে খেয়ে খেলে হেলায় পয়সা খরচ করে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আসতে আসতে সন্ধ্যে নেমে আসছে। আমরা বাড়ীর দিকে ফিরে চললাম। কিন্তু মুশকিল হল এত কিছু করেও আমরা কুড়ি টাকা শেষ করতে পারিনি। অখিলের পকেটে আমরা গুনে দেখলাম তখন প্রায় সাত টাকা কিছু পয়সা পড়ে আছে। রাস্তায় যেতে যেতে দুই ভাই ঠিক করতে থাকলাম কেউ টাকার কথা বললে কি বলতে হবে। সারা রাস্তা মিটিং করে আমরা দুজন ঠিক করলাম আমরা কোন অবস্থাতেই এ স্বীকার করব না যে আমরা টাকা নিয়েছি। আর আমরা ছোট হলেও হিসেব করে মনে করে নিলাম যে আমরা কাকার দেওয়া এক টাকা দিয়ে কি কি করেছি।
৪
পরদিন সকালে আমরা যথারীতি ঘুম থেকে উঠলাম দাদুর মধুর কীর্তন শুনতে শুনতে। আমাদের গ্রামের বাড়ীতে প্রতিদিনই দাদুর বন্ধুরা মোটামুটি সকালে উঠে মুখ হাত ধুয়ে আমাদের বাড়ীতে চলে আসতেন। বেশ কিছুক্ষণ চলত দাদুদের আড্ডা। সকালের চা খাওয়ার পাট টা আমাদের বাড়ীতেই হত। দাদুকে কখন যেতে দেখিনি অন্য দাদুদের বাড়ীতে। সকলে আমাদের এখানেই আসতেন। বড় হয়েও তাই দেখেছি। সেদিনও দাদুরা সবাই এসে গেছে। গল্প চলছে। আমরা খেতে খেতে সেসব গল্প কথা কিছু কানে আসছে। বেশ একটা শান্তি শৃঙ্খলার পরিবেশ। আজ দশমী।
দাদুর বন্ধুরা চা খেয়ে গল্প গাছা করে ফিরে গেলেন। বেলা নটা দশটা বাজে হয়ত। আমার কাকীমা মানে অখিলের মা ঘর থেকে বেরিয়ে পিড়ের ওখান থেকে মানে ঘরের দাওয়ার ওখান থেকে অখিল কে সবার সামনেই বলল
- হ্যাঁরে অখিল, আমার জরদার কোটোতে কুড়ি টাকার একটা নোট রেখেছিলাম, তুই দেখেছিস।
- না আমি কি করে দেখব।
ঠাকুমা রান্না ঘর থেকে বলল
--কি হয়েছে বৌমা। কি খুঁজে পাচ্ছনা
--আরে দেখুন না। আমার পষ্ট মনে আছে এই জরদার কোটোতে কুড়ি টাকা রেখেছিলাম একন দেখছি ফাঁকা কোটো।
-ওমা। সে কি কথা। কোথায় আর যাবে ঘর থেকে। দেখ এদিক ওদিক পরে গেছে হয়ত।
আমাদের গ্রামের বাড়ীর উঠোনটা মাঝখানে তাকে ঘিরে একদিকে বড় একটা ঠাকুর-ঘর। আর একদিকে সদর দরজা। দু পাশে দুটো ঘর আর অন্য আর এক দিকে রান্না ঘর। আমার মা কাকী-মার উল্টোদিকের ঘর টাতে দাঁড়িয়েছিল। আমাকে বলল
--নিখিল তুই নিয়েছিস।
--না না ও টাকা নেবার ছেলে না দিদি। আমার মনে হচ্ছে আমারটাই এই কাণ্ড করেছে।
কাকীমার আমার প্রতি অগাধ বিশ্বাস দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমি অখিলের সাথেই উঠোনটাতে বসে খেলার তোড়জোড় করছিলাম। মাকে খুব মিনমিন করেই বললাম
--আমি জানিনা মা।
এরপর চলল আমার কাকীমার কুড়ি টাকার জেরা। প্রধানত অখিলকেই। আর প্রতিটা প্রশ্ন আমি ওর পাশে বসে আছি। তাই আমিও মনে মনে উত্তর দিচ্ছি।
এ রকম চলতে চলতে পাড়ার কাজল পিসি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, ঢুকে পরল আমদের বাড়ী। কাকীমার ঝাঁজাল জেরার গলাতে বেশ একটা আনন্দের বিষয় খুঁজে পেয়েছে মনে হল।
--কি হয়েছে গো ও অখিলের মা।
-- আরে জরদার কোটতে কুড়ি টাকা রেখেছিলাম এই ছেলে নিয়ে কাল ঠাকুর দেখে এসেছে। এতবার জিজ্ঞাসা করছি কিছুতেই বলে না ।
কাজল পিসি আমাদের পাশের বাড়ীতেই থাকে। কারণে অকারণে পিসি যেমন আমাদের বাড়ীতে আসে আমরাও যাই। পিসির যে গ্রামে বিরাট পরিচিতি তা ঐ ছোট বয়সেই আমরা জানতাম। কাজল পিসি এবার আমাদের নতুন করে জেরা শুরু করল।
--কিরে ভাই অখিল নিখিল মায়ের টাকা কেউ নেয় অমন করে। দিয়ে দে। মা চাইছে না এত করে।
-- আমরা কেন নেব। আমরা তো জানিনা কোথায় টাকা থাকে।
-- কাল কি কি করলি বাজার গেছিলি ঠাকুর দেখতে। নিখিল বাবা কি করলি কালকে। তুইই বল ভাই।
--ঐ ত পিসি। এখান থেকে গেলাম কাকার দোকানে। কাকা টাকা দিল। তারপর দুটো ঠাকুর দেখলাম। একটু খেলাম চলে এলাম।
--কি কি খেলি ভাই
-- ঐ ত দুটো করে তেলেভাজা খেলাম।
-- আর কিচ্ছু করিসনি?
আমি একবার অখিলের দিকে চেয়ে বললাম – না আর কিছু কি করব। আর কিছু করিনি তো।
এরকম করে এক প্রশ্নর একই রকম উত্তর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করতে করতে যে কতক্ষণ কেটে গেল তার হিসাব থাকল না। ঠাকুমা আমাদের চান করতে যাবার কথা বলে উদ্ধার করল।
--যা যা ঘাটে যা। চান ধান করতে হবে ত । বেলা বয়ে যায়।
কাজল পিসি আমাদের শেষ অস্ত্র ব্যবহার করল এবার।
--দেখ অখিল নিখিল, আমি এবার ও পাড়ার স্বপন কে ডাকছি। ও হাত পড়তে পারে। আর হাত পড়ে যদি বলে যে তোরা মিথ্যা বলছিস সাথে সাথেই তোদের হাতের আঙুল বেঁকে যাবে।
অখিল বলল , - আমরা জানিনা পিসি।
--বেলা বয়ে যাচ্ছে। অ নিখিল, অখিল যা বাবা চান করে আয়।
ঠাকুমার কথায় আমরা উঠোন থেকে উঠে দুজন দুটো গামছা নিয়ে কোন রকমে মাথায় একটু তেল দিয়ে বেরিয়ে পরলাম ঘাটের উদ্দেশ্যে। অদ্ভুত একটা কিছু পাওয়ার আনন্দ, জেতার আনন্দ হচ্ছে। একটু মন খারাপও হচ্ছে। এটাই আমাদের জীবনে প্রথম চুরি। আর চুরিতে যে পাপবোধ হয় তা এই এত জেরাতে মনে হয়নি। এখন আমরা যখন একদম একা হয়ে গেছি, দুজন ঘাটে যাচ্ছি তখন মনে হতে থাকছে। দুপুরবেলার গ্রামের নিস্তব্ধতা আমাদেরকে মনে করাচ্ছে আমাদের চুরি। মাটির রাস্তার দুপাশে আম লিচুর বাগান ঘেরা আছে বেড়া দিয়ে। সেই বেড়ার ছোট গাছগুলোও যেন আমাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চায় চুরির কথা। ঘাটের দিকে ক্রমশ আমরা এগিয়ে চললাম। বাগানের পর এলো ঢিপি। আমরা নিচের দিকে চলতে থাকলাম। দুপাশে ক্ষেত। এখন গম হয়েছে। তাই সোনালী হয়ে আছে চারিধার। আমরা দুজনে হাঁটছি। মাথার উপরে নীলাকাশ আর তার মাঝে মা কাকীমাদের খোঁপার মতন মেঘ হয়ে আছে। কিন্তু রঙ সাদা। এতকিছু রঙ্গিন উপকরণ এত আলোর ছড়াছড়ি চারিধার। তবু যেন মন আমাদের অন্ধকার হয়ে আছে আজ। আবার মনে মনে মুচকি হাসিও উঁকি দেয় এই বলে যে কেমন ধরতে পারেনি কেউ। তবে এই মজার হাসিটা যেন বারে বারে হেরে-যাচ্ছে মন খারাপের কাছে। নদী কাছে আসতে থাকছে। স্নান করার কোলাহল বাড়তে থাকছে। আমরা সব ভুলে ইছামতীর ভরাট শীতল জলে নেমে মাথা ডুবিয়ে ডুবিয়ে চান করতে শুরু করলাম আর যেন শীতল হতে থাকলাম।
আজ দশমী। সে কথা ভুলি কি করে। সকাল সকাল পূজোর মন্দিরে ভীর বেড়েছিল। সকাল এগারোটার মধ্যে দশমী পূজো শেষ।
বাড়ীতে আজ সবাই একটু ব্যস্ত হয়ে গেছে। মা ঠাকুমারা তাড়াতাড়ি কাজ কর্ম গুছিয়ে নিতে চাইছে। দুপুর থেকেই শুরু হয়ে যাবে সিঁদুর খেলার প্রস্তুতি। বিকালেই আবার আসতে হবে এই নদীর ধারেই। বিসর্জন দেখতে। আমরা স্নান সেরে বাড়ি ফিরে এলাম। দেখছি এর মধ্যে সবাই বাড়ী এসে গেছে। বাড়ির কলেই সবার স্নান সেরে খাওয়া দাওয়ার তোড়জোড় চলছে। আমরা ফিরতে প্রথম আমাদের খেতে দিয়ে দিল ঠাকুমা।
দেখতে দেখতে দুপুর গড়াল। বাড়ীর সবাই আমরা সেজে গুজে বেরিয়ে পরলাম। মা কাকীমা ঠাকুমা আগে আগে চলল। এরপর আর সময় হবেনা।
খুব করে বাজী পোড়ালাম মন্দিরের পাশের বাগানে। বিকাল পরতে পরতে ঠাকুর বার করা হল। আমরা সামনে সামনে চললাম। নদীতে সন্ধ্যের মুখে বিসর্জনের আয়োজন হতে থাকল। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। পাড়ার কাকারা তিন চারটে হ্যাজাক জ্বালানোর ব্যবস্থা করতে দিনের আলোর মতো হয়ে গেল চারিধার।
হ্যাজাক এখন আর দেখা যায় না তেমন। হ্যারিকেনের মত কেরোসিন তেলে জ্বালালেও পাম্প করে এই আলোর জোর বাড়ানো যেত। তখনকার দিনে গ্রামের দোকানে এরকম হ্যাজাক জ্বালানো হত সন্ধ্যে বেলা।
বড়রা সবাই ধরাধরি করে ঠাকুর নিয়ে যাচ্ছে নদীতে। আমার মনটা একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেল। এই পূজোতেই প্রথম চুরি করা কি বুঝলাম। এটাও বুঝতে পারলাম কাজটা আমরা একদমই ঠিক করিনি। সাময়িক সেই গতকাল নবমীর বিকেলে কিছু আনন্দ হয়েছিল এটা ঠিক। এটাও ঠিক আমরা ধরা পরিনি তাই কিছুটা জিতে যাবার খুশী হয়েছিল। কিন্তু দুপুরে একদম ফাঁকা হয়েছিলাম দুজন যখন তখন বলতে ইচ্ছে করেছিল চিৎকার করে যে আমরাই এ কান্ড করেছি। এখন আর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছেনা কিন্তু একটা অন্যায় কাজের মাশুল যেন মন গুনছে। সবাই নদীর ধারে ভীড় করছে। ঢাক বাজছে তালে তালে। ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন। ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন। এত ঢাকের আওয়াজ, এত বিষাদ-ঘন পরিবেশ, হ্যাজাকের আলো, দূর সীমান্ত জুরে অন্ধকার আর হালকা ঠাণ্ডা হাওয়ার মোহাচ্ছন্ন পরিবেশে ঠাকুর বিসর্জন হল আর আমার মনে হল আমি একটু বড় হয়ে গেলাম। আমার বুদ্ধির বোধন হল।
আমার নাম নিখিল। আমার খুড়তুতো দাদার নাম অখিল। আমার থেকে আমার দাদা মোটামুটি এক বছরের বড় হবে। কিন্তু না ও আমাকে কখন ভাই ভেবেছে আর আমিও ওকে কোন দিন দাদা বলে মনে করিনি। ছোটবেলা থেকেই আমরা ঠিক দুই বন্ধু ছাড়া আর কিছু মনে হত না। তাই আমার কোন দিন অখিলদা বলা হয়নি। অখিল বলেই ডাকতাম। আমারা বাবার চাকরী সূত্রে গ্রামের বাইরে থাকতাম। আর অখিলরা আমাদের গ্রামের বাড়ীতেই থাকত। গরমের ছুটি আর পূজোর ছুটিতে আমরা গ্রামের বাড়ীতে এলেই একে অপরের সাথে দেখা হত। গ্রামের বাড়ী পৌঁছে যাবার পর আমাদের দুই ভাই কে আর আলাদা দেখা যেত না। তাই অনেকেই আমদের মানিকজোড় নাম দিয়েছিল।
আমি তখন ক্লাস থ্রিতে কী ফোরে পড়ি। অনেক বছর আগের কথা আর কি। তখন শহরাঞ্চলে ইলেকট্রিক ট্রেন চললেও আমাদের গ্রামের ওখানে চলত কয়লার ইঞ্জিন চালিত ট্রেন। তখনকার দিনে আমাদের বছরে একবারই জামা কাপড় কেনা হত পুরো পরিবারের জন্য। আর পূজোর জুতো হিসাবে কেনা হত কালো জুতো। সেটাই আমরা পুজো কেটে গেলে স্কুলে পড়ে যেতাম। অবশ্য তার সাথে একটা চপ্পল ও কিনে দেওয়া হ’ত। ওটা পরে আমরা এদিক সেদিক করতাম। আর বড়দের মানে বাবা কাকাদের পুজোতে কেনা হত জামা প্যান্টের ছিট কাপড়। তারপর তাঁরা সেটা দর্জির দোকানে দিতেন পছন্দ মত জামা প্যান্ট বানানোর জন্য। তখনকার দিনে আমাদের মনের মধ্যে একটা বেশ বড় হবার বাসনা এরকম থাকত যে আমরা কবে ওরকম কাপড় কিনে দর্জির কাছে জামা প্যান্ট বানাব। তাতে আবার নানারকম পদ্ধতি। একদিন গিয়ে মাপ দিয়ে এস। পরে একদিন গিয়ে কিছুটা বানানো হয়ে যাবে এই অবস্থায় গিয়ে দেখে আসতে হত পরনে ঠিক হচ্ছে কিনা। তখন তাকে বলা হত ট্রায়াল দেয়া আর ট্রায়াল এ ফিটিংস দেখা। ট্রায়াল ও ফিটিংস তাই আমি অনেকদিনই জানতাম বাংলা কথা। প্রতিবারের মত সেবারও আমরা পুজোর ছুটিতে গ্রামের বাড়ীতে পৌঁছে গেলাম একদিন বিকেল বিকেল। দাদু ঠাকুমা কাকীদের সাথে অনেকদিন পর এসে কুশল বিনিময় করতে করতেই সন্ধ্যে নেমে এলো। কাকা বাড়ীতে নেই। অনেক রাতে ফিরবে। আমার কাকা মানে অখিলের বাবা একজন সেকালের নামী দর্জি। সবাই তাঁকে ডাকেন মাষ্টার। তাই ছোট থেকেই ধারনা ছিল যে দর্জি আর শিক্ষক এরা দুজনই মাষ্টার। যা বলছিলাম, সেই জন্য কাকার সাথে তখনও দেখা হলনা। রাস্তার ক্লান্তিতে আমি ঘুমিয়ে পড়ব ভেবে আমাকে আর অখিলকে খেতে দেওয়া হয়ে গেল। ঠাকুমা আমাদের উঠোনের পশ্চিমদিকের রান্না ঘরের পিঁড়েতে গরম গরম রুটি ডাল, বড়ির তরকারি আর আলু-ভাজা খাইয়ে দিল। তখনকার দিনে আটার গুনেই হোক বা ঠাকুমার স্নেহ আদরেই হোক, রুটি সেঁকার সময় খুব সুন্দর একটা গন্ধ ছড়িয়ে পরত চারিদিকে। সেই গন্ধটা বড় হয়ে আর কোথাও পাইনি। আমাদের খাওয়া হলে আমরা শুয়ে পরলাম। শোবার পর কিছুক্ষণ ঠাকুমা, মা কাকীমাদের কথা শুনতে পাচ্ছিলাম তারপর আসতে আসতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি। কাকা কখন বাড়ী ঢুকেছে টের পাইনি।
২
“প্রভাত হইল পাখির কুজনে
ওগো আর ঘুমাইয়ো না...
আমার শ্যামসুন্দর, মদনমোহন
আর ঘুমাইয়ো না......।“
দাদু কীর্তন গাইছেন। ভোর হয়েছে। পূব দিকটার আকাশ লাল। একটা ঠাণ্ডা হাওয়া খেলে যাচ্ছে। উঠোনের একদম কোনার দিকের টিউবওয়েল এর আওয়াজ আসছে। দাদু সকাল বেলা কীর্তন গাইছেন হয়ত গাইছিলেন অনেকক্ষণ। কিন্তু আপাতত আমাকে আর অখিলকে ঘুম থেকে তোলার জন্যই এই গান। দাদু ছিলেন পূজারী। তাই আমাদের দুই ভাই কে ঠাকুরের নাম দিয়েছিলেন। অখিলের নাম শ্যামসুন্দর আর আমার নাম মদনমোহন। সেই বয়সেই আমার দাদুর উপর মাঝে মাঝে রাগ হত যে আমার নাম শ্যামসুন্দর রাখতে পারতেন। কারণ আমাকে সবাই রাগাত মদন কটকটি বলে। সে সময় একরকম কটকটি বিস্কুট পাওয়া যেত গ্রামের দিকে। তার নাম মদন কটকটি বিস্কুট। যেহেতু আমার মোটেই ভাল লাগত না তাই বড় হয়েও তার ইতিহাস জানার চেষ্টা করিনি। শেষে কিনা একটা বিস্কুটের নাম আমার নাম। আমার তার থেকে নিখিল ঢের ভাল। সে যাই হোক দাদুর কীর্তনের গলাটা ছিল মধুর। মনে হত সকালটা ঐ ভাবেই আটকে থাকুক আর দাদু গেয়ে চলুক। এসব ভাবতে ভাবতে উঠে পরলাম দুজনেই।
সারাদিন হেসে খেলে কেটে যাচ্ছিল বেশ। পাড়ার এক চালার ঠাকুর। তাতেই আমাদের আনন্দ। ঢাক বাজছে। গ্রামের রাস্তাঘাটে শান্তির মধ্যেই একটা জমজমাট আমেজ এসেছে। আমরা ক্যাপ ফাটাচ্ছি। হাতে বন্দুক। মনের মধ্যে যেন কোন অসুর আমাদের শত্রু। ক্যাপের আওয়াজে যেন তাঁকেই পরাস্ত করার একটা রোমাঞ্চে মেতে রয়েছি আমরা। এমনি করে দুদিন কেটে গেছে। অষ্টমীর সকালে অখিল আরও রোমাঞ্চকর এক কথা পারল।
- নিখিল মায়ের জরদার কৌটোতে অনেক টাকা আছে।
- তাতে আমরা কি করব।
- দেখ যদি ওখান থেকে আমরা দু চার টাকা পেয়ে যাই তাহলে আমাদের ঠাকুর দেখতে গিয়ে বেশ মজা করা যাবে। ফুলুরি খাব। চানাচুর খাব। পাঁপড় খাব। বাজী পোড়াব। স্টেশন বাজারের দুটো ঠাকুরই দেখে আস্তে পারব।
- কিন্তু ওখান থেকে পাবি কি করে।
- দুপুরে মায়েরা যখন উঠোনে গল্প করবে তুই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকবি। আমি ঠিক পেরে নিতে পারব।
আমাদের কারুরই কোন বোধ শক্তি নেই যে এটা আদৌ চুরি করার মধ্যে পরে কিনা। আমরা জানি কাকীমার জরদার কৌটোতে টাকা আছে কিছু আর তা দিয়ে আমরা বেশ মজা আহ্লাদ করতে পারব। কিন্তু মনে মনে বেশ একটা শিহরণ টের পেলাম। দুপুরের খাওয়া দাওয়া আমরা বেশ চিন্তিত হয়েই সারলাম। অপেক্ষা করলাম মায়েদের খাওয়া শেষে কখন তাঁরা গল্পে মশগুল হয়। অনেক অপেক্ষার পর সেই সময় উপস্থিত।
আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। দরজার কাছে। একবার গোয়ালে বাছুরের ঝিমোনো দেখছি। একবার গোটা উঠোনটা দেখছি। নারকোল গাছের গুঁড়ি একপাশে, একপাশে সজনে আর নাজনে গাছ আর তার পাশে রান্নাঘর। এসব দেখতে দেখতেই অখিল ভেতরে ডাকল।
- নিখিল কুড়ি টাকা।
- হ্যাঁ...
- হ্যাঁ। একটা কুড়ি টাকা আছে। ওটাই নিলাম।
- কিন্তু এত টাকা দিয়ে আমরা কি করব?
- দেখা যাবে। কাল আমরা যাব বাজারের ঠাকুর দেখতে।
সেই সময় কুড়ি টাকা ঠিক যে কত টাকা আমাদের সে ধারনাটুকুও ছিল না। কারণ আমরা দুজন মাঝে মাঝেই চলে যেতাম বাজার ঘুরতে আর কাকার কাছে পয়সার বায়না করতাম খাওয়া দাওয়া করব বলে। কাকা বেশীর ভাগ দিন কুড়ি পয়সা কি পঁচিশ পয়সা দিতেন। যেদিন চল্লিশ পয়সা পাওয়া যেত আমাদের মনে হত গোটা বাজারটাই বুঝি আজ আমাদের।
৩
নবমীর সকাল আজ। আমরা জল খাবার খেয়ে ঠাকুর তলায় চলে গেলাম। অখিলের পকেটে পকেটেই ঘুরতে লাগল কুড়ি টাকার একটা নোট। সারাক্ষণ আনন্দের শেষ নেই কিন্তু মনে মনে একটাই আকাঙ্ক্ষা কখন যাব বাজারের পুজো দেখতে। বড় পুজো বলে কথা। বড় প্যান্ডেল বড় ঠাকুর বড় লাইট। দেখতে দেখতে দুপুর এসে গেল আমরা বাড়ী ফিরলাম। এবার চান করতে যেতে হবে নদীতে। গ্রামের বাড়ীতে এলে এই নদীতে চান করাটা একটা স্বাধীনতার জায়গা। আমাদের বাড়ীর থেকে এই ঘাটে যাবার রাস্তাটা কিছুটা পথ। যেতে গিয়ে পড়ে কিছু ঘর বাড়ী। আর তারপর মাঠান জমির মাঝ দিয়ে রাস্তা। কিছুটা গেলেই স্যালো মেশিনের জল পড়ার চৌবাচ্চা। যেখান থেকে জল আলের মাধ্যমে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পরে। সেখানে আমরা কিছুক্ষণ বসে সময় কাটাই। পাড়ার সমবয়সী আর একটু বড় বয়সীরাও একসাথে আড্ডা দিয়ে তবে আবার দুপাশের ফসলের মাঝের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যাই ঘাটে চান করতে। আমি সাঁতার জানিনা। কিন্তু তাতে কি এসে যায়। নদীর ঠাণ্ডা জলে নেমে কেউ সাঁতার কাটতে থাকল আর দু একজন যারা আমার মত সাঁতারে অপটু তারা মোটামুটি জলে দাপিয়ে নদীকে যেন পরাস্ত করে নিজেদের চোখকে লাল করে তাতেও শান্তি নেই। কিছু পাড়ার কাকীমা ঠাকুমারা এসে ধমক দিতে আমাদের নিমরাজি হয়ে নদী থেকে উঠতে হল।
অখিল কুড়ি টাকাটা নদীর পারে নদীতে নাবার সময় নিজের হাওয়াই চটির নিচে রেখে দিয়ে ছিল। উপরে এসে সবার আগে আমরা সেটা আছে কিনা দেখব বলে ঝুঁকে পরলাম। আমি নদীর দিকে পেছন করে দাঁড়ালাম যেদিকে সবাই চান করছে পাছে দেখতে না পায় কেউ। আমার মনে হল পুরো নদীটাই যেন আমার শরীর দিয়ে আড়াল হয়ে গেছে। নিমেষেই অখিল তাড়াতাড়ি টাকাটা নিয়ে নিতে আমরা বাড়ীর দিকে চললাম। আবার সেই দুপাশে ফসল। মাঝখানে রাস্তা। তারপর একটু উঁচু ঢিপির মত। সেখান থেকে আবার একটুখানি গ্রামের পাড়ার পথ ধরে আমাদের বাড়ী।
দুপুরে খেয়ে দেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই আমরা বেরোবার জন্য তৈরি হলাম। দুজনেই সবচেয়ে পছন্দের নতুন জামা প্যান্ট আর নতুন কালো জুতো সাদা মোজা। পকেটে একটা করে ক্যাপ ফাটাবার বন্দুক। বেরিয়ে পরলাম বাজারের ঠাকুর দেখতে। স্টেশন বাজার যেতে আমাদের বাড়ি থেকে আধ ঘণ্টা লাগে। বাজারে গিয়েই আমরা দুজন কাকার কাছে হাজির হলাম। খাওয়া দাওয়া বাজি পোড়ান ইত্যাদির জন্য পয়সা পাওয়া যাবে কিছু। কাকা দয়ালু। পুজোর দিনে দশ পয়সা না, পাওয়া গেল পুরো এক টাকা। দুজনে খরচা করতে পারব।
কাকার দোকান থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের মধ্যে যেন একটা বড় পুজো নামানোর পরিকল্পনা করছি এমন ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেল। আগে খাব না বাজী পোড়াব। খেলে মিষ্টি আগে খাব না জিলিপি। না তেলেভাজার দোকানে আগে যাব। এইসব। এক টাকা খরচা করলেই অনেক কিছু মিলবে তার উপর এই পুরো একটা কুরি টাকার নোট। প্রথমে বেশ করে একটু তেলেভাজা খেলাম আমরা দুজন। তারপর কালি পটকা ফাটান হল মনের সুখে। ক্যাপে ঠিক মন ভরছে না। কিছু ক্যাপ রাস্তায় ফাটাব বলে ঢুকিয়ে নিলাম। কিছুদূর গিয়েই মিষ্টির দোকান। দুজনে পছন্দ সই মিষ্টি মনের সুখে খেলাম। বেলুন টীপ কোরে ফাটাতে চেষ্টা করলাম দুজন মিলে। এইরকম মেলাতে যত প্রকার আনন্দের জায়গা আছে প্রায় সব কিছুই আমরা অল্প-বিস্তর চেখে খেয়ে খেলে হেলায় পয়সা খরচ করে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আসতে আসতে সন্ধ্যে নেমে আসছে। আমরা বাড়ীর দিকে ফিরে চললাম। কিন্তু মুশকিল হল এত কিছু করেও আমরা কুড়ি টাকা শেষ করতে পারিনি। অখিলের পকেটে আমরা গুনে দেখলাম তখন প্রায় সাত টাকা কিছু পয়সা পড়ে আছে। রাস্তায় যেতে যেতে দুই ভাই ঠিক করতে থাকলাম কেউ টাকার কথা বললে কি বলতে হবে। সারা রাস্তা মিটিং করে আমরা দুজন ঠিক করলাম আমরা কোন অবস্থাতেই এ স্বীকার করব না যে আমরা টাকা নিয়েছি। আর আমরা ছোট হলেও হিসেব করে মনে করে নিলাম যে আমরা কাকার দেওয়া এক টাকা দিয়ে কি কি করেছি।
৪
পরদিন সকালে আমরা যথারীতি ঘুম থেকে উঠলাম দাদুর মধুর কীর্তন শুনতে শুনতে। আমাদের গ্রামের বাড়ীতে প্রতিদিনই দাদুর বন্ধুরা মোটামুটি সকালে উঠে মুখ হাত ধুয়ে আমাদের বাড়ীতে চলে আসতেন। বেশ কিছুক্ষণ চলত দাদুদের আড্ডা। সকালের চা খাওয়ার পাট টা আমাদের বাড়ীতেই হত। দাদুকে কখন যেতে দেখিনি অন্য দাদুদের বাড়ীতে। সকলে আমাদের এখানেই আসতেন। বড় হয়েও তাই দেখেছি। সেদিনও দাদুরা সবাই এসে গেছে। গল্প চলছে। আমরা খেতে খেতে সেসব গল্প কথা কিছু কানে আসছে। বেশ একটা শান্তি শৃঙ্খলার পরিবেশ। আজ দশমী।
দাদুর বন্ধুরা চা খেয়ে গল্প গাছা করে ফিরে গেলেন। বেলা নটা দশটা বাজে হয়ত। আমার কাকীমা মানে অখিলের মা ঘর থেকে বেরিয়ে পিড়ের ওখান থেকে মানে ঘরের দাওয়ার ওখান থেকে অখিল কে সবার সামনেই বলল
- হ্যাঁরে অখিল, আমার জরদার কোটোতে কুড়ি টাকার একটা নোট রেখেছিলাম, তুই দেখেছিস।
- না আমি কি করে দেখব।
ঠাকুমা রান্না ঘর থেকে বলল
--কি হয়েছে বৌমা। কি খুঁজে পাচ্ছনা
--আরে দেখুন না। আমার পষ্ট মনে আছে এই জরদার কোটোতে কুড়ি টাকা রেখেছিলাম একন দেখছি ফাঁকা কোটো।
-ওমা। সে কি কথা। কোথায় আর যাবে ঘর থেকে। দেখ এদিক ওদিক পরে গেছে হয়ত।
আমাদের গ্রামের বাড়ীর উঠোনটা মাঝখানে তাকে ঘিরে একদিকে বড় একটা ঠাকুর-ঘর। আর একদিকে সদর দরজা। দু পাশে দুটো ঘর আর অন্য আর এক দিকে রান্না ঘর। আমার মা কাকী-মার উল্টোদিকের ঘর টাতে দাঁড়িয়েছিল। আমাকে বলল
--নিখিল তুই নিয়েছিস।
--না না ও টাকা নেবার ছেলে না দিদি। আমার মনে হচ্ছে আমারটাই এই কাণ্ড করেছে।
কাকীমার আমার প্রতি অগাধ বিশ্বাস দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমি অখিলের সাথেই উঠোনটাতে বসে খেলার তোড়জোড় করছিলাম। মাকে খুব মিনমিন করেই বললাম
--আমি জানিনা মা।
এরপর চলল আমার কাকীমার কুড়ি টাকার জেরা। প্রধানত অখিলকেই। আর প্রতিটা প্রশ্ন আমি ওর পাশে বসে আছি। তাই আমিও মনে মনে উত্তর দিচ্ছি।
এ রকম চলতে চলতে পাড়ার কাজল পিসি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, ঢুকে পরল আমদের বাড়ী। কাকীমার ঝাঁজাল জেরার গলাতে বেশ একটা আনন্দের বিষয় খুঁজে পেয়েছে মনে হল।
--কি হয়েছে গো ও অখিলের মা।
-- আরে জরদার কোটতে কুড়ি টাকা রেখেছিলাম এই ছেলে নিয়ে কাল ঠাকুর দেখে এসেছে। এতবার জিজ্ঞাসা করছি কিছুতেই বলে না ।
কাজল পিসি আমাদের পাশের বাড়ীতেই থাকে। কারণে অকারণে পিসি যেমন আমাদের বাড়ীতে আসে আমরাও যাই। পিসির যে গ্রামে বিরাট পরিচিতি তা ঐ ছোট বয়সেই আমরা জানতাম। কাজল পিসি এবার আমাদের নতুন করে জেরা শুরু করল।
--কিরে ভাই অখিল নিখিল মায়ের টাকা কেউ নেয় অমন করে। দিয়ে দে। মা চাইছে না এত করে।
-- আমরা কেন নেব। আমরা তো জানিনা কোথায় টাকা থাকে।
-- কাল কি কি করলি বাজার গেছিলি ঠাকুর দেখতে। নিখিল বাবা কি করলি কালকে। তুইই বল ভাই।
--ঐ ত পিসি। এখান থেকে গেলাম কাকার দোকানে। কাকা টাকা দিল। তারপর দুটো ঠাকুর দেখলাম। একটু খেলাম চলে এলাম।
--কি কি খেলি ভাই
-- ঐ ত দুটো করে তেলেভাজা খেলাম।
-- আর কিচ্ছু করিসনি?
আমি একবার অখিলের দিকে চেয়ে বললাম – না আর কিছু কি করব। আর কিছু করিনি তো।
এরকম করে এক প্রশ্নর একই রকম উত্তর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করতে করতে যে কতক্ষণ কেটে গেল তার হিসাব থাকল না। ঠাকুমা আমাদের চান করতে যাবার কথা বলে উদ্ধার করল।
--যা যা ঘাটে যা। চান ধান করতে হবে ত । বেলা বয়ে যায়।
কাজল পিসি আমাদের শেষ অস্ত্র ব্যবহার করল এবার।
--দেখ অখিল নিখিল, আমি এবার ও পাড়ার স্বপন কে ডাকছি। ও হাত পড়তে পারে। আর হাত পড়ে যদি বলে যে তোরা মিথ্যা বলছিস সাথে সাথেই তোদের হাতের আঙুল বেঁকে যাবে।
অখিল বলল , - আমরা জানিনা পিসি।
--বেলা বয়ে যাচ্ছে। অ নিখিল, অখিল যা বাবা চান করে আয়।
ঠাকুমার কথায় আমরা উঠোন থেকে উঠে দুজন দুটো গামছা নিয়ে কোন রকমে মাথায় একটু তেল দিয়ে বেরিয়ে পরলাম ঘাটের উদ্দেশ্যে। অদ্ভুত একটা কিছু পাওয়ার আনন্দ, জেতার আনন্দ হচ্ছে। একটু মন খারাপও হচ্ছে। এটাই আমাদের জীবনে প্রথম চুরি। আর চুরিতে যে পাপবোধ হয় তা এই এত জেরাতে মনে হয়নি। এখন আমরা যখন একদম একা হয়ে গেছি, দুজন ঘাটে যাচ্ছি তখন মনে হতে থাকছে। দুপুরবেলার গ্রামের নিস্তব্ধতা আমাদেরকে মনে করাচ্ছে আমাদের চুরি। মাটির রাস্তার দুপাশে আম লিচুর বাগান ঘেরা আছে বেড়া দিয়ে। সেই বেড়ার ছোট গাছগুলোও যেন আমাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চায় চুরির কথা। ঘাটের দিকে ক্রমশ আমরা এগিয়ে চললাম। বাগানের পর এলো ঢিপি। আমরা নিচের দিকে চলতে থাকলাম। দুপাশে ক্ষেত। এখন গম হয়েছে। তাই সোনালী হয়ে আছে চারিধার। আমরা দুজনে হাঁটছি। মাথার উপরে নীলাকাশ আর তার মাঝে মা কাকীমাদের খোঁপার মতন মেঘ হয়ে আছে। কিন্তু রঙ সাদা। এতকিছু রঙ্গিন উপকরণ এত আলোর ছড়াছড়ি চারিধার। তবু যেন মন আমাদের অন্ধকার হয়ে আছে আজ। আবার মনে মনে মুচকি হাসিও উঁকি দেয় এই বলে যে কেমন ধরতে পারেনি কেউ। তবে এই মজার হাসিটা যেন বারে বারে হেরে-যাচ্ছে মন খারাপের কাছে। নদী কাছে আসতে থাকছে। স্নান করার কোলাহল বাড়তে থাকছে। আমরা সব ভুলে ইছামতীর ভরাট শীতল জলে নেমে মাথা ডুবিয়ে ডুবিয়ে চান করতে শুরু করলাম আর যেন শীতল হতে থাকলাম।
আজ দশমী। সে কথা ভুলি কি করে। সকাল সকাল পূজোর মন্দিরে ভীর বেড়েছিল। সকাল এগারোটার মধ্যে দশমী পূজো শেষ।
বাড়ীতে আজ সবাই একটু ব্যস্ত হয়ে গেছে। মা ঠাকুমারা তাড়াতাড়ি কাজ কর্ম গুছিয়ে নিতে চাইছে। দুপুর থেকেই শুরু হয়ে যাবে সিঁদুর খেলার প্রস্তুতি। বিকালেই আবার আসতে হবে এই নদীর ধারেই। বিসর্জন দেখতে। আমরা স্নান সেরে বাড়ি ফিরে এলাম। দেখছি এর মধ্যে সবাই বাড়ী এসে গেছে। বাড়ির কলেই সবার স্নান সেরে খাওয়া দাওয়ার তোড়জোড় চলছে। আমরা ফিরতে প্রথম আমাদের খেতে দিয়ে দিল ঠাকুমা।
দেখতে দেখতে দুপুর গড়াল। বাড়ীর সবাই আমরা সেজে গুজে বেরিয়ে পরলাম। মা কাকীমা ঠাকুমা আগে আগে চলল। এরপর আর সময় হবেনা।
খুব করে বাজী পোড়ালাম মন্দিরের পাশের বাগানে। বিকাল পরতে পরতে ঠাকুর বার করা হল। আমরা সামনে সামনে চললাম। নদীতে সন্ধ্যের মুখে বিসর্জনের আয়োজন হতে থাকল। চারিদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। পাড়ার কাকারা তিন চারটে হ্যাজাক জ্বালানোর ব্যবস্থা করতে দিনের আলোর মতো হয়ে গেল চারিধার।
হ্যাজাক এখন আর দেখা যায় না তেমন। হ্যারিকেনের মত কেরোসিন তেলে জ্বালালেও পাম্প করে এই আলোর জোর বাড়ানো যেত। তখনকার দিনে গ্রামের দোকানে এরকম হ্যাজাক জ্বালানো হত সন্ধ্যে বেলা।
বড়রা সবাই ধরাধরি করে ঠাকুর নিয়ে যাচ্ছে নদীতে। আমার মনটা একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেল। এই পূজোতেই প্রথম চুরি করা কি বুঝলাম। এটাও বুঝতে পারলাম কাজটা আমরা একদমই ঠিক করিনি। সাময়িক সেই গতকাল নবমীর বিকেলে কিছু আনন্দ হয়েছিল এটা ঠিক। এটাও ঠিক আমরা ধরা পরিনি তাই কিছুটা জিতে যাবার খুশী হয়েছিল। কিন্তু দুপুরে একদম ফাঁকা হয়েছিলাম দুজন যখন তখন বলতে ইচ্ছে করেছিল চিৎকার করে যে আমরাই এ কান্ড করেছি। এখন আর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছেনা কিন্তু একটা অন্যায় কাজের মাশুল যেন মন গুনছে। সবাই নদীর ধারে ভীড় করছে। ঢাক বাজছে তালে তালে। ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন। ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন। এত ঢাকের আওয়াজ, এত বিষাদ-ঘন পরিবেশ, হ্যাজাকের আলো, দূর সীমান্ত জুরে অন্ধকার আর হালকা ঠাণ্ডা হাওয়ার মোহাচ্ছন্ন পরিবেশে ঠাকুর বিসর্জন হল আর আমার মনে হল আমি একটু বড় হয়ে গেলাম। আমার বুদ্ধির বোধন হল।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শান্তনু ব্যানার্জ্জী ১৫/১২/২০১৫দারুন লিখেছেন দাদা । খুব ভালো লাগল
-
সমরেশ সুবোধ পড়্যা ০৯/১২/২০১৫ভাল লাগল। লিখতে থাকুন । শুভেচ্ছা রইল ।
-
জুনায়েদ বি রাহমান ০৯/১২/২০১৫খুব ভালো লাগলো দাদা।
-
অভিষেক মিত্র ০৯/১২/২০১৫অসাধারণ লাগল শুভাশিস দা।
-
দেবব্রত সান্যাল ০৯/১২/২০১৫খুব ভালো লেখা। এমন লেখার জন্যই রোজ অপেক্ষা করে থাকি।