শেষরাতের গল্প (শেষাংশ)
শেষরাতের গল্প
চলন্ত রিকশায় সিগারেট টানার ব্যাপারটা আসলেই অন্যরকম। তার উপর পূর্ণিমারাত, জনশূন্য রাস্তা, নিস্তব্ধতার গহীনে ঘুমন্ত শহর, ল্যাম্পপোস্টে বাতিগুলো জ্বলছে- আর আমি পায়ের উপর পা রেখে সিগারেট টানছি! সবমিলিয়ে একটা রাজকীয় অনুভূতি। এমন সময় রিকশা থামিয়ে তড়িঘড়ি করে নেমে- গড়গড় করে বমি করে দিলো রিকশাচালক! বমির উৎকট গন্ধ নাকে লাগতেই রিকশা থেকে নেমে পড়লাম। আমার রাজকীয় মুডের মায়রে বাপ অবস্থা হয়ে গেলো! রাস্তার পাশের নলকূপের পানিতে হাতমুখ ধুয়ে এসে রিকশাচালক বলছে-
- ' মামা, আইজকায় জীবনের পোতথোমবার বিদাশী মদ খাইচি তো, প্যাটে সয় নাই, বমি হয়া এক্কেরে সব ব্যারে গেলো! কিচু মনে করেন না মামা, ওটেন, গাড়িত ওটেন'। আমি কিছু না বলে রিকশায় উঠে বসলাম।
কিছুদূর এগিয়ে রিকশাচালক বলছে,
- মামা, আমি মুক্কুসুক্কু লোক ! কতা কইলে ভুল হয়া যাইতে পারে! যদিকাল কিচু মনত না নেন- তাইলে একনা কতা জিজ্ঞাস কইরবার চাই।
♪ কি জিজ্ঞেস করতে চাও মামা!? বলো, আমি কিছু মনে করবো না।
- হে হে হে মামা, এত রাইতোত ইস্টিশন যাবার ধইরচেন! নিচ্চয় কোন কারণ আছে!?
♪ হুম, আছে, কারণ তো কিছু একটা আছেই
- আমি বুইঝবার পারচি মামা, কী কারণ!
♪ কি বুঝেছো?
- হে হে হে... মাগি খুঁইজবার জন্যে যাবার ধইরচেন, তাই ন্যা মামা!?
♪ কিভাবে বুঝলে?
- মদ খাইচি তো মামা, বেরেনের সবকয়টা দুয়ার খুলি গেইচে! হে হে হে...।
রিকশাচালকের কথা আর হাসির ধরণ দেখে মনে হলো সে আমাকে মদখোর, মাগিবাজ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে! তার কথা শুনতে ভাল্লাগছে না! যদিও বলেছিলাম তার কথায় কিছু মনে করবো না, তবুও কিছু একটা মনে করেই ফেললাম! রিকশাটা স্টেশনের সামনে দাঁড়াতেই ওকে ছেড়ে দিলাম।
জোর খিদে পেয়েছে, প্লাটফর্মের ভেতরে দুটি চায়ের দোকান। এর একটিতে আমি প্রায়শই রাতে চা খেতে আসি, অন্যটিতে কখনো বসা হয়নি! কেন হয়নি!? সেটা জানিনা!!
দুইটা ড্রাই কেক, একটা কলা দিয়ে মাঝরাতের ভোজন শেষে এক কাপ চা, চায়ের সাথে সিগারেট, মনে হচ্ছে রাজভোগ!
একটা মেয়ে, পড়নে ময়লাটে সালোয়ারকামিজ, চুলগুলো রুক্ষ, কোটরাগত চোখের নীচে কালি পড়েছে! কতবছর ঘুমায় নি!? কে জানে? মনেহয় এইমাত্র কোন দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশভ্রমণ করে এলো! তবে শরীরেরগাঁট আছে। পাঁচ টাকা দামের একটি পাউরুটি নিয়ে চলে যাচ্ছে মেয়েটি। আমি তার পিছু নিলাম। নগ্ন পায়ে বিধ্বস্ত শরীরটাকে জোর করে সামনের দিকে টেনে নিয়ে পুরাতন প্লাটফর্মের শেডের আবছা আলোয় বসে কাগজে মোড়ানো পাউরুটি খেয়ে মসজিদের ওযুখানার কলে পানি পান করে আবার একই জায়গায় ফিরে আসলো। মসজিদের পানি শুধু ওযুর জন্য নয়, পান করাও যায়। অন্য ধর্মের লোকেরাও এখানে পানি পান করে কি? এই মেয়েটিই বা কোন ধর্মের!?
মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলাম। ওর সামনে দাঁড়াতেই বললো-
- কাম করবেন নাকি চোষানি!? কামের এক সটে ১০০, আর চোষানি ৫০।
♪ না, না! ওসব কিচ্ছু নয়, আপনার সাথে কিছু কথা বলবো। বিনিময়ে আপনার সময়ের দাম দিয়ে দেবো!
- কতা কইবেন, আর তার জন্ন্যে টাকাও দেমেন! বুইচ্চি আপনে ভালে মানুষ। তা কি কতা কইবেন!? মোর নাম কি, বাড়ি কোন্ঠে, এই লাইনত কেমন করি আইসলাম!? এইগুলাইতো!? এইগুলা কতা না ভাইজান- জেবনের ইতিহাস-
শোনেন ভাইজান, মোর নাম হাসি! বাড়ি লালমনিরহাট। মোর বয়স যকন ১৫ বচর, তকন মোর আপন মামা ফুসলিয়া ফুসলিয়া কাম করি প্যাট বানে দিচিলো! জানাজানি হবার ভয়ে মামা রমপুর আনিয়া ছাওয়া নষ্ট করি দেচে! তারপর মামার বন্দুর বাসাত কাজ দেচেলো, মামার বন্দু আর বন্দুর ব্যাটাও তিনটা বচর যা কইরবার তা কইরচে! মামাও মাজেমধ্যে আসিয়া খবর নিয়া যায়। কেমন করিয়া আবার প্যাট হয়া গেলো! মামার বন্দু ঔশদ দিয়া ছাওয়া নষ্ট করে দিবার পর যখন জানিবার পাইলো যে তার ব্যাটাও আমাক কাম করে! তখন বাড়ি থাকি বাইর করি দেচে! ওদি ফের আমার বাপটাও মরি গেলো! কোনটে যাবার জাগা নাই, কাওয়ো ফেরিতে ভাত না খোয়ায়! সবায় খালি দেহাটা চায়। তা যকন বুঝিবার পানু যে, মোর দেহাটার দাম আচে! তকন থাকিয়া দেহা ব্যাচেয়া খাই। এই হইল মোর কথা, আর কিছু কবার পাইম না! এলা ৫০টা টাকা দিয়া সারি যাও, কাশটোমার উলুকভুলুক কইরবার ধইরচে!"
ওর কথা শুনে আর কিছু বলতে পারলাম না!
প্লাটফর্মের মাঝামাঝি স্থানে যাত্রীদের বসার জন্য এখানে একধরণের ফিক্সড চেয়ারের ব্যবস্থা আছে। একসাথে বারোটি চেয়ার- বেশ চমৎকার এবং আরামদায়কও বটে। এখানেই বসে পড়লাম। বামদিকে মাথা ঘুরালেই মেয়েটাকে দেখা যায়। আমার সামনে তিনটি রেললাইন, তিন নম্বর রেললাইনের ওপর লালরঙের তিনটে মালগাড়ী। প্রথম দুটো ট্রাক, তৃতীয়টি বাসের মত, তবে জানালা নেই, শুধু দরজা আছে! দরজাটা খোলাই! কিন্তু ভেতরটা দেখা যায়না! চাঁদের আলোতে ইঞ্জিন বিহীন মালগাড়িগুলো দেখতে এতিমের মত মনেহয়! রেললাইনের ওইপাশে একটা মাঠ, মাঠের শেষে রাস্তা, গাছ, ল্যাম্পপোস্ট, ডানে বায়ে বড়বড় দুটি বিল্ডিং, বিল্ডিং ঘিরেছে বাউন্ডারি ওয়াল। একটি ওয়ালে বড়করে চিকামারা,
"নৌকা লাঙ্গল ধানেরশীষ,
সকল সাপের একই বিষ!"
বসেবসে এসব দেখছিলাম আর ঐ মেয়েটার কথা ভাবছিলাম। তার নিজের মামা, মামার বন্ধু, বন্ধুর ছেলে, এবোরশন.....!
খানিক বামদিকে মাথা ঘোরাতেই দেখি, মেয়েটা রেললাইনের দিকে, তার পেছন পেছন দুজন যুবক। ওরা তিন নম্বর রেললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দরজাযুক্ত মালগাড়িটির কাছে গেলো। ছেলেদুটো মেয়েটাকে পাঁজাকোলা করে মালগাড়ীতে উঠিয়ে দিয়ে নিজেরাও উঠে ভেতরের দিকে চলে গেলো! দরজাটা খোলাই আছে, তবু ভেতরকার কিছুই দেখা যাচ্ছেনা, ভেতরে আলো নেই!
মিনিট বিশেক পর যুবক দুজন একএক করে লাফিয়ে নামলো, আর নেমেই উল্টোদিকে ভোঁ দৌড়! মালগাড়ীর ভেতর থেকে মেয়েটি চেঁচিয়ে বলছে, -
-'ওই কুত্তার বাচ্চারা, আমার টাকা দিয়া যা। টাকা না দিয়া তোয়ার মা'র সাথে কাম করলিরে শুয়োরের বাচ্চারা, মাগির টাকা না দিয়া পালাইস! আল্লাহ তোদের বিচার করবে! তোদের ধোন খসি পড়বেরে মাগির বাচ্চারা!"
মেয়েটির চেঁচামেচি শুনে কোথা হতে একজন রেলওয়ে পুলিশ দৌড়ে এলো। এসেই শাসাচ্ছে-
- আজ এই প্রোস্টিটিউট মাগির পিঠের চামড়া তুলে নেবো! এতবার নিষেধ করার পরও স্টেশনে ব্যবসা করছে! "
পুলিশটি এক হাতে লাঠি আর অন্যহাতে টর্চলাইট জ্বালিয়ে কথাগুলি বলতে বলতে হাসিকে ধরার জন্য তিন নম্বর রেললাইনের দিকে দ্রুতপায়ে যাচ্ছেন। ওদিকে মেয়েটি তাড়াহুড়ো করে মালগাড়ী থেকে নামতে গিয়ে ধপাস করে মুখথুবড়ে পড়ে গেলো। সে উঠে পালাবার আগেই পুলিশটি তার কাছে পৌঁছে গিয়ে বলছে-
- এই বেশ্যামাগি, উঠ, উঠে দাঁড়া, এই ডান্ডা আজ তোর... য়ার ভেতর ঢুকিয়ে তোর সব সাধ মিটিয়ে দিয়ে- তারপর থানাপুলিশে খবর দিবো। এই বেশ্যামাগি, কুকাম করার জন্যে দুনিয়ায় আর জায়গা পাস নি! উঠ, এই উঠে দাঁড়া! তোকে আজ......... "
পুলিশটি বকে চলেছে অথচ মেয়েটি মাথা তুলছে না! পুলিশটি রেগে গিয়ে মেয়েটির শরীরে লাঠি দিয়ে গুঁতো মারলো, তবুও মেয়েটা নড়ছে না! এবার পুলিশটি চেঁচিয়ে উঠলো -
- এই, একিরে! এর মাথাতো পাথরে পড়ে ফেটে গেছে! হায় হায়... এখন কী করি!?'
আমি দ্রুত সেখানে গিয়ে পুলিশটিকে জিজ্ঞেস করলাম-
♪ কী হয়েছে মেয়েটার?
- আরে ভাই, এটা মেয়ে না! এটা একটা বেশ্যা!
♪ দেখুন তার মাথা ফেটে গেছে, হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করুন। নইলে মরে যাবে, আর মরে গেলে আপনাকেই জবাবদিহি করতে হবে!
- তা ঠিক বলেছেন, ঠিক বলেছে....ন"। মুখের কথা শেষ না হতেই তিনি স্টেশনমাস্টারের অফিসকক্ষের দিকে মুখ ফিরিয়ে জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন -
- এই মদন লাল, এই মদন লাল! মদন লাল!
ওদিক থেকে জবাব এলো - হা বাবু,.. হামি আছি বটে...!"
মদন লাল দৌড়ে এসে মেয়েটিকে উল্টিয়ে নিয়ে নাড়ীটীপে ধরলো। একবার ডানহাত আরেকবার বামহাত টিপে ধরলো। কিছুক্ষণ নাড়ীটেপার পর উঠে দাঁড়িয়ে বললো-
- হাজুর, ইয়ে ভ্রষ্টাচারী মাগিতো মারা গিয়া, ইহার নাড়ি খুঁজিয়া পাইতেছিক লাই! ইয়ে ছিনালী মারা গিয়া হাজুর!!"
পুলিশটি বললো-
* এই শালি মরে নাই, মরে নাই- মদন লাল! বলো যে, মরে গিয়ে বেঁচে গেছে!
আমি ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললাম -
♪ মেয়েটির নাম হাসি। বলুন- হাসি মরে নি, তাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে! আর খুনটা আমরাই করেছি!! এটা একটা ভয়ঙ্কর হত্যাকান্ড!
শেষবারেরমত হাসির মুখের দিকে চেয়ে দেখার সাহস হয়নি আমার। রাতের আধার আলোকছটা দেখে ভোর হতে চললো, ফজরের আযান শোনা যাচ্ছে। রেললাইনের পথ ধরে হাটতে হাটতে একটা কথা বারবার মনে পড়ছিলো-
" যেই বেশ্যাগো ইজ্জতের দাম দেওয়া তোমরা শিখো নাই, তার সময়ের দাম ক্যামনে দিবাইন!?
(সমাপ্ত)
চলন্ত রিকশায় সিগারেট টানার ব্যাপারটা আসলেই অন্যরকম। তার উপর পূর্ণিমারাত, জনশূন্য রাস্তা, নিস্তব্ধতার গহীনে ঘুমন্ত শহর, ল্যাম্পপোস্টে বাতিগুলো জ্বলছে- আর আমি পায়ের উপর পা রেখে সিগারেট টানছি! সবমিলিয়ে একটা রাজকীয় অনুভূতি। এমন সময় রিকশা থামিয়ে তড়িঘড়ি করে নেমে- গড়গড় করে বমি করে দিলো রিকশাচালক! বমির উৎকট গন্ধ নাকে লাগতেই রিকশা থেকে নেমে পড়লাম। আমার রাজকীয় মুডের মায়রে বাপ অবস্থা হয়ে গেলো! রাস্তার পাশের নলকূপের পানিতে হাতমুখ ধুয়ে এসে রিকশাচালক বলছে-
- ' মামা, আইজকায় জীবনের পোতথোমবার বিদাশী মদ খাইচি তো, প্যাটে সয় নাই, বমি হয়া এক্কেরে সব ব্যারে গেলো! কিচু মনে করেন না মামা, ওটেন, গাড়িত ওটেন'। আমি কিছু না বলে রিকশায় উঠে বসলাম।
কিছুদূর এগিয়ে রিকশাচালক বলছে,
- মামা, আমি মুক্কুসুক্কু লোক ! কতা কইলে ভুল হয়া যাইতে পারে! যদিকাল কিচু মনত না নেন- তাইলে একনা কতা জিজ্ঞাস কইরবার চাই।
♪ কি জিজ্ঞেস করতে চাও মামা!? বলো, আমি কিছু মনে করবো না।
- হে হে হে মামা, এত রাইতোত ইস্টিশন যাবার ধইরচেন! নিচ্চয় কোন কারণ আছে!?
♪ হুম, আছে, কারণ তো কিছু একটা আছেই
- আমি বুইঝবার পারচি মামা, কী কারণ!
♪ কি বুঝেছো?
- হে হে হে... মাগি খুঁইজবার জন্যে যাবার ধইরচেন, তাই ন্যা মামা!?
♪ কিভাবে বুঝলে?
- মদ খাইচি তো মামা, বেরেনের সবকয়টা দুয়ার খুলি গেইচে! হে হে হে...।
রিকশাচালকের কথা আর হাসির ধরণ দেখে মনে হলো সে আমাকে মদখোর, মাগিবাজ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে! তার কথা শুনতে ভাল্লাগছে না! যদিও বলেছিলাম তার কথায় কিছু মনে করবো না, তবুও কিছু একটা মনে করেই ফেললাম! রিকশাটা স্টেশনের সামনে দাঁড়াতেই ওকে ছেড়ে দিলাম।
জোর খিদে পেয়েছে, প্লাটফর্মের ভেতরে দুটি চায়ের দোকান। এর একটিতে আমি প্রায়শই রাতে চা খেতে আসি, অন্যটিতে কখনো বসা হয়নি! কেন হয়নি!? সেটা জানিনা!!
দুইটা ড্রাই কেক, একটা কলা দিয়ে মাঝরাতের ভোজন শেষে এক কাপ চা, চায়ের সাথে সিগারেট, মনে হচ্ছে রাজভোগ!
একটা মেয়ে, পড়নে ময়লাটে সালোয়ারকামিজ, চুলগুলো রুক্ষ, কোটরাগত চোখের নীচে কালি পড়েছে! কতবছর ঘুমায় নি!? কে জানে? মনেহয় এইমাত্র কোন দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশভ্রমণ করে এলো! তবে শরীরেরগাঁট আছে। পাঁচ টাকা দামের একটি পাউরুটি নিয়ে চলে যাচ্ছে মেয়েটি। আমি তার পিছু নিলাম। নগ্ন পায়ে বিধ্বস্ত শরীরটাকে জোর করে সামনের দিকে টেনে নিয়ে পুরাতন প্লাটফর্মের শেডের আবছা আলোয় বসে কাগজে মোড়ানো পাউরুটি খেয়ে মসজিদের ওযুখানার কলে পানি পান করে আবার একই জায়গায় ফিরে আসলো। মসজিদের পানি শুধু ওযুর জন্য নয়, পান করাও যায়। অন্য ধর্মের লোকেরাও এখানে পানি পান করে কি? এই মেয়েটিই বা কোন ধর্মের!?
মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলাম। ওর সামনে দাঁড়াতেই বললো-
- কাম করবেন নাকি চোষানি!? কামের এক সটে ১০০, আর চোষানি ৫০।
♪ না, না! ওসব কিচ্ছু নয়, আপনার সাথে কিছু কথা বলবো। বিনিময়ে আপনার সময়ের দাম দিয়ে দেবো!
- কতা কইবেন, আর তার জন্ন্যে টাকাও দেমেন! বুইচ্চি আপনে ভালে মানুষ। তা কি কতা কইবেন!? মোর নাম কি, বাড়ি কোন্ঠে, এই লাইনত কেমন করি আইসলাম!? এইগুলাইতো!? এইগুলা কতা না ভাইজান- জেবনের ইতিহাস-
শোনেন ভাইজান, মোর নাম হাসি! বাড়ি লালমনিরহাট। মোর বয়স যকন ১৫ বচর, তকন মোর আপন মামা ফুসলিয়া ফুসলিয়া কাম করি প্যাট বানে দিচিলো! জানাজানি হবার ভয়ে মামা রমপুর আনিয়া ছাওয়া নষ্ট করি দেচে! তারপর মামার বন্দুর বাসাত কাজ দেচেলো, মামার বন্দু আর বন্দুর ব্যাটাও তিনটা বচর যা কইরবার তা কইরচে! মামাও মাজেমধ্যে আসিয়া খবর নিয়া যায়। কেমন করিয়া আবার প্যাট হয়া গেলো! মামার বন্দু ঔশদ দিয়া ছাওয়া নষ্ট করে দিবার পর যখন জানিবার পাইলো যে তার ব্যাটাও আমাক কাম করে! তখন বাড়ি থাকি বাইর করি দেচে! ওদি ফের আমার বাপটাও মরি গেলো! কোনটে যাবার জাগা নাই, কাওয়ো ফেরিতে ভাত না খোয়ায়! সবায় খালি দেহাটা চায়। তা যকন বুঝিবার পানু যে, মোর দেহাটার দাম আচে! তকন থাকিয়া দেহা ব্যাচেয়া খাই। এই হইল মোর কথা, আর কিছু কবার পাইম না! এলা ৫০টা টাকা দিয়া সারি যাও, কাশটোমার উলুকভুলুক কইরবার ধইরচে!"
ওর কথা শুনে আর কিছু বলতে পারলাম না!
প্লাটফর্মের মাঝামাঝি স্থানে যাত্রীদের বসার জন্য এখানে একধরণের ফিক্সড চেয়ারের ব্যবস্থা আছে। একসাথে বারোটি চেয়ার- বেশ চমৎকার এবং আরামদায়কও বটে। এখানেই বসে পড়লাম। বামদিকে মাথা ঘুরালেই মেয়েটাকে দেখা যায়। আমার সামনে তিনটি রেললাইন, তিন নম্বর রেললাইনের ওপর লালরঙের তিনটে মালগাড়ী। প্রথম দুটো ট্রাক, তৃতীয়টি বাসের মত, তবে জানালা নেই, শুধু দরজা আছে! দরজাটা খোলাই! কিন্তু ভেতরটা দেখা যায়না! চাঁদের আলোতে ইঞ্জিন বিহীন মালগাড়িগুলো দেখতে এতিমের মত মনেহয়! রেললাইনের ওইপাশে একটা মাঠ, মাঠের শেষে রাস্তা, গাছ, ল্যাম্পপোস্ট, ডানে বায়ে বড়বড় দুটি বিল্ডিং, বিল্ডিং ঘিরেছে বাউন্ডারি ওয়াল। একটি ওয়ালে বড়করে চিকামারা,
"নৌকা লাঙ্গল ধানেরশীষ,
সকল সাপের একই বিষ!"
বসেবসে এসব দেখছিলাম আর ঐ মেয়েটার কথা ভাবছিলাম। তার নিজের মামা, মামার বন্ধু, বন্ধুর ছেলে, এবোরশন.....!
খানিক বামদিকে মাথা ঘোরাতেই দেখি, মেয়েটা রেললাইনের দিকে, তার পেছন পেছন দুজন যুবক। ওরা তিন নম্বর রেললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দরজাযুক্ত মালগাড়িটির কাছে গেলো। ছেলেদুটো মেয়েটাকে পাঁজাকোলা করে মালগাড়ীতে উঠিয়ে দিয়ে নিজেরাও উঠে ভেতরের দিকে চলে গেলো! দরজাটা খোলাই আছে, তবু ভেতরকার কিছুই দেখা যাচ্ছেনা, ভেতরে আলো নেই!
মিনিট বিশেক পর যুবক দুজন একএক করে লাফিয়ে নামলো, আর নেমেই উল্টোদিকে ভোঁ দৌড়! মালগাড়ীর ভেতর থেকে মেয়েটি চেঁচিয়ে বলছে, -
-'ওই কুত্তার বাচ্চারা, আমার টাকা দিয়া যা। টাকা না দিয়া তোয়ার মা'র সাথে কাম করলিরে শুয়োরের বাচ্চারা, মাগির টাকা না দিয়া পালাইস! আল্লাহ তোদের বিচার করবে! তোদের ধোন খসি পড়বেরে মাগির বাচ্চারা!"
মেয়েটির চেঁচামেচি শুনে কোথা হতে একজন রেলওয়ে পুলিশ দৌড়ে এলো। এসেই শাসাচ্ছে-
- আজ এই প্রোস্টিটিউট মাগির পিঠের চামড়া তুলে নেবো! এতবার নিষেধ করার পরও স্টেশনে ব্যবসা করছে! "
পুলিশটি এক হাতে লাঠি আর অন্যহাতে টর্চলাইট জ্বালিয়ে কথাগুলি বলতে বলতে হাসিকে ধরার জন্য তিন নম্বর রেললাইনের দিকে দ্রুতপায়ে যাচ্ছেন। ওদিকে মেয়েটি তাড়াহুড়ো করে মালগাড়ী থেকে নামতে গিয়ে ধপাস করে মুখথুবড়ে পড়ে গেলো। সে উঠে পালাবার আগেই পুলিশটি তার কাছে পৌঁছে গিয়ে বলছে-
- এই বেশ্যামাগি, উঠ, উঠে দাঁড়া, এই ডান্ডা আজ তোর... য়ার ভেতর ঢুকিয়ে তোর সব সাধ মিটিয়ে দিয়ে- তারপর থানাপুলিশে খবর দিবো। এই বেশ্যামাগি, কুকাম করার জন্যে দুনিয়ায় আর জায়গা পাস নি! উঠ, এই উঠে দাঁড়া! তোকে আজ......... "
পুলিশটি বকে চলেছে অথচ মেয়েটি মাথা তুলছে না! পুলিশটি রেগে গিয়ে মেয়েটির শরীরে লাঠি দিয়ে গুঁতো মারলো, তবুও মেয়েটা নড়ছে না! এবার পুলিশটি চেঁচিয়ে উঠলো -
- এই, একিরে! এর মাথাতো পাথরে পড়ে ফেটে গেছে! হায় হায়... এখন কী করি!?'
আমি দ্রুত সেখানে গিয়ে পুলিশটিকে জিজ্ঞেস করলাম-
♪ কী হয়েছে মেয়েটার?
- আরে ভাই, এটা মেয়ে না! এটা একটা বেশ্যা!
♪ দেখুন তার মাথা ফেটে গেছে, হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করুন। নইলে মরে যাবে, আর মরে গেলে আপনাকেই জবাবদিহি করতে হবে!
- তা ঠিক বলেছেন, ঠিক বলেছে....ন"। মুখের কথা শেষ না হতেই তিনি স্টেশনমাস্টারের অফিসকক্ষের দিকে মুখ ফিরিয়ে জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন -
- এই মদন লাল, এই মদন লাল! মদন লাল!
ওদিক থেকে জবাব এলো - হা বাবু,.. হামি আছি বটে...!"
মদন লাল দৌড়ে এসে মেয়েটিকে উল্টিয়ে নিয়ে নাড়ীটীপে ধরলো। একবার ডানহাত আরেকবার বামহাত টিপে ধরলো। কিছুক্ষণ নাড়ীটেপার পর উঠে দাঁড়িয়ে বললো-
- হাজুর, ইয়ে ভ্রষ্টাচারী মাগিতো মারা গিয়া, ইহার নাড়ি খুঁজিয়া পাইতেছিক লাই! ইয়ে ছিনালী মারা গিয়া হাজুর!!"
পুলিশটি বললো-
* এই শালি মরে নাই, মরে নাই- মদন লাল! বলো যে, মরে গিয়ে বেঁচে গেছে!
আমি ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললাম -
♪ মেয়েটির নাম হাসি। বলুন- হাসি মরে নি, তাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে! আর খুনটা আমরাই করেছি!! এটা একটা ভয়ঙ্কর হত্যাকান্ড!
শেষবারেরমত হাসির মুখের দিকে চেয়ে দেখার সাহস হয়নি আমার। রাতের আধার আলোকছটা দেখে ভোর হতে চললো, ফজরের আযান শোনা যাচ্ছে। রেললাইনের পথ ধরে হাটতে হাটতে একটা কথা বারবার মনে পড়ছিলো-
" যেই বেশ্যাগো ইজ্জতের দাম দেওয়া তোমরা শিখো নাই, তার সময়ের দাম ক্যামনে দিবাইন!?
(সমাপ্ত)
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোহন দাস (বিষাক্ত কবি) ২৯/০২/২০২০ভালো।।