www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বাঙ্গালী প্রকরণ

আমরা বাঙ্গালী! এ নিয়ে আমাদের কতটা গর্ব? সেটা বলে বোঝানো মুশকিল। নিজেদের বাঙ্গালীয়ানা প্রমাণ করতে হাজারো সূরে নিজেকে হাজির করার যে স্বভাব,এই স্বভাব আমরা বংশানুক্রমে পেয়েছি! আর তাই কোন একটা দিবস এলেই আমরা জেগে উঠি পুরোমাত্রায় বাঙ্গালী হবার জন্য! সেটা হতে পারে নবান্ন, নববর্ষ, বসন্তোৎসব কিংবা কোন জাতীয় দিবস। সেই দিনগুলিতে আমাদের বাঙ্গালীয়ানা পূর্ণতা পায় আপাদমস্তক। জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ এর অত্যন্ত শ্রোতাপ্রিয় একটা গান; "একদিন বাঙ্গালী ছিলাম রে!" গানের কথা যাই হোক, সূরটা যথার্থই!!!

ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস, মার্চ স্বাধীনতার, আগস্ট শোকের, ডিসেম্বর বিজয়ের। এই মাসগুলো এলেই আমাদের বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ জেগে ওঠে মনের অলিতে গলিতে! এই দিনগুলিতে বাঙ্গালী জাতিস্বত্তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই বীরদর্পে আমরা আবার বাঙ্গালী হয়ে উঠি!! পুরোমাস বাঙ্গালী থাকতে পারাটাও কিন্তু.........!
ঐ তখনো সেই গানের সূরটাই মনে পরে যায়, গানটা সত্যিই অসাধারণ! আদতে আমাদের চেতনায় যে বাঙ্গালী বাস করত, সেতো কবেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছে!

কারণ কি? কেন পাড়ি জমালো?
কারণ একটাই আমরা মার্কামারা বাঙ্গালী। বাঙ্গালীরা বিভিন্ন মার্কা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আর নিজেকে খাঁটি বাঙ্গালী প্রমাণ করার জন্য নিজের মার্কার স্বপক্ষে একই কথার গানে বিভিন্ন সূরের সৃষ্টি করে থাকে। সমপ্রকৃতির মার্কার লোকেরা আবার জোট গঠন করে। যেই মার্কার বাঙ্গালীদের সূর জনশ্রুতি অর্জন করে সেই মার্কার বাঙ্গালীগণ অন্য সকল মার্কার বাঙ্গালীদের নিয়ন্ত্রক হিসেবে ক্ষমতাবান হয়ে যায়।
যাহোক নৌকা, লাঙ্গল, ধানের শীষ, আর দাঁড়িপাল্লা এই চারটি বাঙ্গালী জাতির প্রধান মার্কা। শেষের দাঁড়িপাল্লা মার্কাটা অপয়া! এর সূর এখন আর প্রকাশ্যে কন্ঠে তোলা যায় না! এই সূর নিষিদ্ধতা দোষে দুষ্ট!! তবুও কিন্তু কখনো চুপিসারে কখনো মনেমনে এই মার্কার জয়গান করে- এমন বাঙ্গালীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এদের সূর তৈরীর প্রধান অস্ত্র হলো ধর্মান্ধতা! ধর্মান্ধ লোকেদের সরল বিশ্বাস এর মিশ্রণজাত কিছু তন্ত্রের দ্বারা বেশকিছু সুরেলা যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলো, কালেকালে তন্ত্রের ক্ষমতা অনুপযোগী হয়ে পরে। যার ফলে তাদের অবস্থা এখন আশংকাজনক!!! ধর্মীয় সূরের বিষয়টা একটু স্পর্শকাতর, তাই এটা নিয়ে অনেকেই আলোচনা করতে চায় না। আবার বেশী বিশ্লেষণ করতে গেলে নাস্তিক হয়ে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়। আসলে আমিও ধর্মভীরু, তবে ধার্মিক নই!!!

ধানের শীষ মার্কা বাঙ্গালী?
বর্তমানে এই মার্কার অন্তর্ভুক্ত বাঙ্গালীদের বাক স্বাধীনতা অক্ষমতারোগ এ আক্রান্ত!! এরা মস্তিষ্কহীন হয়ে গেছে। এই মার্কার বাঙ্গালীরা আদিকালে অস্বাভাবিক মস্তক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত বলে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়। সেই মাথা থেকেও বেশকিছু কার্যকরী এবং ভয়াবহ সূর তৈরীর যন্ত্র আবিষ্কার হয়েছিলো! যেই যন্ত্র দ্বারা উল্লেখযোগ্যহারে কোকিলাকন্ঠী সূরের সৃষ্টি হয়েছিলো। যন্ত্রের পরিচালকবৃন্দ আচমকা ভুল করায় তাদের ছন্দপতন হয়। ফলে তাদের সূরের শ্রোতাপ্রিয়তা গোহারা অবস্থায় পরে যায়, অবশেষে তাদের শ্রোতাপ্রিয়তা একেবারে অতলান্ত পৌঁছে গেছে।

লাঙ্গল মার্কা বাঙ্গালী?
এরা সকল মার্কার বাঙ্গালীদের নিকট সুপরিচিত। ক্ষমতাসীন মার্কার বাঙ্গালীদের সূরে সূরমিলিয়ে সময়োপযোগী সূর তৈরীর সুবিধা সবসময় নিয়ে থাকে। যুগের সাথে তালমিলিয়ে চলারমত সূর তৈরীর এক অভূতপূর্ব যন্ত্র আবিষ্কারের সক্ষমতাও অর্জন করেছে এই মার্কার বাঙ্গালীরা। যন্ত্রটি সৃষ্টিলগ্ন থেকেই পুরোপুরিভাবে সচল। এইভাবে চলতে চলতে এরা স্বভাবে জড়বস্তবাদী বাঙ্গালীতে পরিণত হয়েছে। তবে এই আচরণের পরিবর্তনে কখনো সূর তৈরীর কাজে কোনপ্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে বলে শোনা যায় নাই। শুধুমাত্র সূর কেটে না গেলেই এদের সব ঠিক থাকে।

নৌকা মার্কা বাঙ্গালী?
এরা বর্তমান ক্ষমতাসীন বাঙ্গালীর দল। এই মার্কার বাঙ্গালীদের তৈরিকৃত সূরের শ্রোতাপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে!! এরা যা কিছুই করুক, আর যে সূরেই গান গেয়ে যাক তাতে কারো কোন সমস্যা নাই। এঁদের গানের সূর যেমনি হোক তা মেনে নিতেই হবে! সমসাময়িক সময়ে এদের সূরের জনপ্রিয়তা হিসেব করার যোগ্যতা কারোরই নেই। তাছাড়া উপরের তিন মার্কার বাঙ্গালীদের উন্নয়নে এরা নতুন নতুন সূর তৈরীর কাজ করতে এতটাই ব্যস্ত যে নিজেদের দিকেও তাকানোর ফুরসত পায় না!! সবাইকে সূরের মূর্ছনায় ভাসিয়ে নেয়ার জন্য এরা সারাক্ষণ মেতে আছে নিজ দায়িত্বে!
ঠিক যেমনকরে ইতোপূর্বেকার ক্ষমতাসীন মার্কার বাঙ্গালীরা ভাসিয়েছিলো অন্য সবাইকে। আপাতদৃশ্যত মনে হচ্ছে নৌকা মার্কার বাঙ্গালীরা অনেকদিন পর্যন্ত সকল মার্কার বাঙ্গালীদের ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। কেননা ভাসিয়ে নেয়ার জন্য বেশকিছু নতুন নতুন সূর তৈরি করার যন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে, যেগুলো অন্য মার্কার বাঙ্গালীরা ইতোপূর্বে পারে নি! কেননা জনগণ তখনকার সূরে প্রজায় পরিণত হয় নি। অন্যদিকে অনান্য মার্কার লোকেদের পূর্বেকার ছন্দপতন হবার কারনে বাঙ্গালী শ্রোতাদর্শক এর যে পরিমাণ কর্ণকষ্ট হয়েছিলো তার প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ করে দিচ্ছে নিজেদের দায়িত্বশীলতা ঠিক রেখেই! তবে চিন্তার বিষয়, ঐ তিন মার্কার লোকেরা এদের আবিষ্কৃত যন্ত্রগুলোকে নিষ্কাম করার জন্য লেগে আছে, যেমন এরা ছিল ওদের পিছে!! এই স্বভাবটাও বাঙ্গালীর বংশানুক্রমেই পাওয়া!!

উপরোক্ত চারটি মার্কার বাঙ্গালী ছাড়াও আরো কয়েকটি মার্কার বাঙ্গালী আছে। এঁদের মধ্যে চুতিয়া মার্কা বাঙ্গালীরা উল্লেখযোগ্য। এরা প্রতিদিন গলাফাটিয়ে গান গাইছে, নতুন সূরও বাধছে, কিন্তু এঁদের কোন শ্রোতাপ্রিয়তা নাই। এদের গায়ক আর শ্রোতার সংখ্যা প্রায় সমান! যদিওবা দুই একজন চুতিয়া মার্কা শিল্পী সহসা শ্রোতাপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলে, তখন সে হারিয়ে যায়!! কোথায় হারিয়ে যায়? সেটা ইতিহাস সূত্রেও জানা যায় নি!!! আবার চুতিয়া মার্কা বাঙ্গালীরা হারিয়ে যাবার ভয়ে বা নিজের উদ্ভাবিত সূরের স্বীকৃতি লাভের আশায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বর্তমানে জনপ্রিয়তা অর্জনকারী ক্ষমতাসীন মার্কার বাঙ্গালদের সাথে মিশে গিয়ে নিজেদের মার্কা থেকে বিলীন হয়ে যায়।
তবুও আমরা গর্বিত, কেননা আমরা মার্কামারা বাঙ্গালী।।
**************************************************
বাঙ্গালী প্রকরণ/০১:৩৯/০২ মার্চ ২০১৮
ইবনে মিজান
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৬৫২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/০৩/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আমরা বাঙালি। আমাদের মনেপ্রাণে বাঙালি হতে হবে।
 
Quantcast