উলঙ্গ রাজার দেশে
উলঙ্গ রাজার দেশে
- ইবনে মিজান
এক ছিল রাজা, ভীষণ অত্যাচারী, বদমেজাজি। প্রজাদের কল্যাণের কথা শুধু মুখেই বলত, আদতে তার প্রজাকল্যাণের কোন চিন্তা কখনোই ছিল না। অসহায় প্রজাদের রক্তচুষে খাচ্ছিল প্রেতাত্মার মত।
প্রজারাও ভয়ে চুপচাপ ছিল, প্রতিবাদ করতে পারে নি।
যাহোক এবার রাজার মনে একটা অন্যরকম সাধ জাগল। সেটা হল, সে এমন একটা জামা পড়বে যা এই পৃথিবীতে আর কারোর কাছে থাকবে না। সেই অনুযায়ী দর্জিকে নির্দেশ দেয়া হল। নির্দেশের সাথে হুশিয়ারি ছিল এমন, 'যদি কারোর সাথে রাজার জামা মিলে যায় তাহলে তোমার গর্দান যাবে'! দর্জি ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। কি হবে সেই জামার ধরন?
সারাটা রাত নির্ঘুম কাটলো দর্জির। সকাল বেলা গেলেন রাজমহল, রাজাকে পরিয়ে দিলেন সেই অভিনব জামা, হাওয়ার জামা! জামা পরে রাজা ভীষণ খুশি, সভাষদগণও খুব খুশি হলেন। এবার রাজা রাজ্যের সবাইকে তার এই অভিনব হাওয়ার জামা দেখাতে গেলেন। রাজ্যের প্রজারাও বাহবা দিলেন!
কিন্তু রাজা যখন ফিরছিলেন তখন একটা শিশু বাচ্চা রাজাকে দেখে হো হো করে হাসছিল!
রাজা রেগে গিয়ে বলল: এই তোর এত বড় সাহস! তুই আমাকে দেখে হাসছিস?
শিশুটি বলল: হা হা হা রাজা মশাই না হেসে কি করব বলুন তো? আপনি যে উলঙ্গ! নিজেকে তামাশা বানিয়ে ফেলেছেন!
এর পরে সেই শিশুটিকে আর দেখা যায় নি। সে গল্প আমার জানা নেই.........!
পার্ট-২
হাওয়ার জামা পরে উলঙ্গ রাজা বেশ খুশিতেই ছিলেন। প্রজারা তার কাছে আসত আর প্রশংসা করত তার নতুন আবিষ্কৃত হাওয়ার জামার। দিকে দিকে রাজার জয়জয়কার! যেই দর্জির হাতে তৈরি হয়েছিল হাওয়ার জামা, সেই দর্জিকেও পুরস্কৃত করলেন রাজা। তাকে রাজ্যসভার মহামন্ত্রী করে নিলেন!
দর্জি খুশি হয়ে বলেছিল :" মহারাজ, আপনার দয়ার শরীর, মহারাজের জয় হোক, জয় উলঙ্গ রাজার জয়"
যাহোক, এবার প্রজাকুলের উন্নয়ন করার দিকে মনোযোগী হলেন উলঙ্গ রাজা। কিভাবে প্রজাকুলের উন্নয়ন করা যায়? তিনি ভাবলেন, ভাবলেন, ভাবলেন। অনেক ভেবেচিন্তেও কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অনান্য মন্ত্রী, উজির, সেনাপতিসহ অনেকেই অনেক মতামত দিলেন। কিন্তু রাজার কোনটাই পছন্দ হচ্ছিল না!
এমন সময় রাজাকে উদ্ধার করলেন নবনিযুক্ত মহামন্ত্রী!
সে বলল: মহারাজ, আপনার রাজ্যে কোন গরীব প্রজা থাকবে না। মহারাজের দেশে সবাই রাজা হবে।
উলঙ্গ রাজা: এইটা তুমি কি বলছ? সবাই রাজা হবে মানে! তাহলে আমি কে?
মহামন্ত্রী: জ্বি, মহারাজ, আমাদের রাজ্যের সকলেই হাওয়ার জামা পরবে!
উলঙ্গ রাজা: ও তাই বলো। তাতে কী লাভ হবে মহামন্ত্রী?
মহামন্ত্রী: মহারাজ, ভেবে দেখুন, রাজ্যের সকল প্রজাকে হাওয়ার জামা পরাতে রাজকোষ থেকে এক মুদ্রাও ব্যয় করতে হবে না!
উলঙ্গ রাজা: আর কী লাভ?
মহামন্ত্রী: আমাদের মহারাজ যে পোশাক পরেন তাঁর প্রজারাও একই পোষাক পরবেন। আহা! পুরা রাজ্যই হবে সুখী! প্রজারা খুশি থাকবে!
উলঙ্গ রাজা: বাহ বাহ বাহ বাহ! তুমি আমাকে বাঁচালে মহামন্ত্রী! এই হাওয়ার জামা আজ থেকে রাজ্যের সকল প্রজা পরিধান করবে। আজ থেকে এটাই হবে এই রাজ্যের সকল প্রজার পোষাক।
সেইদিন থেকেই উলঙ্গ রাজার দেশের সকল প্রজা হাওয়ার জামা পরছে! রাজ্যসভা আর রাজ্যের সকল প্রজারা ভীষণ খুশি; তারা সবাই বেশ সুখেই দিন অতিবাহিত করছে। সবার মুখে শুধু রাজার জয়জয়কার!
উলঙ্গ রাজার স্তুতিতে তৈরি হল একটি গান-
" আমরা সবাই রাজা
আমাদের রাজার রাজত্বে"
"জয়, উলঙ্গ রাজের জয়"
[ক্রাইম সম্পর্কিত একটি নাটক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রচিত ]
- ইবনে মিজান
এক ছিল রাজা, ভীষণ অত্যাচারী, বদমেজাজি। প্রজাদের কল্যাণের কথা শুধু মুখেই বলত, আদতে তার প্রজাকল্যাণের কোন চিন্তা কখনোই ছিল না। অসহায় প্রজাদের রক্তচুষে খাচ্ছিল প্রেতাত্মার মত।
প্রজারাও ভয়ে চুপচাপ ছিল, প্রতিবাদ করতে পারে নি।
যাহোক এবার রাজার মনে একটা অন্যরকম সাধ জাগল। সেটা হল, সে এমন একটা জামা পড়বে যা এই পৃথিবীতে আর কারোর কাছে থাকবে না। সেই অনুযায়ী দর্জিকে নির্দেশ দেয়া হল। নির্দেশের সাথে হুশিয়ারি ছিল এমন, 'যদি কারোর সাথে রাজার জামা মিলে যায় তাহলে তোমার গর্দান যাবে'! দর্জি ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। কি হবে সেই জামার ধরন?
সারাটা রাত নির্ঘুম কাটলো দর্জির। সকাল বেলা গেলেন রাজমহল, রাজাকে পরিয়ে দিলেন সেই অভিনব জামা, হাওয়ার জামা! জামা পরে রাজা ভীষণ খুশি, সভাষদগণও খুব খুশি হলেন। এবার রাজা রাজ্যের সবাইকে তার এই অভিনব হাওয়ার জামা দেখাতে গেলেন। রাজ্যের প্রজারাও বাহবা দিলেন!
কিন্তু রাজা যখন ফিরছিলেন তখন একটা শিশু বাচ্চা রাজাকে দেখে হো হো করে হাসছিল!
রাজা রেগে গিয়ে বলল: এই তোর এত বড় সাহস! তুই আমাকে দেখে হাসছিস?
শিশুটি বলল: হা হা হা রাজা মশাই না হেসে কি করব বলুন তো? আপনি যে উলঙ্গ! নিজেকে তামাশা বানিয়ে ফেলেছেন!
এর পরে সেই শিশুটিকে আর দেখা যায় নি। সে গল্প আমার জানা নেই.........!
পার্ট-২
হাওয়ার জামা পরে উলঙ্গ রাজা বেশ খুশিতেই ছিলেন। প্রজারা তার কাছে আসত আর প্রশংসা করত তার নতুন আবিষ্কৃত হাওয়ার জামার। দিকে দিকে রাজার জয়জয়কার! যেই দর্জির হাতে তৈরি হয়েছিল হাওয়ার জামা, সেই দর্জিকেও পুরস্কৃত করলেন রাজা। তাকে রাজ্যসভার মহামন্ত্রী করে নিলেন!
দর্জি খুশি হয়ে বলেছিল :" মহারাজ, আপনার দয়ার শরীর, মহারাজের জয় হোক, জয় উলঙ্গ রাজার জয়"
যাহোক, এবার প্রজাকুলের উন্নয়ন করার দিকে মনোযোগী হলেন উলঙ্গ রাজা। কিভাবে প্রজাকুলের উন্নয়ন করা যায়? তিনি ভাবলেন, ভাবলেন, ভাবলেন। অনেক ভেবেচিন্তেও কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অনান্য মন্ত্রী, উজির, সেনাপতিসহ অনেকেই অনেক মতামত দিলেন। কিন্তু রাজার কোনটাই পছন্দ হচ্ছিল না!
এমন সময় রাজাকে উদ্ধার করলেন নবনিযুক্ত মহামন্ত্রী!
সে বলল: মহারাজ, আপনার রাজ্যে কোন গরীব প্রজা থাকবে না। মহারাজের দেশে সবাই রাজা হবে।
উলঙ্গ রাজা: এইটা তুমি কি বলছ? সবাই রাজা হবে মানে! তাহলে আমি কে?
মহামন্ত্রী: জ্বি, মহারাজ, আমাদের রাজ্যের সকলেই হাওয়ার জামা পরবে!
উলঙ্গ রাজা: ও তাই বলো। তাতে কী লাভ হবে মহামন্ত্রী?
মহামন্ত্রী: মহারাজ, ভেবে দেখুন, রাজ্যের সকল প্রজাকে হাওয়ার জামা পরাতে রাজকোষ থেকে এক মুদ্রাও ব্যয় করতে হবে না!
উলঙ্গ রাজা: আর কী লাভ?
মহামন্ত্রী: আমাদের মহারাজ যে পোশাক পরেন তাঁর প্রজারাও একই পোষাক পরবেন। আহা! পুরা রাজ্যই হবে সুখী! প্রজারা খুশি থাকবে!
উলঙ্গ রাজা: বাহ বাহ বাহ বাহ! তুমি আমাকে বাঁচালে মহামন্ত্রী! এই হাওয়ার জামা আজ থেকে রাজ্যের সকল প্রজা পরিধান করবে। আজ থেকে এটাই হবে এই রাজ্যের সকল প্রজার পোষাক।
সেইদিন থেকেই উলঙ্গ রাজার দেশের সকল প্রজা হাওয়ার জামা পরছে! রাজ্যসভা আর রাজ্যের সকল প্রজারা ভীষণ খুশি; তারা সবাই বেশ সুখেই দিন অতিবাহিত করছে। সবার মুখে শুধু রাজার জয়জয়কার!
উলঙ্গ রাজার স্তুতিতে তৈরি হল একটি গান-
" আমরা সবাই রাজা
আমাদের রাজার রাজত্বে"
"জয়, উলঙ্গ রাজের জয়"
[ক্রাইম সম্পর্কিত একটি নাটক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রচিত ]
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পবিত্র চক্রবর্তী ১৬/০৪/২০১৮ভালো লাগলো । সম্ভব হলে আমার লেখা পড়বেন ॥