www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বার্থপর

দুপুরের খাওয়া শেষ করে বিছানার উপর বসে আছি, হয়ত ভাবছিলাম কোনও কথা । এমন সময় মিনি কোথা থেকে এসে একলাফে বিছানায় ও তারপর আমার কোলে এসে বসল । বুঝতে পারলাম কোনও এক বিশেষ কারন বসত খুব ভয় পেয়েছে মিনি । ওর শরীরের কাঁপুনিই ওর ভীরুতার পরিচয় দিচ্ছিল । ইতিমধ্যে বলে রাখি মিনি হল আমার ঠাকুমার পোষ্য বিড়াল । ঠাকুমার জীবজন্তু প্রতিপালনের ইচ্ছা ছিল প্রবল । তিনিই বিড়ালটির সাধ করে নাম রেখেছিলেন মিনি ।আর কেবল এই একটি ব্যাপারেই আমায় ছাড়া পরিবারের বাকি সকল সদস্যের সাথে প্রায় প্রতিদিনই কথা কাটাকাটি চলত ঠাকুমার । ঠাকুমা পরলোক গত হওয়ার পর পরিবারের কিছু সদস্য মিনিকে তাড়িয়েও দিতে চেয়েছিল, তবে আমার জেদ, ও ঠাকুমার রেখে যাওয়া একটি জীবন্ত স্মৃতির কথা মাথায় রেখে তা আর হয়ে ওঠেনি । তাই তারপর থেকেই মিনি আমাদের পরিবারের এক সদস্য স্বরূপ হয়ে যায় । মিনির ভয় পাওয়ার কারন জানার কৌতুহল বসত মিনিকে কোলে নিয়েই ঘরের বাইরে বেরোলাম । কিন্তু ভয় পাওয়ার সেরকম কোনও কারন চোখে পড়ল না । যেটা চোখে পড়ল সেটা ঘরের ভিতরে । ঘরে প্রবেশের পর দেখতে পেলাম, শোবার ঘরের জানালার বাইরের দিকে রাখা ছিল একটি শাবল, সেটি নিচে পড়ে গেছে । শাবলটি তুলে পুনরায় যথা স্থানে রাখার পর আমার চোখ গেল উপরের ছাদের দিকে । দেখলাম, একটি চড়ুই পাখি ঘরের উপরের ঘুলঘুলিতে বাসা বাঁধার চেষ্টা করছে । ইতিমধ্যেই খেয়াল করলাম মিনির চোখও চলে গেছে পাখিটির দিকে । এখন আমার আর মিনির ভয়ের কারন বুঝতে বাকি রইলো না । বেস ভালোভাবেই বুঝতে পারলাম মিনি এই চড়ুইটিকে প্রথমবার দেখছে না । এর আগেও চড়ুইটি তার দৃষ্টিগোচর হয়েছে । আর হয়তো তাকেই নিজের খাদ্য হিসাবে বেছে নিয়ে রীতিমতো ঝাঁপ দিয়েছিল চড়ুইটির দিকে; নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যায় নীচে,ও তখনই জানালার পাশে রাখা শাবলের সাথে সংঘর্ষ হয় তার , যার জন্য শাবলটি নীচে পড়ে যায় । আর সেই জন্যই মিনি ভয় পায় । ঘরের ভিতরের সিলিং ফ্যানটি খুব জোরে চলার কারণেই হয়ত সেই সময় বাইরের শব্দগুলি আমার কানে এসে পৌঁছায়নি তখন । মিনিকে ঘরে এনে শান্ত করার চেষ্টা করলাম । ক্ষণিক পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে মিনি আপনা থেকেই শান্ত হয়ে গেল, তবে কোল থেকে নামতে চাইল না । বুজতে পারলাম , মিনি এখনও বেস কিছুটা সময় আমার সাথে কাটাতে চায় । আমিও তাই তাকে আর জোর করলাম না । আর এমনিতেও দুপুরে খাওয়ার পর যে ঘুমের রেশ আসে সেটিও কেটে গেছে । তাই মিনির সাথে সময় কাটানোর জন্য আর কোনও বাধা নেই ।
প্রায় ঘন্টাখানেক মিনি আমার কোলে একইভাবে শুয়ে থাকল । তারপর নিজে থেকেই উঠে চলে গেল ঘরের বাইরে । জানালা দিয়ে তার দিকে লক্ষ রাখলাম, সে আবারও চড়ুইটিকে আক্রমণ করে কিনা তা দেখার জন্য । না করল না , শুধু চড়ুইটির দিকে একবার তাকাল মাত্র । তারপর সোজা চলে গেল বাইরের দিকে । বুঝলাম সে বুঝে গেছে চড়ুইটি তার নাগালের বাইরে । তবে লোভ কি কখনও কেউ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে ! পৃথিবীর শ্রেষ্ট জীব মানুষই অনেক সময় নিজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, আর এ তো কেবলমাত্র একটি বিড়াল । তাই পরিবারের এই সদস্যটির কথা চিন্তা করে কিছুটা স্বার্থপরের মতোই চড়ুইটির কষ্ট করে অর্ধেক বানানো বাসাটি ভেঙে দিলাম তখনই ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮২২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/১০/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast