বিভীষিকাময় রাত
সন্ধ্যায় বল্টুদার চায়ের দোকানে বসে এক কাপ চা খাওয়া আমার নিত্যদিনের অভ্যাস । বলা বাহুল্য পাড়ার সমস্ত চায়ের দোকান ঘুরলেও বল্টুদার হাতে তৈরি চায়ের মত চা আর অন্য কোনও দোকানে পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে বেস কিছুটা সন্দেহ রয়েছে । বল্টুদা বেস মিশুকে মানুষ । কিছুটা সেই কারণেই অন্যান্য দোকানের চেয়ে তার দোকানেই খরিদ্দারের ভীর একটু বেশিই হয় । সন্ধ্যায় পাড়ার বহু জ্ঞানি-গুনি ব্যক্তির আবির্ভাবও হয় বটে সেখানে । যদিও তাদের জ্ঞান, কাগজের সীমানা ছাড়াতে পারেনি কখনওই ।
সেদিন সারাদিনের কাজ শেষ করে উঠতে বেস দেরি হয়ে গেল । আন্দাজ করেছিলাম জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের জ্ঞান প্রদর্শনী সভা শুরু হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে । তবে আজ গিয়ে কিছুটা হতভম্বই হলাম । কারণ যেই স্থানটি তর্ক-বিতর্কের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল, আজ সেই স্থানটিতে বসেছে হাসি-ঠাট্টার আসর । বেস আগ্রহের সাথে কাছে এগিয়ে যেতেই শ্যামল বলে উঠল- "আরে আয় আয় । বস এখানে । আজ যে আসতে এত দেরি হল..!!"
" আর বলিস না ; ভীষণ কাজের চাপ ছিল আজ , কাজ ছাড়তে তাই একটু দেরি হয়ে গেল । তা এখানে আজ চলছে টা কি.?" -
প্রশ্ন করলাম শ্যামল কে ।যে উত্তরটি আমার কানে এল তাতে আমিও আর নিজের হাসি কে লুকিয়ে রাখতে পারলাম না ।
পাড়ার সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি শ্রীমান 'চন্ডী বাবু' নাকি রাস্তায় সাক্ষাত হওয়া এক অপরিচিত ব্রাহ্মণকে 500 টাকা দিয়ে এসেছে আর তার বদলে নিয়ে এসেছে একটি মাদুলি , যেটা গলায় ঝুলিয়ে রাখলে নাকি তাঁকে কখনও কোনো প্রকার অলৌকিক বিপদের সম্মুখীন হতে হবে না । আর এই কথাটি যখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে শোনান তখনই তাঁর স্ত্রী ঝাঁটা হাতে তাঁর উপর চড়াও হন ।- ঠিক এই বিষয়টিকে নিয়েই বসেছিল আজ সন্ধ্যার আসর । নেপালদা বল্টুদাকে একটা চা দিয়ে যেতে বলল আমার জন্য । বল্টুদার আঁচের উনুনে জলটা ফুটতে থাকল আর সেইসঙ্গে চলতে থাকল আমাদের রসিকতা ।ঠিক এমন সময় একটু দূরের দিকে চোখ যেতেই দেখতে পেলাম একটি অতিকায় শীর্ণ শরীর রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছে । প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও, পরে চিনতে পারলাম । এত আমাদের সমরেশ দা । বহুকাল বাদে আবার ফিরে এসেছে গ্রামে । আন্দাজ মোটামুটি 5 বছর ।
ডাক দিলাম-" সমরেশ দা, আরে ও সমরেশ দা , চললে কোথায়. ? এস, চা খেয়ে যাও এক কাপ ।" সমরেশ দা সামনে এগিয়ে এসে চলার অবলম্বন দুটিকে দোকানের একপাশে রেখে আমাদের কাছে বসল । আমি তাঁর জন্য একটি চায়ের অর্ডার করলাম ।
" কেমন আছ সমরেশ দা ? এখানে আসলে কবে.? বাড়ির সকালে ভালো তো..!" - ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে শুরু হল তাঁর সাথে কথাবার্তা । মিনিট পাঁচেক আলাপ আলোচনার পর আমাদের আজকের সভার প্রসঙ্গটাও তুলে ধরলাম তাঁর কাছে । তবে বেশ কিছু টা অবাক হলাম । যে প্রসঙ্গ সভার প্রতিটি মানুষকে হাসিয়ে তুলেছিল সেই প্রসঙ্গ সমরেশ দার মুখে বিন্দুমাত্র হাসির রেখা টানতে পারল না । বরং কিছুটা হতাশার ঢেউ খেলে গেল তাঁর চেহারায় ।আর তাঁর মুখ থেকে বার হয়ে এল আমাদের আচরণের বিরোধী কিছু শব্দ ।
-" যে জিনিস জানিস না সেই জিনিস নিয়ে ঠাট্টা করিস না । এর ফল কিন্তু বেশিরভাগ সময় খারাপই হয় ।"
ঠাট্টা-তামাশা থামিয়ে কিছু জিজ্ঞাস্য চোখে তাকালাম তাঁর দিকে । ইতিমধ্যে বল্টুদা চা দিয়ে গেছে আমাদের দুজন কে । আমার চোখের ইশারা বুঝতে পেরেই হয়ত সমরেশ দা বলে উঠলেন -" আমার সাথেও ঠিক এমনটাই হয়েছিল । তাই তোদের কেও সাবধান করে দিলাম ।" এবারে আমার সাথে সাথে সভার বাকি সকল সদস্যদের ও ঘটনাটি শোনার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে উঠল । পেয়ালায় প্রথম চুমুক দিয়ে ঘটনাটির বিস্তারিত রূপ শুরু করলেন সমরেশ দা । "তখন আমার বয়স 19 কি 20 হবে । প্রচণ্ড ডানপিটে ছিলাম তখন । তখন আর এখন কার মতো প্রতি বাড়িতে ইলেকট্রিকের ব্যবস্থা ছিল না । দু-একটি বাড়িতে ছিল বটে,তবে আমাদের বাড়ি সেই তালিকায় পড়ে না । এখন সন্ধ্যা নামলেই সকলে সুইচ টা অন্ করে রিমোট টা হাতে নিয়েই বসে পড়ে সামনে রাখা বোকা বাস্কটির সামনে । আমাদের জীবনে এই সব কিছুই ছিল না । তখন সন্ধ্যা নামলে পাড়ার সকলে একসাথে উঠানে বসে নানান ধরনের গল্প, গানের লড়াই- এই সবেই সন্ধ্যাটা কাটিয়ে দিতাম । সামনে জ্বলত একটি টিমটিমে লন্ঠন ।
সময় টা ছিল তখন গ্রীষ্মকাল । দিনটা শনিবার । সেদিন সন্ধ্যায় ফুটবল খেলা শেষ করে বাসায় ফিরেছি । প্রতিদিনের মত উঠানে বসেছিলাম গল্প করার জন্য । এমন সময় ঘর থেকে মার ডাক এল । মাছ কিনতে যেতে হবে বাজারে । কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম তখন মার কথা শুনে । এখন যাব কিনা মাছ আনতে. ! এই গাঢ় অন্ধকারে .! প্রথমে রাজি হলাম না , কিন্তু পরে মায়ের কথায় যেতে হল । তখন আমি যেমন ছিলাম ডানপিটে ঠিক ততটাই ছিলাম সাহসীও ।তাই তখনই মাছ কেনার পয়সা, হাত ব্যাগ ও টিমটিমে লন্ঠনটি হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম । প্রায় দুই কিলোমিটারের ফাঁকা মাঠের পথ । তখন অবশ্য ফাঁকা বলা চলে না কারণ, গম শস্যে পরিপূর্ণ ছিল তখনকার মাঠ গুলি । যাই হোক, শুরু করলাম পথ চলতে । ফেরার পথে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল আমার সাথে ।মাঠের রাস্তায় হেঁটে চলেছি, তবুও যেই সময় যতখানি পথ অতিক্রম করার কথা ততখানি তো হচ্ছেই না উপরন্তু যেন মনে হচ্ছে আমি একই স্থানে হেঁটে চলেছি । কিছুটা রেগে গিয়েই আরও জোরে চলতে শুরু করলাম । কিন্তু লাভ কিছুই হল না । আমি সেই একই স্থানে হেঁটে চলেছি । হাঁটা থামিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম আমার সাথে হচ্ছে টা কি ! ঠিক এমন সময় একটি কথা মনে আসতেই আমার সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল। নিজের ধারনাকে ভুল প্রমাণের চেষ্টায় চারপাশটা বারেবারে দেখতে থাকলাম । কিন্তু না , আমার ধারণা এতটুকুও ভুল ছিল না । এই মূহূর্তে আমি মাঠের যে স্থানে রয়েছি ঠিক তার পাশেই রয়েছে একটি 'ভাগাড়' । যেন নাম না জানা কোনো বিপদের আতঙ্কে আমি প্রানপনে দৌড় দিলাম । কিন্তু কোনও লাভ হল না । যখন প্রায় আমার হাঁপ ধরে গেল তখন একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটু বসলাম ও বুঝতে পারলাম আমি সেই একই স্থানে রয়েছি । ইতিমধ্যে পথের পাশের ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ও মাঠের শীতল হাওয়া আমার এই করুন অবস্থা কে আরও করুন করে তুলল । ছোটবেলায় মায়ের মুখে শুনেছিলাম রাম নাম জপ করলে নাকি এই ধরনের অলৌকিক সমস্ত বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । কিন্তু সেই মুহূর্তটি এতটাই বিভিষিকা ময় ছিল যে মুখ দিয়ে কোনও প্রকার শব্দ আমার বার হল না । যেন কোনও অদৃশ্য আবরণ আমার বাকশক্তি রুদ্ধ করে দিয়েছেল সেসময় । "
চায়ের কাপের শেষ চুমুকটি দিয়ে কাপ টিকে একপাশে রেখে দিল সমরেশ দা । শ্যামল এর থেকে একটি সিগারেট চেয়ে সেটিতে আগুন লাগাল । পরবর্তী ঘটনা জানার ইচ্ছা ছিল আমার প্রবল । তাই পরবর্তী ঘটনার জন্য তাঁর কাছে আবারও বেস কঔতুহল সহকারে অনুরোধ রাখলাম -" তারপর, তারপর কি হল সমরেশ দা ?"
সমরেশ দা একটু হেসে সিগারেটের দুটি রিং পরপর ছেড়ে আবার বলতে শুরু করল-
" এই অসহায় অবস্থায় কেবল মৃত্যুর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না আমার কাছে । তাই হতাশ হয়ে আমার পরিবারের আপনজন ও পরিচিত সকল মানুষদের কথা মনে করেছিলাম, ঠিক এমন সময় একটি অপরিচিত ,ভয়ানক কন্ঠস্বর এসে প্রবেশ করল আমার কানে । কন্ঠস্বর টি এমনই যে সেসময় তার অর্থ খুঁজে বের করতে পারলাম না । তবে দু-তিনবার এই একই কন্ঠস্বর পরপর কানে আসায় এখন বুঝতে পারলাম সেই কথার অর্থ কি ..! কন্ঠস্বর টি যে ঠিক আমার পাশ থেকেই আসছিল সে ব্যপারে সন্দেহ নেই । তবে এই অপরিচিত কন্ঠস্বর আর অলক্ষে থাকা ব্যক্তিটি আমার থেকে কেবল মাত্র একটি মাছ নেওয়ার জন্য আমায় এইভাবে বন্দি বানিয়েছে সেকথা শোনার পর এই ভয়ঙ্কর রাতে ও আমার একটু হাসির সাথে রাগও এল প্রবল ।
সাহস করে বলে উঠলাম -' আমায় আগে আমার বাসায় পৌঁছে দে তবেই তোকে আমি মাছ দেব ।' কথাটি শেষ না হতে হতে অনুভব করলাম একটি গাছের মতো কোনও অদৃশ্য বস্ত আমায় তুলে প্রথম পলক পড়ার আগেই নিয়ে এসে উপস্থিত করল একেবারে আমাদের উঠানে । তাঁকে বললাম -' তুই এখানেই দাঁড়া আমি মাছটা খুলে নিয়ে নিয়ে আসছি । তরপর তোকে একটা মাছ দিয়ে যাব ।' সেও রাজি হয়ে গেল আমার কথায় । এখন আমি বাসার ভিতর । তাই সাহস কিছুটা হলেও বেড়েছে আমার । তাই এখন সেই অপরিচিত ব্যক্তিটিকে কেনা মাছ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না । দরজার পাশে রাখা একটি আঁশ বটি নিয়ে আড়াল থেকে তাঁকে ডাকলাম -' এই নে ধর মাছটা ।' মাছটি নেওয়ার জন্য যেই না হাতটি বাড়াল সে । এখন স্পষ্ট তার হাতটা দেখতে পেলাম । দেখলাম হাতটিকে মাংসের বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব নেই । হাতটি দেখতে অনেকটা ভেঙে যাওয়া টগর গাছের মোটা ডাল গুলির স্বরূপ । হাতটি আমার চোখের সামনে আসা মাত্র আর সময় নষ্ট না করে প্রচণ্ড জোরে আঁশ বটি করে একটি কোপ দিলাম তাঁর হাতের উপর । নিমেষে হাতটি খসে পড়ল মাটিতে । আর কয়েক মুহূর্তের জন্য শুনতে পেলাম সেই অস্পষ্ট ভাষার কন্ঠস্বর । সেই ব্যক্তিটি চলে যাচ্ছে আমাদের উঠান ছেড়ে, তবে সে যে রীতিমতো আমার উপর ক্ষুব্ধ আর আমাদের পরবর্তী সাক্ষাত্ যে আমার পক্ষে ভালো হবে না, তা বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হয়নি আমার । মাকে আর সেই ঘটনার কথা জানালাম না । কারনটা নিশ্চিত , জানলে আর মা হয়তো কখনওই সন্ধ্যায় বাইরে যেতে দিত না । সেই রাতে অনেকক্ষণ ঘুম আসেনি । ভোরের দিকটায় একটু এসেছিল বটে, তবে তা খুবই অল্প সময়ের জন্য । ঘুম যখন ভাঙল তখন ভোরের আলো ফুটে গেছে । দরজাটা খুলে বাইরে পা রেখেছি মাত্র এমন সময় চোখ পড়ল একটি অদ্ভুত বস্তুর উপর । দরজার ঠিক বাইরের পড়ে রয়েছে প্রায় 30 ইঞ্চি সমান লম্বা একটুকরো কয়লাখন্ড ।"
সিগারেটা শেষ করে করে সমরেশ দা একটু জল খেয়ে নিলেন । নেপাল দা বলে উঠল-" তারপর কি আপনার সাথে আর তার দেখা হয়েছিল ?"
" হ্যাঁ হয়েছিল বইকী । সেই দ্বিতীয় সাক্ষাত্ই তো আমার জীবনের এই অবস্থার জন্য দায়ি । তবে এই বিপদের ইঙ্গিত 2দিন আগেই পেয়েছিলাম । এখন আপশোস করি । যদিই ভদ্রলোকটির কথাটা একটু শুনতাম. !"- উত্তর দিল সমরেশ দা ।আমরা আবারও সমরেশ দার দিকে তাকালাম । সমরেশ দা বলল শোন তবে - " সেই রাত টার পর প্রায় একমাস পার হয়ে গেছে । সেদিন রাস্তা দিয়ে 2 জনে হেঁটে চলেছি । আমি আর নিখিল । এমন সময় এক সন্ন্যাসির সাথে দেখা । আমরা চলে যাচ্ছিলাম পাশ দিয়ে, তিনিই আমকে ডাক দিলেন । তিনি কথপোকথনেই আমায় বুঝিয়ে দেন যে আমার আগামী তিনদিনের মধ্যে বড় কোনও বিপদ রয়েছে । আমি যেন সাবধানে থাকি । আমরা সেময় তার কথা গ্রাহ্য করিনি ।তবে তাঁর কথায় যে এতটুকু মিথ্যা ছিল না তা বুঝতে পারলাম 2 দিন পরেই । সেদিন কোনও এক কারণ বসত বাজারে গিয়েছিলাম । ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় । মাঠের পথ ধরেই বাসায় ফিরছিলাম । তবে মাঠের সেই স্থানে আসা মাত্রই পা পিছলে পড়ে গেলাম । শত চেষ্টাতেও আর উঠতে পারলাম না । এরই মধ্যে বুঝতে পারলাম আমার মনে সেই দিনের ঘটনাগুলি আবার বাসা বাঁধতে শুরু করেছে ।আমার সারা শরীর থেকে ঘাম বেরোতে শুরু করেছে । কি করব- কিভাবে উদ্ধার পাব ভাবছি, ঠিক এমন সময় প্রচণ্ড জোরে একটি আঘাত এল আমার পায়ের উপর । যেন মনে হল কেউ মোটা গাছের ডাল দিয়ে আঘাত করল আমার পায়ে । যন্ত্রণায় ছটপট করতে শুরু করলাম আমি । প্রথম আঘাতটা সামলাতে যাব এমন সময় পরক্ষণেই অপর আরেকটি আঘাত এসে পড়ল পায়ের উপর । প্রায় আধঘণ্টা ধরে এরকম পরপর আঘাত পড়তে থাকল পায়ের উপর । অবশেষে আর সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়লাম আমি । যখন চোখ খুলল , তখন আমি নার্সিংহোমে ।দীর্ঘ 7 মাস পর চেতনা ফিরেছে আমার । তবে আমার পা দুটির একটি পুরোপুরি ভাবে অকেজো হয়ে গিয়েছে । অপর পা টি আছে বটে তবে তা না থাকারই সমান । বাসায় ফিরতে আরও 4 মাস সময় লেগেছিল । পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও 3 মাস । বাসায় ফিরে জানতে পারি, সেদিন রাতে বাড়ি ফিরছিনা দেখে , গ্রামের কিছু লোকজন মিলে আমায় খুঁজতে যায় । মাঠের মাঝে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সকলে মিলে ধরে আমার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে । সকলে ভেবেছিল ডাকাতের দল, যারা মাঝে মধ্যে ঐ মাঠে আড্ডা নিত তাদের কবলে পড়েছিলাম আমি । কিন্তু সত্য কি কখনও বদলাতে পারে. !"
গল্প শেষ করে অবলম্বন দুটি হাতে নিয়ে চলে গেল সমরেশ দা । আমরাও আর বিলম্ব না করে চায়ের পয়সা মিটিয়ে দিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম তাড়াতাড়ি । কারন সেই রাতও ছিল অমাবস্যার রাত ।
সেদিন সারাদিনের কাজ শেষ করে উঠতে বেস দেরি হয়ে গেল । আন্দাজ করেছিলাম জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের জ্ঞান প্রদর্শনী সভা শুরু হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে । তবে আজ গিয়ে কিছুটা হতভম্বই হলাম । কারণ যেই স্থানটি তর্ক-বিতর্কের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল, আজ সেই স্থানটিতে বসেছে হাসি-ঠাট্টার আসর । বেস আগ্রহের সাথে কাছে এগিয়ে যেতেই শ্যামল বলে উঠল- "আরে আয় আয় । বস এখানে । আজ যে আসতে এত দেরি হল..!!"
" আর বলিস না ; ভীষণ কাজের চাপ ছিল আজ , কাজ ছাড়তে তাই একটু দেরি হয়ে গেল । তা এখানে আজ চলছে টা কি.?" -
প্রশ্ন করলাম শ্যামল কে ।যে উত্তরটি আমার কানে এল তাতে আমিও আর নিজের হাসি কে লুকিয়ে রাখতে পারলাম না ।
পাড়ার সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি শ্রীমান 'চন্ডী বাবু' নাকি রাস্তায় সাক্ষাত হওয়া এক অপরিচিত ব্রাহ্মণকে 500 টাকা দিয়ে এসেছে আর তার বদলে নিয়ে এসেছে একটি মাদুলি , যেটা গলায় ঝুলিয়ে রাখলে নাকি তাঁকে কখনও কোনো প্রকার অলৌকিক বিপদের সম্মুখীন হতে হবে না । আর এই কথাটি যখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে শোনান তখনই তাঁর স্ত্রী ঝাঁটা হাতে তাঁর উপর চড়াও হন ।- ঠিক এই বিষয়টিকে নিয়েই বসেছিল আজ সন্ধ্যার আসর । নেপালদা বল্টুদাকে একটা চা দিয়ে যেতে বলল আমার জন্য । বল্টুদার আঁচের উনুনে জলটা ফুটতে থাকল আর সেইসঙ্গে চলতে থাকল আমাদের রসিকতা ।ঠিক এমন সময় একটু দূরের দিকে চোখ যেতেই দেখতে পেলাম একটি অতিকায় শীর্ণ শরীর রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছে । প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও, পরে চিনতে পারলাম । এত আমাদের সমরেশ দা । বহুকাল বাদে আবার ফিরে এসেছে গ্রামে । আন্দাজ মোটামুটি 5 বছর ।
ডাক দিলাম-" সমরেশ দা, আরে ও সমরেশ দা , চললে কোথায়. ? এস, চা খেয়ে যাও এক কাপ ।" সমরেশ দা সামনে এগিয়ে এসে চলার অবলম্বন দুটিকে দোকানের একপাশে রেখে আমাদের কাছে বসল । আমি তাঁর জন্য একটি চায়ের অর্ডার করলাম ।
" কেমন আছ সমরেশ দা ? এখানে আসলে কবে.? বাড়ির সকালে ভালো তো..!" - ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে শুরু হল তাঁর সাথে কথাবার্তা । মিনিট পাঁচেক আলাপ আলোচনার পর আমাদের আজকের সভার প্রসঙ্গটাও তুলে ধরলাম তাঁর কাছে । তবে বেশ কিছু টা অবাক হলাম । যে প্রসঙ্গ সভার প্রতিটি মানুষকে হাসিয়ে তুলেছিল সেই প্রসঙ্গ সমরেশ দার মুখে বিন্দুমাত্র হাসির রেখা টানতে পারল না । বরং কিছুটা হতাশার ঢেউ খেলে গেল তাঁর চেহারায় ।আর তাঁর মুখ থেকে বার হয়ে এল আমাদের আচরণের বিরোধী কিছু শব্দ ।
-" যে জিনিস জানিস না সেই জিনিস নিয়ে ঠাট্টা করিস না । এর ফল কিন্তু বেশিরভাগ সময় খারাপই হয় ।"
ঠাট্টা-তামাশা থামিয়ে কিছু জিজ্ঞাস্য চোখে তাকালাম তাঁর দিকে । ইতিমধ্যে বল্টুদা চা দিয়ে গেছে আমাদের দুজন কে । আমার চোখের ইশারা বুঝতে পেরেই হয়ত সমরেশ দা বলে উঠলেন -" আমার সাথেও ঠিক এমনটাই হয়েছিল । তাই তোদের কেও সাবধান করে দিলাম ।" এবারে আমার সাথে সাথে সভার বাকি সকল সদস্যদের ও ঘটনাটি শোনার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে উঠল । পেয়ালায় প্রথম চুমুক দিয়ে ঘটনাটির বিস্তারিত রূপ শুরু করলেন সমরেশ দা । "তখন আমার বয়স 19 কি 20 হবে । প্রচণ্ড ডানপিটে ছিলাম তখন । তখন আর এখন কার মতো প্রতি বাড়িতে ইলেকট্রিকের ব্যবস্থা ছিল না । দু-একটি বাড়িতে ছিল বটে,তবে আমাদের বাড়ি সেই তালিকায় পড়ে না । এখন সন্ধ্যা নামলেই সকলে সুইচ টা অন্ করে রিমোট টা হাতে নিয়েই বসে পড়ে সামনে রাখা বোকা বাস্কটির সামনে । আমাদের জীবনে এই সব কিছুই ছিল না । তখন সন্ধ্যা নামলে পাড়ার সকলে একসাথে উঠানে বসে নানান ধরনের গল্প, গানের লড়াই- এই সবেই সন্ধ্যাটা কাটিয়ে দিতাম । সামনে জ্বলত একটি টিমটিমে লন্ঠন ।
সময় টা ছিল তখন গ্রীষ্মকাল । দিনটা শনিবার । সেদিন সন্ধ্যায় ফুটবল খেলা শেষ করে বাসায় ফিরেছি । প্রতিদিনের মত উঠানে বসেছিলাম গল্প করার জন্য । এমন সময় ঘর থেকে মার ডাক এল । মাছ কিনতে যেতে হবে বাজারে । কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম তখন মার কথা শুনে । এখন যাব কিনা মাছ আনতে. ! এই গাঢ় অন্ধকারে .! প্রথমে রাজি হলাম না , কিন্তু পরে মায়ের কথায় যেতে হল । তখন আমি যেমন ছিলাম ডানপিটে ঠিক ততটাই ছিলাম সাহসীও ।তাই তখনই মাছ কেনার পয়সা, হাত ব্যাগ ও টিমটিমে লন্ঠনটি হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম । প্রায় দুই কিলোমিটারের ফাঁকা মাঠের পথ । তখন অবশ্য ফাঁকা বলা চলে না কারণ, গম শস্যে পরিপূর্ণ ছিল তখনকার মাঠ গুলি । যাই হোক, শুরু করলাম পথ চলতে । ফেরার পথে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল আমার সাথে ।মাঠের রাস্তায় হেঁটে চলেছি, তবুও যেই সময় যতখানি পথ অতিক্রম করার কথা ততখানি তো হচ্ছেই না উপরন্তু যেন মনে হচ্ছে আমি একই স্থানে হেঁটে চলেছি । কিছুটা রেগে গিয়েই আরও জোরে চলতে শুরু করলাম । কিন্তু লাভ কিছুই হল না । আমি সেই একই স্থানে হেঁটে চলেছি । হাঁটা থামিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম আমার সাথে হচ্ছে টা কি ! ঠিক এমন সময় একটি কথা মনে আসতেই আমার সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল। নিজের ধারনাকে ভুল প্রমাণের চেষ্টায় চারপাশটা বারেবারে দেখতে থাকলাম । কিন্তু না , আমার ধারণা এতটুকুও ভুল ছিল না । এই মূহূর্তে আমি মাঠের যে স্থানে রয়েছি ঠিক তার পাশেই রয়েছে একটি 'ভাগাড়' । যেন নাম না জানা কোনো বিপদের আতঙ্কে আমি প্রানপনে দৌড় দিলাম । কিন্তু কোনও লাভ হল না । যখন প্রায় আমার হাঁপ ধরে গেল তখন একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটু বসলাম ও বুঝতে পারলাম আমি সেই একই স্থানে রয়েছি । ইতিমধ্যে পথের পাশের ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ও মাঠের শীতল হাওয়া আমার এই করুন অবস্থা কে আরও করুন করে তুলল । ছোটবেলায় মায়ের মুখে শুনেছিলাম রাম নাম জপ করলে নাকি এই ধরনের অলৌকিক সমস্ত বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । কিন্তু সেই মুহূর্তটি এতটাই বিভিষিকা ময় ছিল যে মুখ দিয়ে কোনও প্রকার শব্দ আমার বার হল না । যেন কোনও অদৃশ্য আবরণ আমার বাকশক্তি রুদ্ধ করে দিয়েছেল সেসময় । "
চায়ের কাপের শেষ চুমুকটি দিয়ে কাপ টিকে একপাশে রেখে দিল সমরেশ দা । শ্যামল এর থেকে একটি সিগারেট চেয়ে সেটিতে আগুন লাগাল । পরবর্তী ঘটনা জানার ইচ্ছা ছিল আমার প্রবল । তাই পরবর্তী ঘটনার জন্য তাঁর কাছে আবারও বেস কঔতুহল সহকারে অনুরোধ রাখলাম -" তারপর, তারপর কি হল সমরেশ দা ?"
সমরেশ দা একটু হেসে সিগারেটের দুটি রিং পরপর ছেড়ে আবার বলতে শুরু করল-
" এই অসহায় অবস্থায় কেবল মৃত্যুর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না আমার কাছে । তাই হতাশ হয়ে আমার পরিবারের আপনজন ও পরিচিত সকল মানুষদের কথা মনে করেছিলাম, ঠিক এমন সময় একটি অপরিচিত ,ভয়ানক কন্ঠস্বর এসে প্রবেশ করল আমার কানে । কন্ঠস্বর টি এমনই যে সেসময় তার অর্থ খুঁজে বের করতে পারলাম না । তবে দু-তিনবার এই একই কন্ঠস্বর পরপর কানে আসায় এখন বুঝতে পারলাম সেই কথার অর্থ কি ..! কন্ঠস্বর টি যে ঠিক আমার পাশ থেকেই আসছিল সে ব্যপারে সন্দেহ নেই । তবে এই অপরিচিত কন্ঠস্বর আর অলক্ষে থাকা ব্যক্তিটি আমার থেকে কেবল মাত্র একটি মাছ নেওয়ার জন্য আমায় এইভাবে বন্দি বানিয়েছে সেকথা শোনার পর এই ভয়ঙ্কর রাতে ও আমার একটু হাসির সাথে রাগও এল প্রবল ।
সাহস করে বলে উঠলাম -' আমায় আগে আমার বাসায় পৌঁছে দে তবেই তোকে আমি মাছ দেব ।' কথাটি শেষ না হতে হতে অনুভব করলাম একটি গাছের মতো কোনও অদৃশ্য বস্ত আমায় তুলে প্রথম পলক পড়ার আগেই নিয়ে এসে উপস্থিত করল একেবারে আমাদের উঠানে । তাঁকে বললাম -' তুই এখানেই দাঁড়া আমি মাছটা খুলে নিয়ে নিয়ে আসছি । তরপর তোকে একটা মাছ দিয়ে যাব ।' সেও রাজি হয়ে গেল আমার কথায় । এখন আমি বাসার ভিতর । তাই সাহস কিছুটা হলেও বেড়েছে আমার । তাই এখন সেই অপরিচিত ব্যক্তিটিকে কেনা মাছ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না । দরজার পাশে রাখা একটি আঁশ বটি নিয়ে আড়াল থেকে তাঁকে ডাকলাম -' এই নে ধর মাছটা ।' মাছটি নেওয়ার জন্য যেই না হাতটি বাড়াল সে । এখন স্পষ্ট তার হাতটা দেখতে পেলাম । দেখলাম হাতটিকে মাংসের বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব নেই । হাতটি দেখতে অনেকটা ভেঙে যাওয়া টগর গাছের মোটা ডাল গুলির স্বরূপ । হাতটি আমার চোখের সামনে আসা মাত্র আর সময় নষ্ট না করে প্রচণ্ড জোরে আঁশ বটি করে একটি কোপ দিলাম তাঁর হাতের উপর । নিমেষে হাতটি খসে পড়ল মাটিতে । আর কয়েক মুহূর্তের জন্য শুনতে পেলাম সেই অস্পষ্ট ভাষার কন্ঠস্বর । সেই ব্যক্তিটি চলে যাচ্ছে আমাদের উঠান ছেড়ে, তবে সে যে রীতিমতো আমার উপর ক্ষুব্ধ আর আমাদের পরবর্তী সাক্ষাত্ যে আমার পক্ষে ভালো হবে না, তা বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হয়নি আমার । মাকে আর সেই ঘটনার কথা জানালাম না । কারনটা নিশ্চিত , জানলে আর মা হয়তো কখনওই সন্ধ্যায় বাইরে যেতে দিত না । সেই রাতে অনেকক্ষণ ঘুম আসেনি । ভোরের দিকটায় একটু এসেছিল বটে, তবে তা খুবই অল্প সময়ের জন্য । ঘুম যখন ভাঙল তখন ভোরের আলো ফুটে গেছে । দরজাটা খুলে বাইরে পা রেখেছি মাত্র এমন সময় চোখ পড়ল একটি অদ্ভুত বস্তুর উপর । দরজার ঠিক বাইরের পড়ে রয়েছে প্রায় 30 ইঞ্চি সমান লম্বা একটুকরো কয়লাখন্ড ।"
সিগারেটা শেষ করে করে সমরেশ দা একটু জল খেয়ে নিলেন । নেপাল দা বলে উঠল-" তারপর কি আপনার সাথে আর তার দেখা হয়েছিল ?"
" হ্যাঁ হয়েছিল বইকী । সেই দ্বিতীয় সাক্ষাত্ই তো আমার জীবনের এই অবস্থার জন্য দায়ি । তবে এই বিপদের ইঙ্গিত 2দিন আগেই পেয়েছিলাম । এখন আপশোস করি । যদিই ভদ্রলোকটির কথাটা একটু শুনতাম. !"- উত্তর দিল সমরেশ দা ।আমরা আবারও সমরেশ দার দিকে তাকালাম । সমরেশ দা বলল শোন তবে - " সেই রাত টার পর প্রায় একমাস পার হয়ে গেছে । সেদিন রাস্তা দিয়ে 2 জনে হেঁটে চলেছি । আমি আর নিখিল । এমন সময় এক সন্ন্যাসির সাথে দেখা । আমরা চলে যাচ্ছিলাম পাশ দিয়ে, তিনিই আমকে ডাক দিলেন । তিনি কথপোকথনেই আমায় বুঝিয়ে দেন যে আমার আগামী তিনদিনের মধ্যে বড় কোনও বিপদ রয়েছে । আমি যেন সাবধানে থাকি । আমরা সেময় তার কথা গ্রাহ্য করিনি ।তবে তাঁর কথায় যে এতটুকু মিথ্যা ছিল না তা বুঝতে পারলাম 2 দিন পরেই । সেদিন কোনও এক কারণ বসত বাজারে গিয়েছিলাম । ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় । মাঠের পথ ধরেই বাসায় ফিরছিলাম । তবে মাঠের সেই স্থানে আসা মাত্রই পা পিছলে পড়ে গেলাম । শত চেষ্টাতেও আর উঠতে পারলাম না । এরই মধ্যে বুঝতে পারলাম আমার মনে সেই দিনের ঘটনাগুলি আবার বাসা বাঁধতে শুরু করেছে ।আমার সারা শরীর থেকে ঘাম বেরোতে শুরু করেছে । কি করব- কিভাবে উদ্ধার পাব ভাবছি, ঠিক এমন সময় প্রচণ্ড জোরে একটি আঘাত এল আমার পায়ের উপর । যেন মনে হল কেউ মোটা গাছের ডাল দিয়ে আঘাত করল আমার পায়ে । যন্ত্রণায় ছটপট করতে শুরু করলাম আমি । প্রথম আঘাতটা সামলাতে যাব এমন সময় পরক্ষণেই অপর আরেকটি আঘাত এসে পড়ল পায়ের উপর । প্রায় আধঘণ্টা ধরে এরকম পরপর আঘাত পড়তে থাকল পায়ের উপর । অবশেষে আর সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়লাম আমি । যখন চোখ খুলল , তখন আমি নার্সিংহোমে ।দীর্ঘ 7 মাস পর চেতনা ফিরেছে আমার । তবে আমার পা দুটির একটি পুরোপুরি ভাবে অকেজো হয়ে গিয়েছে । অপর পা টি আছে বটে তবে তা না থাকারই সমান । বাসায় ফিরতে আরও 4 মাস সময় লেগেছিল । পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও 3 মাস । বাসায় ফিরে জানতে পারি, সেদিন রাতে বাড়ি ফিরছিনা দেখে , গ্রামের কিছু লোকজন মিলে আমায় খুঁজতে যায় । মাঠের মাঝে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সকলে মিলে ধরে আমার ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে । সকলে ভেবেছিল ডাকাতের দল, যারা মাঝে মধ্যে ঐ মাঠে আড্ডা নিত তাদের কবলে পড়েছিলাম আমি । কিন্তু সত্য কি কখনও বদলাতে পারে. !"
গল্প শেষ করে অবলম্বন দুটি হাতে নিয়ে চলে গেল সমরেশ দা । আমরাও আর বিলম্ব না করে চায়ের পয়সা মিটিয়ে দিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম তাড়াতাড়ি । কারন সেই রাতও ছিল অমাবস্যার রাত ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রাবেয়া মৌসুমী ২৬/০৯/২০১৬বেশ ভালো..
-
ফয়জুল মহী ২২/০৯/২০১৬গুণসম্পন্ন লেখাটা পড়ে ধন্য হলাম
-
সুকান্ত ১৭/০৯/২০১৬বেশ ভাল
-
মোনালিসা ১৬/০৯/২০১৬সুন্দর
-
দ্বীপ সরকার ১৬/০৯/২০১৬নাইস রচনা।
-
সোলাইমান ১৬/০৯/২০১৬সুন্দর কিন্তু লং