www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মিথ্যে স্বপ্ন

আজ ভোরে একটা স্বপ্ন দেখেছি। কি দেখেছি তা ঠিক মনে পরছেনা। লোকের মুখে একটি প্রচলিত কথা শুনেছিলাম, ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়।  আসলে সব মিথ্যে।  আসলে স্বপ্ন আসে ভাঙ্গার জন্য। পূরণ হওয়ার জন্য নয়।
কখনো বা আমি বোকার মতো ভাবতাম "হে ভগবান একটা ভোরের স্বপ্ন দেখিয়ে দাও"।
কিন্তু ভাবলে অবাক লাগে বেশ কয়েক বছর আগে ভগবানের সাথে এগ্রিমেন্ট করেছিলাম যে তাকে কখনো আমায় সাহায্য করতে হবেনা। আজকের পর থেকে সব সম্পর্ক শেষ। কিন্তু সেই এগ্রিমেন্ট নিজেই ভেঙ্গে দিতাম। তখন নিজেকে স্বার্থপরতার বৈশিষ্ট্য মেনে চলা দায় ছিলো। মুখে সাহসিকতা দেখালেও মনে একটু তো ভয় হতোই, তাতে কোনো সংশয় ছিলোনা। শত হলেও তো ভগবান।  কে জানে রাগে কি না কি হয়ে যায়। ঠিক সেই ভাবনাটা আবার রাত্রি বেলা হতো। কিছুটা ভোতের ভয়। ঠিক বাড়ি যাওয়া পর্যন্ত ভগবান। আর বাড়িতে এসে গেলে আগের রুপ ধারন। নিজেকে তখন আবার কিছুটা স্বার্থপর মনে হলেও নিজেকে কিছু একটা বলে মানিয়ে নি।

  আবার যখন পরীক্ষা আসে তখন আবার ভগবানের স্মরনে আসতাম। মনে হয় আবার সেই স্বার্থের জন্য ফিরে আসা। স্বার্থ শেষ হলে আবার সেই ভগবানের নামে দুর্নাম। তাই মনের ভয়ে  ভগবানের সাথে পরীক্ষা দেওয়ার আগে  প্রশ্নের স্বপ্ন দেখার  কথা  বলতাম। আর পরীক্ষা শেষ হলে রেজাল্টের স্বপ্নের কথা বলতাম । কিন্তু কিছুই হয় না।  শেষে আবার ভগবানের সম্পর্কে বিদ্রোপ করি।
কিন্তু একদিন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্টের সময় খুব টেনশন হচ্ছিল,--" না জানি রেজাল্টের খবর কি হবে। আগামীকাল  রেজাল্ট বেরোবে শুনেছি"। তাতে অবশ্য  মন,  হাত,পা সব ঠান্ডা হয়ে আসছে। কিন্তু পরের দিনের আশায় ছিলাম। কোনোরকমে রাত্রিটা কেটে গেলেই সকালে মোবাইল টা নিয়ে বসে যাবো।  কিন্তু আগামীকালের রেজাল্টের স্বপ্নটা  দেখার কথা ঠিক মনে পরছিলনা।  তাই ভগবানের কাছে কোনো আবদার না করে ঘুমিয়ে গিয়েছি। কিন্তু যেই ভোর বেলা হয়ে গেলো আমি রেজাল্টের স্বপ্ন দেখি। দেখলাম আমি ৩ নম্বরের জন্য ফেল করলাম। বাড়িতে কান্নাকাটি ও করলাম। ভোরের স্বপ্ন যেহেতু সত্যি তো হবেই। ঘরিতে ঠিক ৯টা ৪৫ মিনিট বাজে।  চোখে এখনও জল। যেই মাত্র স্ক্রিন  এ দেওয়া হলো " রোল নাম্বার "। সেই সময় নিজের রোল নাম্বারটাই ভোলার উপদ্রব হয়ে গিয়েছিল।  তারপর ফাইল থেকে এডমিট কার্ড নিয়ে রোল নাম্বারটা বসালাম। তরপর যেই মাত্র "সো রেজাল্ট" এ ক্লিক করলাম ওমনি নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সব জটিলতা নিমেষেই পালিয়ে যায়। দেখা গেলো রেজাল্ট এ লেখা ৩২৩ মানে প্রথম হয়েছি। এই রেজাল্ট আমাকে সত্যিই এক বড়ো রোগ থেকে রক্ষা করলো। আমি এক গভীরতম জড়তায় ভুগছিলাম। বুঝতে পারলাম আসলে সব স্বপ্নই মিথ্যে হয়।

হয়তো আমার পরীক্ষা ভালোই হয়েছিলো। আসলে আমি ঠিকভাবে বিচার করতে পারিনি কারন সামাজিক কিছু জড়তায় আমি জড়িয়ে ছিলাম। তা থেকে বেরিয়ে আসার সাহস হয়তো তখনও জন্মায় নি। কিন্তু এখন তা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছি কারন আমার স্বপ্ন মিথ্যে প্রমানিত হলো।

আসলে আমাদের এই জড়তাকে দমিয়ে রেখেছে আমাদের ভয়। এই ভয়ের দরুন আমরা নিজেদেরকে একটা স্বপ্নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছি। আসলে স্বপ্ন আসে ব্যর্থতা প্রকাশ করার জন্যই।  নিজের মনের ইচ্ছাশক্তিই সব কিছু। এবার এটা রাত্রির অন্ধকারেই হোক আর পরীক্ষা কিংবা কোনো কঠিনতম সমস্যাই হোক না কেন নিজের ইচ্ছাশক্তিই সব। ভয়টা আমাদের নীচে নামিয়ে দেয়। এই ভয়টা থেকে নিজেদেরকে বেড়িয়ে আশাটাই সব কিছু। আজ পর্যন্ত কখনো প্রমানিত হয়নি যে ঘুমিয়ে দেখা কোনো স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না।  তাকে জেগে জেগে দেখতে হয়। তা নাহলে ঘুমিয়েই পূরণ করতে পারবে কিন্তু তাতে বাস্তবিক রূপ পাবেনা।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৭০১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৮/১১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বেশ।পড়ে ভালো লাগলো।
  • ঝরঝরে লেখা,পড়তে ভালো লাগলো
  • ইবনে মিজান ০৭/১২/২০১৮
    বেশ
 
Quantcast