www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটা জোৎস্না রাতের গল্প

হামিদ আর নিপুণ ছোট বেলা থেকেই দু'জন দু'জনকে খুব পছন্দ করে। তাদের জীবনে ঘটে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যা তাদের দু'জনকে সম্পূর্ণ রূপে আলাদা করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। তাদের দুই পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঝগড়াঝাঁটির কারণে প্রায় ৬ বছর যাবত দু'জনের মাঝে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি। কিন্তু এতদিন পরও কেউ কাউকে ভুলতে পারে নি, সম্ভবত দু'জন দু'জনকে মনে মনে ভালোই বেসেছে।

হামিদ শহরের একটা সাধারণ কলেজে ডিগ্রি পড়ে। তেমন ভালো ছাত্র না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছেটা পূরণ হয় নি তার। অবশ্য এর জন্য সে একাই দায়ী নয়, তার পরিবারের নানা জটিলতা আর প্রতিকূল পরিবেশও এর মূল কারণ হিসেবে ধরা যায়। হামিদ খুব সাধারণ জীবন যাপন করে, মানুষের দুঃখ দুর্দশায় সবার আগে কোনোকিছু না ভেবেই এগিয়ে যায়। নিজের জীবনের কথা খুব একটা ভাবে না, মাঝে মাঝে বন্ধুরা যদি জানতে চায় যে লেখাপড়া শেষে কি করবে তাহলে উত্তরে শোনা যায় "আমি এতকিছু ভাবি না, মুখ যে দিয়েছে আহারও সেই জোগাবে। রিকশাওয়ালাও না খেয়ে থাকে না!"
যাই হোক হামিদ সম্পর্কে অনেক কথাই হলো, এখন নিপুণের কথায় আসা যাক-

নিপুণ হামিদের দূর সম্পর্কের মামাতো বোন, কেমন মামা তা কেউ জানতো না তবে ওদের খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। নিপুণের বয়স ১৭ হবে কি না সন্দেহ, ছাত্রী হিসেবে খুবই ভালো। এস.এস.সি তে জিপিএ ৫ পেয়ে পাশ করেছে, কলেজে নতুন হলেও সবাই ওকে খুব সম্মান করে। অবশ্য মাঝে মাঝে একটা কারণে তাকে লজ্জিত হতে হয়। নিপুন দেখতে শ্যাম বর্ণের আর একটু বেটে। হতে পারে এই কারণেই হামিদের পরিবারের কেউ নিপুণ দের সাথে কথা বলে না।
নিপুণের একটু অভাবি পরিবার, তার বাবা ব্যাবসা-ট্যাবসা করে কোনো রকমের সংসার চালায়। নিপুণ ও তার বাবাকে খুব একটা কষ্ট দেয় না, প্রয়োজনের তুলনায় কম খরচে লেখাপড়া চালিয়ে যায়। এজন্য তার বাবাও তাকে অনেক ভালোবাসে। শুধু ভালোবাসে বললে হয়তো কম হয়! নিপুণ যা বলে ওর বাবা তাই করে অন্ধবিশ্বাস নিয়ে। এই অন্ধবিশ্বাসের কারণে কোনোদিন কোনো দুর্ঘটনার কথা আজ পর্যন্ত শোনা যায় নি।
নিপুণের মা থেকেও নেই, কেমন একটা পাগলি পাগলি ভাব। নিজের মেয়ের সম্পর্কে নিজেই মানুষের কাছে নানা রকম গ্লানি ছড়িয়ে বেরায়, যদিও কেউ সেসব বিশ্বাস করে না। নিপুণও এর জন্য কিছু মনে করে না, সবকিছু মন্দ কপাল ভেবে মনকে সান্তনা দেয়।
হামিদ নিপুণকে একটা চিরকুট দিয়ে ছিলো যাতে লেখা আছে-
"যদি বেঁচে থাকি তবে
আবারও দেখা হবে
...............ভেঙ্গে সমাজ।"
চিরকুটটাই একমাত্র সঙ্গী করে নিপুণের দিন ভালোই যাচ্ছিল, কিন্তু কথায় আছে না "সুখ বেশিদিন কপালে থাকে না"!!

সেদিন ছিলো ২২শে অক্টোবর, এই দিনটি হামিদ খুব ভালো ভাবেই মনে রাখে। প্রত্যেক বছর এই দিনে একটা বড় মাপের কেক কিনে ছোটো ছোটো বাচ্চাদের ডেকে খাওয়ায়, নিপুণের জন্মদিন বলে কথা!
যাই হোক, হামিদ সিদ্ধান্ত নিলো যে নিপুণের সাথে দেখা করবে। দেখা না করলে নিপুণ হয়তো ভুল বুঝতে পারে! হয়তো ভাববে যে হামিদ ওকে ভুলে গেছে কিন্তু নিপুণের বাড়ির আশে পাশে যাওয়াও হামিদের জন্য ঠিক নয়, কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে আরো বিরাট ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষতঃ হামিদের বাবা, তিনি খুব রাগী মানুষ। কারো কোনো কথা না শুনেই নিজের মতো সিদ্ধান্ত নেয়।
তাই হামিদ ঠিক করলো যে রাতে দেখা করবে, যা আছে কপালে " আল্লাহ্ ভরসা"।

যেই ভাবা সেই কাজ, হামিদ আর আমি দুজনে নিপুনের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমাদের মেস থেকে প্রায় ৭ মাইলের পথ। হামিদ আমাকে ছাড়া একা কোথাও যায় না, আমরা দুজনে অনেক ভালো বন্ধু। যাই হোক,পর কথায় আসি-

কোনো রকমের বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই নিপুনের বাসার কাছে পৌছে গেলাম, তখন রাত আনুমানুক ৮ টা ২০/২৫ হবে।
জোৎস্না রাত, সবকিছু মোটামুটি স্পষ্ট দেখা যায়, আগে পিছে কিছু না ভেবে চারিদিকটা একবার ভালোভাবে দেখে নিয়ে নিপুনের রুমের পিছনের জানালায় গিয়ে দাঁড়াল হামিদ। আমি একটু দূরেই রইলাম, কেউ এসে পড়লে সতর্ক করার জন্য।
জানালায় ২-১ বার কড়া নাড়তেই নিপুন জানালা খুলে দিয়ে হামিদকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোয় না যেনো, প্রিয় মুখ দেখে আর কথা বলার দরকারই হয় না।
নিপুণ এবার সেখান থেকে উধাও হয়ে গেলো, মিনিট ২ পর হামিদের দেয়া চিরকুটটি নিয়ে আবার জানালার কাছে এসে দাঁড়াল। এবার হামিদের মুখে বুলি ফুটলো,
-বাইরে আসো।
-একটু দাঁড়াও। খুব ভয়ে ভয়ে জবাব দিলো নিপুণ।
-তাড়াতাড়ি, না হলে কেউ এসে পড়বে!
-আসছি। বলেই নিপুণ দৌড়ে বাড়ির বাইরে এসে হামিদকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
অজান্তেই আমার চোখেও দু’ফোটা পানি চলে আসলো, কিন্তু আমার তো আবেগ নিয়ে থাকলে চলবে না। ওদের দু'জনের নিরাপত্তা দেয়াটা জরুরি।
হঠাৎ একটা আলো আমার গায়ে এসে পড়ে, সম্ভবত টর্চের আলো। আমি হামিদকে ইশারা করলাম, কিন্তু বুঝতে পারলো কি না জানিনা।
ততক্ষণে আলোটা আরো বেশি হয়ে গেলো, আমি আর কালবিলম্ব না করে নিপুণের কাছ থেকে হামিদকে সরিয়ে নিয়ে দৌড়াতে থাকলাম। দূর থেকে শুধু নিপুণের একটা চিৎকার শুনতে পেলাম "ও মা গো, আমি কিছু করি নাই মা!"

হামিদ নিপুণের জন্য একটা উপহার নিয়ে এসে ছিলো,কিন্তু তা হামিদের পকেটেই রয়ে গেলো। হয়তো ওদের অনেক ইচ্ছা ছিলো, অনেকদিন পর দেখা! তারা অনেকটা সময় নিজেদের মধ্যে থাকবে। কতদিনের না বলা কথাগুলো বলার একটা সুযোগ ছিলো,আর কবে দেখা হবে কি না কে জানে? পৃথিবীর সব ভুলে থাকা গেলেও তো ভালোবাসার মানুষটিকে ভোলা যায় না! যাকে এক পলক দেখলে আনন্দে মন ভরে যায় তার নামই তো ভালোবাসা। পৃথিবীতে সুখে থাকার জন্য ভালোবাসার বিকল্প আর কি হতে পারে!

যাই হোক, নিপুনের জন্য কেনা উপহারটা আর কোনোদিন দিতে পেরেছে কি-না জানিনা। কারণ সেদিনের পর থেকে হামিদ/নিপুণ কারো সাথেই দেখা করা হয় নি।পরদিন বিকেলেই হামিদের বাবা এসে হামিদকে মেস থেকে নিয়ে গেছে, আর আমায় বলে গেছে আমি যেন আর কোনোদিন হামিদের সাথে যোগাযোগ না করি। আমিই নাকি নাটের গুরু!!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৩৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৩/১২/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • sudipta chowdhury ২৮/১২/২০১৯
    Just romantic moment which I am able to imagine. Writer becomes successful when he/she able to make feel that moment through writing towards readers. You are really successful writer
 
Quantcast