মৌলতা
মৌলতা তার মায়ের একমাত্র মেয়ে। কিন্তু দুঃখের কপাল তার। জীবনের শুরুতেই বাবাকে হারায়। বাবাকে সে দেখেও নি কোনোদিন। শুনেছি তার মাকে সন্তান সম্ভবা রেখে তার বাবা ঢাকায় যায় রোজগারের তাগিদে।মেয়ে জন্মানোর খবর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা বাবা ছুটে আসেন বাড়ির পথে। কি আর করার,ফিরলেন লাশ হয়ে।
তারপর-
মৌলতার মাকে অনেকেই নষ্টা মহিলা উপাধি দিয়ে সমাজ থেকে একঘরে করে দেন। তাদের ধারনা ছিল মৌলতা জারজ।
যা হোক মৌলতাকে তার মা অনেক কষ্টে বড় করেছে,এখন সেই মেয়ে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রি।দেখতেও বেশ!
এই এলাকায় আমি নতুন,যদিও আমার জন্মভূমি! ছোট বেলা থেকেই নানার বাড়িতে থাকি,ইন্টারমিডিয়েট পাস করে তবেই বাড়িতে ফেরা।
একদিন বিকেলবেলা মৌলতাদের বাড়ির পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম,হটাৎ কান্নার শব্দে দাঁড়াতে বাধ্য হলাম।
কিছুক্ষন আর সবার মতই একঘরে ভেবে দাঁড়িয়েই রইলাম। কিন্তু কান্নার স্বর বাড়তেই লাগলো,সব ভুলে ভিতরে গিয়ে যা দেখলাম তাতে তার মা মূমূর্ষ রোগী।গ্রামের কেউ খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না।শুধু মৌলতাই তার মায়ের একমাত্র সেবিকা।
আমার জীবনটা খুব মজার ছিলো।কোনোদিন কোনো কষ্ট পেয়েছি বলে মনে হয় না।কিন্তু আমাদের গ্রামেই এত দুঃখি মানুষের বাস তা আমার জানা ছিল না।
যাই হোক পরিবারের কথা মাথায় রেখে আর কোনোদিন মৌলতাদের বাড়িতে যাওয়া হয়নি।
মাঝে মাঝে তার সাথে রাস্তায় দেখা হতো,কিন্তু কথা বলা হতো না।ইদানিং চেহারাটা বড্ড খারাপ হয়ে গেছ তার।
একদিন দ্বিধা ভেঙ্গে তার মায়ের কথা তুলতেই “সময় কম আর এক সময় বলবো” বলেই চলে গেল।
দিন কয়েক আর দেখা নাই।বাড়িতে গিয়ে সংবাদ নেয়ার অধিকার আছে কি নেই এই ভেবে আর যাওয়া হয়নি।
গ্রামের ক’জন ছাত্র ছাত্রিকে টিউশনি করিয়ে আমার হাত খরচটা কোনো রকমে চালাই।তারমধ্যে একজন মৌলতারই পাশের বাড়ির ছেলে।অনেক দিন ভেবেছিলাম ওর কাছ থেকে খবরা খবর নেয়া যাবে।তাতেও সায় দেয় নি আমার বন্দি বিবেক।
অনেকদিন গত হয়েছে মৌলতা ও তার মায়ের কথা মোটামুটি ভূলেই গেছি।আমার কবিতা লেখার খাতা কলম নিয়ে বসে আছি, এমন সময় কেউ একজন রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে বলল “নষ্টা মহিলা মরেছে ভালোই হয়েছে”।
আর এক মুহুর্ত দেরি না করে চললাম মৌলতাদের বাড়ির পানে।
বাড়ি একেবারে জনশূন্য শুধু সেই দু’জন তারও একজন প্রাণহীন।মৌলতার চোখে পানি ঝড়ছে অঝড়ে, মুখে কোনো শব্দ নেই।
আমাকে দেখে একবার শুধু বললো “মুন্না ভাই.......”।
আমার বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠলো,এ কেমন গ্রাম? কেমন এ গ্রামের মানুষ?মানুষ এত নিষ্ঠুর কিভাবে হয়?
একজন মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেবার কেউ নেই!দোয়া কালাম পড়ার কেউ নেই!
মৌলতাকে সান্তনা দেবার মত ভাষা খুঁজে না পেয়ে, আমি আসছি- বলে বাড়িতে চলে এলাম।
মায়ের পা দু-খানি জরিয়ে ধরে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলাম গোসল করাতে।
টিউশনির কিছু টাকা ছিলো তা দিয়েই কাফনের কাপড় ও মসজিদের ইমামকে আনতে হলো।
অনেক কষ্টে কয়েকজন মুরুব্বিদেরকে জানাজায় ডেকে দাফন সমাধা করা হলো।
এবার ফেরার পালা,বাড়ির পথে যেই পা বাড়িয়েছি অমনি মৌলতা আমার দু হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল “আমাকে একলা রেখে যাবে?”
আমি একবার মায়ের দিকে তাকালাম , মা মাথা নেড়ে সায় দিলেন-
তারপর-
মৌলতার মাকে অনেকেই নষ্টা মহিলা উপাধি দিয়ে সমাজ থেকে একঘরে করে দেন। তাদের ধারনা ছিল মৌলতা জারজ।
যা হোক মৌলতাকে তার মা অনেক কষ্টে বড় করেছে,এখন সেই মেয়ে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রি।দেখতেও বেশ!
এই এলাকায় আমি নতুন,যদিও আমার জন্মভূমি! ছোট বেলা থেকেই নানার বাড়িতে থাকি,ইন্টারমিডিয়েট পাস করে তবেই বাড়িতে ফেরা।
একদিন বিকেলবেলা মৌলতাদের বাড়ির পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম,হটাৎ কান্নার শব্দে দাঁড়াতে বাধ্য হলাম।
কিছুক্ষন আর সবার মতই একঘরে ভেবে দাঁড়িয়েই রইলাম। কিন্তু কান্নার স্বর বাড়তেই লাগলো,সব ভুলে ভিতরে গিয়ে যা দেখলাম তাতে তার মা মূমূর্ষ রোগী।গ্রামের কেউ খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না।শুধু মৌলতাই তার মায়ের একমাত্র সেবিকা।
আমার জীবনটা খুব মজার ছিলো।কোনোদিন কোনো কষ্ট পেয়েছি বলে মনে হয় না।কিন্তু আমাদের গ্রামেই এত দুঃখি মানুষের বাস তা আমার জানা ছিল না।
যাই হোক পরিবারের কথা মাথায় রেখে আর কোনোদিন মৌলতাদের বাড়িতে যাওয়া হয়নি।
মাঝে মাঝে তার সাথে রাস্তায় দেখা হতো,কিন্তু কথা বলা হতো না।ইদানিং চেহারাটা বড্ড খারাপ হয়ে গেছ তার।
একদিন দ্বিধা ভেঙ্গে তার মায়ের কথা তুলতেই “সময় কম আর এক সময় বলবো” বলেই চলে গেল।
দিন কয়েক আর দেখা নাই।বাড়িতে গিয়ে সংবাদ নেয়ার অধিকার আছে কি নেই এই ভেবে আর যাওয়া হয়নি।
গ্রামের ক’জন ছাত্র ছাত্রিকে টিউশনি করিয়ে আমার হাত খরচটা কোনো রকমে চালাই।তারমধ্যে একজন মৌলতারই পাশের বাড়ির ছেলে।অনেক দিন ভেবেছিলাম ওর কাছ থেকে খবরা খবর নেয়া যাবে।তাতেও সায় দেয় নি আমার বন্দি বিবেক।
অনেকদিন গত হয়েছে মৌলতা ও তার মায়ের কথা মোটামুটি ভূলেই গেছি।আমার কবিতা লেখার খাতা কলম নিয়ে বসে আছি, এমন সময় কেউ একজন রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে বলল “নষ্টা মহিলা মরেছে ভালোই হয়েছে”।
আর এক মুহুর্ত দেরি না করে চললাম মৌলতাদের বাড়ির পানে।
বাড়ি একেবারে জনশূন্য শুধু সেই দু’জন তারও একজন প্রাণহীন।মৌলতার চোখে পানি ঝড়ছে অঝড়ে, মুখে কোনো শব্দ নেই।
আমাকে দেখে একবার শুধু বললো “মুন্না ভাই.......”।
আমার বুকের ভিতরটা হাহাকার করে উঠলো,এ কেমন গ্রাম? কেমন এ গ্রামের মানুষ?মানুষ এত নিষ্ঠুর কিভাবে হয়?
একজন মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেবার কেউ নেই!দোয়া কালাম পড়ার কেউ নেই!
মৌলতাকে সান্তনা দেবার মত ভাষা খুঁজে না পেয়ে, আমি আসছি- বলে বাড়িতে চলে এলাম।
মায়ের পা দু-খানি জরিয়ে ধরে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলাম গোসল করাতে।
টিউশনির কিছু টাকা ছিলো তা দিয়েই কাফনের কাপড় ও মসজিদের ইমামকে আনতে হলো।
অনেক কষ্টে কয়েকজন মুরুব্বিদেরকে জানাজায় ডেকে দাফন সমাধা করা হলো।
এবার ফেরার পালা,বাড়ির পথে যেই পা বাড়িয়েছি অমনি মৌলতা আমার দু হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল “আমাকে একলা রেখে যাবে?”
আমি একবার মায়ের দিকে তাকালাম , মা মাথা নেড়ে সায় দিলেন-
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোহন দাস (বিষাক্ত কবি) ০৯/০২/২০২০ভালো ।।