www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দূষণে ঢাকা

বায়ুদূষণ আর শব্দদূষণ ঢাকার অন্যতম সমস্যা। তবে আশার কথা শব্দদূষণে ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ শহর হিসেবে পরিচিতি পায়নি। উপমহাদেশের কয়েকটি শহর বায়ুদূষণে বারবার শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। বায়ুদূষণে ঢাকা অবশ্য মাঝে মাঝেই শীর্ষস্থান অধিকার করেছে। বায়ুদূষণে শীর্ষস্থান অর্জনকারী শহরের মধ্যে রয়েছে ভারতের নয়াদিল্লী ও মুম্বাই, পাকিস্তানের করাচী ও লাহোর। সুতরাং বলা যায়, বায়ুদূষণে আমরা একা নই, আমাদের সহযোগীও রয়েছে। অবশ্য একথা বলে আমরা আত্মতৃপ্তিতে ভুগছি না। যেটা বাস্তবতা সেটা স্বীকার করতেই হবে। বরং কিভাবে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে, সে পথই খুঁজতে হবে।

বায়ুদূষণের চাইতে শব্দদূষণ সমস্যা কোন অংশেই কম নয়। এই উভয় সমস্যাই জনজীবনে সংকট সৃষ্টি করছে। সুতরাং শব্দদূষণ থেকে কিভাবে আমরা আত্মরক্ষা করতে পারি সে পথ খুঁজে বের করতে হবে। একটি উদাহরণ দেয়া যাক। কয়েক দিন আগের কথা। সময় সকাল ১০টা। রাজধানীর শাহবাগ মোড় দিয়ে যাতায়াত করছে শতশত গাড়ি। কার আগে কে যাবে এই প্রতিযোগিতায় চালকরা বাজিয়ে চলেছেন বিকট শব্দে হর্ন। রাস্তার দুই পাশে হাসপাতালের দেয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে ‘সামনে হাসপাতাল, হর্ন বাজাবেন না।’ কিন্তু এদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ নেই। শুধু শাহবাগ নয়, পুরো রাজধানীর চিত্র মোটামুটি এরূপ। শব্দদূষণের স্থানভেদে কেমন হবে তার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের হিসাব অনুযায়ী কোন এলাকায় ৬০ ডেসিবেল মাত্রার বেশী শব্দ হলে তা দূষণের আওতায় পড়ে। অফিসকক্ষ এবং শ্রেণীকক্ষে শব্দের মাত্রা হবে ৩০-৪০ ডেসিবেল, হাসপাতাল এলাকায় ২০-৩৫ ডেসিবেল, রেস্তোরাঁয় ৪০-৬০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা সহনীয়। ৬০ ডেসিবেলের বেশী শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দে মানুষ চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত শব্দের কারণে মানুষ আক্রান্ত হয় বিভিন্ন ধরনের ব্যধিতে। নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা: মনিলাল আইচ লিটু বলেন, স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করলে ব্যস্ত জায়গায় শব্দমাত্রা সর্বোচ্চ ৬০-৭০ ডেসিবেল থাকতে হবে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন সময় গবেষণা করে দেখেছি, ঢাকার ফার্মগেট, শাহবাগ, মিরপুর, পল্টন, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, গাবতলী, মহাখালীর মত ব্যস্ত এলাকায় শব্দের মাত্রা সবসময় ৯০-১০০ ডেসিবেলের বেশী থাকে। শব্দদূষণের কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে। হেডফোন ব্যবহারেও মানুষকে সচেতন হতে হবে। জাতীয় নাক, কান, গলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মো: আবু হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, শব্দদূষণের কারণে শ্রবণশক্তি কমে যাবার পাশাপাশি মানুষের স্মৃতিশক্তিও লোপ পাচ্ছে। মাথাব্যথা, অনিদ্রা ও মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে মানুষ। উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে শব্দদূষণ। যারা বেশী সময় ধরে অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকেন, তাদের আচরণ সাংঘর্ষিক এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। আর এর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে শিশু ও বয়ষ্কদের উপর।

আগেই বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ বায়ুদূষিত নগরীর অন্যতম। পুরানো লক্কর-ঝক্কর গাড়ির কালো ধোঁয়া এ বিষাক্ত বাতাসের অন্যতম কারণ। তদুপরি রাস্তাঘাটের ধূলা রাজধানীর পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। রাজধানীর আশেপাশের ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় মারাত্মক দূষিত হচ্ছে বাতাস। দিনরাত দূষণের মাত্রার কোন হেরফের নেই। এতে বাড়ছে ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগ। ঢাকার বায়ুদূষণের ব্যাপারে বার দেশের শীর্ষস্থানীয় আদালতের কঠোর বার্তা সত্ত্বেও কোন টেকসই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ৮ই মার্চ নগরবাসীর জন্য কিছু পরামর্শ দেয় বিশ্ব বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজুয়াল। এরমধ্যে রয়েছে ঘরের বাইরে শরীর চর্চা করা যাবে না, বন্ধ রাখতে হবে বাসা-বাড়ির দরজা-জানালা। ঘর থেকে বাইরে বেরোলেই অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। ঘরের বাতাস দূষণমুক্ত রাখতে চালিয়ে রাখতে হবে বায়ু বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র।’ ঢাকাবাসীকে গত শীতের শুরু থেকে প্রতিদিন এ পরামর্শ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানটি। এই সময়ে কয়দিন পরপরই বিশে^র দূষিত নগরীর শীর্ষে উঠে আসছে ঢাকার নাম।

এয়ার ভিজুয়ালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা। কখনো উঠে আসছে এক নম্বরে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে ৮ই মার্চ দিনভর ঢাকার বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর। ওইদিন বিকাল তিনটায় কারওয়ান বাজারে একিউআই (বায়ুমান সূচক) স্কোর ছিল ১৬৫। বিকেল ৪টায় কারওয়ান বাজারের একিউআই স্কোর হঠাৎ বেড়ে ২৮৩-তে গিয়ে দাঁড়ায়, যা চরম অস্বাস্থ্যকর। ১৯০ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল চীনের শেনিয়াং এবং ১৭৯ স্কোর নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ছিল ভারতের নয়াদিল্লী। এয়ার ভিজুয়ালের তথ্যানুযায়ী কোন এলাকায় বায়ুমান সূচকে (একিউআই) স্কোর ৫০-এর নীচে থাকলে তাকে স্বাস্থ্যকর স্কোর ধরা যায়। স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে সহনীয়, ১০১ থেকে ১৫০ বিশেষ শ্রেণীর মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ হলে অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে ৫০০ হলে তা বিপজ্জনক।

শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ রোধে সরকারি-বেসরকারি নির্দেশ তেমন একটা কার্যকর হচ্ছে না। এখন শব্দ ও বায়দূষণরোধে নাগরিকদেরও ভূমিকা পালন করতে হবে। রাস্তাঘাটে কোন কোন দোকানপাটের সামনে পানি ছিটিয়ে ধূলা নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। কিন্তু এই দৃশ্য সর্বত্র দেখা যায় না। একইভাবে উন্নয়নমূলক কাজে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির পর তাতে পানি ছিটিয়ে যাতে দেয়া হয়, সেজন্য সরকারি নির্দেশের পাশাপাশি নগরবাসীকে নজর রাখতে হবে। একইভাবে কালোধোঁয়া নিঃসরণকারী গাড়ির মালিক ও চালককে সচেতন করে তুলতে হবে। তা না হলে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের জ¦ালা-যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীর মুক্তির কোন উপায় নেই। সুতরাং দল-মত-নির্বিশেষে সকল নাগরিককে সচেতন করার কোন বিকল্প নেই।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৫৬৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০৩/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast