www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পানির অপর নাম জীবন

ধারণা করা হয়, আগামি বড় যোদ্ধ হবে পানি নিয়ে। ভারত যেভাবে আমাদের অভিন্ন নদির পানি নিচ্ছে, মাটির নীচের পানি যেমনে আরো নীচে চলে যাচ্ছে এতে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম ছাড়া আগামিতে পানি পাওয়া যাবেনা। তার চেয়েও বড়কথা, পানির অপচয় রোধ। যাহোক এখানে এসব বিষয় নিয়ে আলাচনা নয়। পানি পানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার চেষ্টা করব। আমাদের দেহের প্রায় ৬০ ভাগ পানি, রক্তের ৯০ ভাগ পানি এবং পৃথিবীর মোট ৭১ ভাগ পানি। যদিও প্রতিদিন সঠিক কতটুকু পানি পান করতে হবে তার নির্দিষ্ট কোন মাত্রা নেই , তবুও বিশেষজ্ঞদের মতে প্রিতদিন ১.২ হতে ২.৫ লিটার পানি গ্রহণ আবশ্যক। আমাদের মস্তিস্কের সঠিক কার্যের জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। এমনকি সামান্য অল্প কম পানি পানের জন্য মানসিক শরীরিক অনেক সমস্যা সৃস্টি করে।

পানি সল্পতার লক্ষণ সমূহ হলোঃ পরিশ্রান্ত ও উগ্রতা। কিন্তু মনে রাখবেন, ফলমূল, শাকসবজি, প্রচুর পানিতে পূর্ণ। চা কফিও পানির চাহিদার অংশ পূরণ করে।এতে ক্যাফেইন থাকায় তা বেশী পানের বদলে অন্যভাবে পানির চাহিদা পূরণ করতে হবে।

ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে: আমার একজন হাইস্কুলের শিক্ষক বলেছিলেন, তোমরা অনেক বিভিন্ন দেশে যাবে, খাবারের সমস্যা হলে পানি খাবে। আমরা তখন সবাই হেসেছিলাম। কিন্তু বাস্ববেই সবসময় সব খাবার সবাই খেতে না পারলেও পানি খেতে কোন বাধা নেই।

দেহে অক্সিজন সরবরাহের জন্য: রক্তের বেশীরভাগ অংশই পানি এবং রক্তের লোহিত কণিকা গঠনে পানি অপরিহার্য। পরিমিত পানি ছাড়া রক্তের হিমোগ্লোবিন ও রক্তরস কমে যায় এজন্য দেহে অক্সিজেন সরবরাহ স্থিমিত হয়।

কিডনির কার্যক্রমের জন্য:কিডনি সবসময় আমাদের রক্তের দূষিত বর্জ্য ছেঁকে বের করে দেয়। যদি রক্তে প্রচুর পানি না থাকে তবে এটি পর্যাপ্ত খাদ্য ও অক্সজেন পায়না। এতে কিডনির কাজ করার ক্ষমতা লোপ পায় ও ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

ত্বকের সুস্থতার জন্য: ত্বকের যত ধরনের রোগ হয় তার বেশীরভাগই শুষ্ক ত্বকের জন্য। কোমল ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী থাকে। এছাড়াও শুষ্ক ত্বক শুষ্কতার জন্য ভাঁজ পড়ে ও দ্রুত বার্ধক্যের ছাঁপ পড়ে।

কোমলতা ও ওজন নিয়ন্ত্রণে: দেহের কোমলতা নিয়ন্ত্রণে পানি অপরিহার্য্য। দেহে পানির অভাব হলে, কোমলতা থাকেনা । এতে দেহের জৈবিক বয়স বেড়ে যায় ও অল্প বয়সে নড়াচড়া করতে সমস্যা হয়। পানির অভাবে দেহে অস্বাভাবিক ওজন বেড়ে বা কমে যেতে পারে। খাদ্য পরিশোষণে সমস্যা হয়।

অস্তি-সন্ধির কোমলতার জন্য: সব অস্তি সন্ধি তরল পদার্থ দ্বার পূর্ণ থাকে। এতে নড়াচড়া সহজ হয়। যদি দেহে পানি স্বল্পতা থাকে, তাহলে এই তরল পদার্থের ঘাঠতি দেখা দেয়। এতে অস্তি সন্ধি আঘাত প্রাপ্ত হয়, অস্থ ক্ষতিগ্রস্থ ও আথ্রাইটিস হয়ে যায়। যার সঠিক চিকিৎসা এখনো অনেক ব্যয়বহুল এবং দুষ্কর।

লালারস ও মিউকাস রসের জন্য: খাদ্য গ্রহণ ও পরিপাকের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো লালারস ও মিউকাসের। এছাড়া লালারস ও মিউকাস মুখের আদ্রতা ও খাদ্যনালীর আদ্রতা বজায় রাখে। শ্বাস যন্ত্রের কপাটিকা সুরক্ষা করে। শরীরের মিউকাসও দেহের নরম অঙ্গের সুরক্ষা করে।

মস্তিস্কের কার্যক্রমের জন্য: সুস্থ দেহের প্রায় ৬০ ভাগ পানি। এজড়াও মস্তিস্ক যেসব তরলে ভাসমান থাকে তার ৯০ ভাগই পানি। এজন্য মস্তািস্কের কার্যক্রম এ সুরক্ষায় পরিমিত পানি গ্রহণ আবশ্যক। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিদিষ্ট পরীক্ষার পূর্বে যারা প্রচুর পানি পান করেছে তাদের ফলাফল - যারা পরিমিত পানি পান করেনি তাদের তুলনায় ভালো।

শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্যের জন্য: অতিরিক্ত গরমে কিংবা জ্বরের সময় কিছুটা বেশী পানি পান করলে শরীরের তাপ ঠিক থাকে। অত্যধিক ঠান্ডায় উষ্ণ গরম পানি দেহের তাপমাত্রা কিছুটা উষ্ণ করে। শরীররে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিসৃত সকল এনজাইম ও হরমোন পানি জাতীয় পদার্থ। এসব এনজাইম হরমোন ছাড়া দেহের ভারসাম্য ঠিক থাকবেনা।

পরিপাকের জন্য: খাদ্য পরিপাকের অন্যতম উপাদান বিভিন্ন ধরনের নিঃস্বরণের বেশীরভাগ অংশই পানি। আমাদের গৃহিত পানি বেশীরভাগই বৃহদান্ত্রে শোষিত এজন্য পানি সরাসরি খাদ্য পরিবহনে ও কুষ্ট কাঠিন্য দূরীকরনে সহায়ক।

দেহের বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য: দেহের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য নিষ্কাশনের মাধ্যম, ঘাম, মূত্র ও মল। শরীরে প্রয়োজনীয় পানি না থাকলে এদের কোনটিই সঠিকভাবে হতে পারেনা। যেমনঃ পানির অভাবে ঘাম কমে গেলে শরীরে অতিরিক্ত বিষাক্ত লবণ বের হয়না। এতে শরীরের রক্ত চাপ বেড়ে যায়, স্পর্শকাতর অংশ হার্ট , যকৃৎ এমনকি মস্তিস্ক ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। মূত্র নিষ্কাশিত না হলে কিডনির বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হয়, এমনকি বিকল ও হয়ে যায়। মল এর পচন ও পরিচালনার সমস্যা , আলসার সহ বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারও হয়ে যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য:শরীরের অপ্রয়োজনীয় অংশ, ঔষধ ইত্যাদি শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। তাই শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত পানি অপরিহার্য।

শ্বাস-প্রশ্বাস স্বচল রাখতে: ফুসফুস এর প্রধান কাজ হলো বাতাস হতে রক্তে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় অক্সজেন সরবরাহ করা। ফুসফুসের সজীবতার জন্য পানি অত্যাবশ্যক। পানির অভাবে রক্তনালী শুকিয়ে যেতে পারে ও শ্বসকষ্ট হয়। যারা ধূমপায়ী তারা যদি প্রচুর পানি না খান তবে দ্রুত এসব রক্তনালী শুকিয়ে যেতে পারে। এতে ফুসফুস কম অক্সজেন পায় ও দূর্বল হয়ে যায়।

এলার্জী প্রতিরোধে: প্রত্যেক মানুষর কিছু কিছু উপানের প্রতি শরীর অতিরিক্ত সেনসিটিভ। এসব খাবার প্রবেশ করলে শরীর সর্বোচ্চভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। শরীরে প্রচুর পানি ও এন্টিবডি থাকলে এটি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়।

খনিজ লবণ এ খাদ্যগুণ পরিশোষণে: আমরা প্রতিদিন প্রচুর জৈব , অজৈব খাবার ও খনিজলবণ , খাদ্য গ্রহণ করি যা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। আমরা যদি পর্যাপ্ত পানি পান না করি এগুলো বিষাক্ত পদার্থ হিসেবে চিহ্নত হতে পারে এবং শরীর সঠিকভাবে গ্রহণ না করতে পারে।

কিডনি পাথর ও কিডনি নষ্ট হওয়া প্রতিরোধে: শরীরের বর্জ্য পদার্থ নিঃস্বরণে কিড়নি বা বৃক্ক অপরিহার্য। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরের ক্যালসিয়াম অক্সালেট, ইউরিক এসিড ইত্যাদি জমা হয়ে পাথরে রূপ নেয়। এতে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও অসম্ভব ব্যাথা হয়।

ব্যায়ামে শক্তিবৃদ্ধিতে: ব্যায়ম শরীরের অবিচ্ছদ্য অংশ । মানুষের শরীর নড়াচড়া ও সঞ্চালনের জন্য উপযোগী। কিন্তু শরীরে প্রচুর পানি না থাকলে শরীরে অবসাদ হয় ও নড়াচড়া করেনা। এতে শরীরবৃত্তীয় কার্য সঠিকভাবে পরিচালিত হয়না। সামান্য নড়াচড়ায় অসম্ভব কষ্ট হয়।

আসলে সত্যকথা পানির প্রয়োজনীয়তা বলে বা লিখে শেষ করার মত নয়। আল্লাহ পাক বলেছেন, "খাও, পান কর কিন্তু অপচয় করনা।" আমরা পানির অপচয়ই বেশী করি। আমাদের সঠিক বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থাপনা করে সকল পানি সুরক্ষা না করলে মানুষে জীবন পৃথিবী হতে নিষ্চিহ্ন হবে এতে সন্দেহ নেই।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৭৮৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৩/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast