উচ্চ শিক্ষা
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাাচার্যসহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিরক্ত সরকার। যারা বিশ্ব বিদ্যালয়ে সন্ত্রাস আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। একের পর এক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি নিয়েজিত উপাচার্যের নেতৃত্বে নানা অপকর্মের খবর আসছে বাঁধা হুমকির সত্ত্বেও শিক্ষার্থীও কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষকরা প্রতিবাদ করছেন।
আবরারের ভয়ংকর চিত্র প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ও বহু নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ উদ্ধারে এসব লাঠিয়াল বাহিনী ও তার পৃষ্ঠপোষক প্রশাসন নিয়ে সরকারের যথাযথ উদ্যোগের বদলে প্রথমে নিস্ক্রীয়তা, পরে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরকারের আক্রমণাত্মক বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বস্তÍÍত সর্বজন বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার উৎস্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিমালার মধ্যেই।
দেশের চারটি পুরানো বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, জাহাঙ্গীর নগর ও রাজশাহী পরিচালিত হওয়ার কথা ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ দ্বারা। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন কোনটাতে নির্বাচিত উপাচার্য নেই। বাকি ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হওয়ার আইন দ্বারাই চলছে। সেখানে সব উপাচার্য সরকার নিয়োগ দিয়ে থাকে। এই দুই ধারার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন একাকার। এই তথ্য এখন সবাই জানেন যে, উপাচার্য হতে গেলে সরকারতো বটেই, এমন কী সরকারের লাঠিয়াল সংগঠনের সন্তুষ্টি অর্জন করাই গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে নানা প্রতিষ্ঠানের যাচাই বাছাইয়ের পর সরকার থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়। গোয়েন্দা সংস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় এবং আচার্য বা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়; এত প্রতিষ্ঠানের ছাকনি দিয়ে তাদের দৃষ্টিতে যোগ্যতম ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা থেকে দেখা যাচ্ছে, উপাচার্য হওয়ার সব চেয়ে বড় যোগ্যতা হচ্ছে সরকারের প্রতি আনুগত্যের অসীম ক্ষমতা। শিক্ষা ও গবেষণার বদলে ক্ষমতা ও অর্থের লোভ, আত্ম সম্মানবোধের অভাব, মাস্তানতোষণ এবং মেরুদ-হীনতাÑ এগুলো বিশেষযোগ্যতা বলে মনে হয়। নইলে সরকারি সমর্থকদের মধ্যে আরো যোগ্য লোক থাকলে বেছে বেছে এ ধরনের লোক কেন নিয়োগ দেয়া হয়?
বরিশাল ও গোপালগঞ্জের ভিসি (উপাচার্য) তাড়া খেয়ে পালিয়েছেন। রংপুরের ভিসি বেশির ভাগ ঢাকায় থাকেন। রাজশাহী পাবনাসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ঘুরছে। বুয়েটের ভিসি শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার পদত্যাগের দাবি সত্ত্বেও গদি আঁকড়ে বসে আছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব বিদ্যালয়ে সরকার নিয়ন্ত্রিত ভিসি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সরকারি ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতির বড় অভিযোগের পর ও সরকারের কোনো উদ্যোগ ছিল না। বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র নিয়ে নতুন কিছু বলার কিছু নেই। এখানে রাজনীতি চর্চাটা আশা জাগানিয়া নয়। রাজনীতির ভেতরে বাইরে এখন এমন পরিবেশ বিরাজ করছে, পরস্পর দোষারোপের সংস্কৃতিতে এসে ঠেকেছে। দেশের কোথাও কোনো অঘটন ঘটলে সরকার ও বিরোধী দলের কোনো ভূমিকা আছে কি-না সরকার আগে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
তবে সরকারের দুর্নীতি বিরোধী বিশেষ উদ্যোগ। এটা আমরা স্বাগত জানাই। ক্যাসিনোকা-ে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার যে অভিযান পরিচালনা করছে, এটা অত্যন্ত ভাল কাজ বলে মনে করি। এ বিষযে নানা মুনির নানা মত থাকতে পারে কিন্তু এ অভিযান থামিয়ে দিলে দেশে সন্ত্রাস বাড়বে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বলতে কিছু থাকবে না। দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। একমুখী সরকার ব্যবস্থা চলছে, সেটা আমাদের আশার আলো দেখায় না।
এখন কোনো তদন্ত ছাড়াই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। উল্টো সরকার থেকে প্রতিবাদী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেয়া হচ্ছে। অথচ এতদিন ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঘিরে যে অভিযোগ ঘুরছে, তা উত্থাপিত হয়েছে সরকারি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের দ্বারা। তারপর ও সরকারের পক্ষ থেকে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। যদি ভিসি নির্দোষ প্রমাণ হতো তাহলে অভিযোগ উত্থাপনকারী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হতো। বস্তÍত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান আন্দোলনের শুরুতে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিকল্পনা, অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে; স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে। এর মধ্যে টাকা ভাগবাটোয়ারের খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার বা প্রশাসনের কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ না নেওয়ায় আন্দোলন ভিসি বিরোধী হওয়ার পিছনে দায় প্রথমত প্রশাসনের, দ্বিতীয়ত সরকারের।
সরকারে নিষ্কীয়তার কারণেই আন্দোলন এক পর্যায়ে অবরোধ কর্মসুচিতে রুপ নেয়। তারপর ও সরকার সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আর উপাচার্য ছাত্রলীগকে দিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আহত হয়েছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক মাটিতে লুটিয়েছেন। আর নারী শিক্ষার্থীদের তল পেটে লাথি মারা হয়েছে। ভিসি এর পর পুলিশসহ এই আক্রমনকারীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের পেশির জোরে বিশ্ব বিশ্ব বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছেন, জোর-জবর দস্তি করে হল খালি করে দিয়েছেন। কিন্তু বিশ্বজিতকে প্রকাশ্যে, জোবায়েরকে ক্যাম্পাসে, বুয়েটে আবরারকে ঘন্টার পর নির্যাতন করে হত্যা করা যাদের পরিচিতি, টাকার ভাগ কিংবা নকলের দাবীতে স্কুল,কলেজ,বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর হামলা যাদের নিয়মিত কাজ, টেন্ডার, জমি দখল, গদি দখল, নির্যাতন ইত্যাদিতে ভাড়া খেটে যাদের পদোন্নতি;হেলমেট বাহিনী হাতুড়ি বাহিনী হয়ে যারা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ক্ষতবিক্ষত করে, তাদের ছাড়া উপাচার্চের উদ্ধারের পথ থাকে না । তখন তার পদে থাকার ভিত্তি থাকে কীভাবে? এর পর ও সরকার সমাধানের পথ না নিয়ে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে। সেই আক্রান্ত, আহত, রক্তাক্ত শিক্ষদের বিরুদ্ধে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে, অপরিকল্পনা, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, সন্ত্রাস আর অশিক্ষা থেকে মুক্ত করতে দৃটান্ত স্থাপন করেছেন।
আবরারের খুনের জন্য যারা দায়ী তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি করেছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। দাবি মেনে নিয়ে প্রশাসন তা কার্যকর করছে না। এত ঘন্টা নির্যাতন করে একজন শিক্ষার্থীকে খূণ করল যারা,তাদের পৃষ্ঠপোকতা দিয়েছেন উপাচার্যসহ প্রশাসন। সেই প্রশাসনের পরিবর্তে সরকারের হুমকি আসছে নিপীড়ত ভয়ার্ত শিক্ষার্থীদের প্রতি; তাদের বষ্কিারের কথা বলা হচ্ছে। সর্বজন পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয় দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ; অর্থ নয় মেধার ভিত্তিতে সহজে প্রবেশ যোগ্য, সর্বজনের স্বার্থে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায়মুক্ত পরিবেশ তৈরীর, প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারের ভূমিকা দেখে মনে হয়, এসব বিশ্ব বিদ্যালয়কে কাঙ্খিত ভূমিকা পালন করার পরিবর্তেএকচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা তাদের লক্ষ্য। চিন্তাও বুদ্ধি বৃত্তিক জগৎ, তারুণ্য, স্বাধীন মত, এগুলোর সাথে ভয় ছাড়া আর কোন কারণ নেই। তাই হল দখলে রাখা, গণরুম, গেষ্ট রুম সন্ত্রাস, টেন্ডাবাজি ইত্যাদি ঘটে সরকারি দলের পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়ন্ত্রণে রাখার সামগ্রিক নীতিমালা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে। এই কাজ সচ্ছন্দে করার জন্য মাস্তান তোষণকারী, মেরুদণ্ডহীন, লোভি কিছু শিক্ষক। সরকার তাদের দিয়ে প্রশাসন সাজাতে চায়। বিশ্ব বিদ্যালয়ের সব সমস্যার উৎস্য এখানেই। গত কয়েক বছরে এ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সারা দেশে এক দলীয় কর্তৃত্ব,চরম অসহিষুষ্ণতা ও নিপীড়ন কালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে মাস্তানও মেরুদণ্ডহীনদের অবাধ রাজত্ব। গণরুম, গেষ্টরুমের মতো চর্চার সেলসেল গঠন করে নিজেদের ‘রিজার্ভ আর্মি’ বানানো,ভয়ের রাজত্ব তৈরি করে নিজেদের সহযোগী কর্তাদের যথেচ্ছাচার অবাধ করার চেষ্টাই প্রধান। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাণিজ্যকরণ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলের মধ্যে প্রাইভেটাইজেশনের দাপট। দেশে বিশ্ব বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন পুরানো ও নতুন বিশ্ব বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে। সে তুলনায় শিক্ষক, ক্লাস রুম প্রয়োজনীয় উপাকরণের অবিশ্বাস্য ঘাটতির কারণে বহু বিভাগ খুড়িয়ে চলেছে। এর মধ্যে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ কথা সর্বজনবিদিত একজন ভুল শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে তার পরিণতি ৪০বছর কম বেশি সময় ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুল শিক্ষা করে।
সেই শিক্ষার্থীরা আবার শিক্ষক বা পেশাজীবী হয়ে যারা যে ভুল শিক্ষা সাংস্কৃতিতে দিক নির্দেশনা পায়, তা তাই আবার পুনরুৎপাদন করতে থাকে।
আবরারের ভয়ংকর চিত্র প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ও বহু নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ উদ্ধারে এসব লাঠিয়াল বাহিনী ও তার পৃষ্ঠপোষক প্রশাসন নিয়ে সরকারের যথাযথ উদ্যোগের বদলে প্রথমে নিস্ক্রীয়তা, পরে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরকারের আক্রমণাত্মক বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বস্তÍÍত সর্বজন বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার উৎস্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিমালার মধ্যেই।
দেশের চারটি পুরানো বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, জাহাঙ্গীর নগর ও রাজশাহী পরিচালিত হওয়ার কথা ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ দ্বারা। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন কোনটাতে নির্বাচিত উপাচার্য নেই। বাকি ৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হওয়ার আইন দ্বারাই চলছে। সেখানে সব উপাচার্য সরকার নিয়োগ দিয়ে থাকে। এই দুই ধারার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন একাকার। এই তথ্য এখন সবাই জানেন যে, উপাচার্য হতে গেলে সরকারতো বটেই, এমন কী সরকারের লাঠিয়াল সংগঠনের সন্তুষ্টি অর্জন করাই গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে নানা প্রতিষ্ঠানের যাচাই বাছাইয়ের পর সরকার থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়। গোয়েন্দা সংস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয় এবং আচার্য বা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়; এত প্রতিষ্ঠানের ছাকনি দিয়ে তাদের দৃষ্টিতে যোগ্যতম ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা থেকে দেখা যাচ্ছে, উপাচার্য হওয়ার সব চেয়ে বড় যোগ্যতা হচ্ছে সরকারের প্রতি আনুগত্যের অসীম ক্ষমতা। শিক্ষা ও গবেষণার বদলে ক্ষমতা ও অর্থের লোভ, আত্ম সম্মানবোধের অভাব, মাস্তানতোষণ এবং মেরুদ-হীনতাÑ এগুলো বিশেষযোগ্যতা বলে মনে হয়। নইলে সরকারি সমর্থকদের মধ্যে আরো যোগ্য লোক থাকলে বেছে বেছে এ ধরনের লোক কেন নিয়োগ দেয়া হয়?
বরিশাল ও গোপালগঞ্জের ভিসি (উপাচার্য) তাড়া খেয়ে পালিয়েছেন। রংপুরের ভিসি বেশির ভাগ ঢাকায় থাকেন। রাজশাহী পাবনাসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ঘুরছে। বুয়েটের ভিসি শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার পদত্যাগের দাবি সত্ত্বেও গদি আঁকড়ে বসে আছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ব বিদ্যালয়ে সরকার নিয়ন্ত্রিত ভিসি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সরকারি ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে প্রকাশিত দুর্নীতির বড় অভিযোগের পর ও সরকারের কোনো উদ্যোগ ছিল না। বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্র নিয়ে নতুন কিছু বলার কিছু নেই। এখানে রাজনীতি চর্চাটা আশা জাগানিয়া নয়। রাজনীতির ভেতরে বাইরে এখন এমন পরিবেশ বিরাজ করছে, পরস্পর দোষারোপের সংস্কৃতিতে এসে ঠেকেছে। দেশের কোথাও কোনো অঘটন ঘটলে সরকার ও বিরোধী দলের কোনো ভূমিকা আছে কি-না সরকার আগে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
তবে সরকারের দুর্নীতি বিরোধী বিশেষ উদ্যোগ। এটা আমরা স্বাগত জানাই। ক্যাসিনোকা-ে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার যে অভিযান পরিচালনা করছে, এটা অত্যন্ত ভাল কাজ বলে মনে করি। এ বিষযে নানা মুনির নানা মত থাকতে পারে কিন্তু এ অভিযান থামিয়ে দিলে দেশে সন্ত্রাস বাড়বে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বলতে কিছু থাকবে না। দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। একমুখী সরকার ব্যবস্থা চলছে, সেটা আমাদের আশার আলো দেখায় না।
এখন কোনো তদন্ত ছাড়াই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। উল্টো সরকার থেকে প্রতিবাদী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেয়া হচ্ছে। অথচ এতদিন ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঘিরে যে অভিযোগ ঘুরছে, তা উত্থাপিত হয়েছে সরকারি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের দ্বারা। তারপর ও সরকারের পক্ষ থেকে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। যদি ভিসি নির্দোষ প্রমাণ হতো তাহলে অভিযোগ উত্থাপনকারী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হতো। বস্তÍত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান আন্দোলনের শুরুতে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিকল্পনা, অস্বচ্ছতার বিরুদ্ধে; স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে। এর মধ্যে টাকা ভাগবাটোয়ারের খবর প্রকাশিত হয়। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার বা প্রশাসনের কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ না নেওয়ায় আন্দোলন ভিসি বিরোধী হওয়ার পিছনে দায় প্রথমত প্রশাসনের, দ্বিতীয়ত সরকারের।
সরকারে নিষ্কীয়তার কারণেই আন্দোলন এক পর্যায়ে অবরোধ কর্মসুচিতে রুপ নেয়। তারপর ও সরকার সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আর উপাচার্য ছাত্রলীগকে দিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আহত হয়েছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক মাটিতে লুটিয়েছেন। আর নারী শিক্ষার্থীদের তল পেটে লাথি মারা হয়েছে। ভিসি এর পর পুলিশসহ এই আক্রমনকারীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের পেশির জোরে বিশ্ব বিশ্ব বিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছেন, জোর-জবর দস্তি করে হল খালি করে দিয়েছেন। কিন্তু বিশ্বজিতকে প্রকাশ্যে, জোবায়েরকে ক্যাম্পাসে, বুয়েটে আবরারকে ঘন্টার পর নির্যাতন করে হত্যা করা যাদের পরিচিতি, টাকার ভাগ কিংবা নকলের দাবীতে স্কুল,কলেজ,বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর হামলা যাদের নিয়মিত কাজ, টেন্ডার, জমি দখল, গদি দখল, নির্যাতন ইত্যাদিতে ভাড়া খেটে যাদের পদোন্নতি;হেলমেট বাহিনী হাতুড়ি বাহিনী হয়ে যারা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ক্ষতবিক্ষত করে, তাদের ছাড়া উপাচার্চের উদ্ধারের পথ থাকে না । তখন তার পদে থাকার ভিত্তি থাকে কীভাবে? এর পর ও সরকার সমাধানের পথ না নিয়ে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে। সেই আক্রান্ত, আহত, রক্তাক্ত শিক্ষদের বিরুদ্ধে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে, অপরিকল্পনা, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, সন্ত্রাস আর অশিক্ষা থেকে মুক্ত করতে দৃটান্ত স্থাপন করেছেন।
আবরারের খুনের জন্য যারা দায়ী তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি করেছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। দাবি মেনে নিয়ে প্রশাসন তা কার্যকর করছে না। এত ঘন্টা নির্যাতন করে একজন শিক্ষার্থীকে খূণ করল যারা,তাদের পৃষ্ঠপোকতা দিয়েছেন উপাচার্যসহ প্রশাসন। সেই প্রশাসনের পরিবর্তে সরকারের হুমকি আসছে নিপীড়ত ভয়ার্ত শিক্ষার্থীদের প্রতি; তাদের বষ্কিারের কথা বলা হচ্ছে। সর্বজন পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয় দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ; অর্থ নয় মেধার ভিত্তিতে সহজে প্রবেশ যোগ্য, সর্বজনের স্বার্থে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণায়মুক্ত পরিবেশ তৈরীর, প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারের ভূমিকা দেখে মনে হয়, এসব বিশ্ব বিদ্যালয়কে কাঙ্খিত ভূমিকা পালন করার পরিবর্তেএকচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা তাদের লক্ষ্য। চিন্তাও বুদ্ধি বৃত্তিক জগৎ, তারুণ্য, স্বাধীন মত, এগুলোর সাথে ভয় ছাড়া আর কোন কারণ নেই। তাই হল দখলে রাখা, গণরুম, গেষ্ট রুম সন্ত্রাস, টেন্ডাবাজি ইত্যাদি ঘটে সরকারি দলের পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়ন্ত্রণে রাখার সামগ্রিক নীতিমালা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে। এই কাজ সচ্ছন্দে করার জন্য মাস্তান তোষণকারী, মেরুদণ্ডহীন, লোভি কিছু শিক্ষক। সরকার তাদের দিয়ে প্রশাসন সাজাতে চায়। বিশ্ব বিদ্যালয়ের সব সমস্যার উৎস্য এখানেই। গত কয়েক বছরে এ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সারা দেশে এক দলীয় কর্তৃত্ব,চরম অসহিষুষ্ণতা ও নিপীড়ন কালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে মাস্তানও মেরুদণ্ডহীনদের অবাধ রাজত্ব। গণরুম, গেষ্টরুমের মতো চর্চার সেলসেল গঠন করে নিজেদের ‘রিজার্ভ আর্মি’ বানানো,ভয়ের রাজত্ব তৈরি করে নিজেদের সহযোগী কর্তাদের যথেচ্ছাচার অবাধ করার চেষ্টাই প্রধান। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বাণিজ্যকরণ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলের মধ্যে প্রাইভেটাইজেশনের দাপট। দেশে বিশ্ব বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন পুরানো ও নতুন বিশ্ব বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে। সে তুলনায় শিক্ষক, ক্লাস রুম প্রয়োজনীয় উপাকরণের অবিশ্বাস্য ঘাটতির কারণে বহু বিভাগ খুড়িয়ে চলেছে। এর মধ্যে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ কথা সর্বজনবিদিত একজন ভুল শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হলে তার পরিণতি ৪০বছর কম বেশি সময় ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুল শিক্ষা করে।
সেই শিক্ষার্থীরা আবার শিক্ষক বা পেশাজীবী হয়ে যারা যে ভুল শিক্ষা সাংস্কৃতিতে দিক নির্দেশনা পায়, তা তাই আবার পুনরুৎপাদন করতে থাকে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
নুর হোসেন ১২/১২/২০১৯আপনি সাহসী লেখক, শুভ কামনা রইলো।
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১২/১২/২০১৯খুব সুন্দর একটি প্রতিবেদন!