www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গুড়

‘ঠিলে ধুয়ে দেরে বউ গাছ কাটতে যাব।’ শীত মৌসুম এলেই গাছি ভাইদের নিয়ে লেখা পল্লী অঞ্চলের এই গানটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় খেজুর রসের কথা। কনকনে শীতে সুমিষ্ট আর সুস্বাদু খেজুর রসের সাথে মৌসুমের শুরুতে বাজারে আসতে শুরু করে লোভনীয় খেজুরের গুড়। নতুন গুড়ের রকমারি পিঠা-পুলির আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়া পল্লী বধূদের চিরাচরিত রীতি। শহরের বাসিন্দারাও লোভনীয় এ পর্ব থেকে বাদ পড়তে চায় না। ঝুঁকে পড়ে খেজুর রস আর গুড়ের উপর। কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাবত খেজুর রসের দেখা মেলা ভার। গ্রামে-গঞ্জে এখন আর সেই গাছীদের দেখা মেলে না। তবে শীত এলেই বাজারে খেজুর গুড়ে সয়লাব। রসের খবর নেই অথচ বাজারে এত তরতাজা খেজুরের গুড় আসছে কোত্থেকে? খেজুর গুড়ের নামে আমরা এসব কি খাচ্ছি? এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে খেজুরের গুড়ের নামে যা বিক্রি হচ্ছে তার অধিকাংশই চিনি দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি। শীত মৌসুম এলেই এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সামান্য খেজুরের গুড়ের সাথে চিনি ও ফ্লেভার মিশিয়ে খাঁটি খেজুরের গুড় নামে বিক্রি করছে। ৫০ টাকা কেজি দরের চিনি দিয়ে তৈরি উক্ত গুড় ১শ’ থেকে দেড়শ’ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যা ক্রেতাদের সাথে বড় ধরনের প্রতারণা। খুলনার বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীদের দোকানে বর্তমানে এসব ভেজাল গুড়ে সয়লাব হয়ে গেছে। এদিকে পাইকারী বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুরের গুড়। খুচরা বাজারগুলোতে দ্বিগুণ দামে খেজুরের গুড় বিক্রি করলেও কর্তৃপক্ষের নেই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয় তাহলে ভেজাল গুড়ের মাত্রা অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক ভোক্তা।

গতকাল নগরীর বড় বাজার ভৈরব স্ট্যান্ড রোডস্থ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেজি প্রতি মুছি গুড় ৫৫ থেকে ৭০ টাকা এবং ঠিলেতে রাখা গুড় (দানা) ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ খুচরা বাজারগুলোতে কেজি প্রতি মুছি গুড় ১২০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং ঠিলেই রাখা গুড় ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। পাইকারী বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি মুছি গুড় অন্তত ১০০ টাকা এবং ঠিলের গুড় ৭৫ থেকে ৮০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

গুড় ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সাধারণত অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ মাস পর্যন্ত খেজুর গুড়ের চাহিদা থাকে। নাটোর, গোপালপুর, বনপাড়া, আরানি, দয়ারামপুর, রাজশাহী, মালঞ্চি, বানেশ্বর, ঈশ্বরদী, আড়ানী, ওয়ালিয়া, আনসারবাড়িসহ বিভিন্ন অঞ্চলের গুড় নগরীর বড় বাজারের চাহিদা মেটায়। আর ভেজাল গুড় বাজারে থাকার বিষয়টি তারা স্বীকার করলেও এর উৎস সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে চাননি। নগরীর হেলাতলা রোডস্থ মেসার্স মনির এন্ড ব্রাদার্সে গুড় কিনতে আসেন মোঃ শহিদুল ইসলাম। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি এক কেজি খেজুরের পাটালী গুড় কিনেছি ১৫০ টাকা দিয়ে।’ একই দোকানে গুড় কিনতে আসেন বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমি দুই কেজি খেজুরের (পাটালী) গুড় কিনেছি ৩০০ টাকায়।

নগরীর বড় বাজার ভৈরব স্ট্যান্ড রোডস্থ মেসার্স লাকী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘বিভিন্ন অঞ্চলের গুড় খুলনার চাহিদা মিটিয়ে আসছে। নগরীর বড় বাজারে প্রতি সপ্তাহে দুই ট্রাক করে গুড় আসে। বড় বাজার ভৈরব স্ট্যান্ড রোডস্থ মেসার্স ঘোষ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী বনমালি মন্ডল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিভিন্ন অঞ্চলের গুড় আমাদের বড় বাজারের চাহিদা মেটায়। তবে নাটোর, গোপালপুর, বনপাড়া, আরানি, রামপুর, রাজশাহী, মালঞ্চি, বানেশ্বর, ঈশ্বরদী, আড়ানী, ওয়ালিয়া অঞ্চল থেকে মুছিগুড় (পাটালি) আসে। শুধুমাত্র আনসারবাড়ি অঞ্চল থেকেই ঠিলেতে রাখা গুড় খুলনার বড় বাজারে আসে।’
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৪৮৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/০৪/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast