পবিত্র আমানত
আমানত সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে ও রাসূলের হাদীসে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে তাকিদ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমরা প্রথমে আল্লাহর কুরআন ও রাসূলুল্লাহর (সা.) বাণী উপলব্ধি করার চেষ্টা করবো। সূরা নিসার ৫৮ নং আয়াতে রাব্বুল আলামিন নির্দেশ দিচ্ছেন- “আন তুয়াদ্দুল আমানাতি ইলা আহলিহা।” যাবতীয় আমানত উহার উপযোগী লোকদের নিকট সমর্পণ করে দাও।” এখানে আল্লাহ জাল্লাজালালুহু আমানত আদায়ের হুকুম দিচ্ছেন। এতে জানা গেল আমানত আদায় কোনো মামুলী বিষয় নয়, বরং তা হচ্ছে আল্লাহর ফরজগুলোর মধ্যে একটি। আর আমানত আদায় একটি কঠিন ফরজও বটে। এ সম্পর্কে আল্লাহর আয়াত শুনুন। সূরা আহযাবের ৭২নং আয়াতে রাব্বুল আলামিন বলেন, “নিশ্চয়ই আমরা এ আমানত আসমান জমিন ও পাহাড়-পর্বতের সামনে পেশ করলাম, তারা এটা বহন করতে প্রস্তুত হলো না, বরং তারা ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু মানুষ তা তাঁর নিজের ঘাড়ে তুলে নিল। মানুষ যে বড় জালেম ও মূর্খ তাতে সন্দেহ নেই।”
এখানে মানব জাতির প্রাপ্ত আল্লাহর দেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত প্রসঙ্গেই বলা হয়েছে। সে নিয়ামত আমানত হিসেবে হেফাজত করার জন্য রহমানুর রাহীম আসমান, জমিন, পাহাড়-পর্বতকে দিয়েছিলেন। তাঁরা এ আমানত খেয়ানতের আশঙ্কায় ভয় পেয়ে গেল। এ দায়িত্ব নিতে সাহস করল না। মানুষ হিম্মত করে এগিয়ে এলো এ দায়িত্ব নেয়ার জন্যে। কিন্তু মানুষের মূর্খতার কারণে, সীমা লংঘনের কারণে মানুষ ভুলে বসল এ দায়িত্ব। খেয়ানত করতে শুরু করলো এ মহান আমানতের। এ নিয়ামত যা তাদেরকে দুনিয়ার শাস্তি ও আখিরাতের নাজাত দিতে পারে তাকে ভুলে থাকলে। শান্তির জন্য ছুটল দূর-দূরান্তরে অথচ শান্তির যাবতীয় বিধান তাঁর ঘরেই গেলাফে বাঁধা।
আমানতের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মুনাফিকের তিনটি প্রধান দোষের মধ্যে অন্যতম হলো সে হয় আমানতের খেয়ানতকারী।” (হজতর আবু হুরাইরা : বুখারী ও মুসলিম)।
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের অন্য একটি দীর্ঘ হাদীসের সার নির্যাস হলো হজরত যোবায়েরের (রা.) নিকট যদি কেউ আমানত রাখার জন্যে আসত, খেয়ানতের আশংকায় তিনি আমানত হিসেবে না রেখে কর্জ হিসেবে রাখতেন, যাতে নষ্ট হলেও তাঁর নিজের পকেট থেকেই যায়।
আমানত কেন রক্ষা করতে হবে? আল্লাহর বিধানরূপ আমানতের দুর্বহ বোঝা আসমান, জমিন, পাহাড়-পর্বত তথা অন্য কোনো জিনিস বহন করতে রাজি না হওয়ার মধ্যেই এ প্রশ্নের জবাব রয়েছে। আসলে এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহন করার ক্ষমতা একমাত্র আশরাফুল মাখলুকাত শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষেরই রয়েছে। আর মানুষের সমাজের সুখ নির্ভরতা নিশ্চিন্ততা নির্ভর করছে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস, বিশ্বস্ততা তথা আমানতের ওপর। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা হুকুম দিচ্ছেন আমানত আদায়ের জন্য। ‘ইন্নাল্লাহা ইয়ামুরুকুম আনতুয়াদ্দুল আমানাতি ইলা আহলিহা।’ এ হুকুমের কারণে আমানত আদায় করার সময় আমাদেরকে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। অপাত্রে দানের অশুভ পরিণাম থেকে বাঁচতে হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতির সুখ-সুবিধার জন্যই অন্যান্য সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। তাই ঐ সকল নিয়ামত আমাদের ভোগের জন্যে, ব্যবহারের জন্য, আরামের জন্য।
এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে আল্লাহর সকল নিয়ামতকেই আমানত হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত অপব্যয় অপচয় করলে খেয়ানত হবে। অপব্যয়কারীকে কুরআনুল কারিমে শয়তানের ভাই বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কত শত নিয়ামতের সমন্বয়ে মানব শরীর সৃষ্টি করেছেন। কত বিচিত্র অংগ যন্ত্র, কত সুষম শক্তি সামর্থ্য এসবই প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে নিকটতম অথচ অমূল্য আমানত। কথায় আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই। দাঁতটা একটি নিয়ামত। আমানত হিসেবে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে এর হেফাজত ও পরিচর্যার জন্যও ইসলামী বিধানে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
রাসূলূল্লাহ (সা.) প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচবার দাঁত সাফ করতে বলেছেন। অর্থাৎ প্রত্যেক ফরজ নামাজের সাথে একে সম্পর্কিত করে দিয়েছেন, এর গুরুত্ব বিবেচনা করে। এখন ধরুন আমরা নিয়মিত তেমনটি দাঁতের যতœ যদি না নেইÑ এর জন্য আমরা গুনাহগার হবো, কষ্ট পাবো। মুখের দুর্গন্ধ অকালে দাঁত পড়া, যার কারণে খাওয়ার মজা না পাওয়া ইত্যাকার সব দুনিয়ার কষ্ট আর রাসূল (সা.)-এর হুকুম না মানার ফলেই দুনিয়াতে আমাদের এতসব ক্ষতি। আখিরাতেও এ জন্যে এই খেয়ানতের জন্যে বদের পাল্লায় গুনাহ রাখা হবে। যা দুনিয়ার ক্ষতি থেকে লক্ষ কোটি গুণ বেশি। এ একটি উদাহরণ থেকে আমরা বুঝতে পারিÑ আমাদের শরীরে দেখার জন্য চোখ, শুনার জন্য কান, ধরার জন্য হাত, চলার জন্যে পা, খাওয়ার জন্য মুখ, বুঝার জন্যে মস্তিষ্ক কত শত হাজার নেয়ামত আমানত হিসেবে শরীরে দিয়ে দেয়া হয়েছে। দাঁতের মতো এগুলোর হেফাজতের বিধানও আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা.) বলে দিয়েছেন। খেয়ানত করলে দুনিয়াতেও কষ্ট পেতে হবে আবার আখিরাতেও কষ্ট পেতে হবে। আর আমাদের জানাই আছে আখিরাতে বেহেস্তে যারা থাকবে, তাদের কোনো কষ্ট হবে না। তাই যাদের সেখানে কষ্ট হবে তাঁরা জান্নাত পায়নিÑ জান্নাত হারিয়েছে, এটাই ধরে নিতে হবে।
অন্যান্য বিশেষ আমানতের মধ্যে রয়েছে আমাদের দীন ধর্ম, দীন ইসলাম। এ আমানতকে জান ও মাল দিয়ে হেফাজত করার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। “ওয়াতুজাহিদুনা ফি সাবিলিল্লাহি বি আমওয়ালিকুম ওয়া আনফুসিকুম।” এটাকেই বলে জিহাদ সর্বশক্তি দিয়ে সংগ্রাম। আর এর পুরস্কারও সবচেয়ে বড়। তাহলো দুনিয়ায় ইসলামের বিজয় আর আখিরাতে মুজাহিদের জান্নাত লাভ।
প্রত্যেক জাতির কাছে জাতীয় স্বাধীনতাও একটা মহান আমানত। এ আমানতও রক্ষা পাবে না জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া। আমরা সবেমাত্র স্বাধীন হয়েছি এক নদী রক্ত ও অনেক অনেক মাল কুরবানী দিয়ে। এ আমানত রক্ষা করতেও আমাদেরকে দিতে হবে বড় রকমের মূল্য। জান ও মালের হিসাবে এ ত্যাগ আর কুরবানী করতে যদি আমরা রাজি না হই, তাহলে মহান স্বাধীনতাও শেষতক খুইয়ে গোলাম বনতে হবে।
শক্তি-ক্ষমতাও এক বড় ধরনের আমানত। পরিবারের কর্তা, গাঁয়ের মোড়ল, মাতব্বর, সমাজপতি, রাষ্ট্রপতি বা দেশের প্রেসিডেন্ট এরা সবাই আমানতদার। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কুল্লুকুম রাইন অকুল্লুকুম মাসইলন আন রায়াতিহি।” তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং সকলকেই তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে আখিরাতে জিজ্ঞাসা করা হবে। মানে আখিরাতে সকলকেই তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে হিসাব দিতে হবে। এখানে আমরা কর্তা-নেতাদের জবাবদিহি সম্পর্কে জানলাম। এ প্রসঙ্গে মনে একটা প্রশ্ন আসতে পারে। কর্তা-নেতা কেমন করে হয়। আনুগত্য প্রকাশের পদ্ধতি যা রাসূল (সা.) দেখিয়ে গেছেন তা হলো যাকে নেতা বলে স্বীকার করা হবে, তার নিকটে বসে প্রথমে আনুগত্য স্বীকার করতে হবে। এটাকেই বলে বাইয়াত বা আনুগত্যের শপথ এবং পরে নেতার সাথে এ সম্পর্ক রক্ষা করে চললেই বুঝতে হবে বাইয়াত রক্ষা হচ্ছে। বাইয়াত বা আনুগত্যের শপথও একটা গুরুত্বপূর্ণ আমানত। এ ক্ষেত্রে বাস্তবে আমরা কি দেখি, অত্যন্ত আস্থাভাজন ও ভক্তিভাজন, শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির নিকটই মানুষ আনুগত্যের শপথ করে থাকে। সর্বকালের জন্যই এটা সত্য। আল্লাহর রাসূলদের থেকে উন্নত চরিত্রের মানুষ আর কেউ নেই। অজ্ঞতার কারণে যারা তাদেরকে বুঝতে পারেনি, তাঁরা তাদেরকে নেতা বলে স্বীকার করেনি, আনুগত্যের শপথ করেনি, বাইয়াত করেনি, এ থেকে পরিষ্কার হলো নেতা মানার জন্য আস্থাভাজন হতে হবে। বুদ্ধিমান সচেতন মানুষ যার ওপর আস্থা রাখতে পারে না, যাকে বিশ্বাস করতে পারে না, তাকে কখনো নেতা বলে স্বীকার করে না, তাঁর আনুগত্যের শপথ করে না।
বর্তমানকালে আস্থা যাচাইয়ে ছোটখাটো ক্ষেত্রে হাত তুলতে বলা হয়। এমনটি করা হয় কারণ, এটা আস্থা যাচাইয়ের সহজ পদ্ধতি অবশ্য বৃহত্তর ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে এ পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব নয়। তাছাড়া গোপনীয়তাও এ ক্ষেত্রে একালে জরুরি হয়ে পড়েছে। সে কারণে বর্তমানে গোপনে লিখিতভাবে আনুগত্যের শপথ জানানো হয়Ñ যাকে প্রচলিত কথায় বলে আস্থা ভোট। মানে যে নির্ভরশীল, শ্রদ্ধাভাজন আস্থাভাজন, সৎ, যোগ্যতম লিখিতভাবে তাকে নেতা মেনে নিচ্ছি। তাঁর আনুগত্যের শপথ করছি, তাকেই ভোট দিচ্ছি।
এ থেকেই বুঝা গেল ভোট কত বড় আমানত। যেহেতু এ আমানত বিরাট জাতীয় পর্যায়ের তা খেয়ানত হলে জাতির প্রত্যেক ব্যক্তি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি সার্বিকভাবে সর্বদিক ও বিভাগে জাতি ক্ষতির শিকার হবে। জাতির প্রত্যেক ধর্ম-কর্ম-স্বাধীনতা-সম্পদ নষ্ট হওয়ার, বানচাল হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। এ আমানতের গুরুত্ব জাতির কাছে পরিষ্কার। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যথাসময়ে স্মরণ করিয়ে দেয়াই প্রকৃত বন্ধুর কাজ।
এখানে মানব জাতির প্রাপ্ত আল্লাহর দেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত প্রসঙ্গেই বলা হয়েছে। সে নিয়ামত আমানত হিসেবে হেফাজত করার জন্য রহমানুর রাহীম আসমান, জমিন, পাহাড়-পর্বতকে দিয়েছিলেন। তাঁরা এ আমানত খেয়ানতের আশঙ্কায় ভয় পেয়ে গেল। এ দায়িত্ব নিতে সাহস করল না। মানুষ হিম্মত করে এগিয়ে এলো এ দায়িত্ব নেয়ার জন্যে। কিন্তু মানুষের মূর্খতার কারণে, সীমা লংঘনের কারণে মানুষ ভুলে বসল এ দায়িত্ব। খেয়ানত করতে শুরু করলো এ মহান আমানতের। এ নিয়ামত যা তাদেরকে দুনিয়ার শাস্তি ও আখিরাতের নাজাত দিতে পারে তাকে ভুলে থাকলে। শান্তির জন্য ছুটল দূর-দূরান্তরে অথচ শান্তির যাবতীয় বিধান তাঁর ঘরেই গেলাফে বাঁধা।
আমানতের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মুনাফিকের তিনটি প্রধান দোষের মধ্যে অন্যতম হলো সে হয় আমানতের খেয়ানতকারী।” (হজতর আবু হুরাইরা : বুখারী ও মুসলিম)।
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের অন্য একটি দীর্ঘ হাদীসের সার নির্যাস হলো হজরত যোবায়েরের (রা.) নিকট যদি কেউ আমানত রাখার জন্যে আসত, খেয়ানতের আশংকায় তিনি আমানত হিসেবে না রেখে কর্জ হিসেবে রাখতেন, যাতে নষ্ট হলেও তাঁর নিজের পকেট থেকেই যায়।
আমানত কেন রক্ষা করতে হবে? আল্লাহর বিধানরূপ আমানতের দুর্বহ বোঝা আসমান, জমিন, পাহাড়-পর্বত তথা অন্য কোনো জিনিস বহন করতে রাজি না হওয়ার মধ্যেই এ প্রশ্নের জবাব রয়েছে। আসলে এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহন করার ক্ষমতা একমাত্র আশরাফুল মাখলুকাত শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষেরই রয়েছে। আর মানুষের সমাজের সুখ নির্ভরতা নিশ্চিন্ততা নির্ভর করছে পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস, বিশ্বস্ততা তথা আমানতের ওপর। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা হুকুম দিচ্ছেন আমানত আদায়ের জন্য। ‘ইন্নাল্লাহা ইয়ামুরুকুম আনতুয়াদ্দুল আমানাতি ইলা আহলিহা।’ এ হুকুমের কারণে আমানত আদায় করার সময় আমাদেরকে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে। অপাত্রে দানের অশুভ পরিণাম থেকে বাঁচতে হবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতির সুখ-সুবিধার জন্যই অন্যান্য সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন। তাই ঐ সকল নিয়ামত আমাদের ভোগের জন্যে, ব্যবহারের জন্য, আরামের জন্য।
এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে আল্লাহর সকল নিয়ামতকেই আমানত হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত অপব্যয় অপচয় করলে খেয়ানত হবে। অপব্যয়কারীকে কুরআনুল কারিমে শয়তানের ভাই বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কত শত নিয়ামতের সমন্বয়ে মানব শরীর সৃষ্টি করেছেন। কত বিচিত্র অংগ যন্ত্র, কত সুষম শক্তি সামর্থ্য এসবই প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে নিকটতম অথচ অমূল্য আমানত। কথায় আছে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা নেই। দাঁতটা একটি নিয়ামত। আমানত হিসেবে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে এর হেফাজত ও পরিচর্যার জন্যও ইসলামী বিধানে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
রাসূলূল্লাহ (সা.) প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচবার দাঁত সাফ করতে বলেছেন। অর্থাৎ প্রত্যেক ফরজ নামাজের সাথে একে সম্পর্কিত করে দিয়েছেন, এর গুরুত্ব বিবেচনা করে। এখন ধরুন আমরা নিয়মিত তেমনটি দাঁতের যতœ যদি না নেইÑ এর জন্য আমরা গুনাহগার হবো, কষ্ট পাবো। মুখের দুর্গন্ধ অকালে দাঁত পড়া, যার কারণে খাওয়ার মজা না পাওয়া ইত্যাকার সব দুনিয়ার কষ্ট আর রাসূল (সা.)-এর হুকুম না মানার ফলেই দুনিয়াতে আমাদের এতসব ক্ষতি। আখিরাতেও এ জন্যে এই খেয়ানতের জন্যে বদের পাল্লায় গুনাহ রাখা হবে। যা দুনিয়ার ক্ষতি থেকে লক্ষ কোটি গুণ বেশি। এ একটি উদাহরণ থেকে আমরা বুঝতে পারিÑ আমাদের শরীরে দেখার জন্য চোখ, শুনার জন্য কান, ধরার জন্য হাত, চলার জন্যে পা, খাওয়ার জন্য মুখ, বুঝার জন্যে মস্তিষ্ক কত শত হাজার নেয়ামত আমানত হিসেবে শরীরে দিয়ে দেয়া হয়েছে। দাঁতের মতো এগুলোর হেফাজতের বিধানও আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (সা.) বলে দিয়েছেন। খেয়ানত করলে দুনিয়াতেও কষ্ট পেতে হবে আবার আখিরাতেও কষ্ট পেতে হবে। আর আমাদের জানাই আছে আখিরাতে বেহেস্তে যারা থাকবে, তাদের কোনো কষ্ট হবে না। তাই যাদের সেখানে কষ্ট হবে তাঁরা জান্নাত পায়নিÑ জান্নাত হারিয়েছে, এটাই ধরে নিতে হবে।
অন্যান্য বিশেষ আমানতের মধ্যে রয়েছে আমাদের দীন ধর্ম, দীন ইসলাম। এ আমানতকে জান ও মাল দিয়ে হেফাজত করার জন্য পবিত্র কুরআন শরীফেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। “ওয়াতুজাহিদুনা ফি সাবিলিল্লাহি বি আমওয়ালিকুম ওয়া আনফুসিকুম।” এটাকেই বলে জিহাদ সর্বশক্তি দিয়ে সংগ্রাম। আর এর পুরস্কারও সবচেয়ে বড়। তাহলো দুনিয়ায় ইসলামের বিজয় আর আখিরাতে মুজাহিদের জান্নাত লাভ।
প্রত্যেক জাতির কাছে জাতীয় স্বাধীনতাও একটা মহান আমানত। এ আমানতও রক্ষা পাবে না জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়া। আমরা সবেমাত্র স্বাধীন হয়েছি এক নদী রক্ত ও অনেক অনেক মাল কুরবানী দিয়ে। এ আমানত রক্ষা করতেও আমাদেরকে দিতে হবে বড় রকমের মূল্য। জান ও মালের হিসাবে এ ত্যাগ আর কুরবানী করতে যদি আমরা রাজি না হই, তাহলে মহান স্বাধীনতাও শেষতক খুইয়ে গোলাম বনতে হবে।
শক্তি-ক্ষমতাও এক বড় ধরনের আমানত। পরিবারের কর্তা, গাঁয়ের মোড়ল, মাতব্বর, সমাজপতি, রাষ্ট্রপতি বা দেশের প্রেসিডেন্ট এরা সবাই আমানতদার। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “কুল্লুকুম রাইন অকুল্লুকুম মাসইলন আন রায়াতিহি।” তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং সকলকেই তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে আখিরাতে জিজ্ঞাসা করা হবে। মানে আখিরাতে সকলকেই তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে হিসাব দিতে হবে। এখানে আমরা কর্তা-নেতাদের জবাবদিহি সম্পর্কে জানলাম। এ প্রসঙ্গে মনে একটা প্রশ্ন আসতে পারে। কর্তা-নেতা কেমন করে হয়। আনুগত্য প্রকাশের পদ্ধতি যা রাসূল (সা.) দেখিয়ে গেছেন তা হলো যাকে নেতা বলে স্বীকার করা হবে, তার নিকটে বসে প্রথমে আনুগত্য স্বীকার করতে হবে। এটাকেই বলে বাইয়াত বা আনুগত্যের শপথ এবং পরে নেতার সাথে এ সম্পর্ক রক্ষা করে চললেই বুঝতে হবে বাইয়াত রক্ষা হচ্ছে। বাইয়াত বা আনুগত্যের শপথও একটা গুরুত্বপূর্ণ আমানত। এ ক্ষেত্রে বাস্তবে আমরা কি দেখি, অত্যন্ত আস্থাভাজন ও ভক্তিভাজন, শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তির নিকটই মানুষ আনুগত্যের শপথ করে থাকে। সর্বকালের জন্যই এটা সত্য। আল্লাহর রাসূলদের থেকে উন্নত চরিত্রের মানুষ আর কেউ নেই। অজ্ঞতার কারণে যারা তাদেরকে বুঝতে পারেনি, তাঁরা তাদেরকে নেতা বলে স্বীকার করেনি, আনুগত্যের শপথ করেনি, বাইয়াত করেনি, এ থেকে পরিষ্কার হলো নেতা মানার জন্য আস্থাভাজন হতে হবে। বুদ্ধিমান সচেতন মানুষ যার ওপর আস্থা রাখতে পারে না, যাকে বিশ্বাস করতে পারে না, তাকে কখনো নেতা বলে স্বীকার করে না, তাঁর আনুগত্যের শপথ করে না।
বর্তমানকালে আস্থা যাচাইয়ে ছোটখাটো ক্ষেত্রে হাত তুলতে বলা হয়। এমনটি করা হয় কারণ, এটা আস্থা যাচাইয়ের সহজ পদ্ধতি অবশ্য বৃহত্তর ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে এ পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব নয়। তাছাড়া গোপনীয়তাও এ ক্ষেত্রে একালে জরুরি হয়ে পড়েছে। সে কারণে বর্তমানে গোপনে লিখিতভাবে আনুগত্যের শপথ জানানো হয়Ñ যাকে প্রচলিত কথায় বলে আস্থা ভোট। মানে যে নির্ভরশীল, শ্রদ্ধাভাজন আস্থাভাজন, সৎ, যোগ্যতম লিখিতভাবে তাকে নেতা মেনে নিচ্ছি। তাঁর আনুগত্যের শপথ করছি, তাকেই ভোট দিচ্ছি।
এ থেকেই বুঝা গেল ভোট কত বড় আমানত। যেহেতু এ আমানত বিরাট জাতীয় পর্যায়ের তা খেয়ানত হলে জাতির প্রত্যেক ব্যক্তি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি সার্বিকভাবে সর্বদিক ও বিভাগে জাতি ক্ষতির শিকার হবে। জাতির প্রত্যেক ধর্ম-কর্ম-স্বাধীনতা-সম্পদ নষ্ট হওয়ার, বানচাল হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। এ আমানতের গুরুত্ব জাতির কাছে পরিষ্কার। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যথাসময়ে স্মরণ করিয়ে দেয়াই প্রকৃত বন্ধুর কাজ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ন্যান্সি দেওয়ান ০২/০১/২০১৯Valo legeche.