www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

যে যুদ্ধে চলছে

কিছুদিন আগে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরে গেলে নেতা-কর্মীরা কেউ দেশে থাকতে পারবে না। এবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল সাহেব বললেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রথম দিনেই এক লাখ মানুষ মারা যাবে। এর মানে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম দিনেও মানুষ মারা যাবে। নির্বাচনের রেজাল্ট ঘোষণার পর থেকে দেশে মানুষ মরতেই থাকবে। বিএনপি যদি জিতে যায় এবং পাঁচ বছর ক্ষমতায় কোনওরকমে টিকে থাকতে পারে তাহলে এখনকার ক্ষমতাসীনরা সাফ হয়ে যাবেন। এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করছেন তাঁরা। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের এমন বক্তব্য অমূলক বলে উড়িয়ে দেবার কি কোনও কারণ থাকতে পারে? নিশ্চয়ই না। ঝানু এবং অভিজ্ঞ নেতা ও মন্ত্রী সাহেবরা অনেক অভিজ্ঞ। তাই তাঁরা অভিজ্ঞতার আলোকে কথা বলবেন এমনটা ধারণা করে নেয়াই স্বাভাবিক।
তবে প্রভাবশালী মন্ত্রীদের অস্থিরতা অনুভাব করা যাচ্ছে। নির্বাচনের সময় যতো এগিয়ে আসছে, অস্থিরতার মাত্রাও যেন ততো বাড়ছে। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা এবং তখনকার জাঁদরেল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.কামাল হোসেন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচন নাও হতে পারে। এমন ঘটলে সত্যই তা হবে গণতন্ত্রের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। নির্বাচন হবে না বা হতে দেয়া যাবে না, এমন চিন্তা দেশের সচেতন নাগরিকরা ভাবতে চান না। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন, নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না।
বিএনপি ভোট ঠেকাতে চায় তা ঠিক নয়। কারণ ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশাল সমাবেশে নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তবে যদি বেগম জিয়াকে কারামুক্ত করা সম্ভব না হয় তখন এমন ভাবা যেতে পারে। হ্যাঁ, ক্ষমতাসীনরা চাচ্ছেন, বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে। কারণ বিএনপি ছাড়া ক্ষমতাসীনদের আর কোনও ভয় নেই।
ক্ষমতাসীনরা বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন যে, ৫ জানুয়ারির মতো ফাঁকামাঠে গোল দেয়া আর সম্ভব নয়। তাই তাঁরা লীগ নেতাকর্মীদের মাঠ দখল করে রাখতে হুকুম দিচ্ছেন। বলছেন, ভোটে না জিততে পারলে কারুর পিঠের চামড়া কিন্তু থাকবে না।
ক্ষমতাসীনদের উদ্বেগ দেখে মনে হচ্ছে, তাঁদের অতীত খুব বেশি করে মনে পড়ছে। রাতে ঘুম হচ্ছে খুব কম। প্রায় দুই টার্ম ক্ষমতায় থেকে দুইহাতে যা উপার্জন করেছেন তার সিংহভাগ বিদেশে জমিয়েছেন। বাড়িঘর করেছেন সেগুলো ধরে রাখা সম্ভব কিনা তাও বড় দুশ্চিন্তার কারণ। এজন্য আবারও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা তাঁদের জন্য জরুরি। অন্যথায় পায়ের তলা থেকে মেদেনি সরে যাবে। ঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই যে করেই হোক ক্ষমতা তাঁদের ধরে রাখতেই হবে।
দশ বছরে উন্নয়নের দাপটে দেশ ভেসে গেছে। এর ধারাবাহিকতা থাকবে না ক্ষমতা বিএনপির হাতে গেলে। জনগণকে এমন বার্তা বারবারই দেয়া হচ্ছে শীর্ষাসন থেকেও। প্রতিদিন ধরপাকড় চলছে। শতশত মানুষকে ইয়াবার মামলা দেয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসের অভিযোগ আনা হচ্ছে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে। দিনের পর দিন নেয়া হচ্ছে রিমান্ডে। ঘুমোতে পাচ্ছেন না নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতা ইলিয়াসকে আর পাওয়াই গেল না। শাহ আলমেরও খোঁজ হলো না। শুধু এই দু'জনই নন, সারাদেশে আরও অনেক ইলিয়াস-শাহ আলম নিখোঁজ হয়েছেন। গুম হয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত হলে এসবের হিসেব চুকোতে হবে। তাইতো এতো অস্থিরতা আর উদ্বেগ তাঁদের দিনরাত তাড়া করছে। বিএনপির লোকজন তাদের রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে মেরে দেবে। এ ভয় তাদের সবার মনে শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাংলাভাষায় একটা পুরনো প্রবাদ আছে। প্রবাদটা বেশ মশহুর। সেটা আমি বলতে চাইনি। কারণ বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সম্পর্কে আমার উচ্চ ধারণা বরাবরই। যে দলের নেতৃত্বে স্বাধীনতার মতো মহার্ঘ অর্জনে সক্ষম হয়েছি আমরা, সেদল সম্পর্কে অশোভন উক্তি করা একদমই অনুচিত বলে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের বর্তমান ছটপটানি দেখে সেই প্রবাদই কেন জানি বারবার মনে পড়ছে। ঘুরেফিরে ঠোঁটেমুখে উঁকি মারছে। চোর আর পুলিশ বিষয়ক সেই প্রবাদটা। মানে অপরাধীর অপরাধবোধ এবং পুলিশের কাছে ধরা পড়বার আশঙ্কা। না থাক। সরাসরি সেটা উচ্চারণ করতে আমি চাইছি না। আর যদি সেটা আপনারা বুঝেই ফেলেন তাহলে নিজগুণে মার্জনা করে দেবেন, কেমন?
বলতে দ্বিধা নেই, হেফাজতে ইসলামের নেতা হযরত মাওলানা সফি হুজুরকে অনেকটা বাগে আনা গেলেও সব মাওলানা সাহেব কিন্তু সেরাতের মেসাকার মনে রেখেছেন। সেদিনের হেফাজতের সমাবেশে হাজার হাজার আলেম ও মাদরাসার ছাত্র যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের অনেককে এখনও পাওয়া যায়নি। সেই পরিবারগুলো না পারছে সইতে, না পারছে কইতে। নির্জনে ঘরে বসে চোখের জল ফেলা ছাড়া তাঁদের কিছু করবার নেই। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিশুকিশোর শিক্ষার্থী এবং শেষে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রদের অংশগ্রহণ করলে পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে ওঠে। পুলিশ ও সরকারদলীয় ক্যাডার বাহিনীর দাপটে তারা ঘরে ফিরলেও ক্ষোভ মিটে গেছে এমন ভাববার অবকাশ নেই। সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদেরও হামলা-মামলা করে ঘরে ফিরতে বাধ্য করা হয়। ক্ষোভ বিরাজ করছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের মাঝেও। যেকোনও সময় নিরাপদ সড়ক ও কোটাবিরোধী আন্দোলন আবারও জোরদার হতে পারে। এগুলো নিশ্চয় ক্ষমতাবানদের ভাবাচ্ছে।
বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আমলে বহু সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। এ সংখ্যা ইতোমধ্যে ত্রিশ অতিক্রম করেছে। সাগর-রুনি থেকে শুরু করে আরও অনেক সংবাদকর্মীর খুনিরা চিহ্নিত হয়নি। বিচারতো দূরের কথা। অথচ সাহারা খাতুন হোম মিনিস্টার থাকতেই সাগর-রুনির খুনিদের গ্রেফতার করে বারবার বিচারের কথা বলেছিলেন। তাঁদের একমাত্র শিশু কষ্টে কষ্টে বড় হচ্ছে। জানতে পারছে না তার বাবা-মাকে কারা রাতের অন্ধকারে বাসায় ঢুকে হত্যা করেছিল। এর মধ্যে নদী নামে আরেক সাংবাদিক নিহত হলেন। অবশ্য নদীহত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
বিনাভোটের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা আর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনকে সমান মনে করবার কোনও কারণ নেই। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এমন নীতির নাম গণতন্ত্র নয়। এ হচ্ছে স্বৈরতন্ত্র। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা স্বৈরশাসন চালিয়ে দেশের মানুষকে কতখানি বিষিয়ে তুলেছেন তারই অনিবার্য পরিণতি লক্ষ্য করা যায় তাঁদের অস্থিরতা ও ছটপটানিতে। তাঁরা সম্যক উপলব্ধি করছেন, ক্ষমতা হারালে রক্ষা নেই। আম-ছালা উভয়ই খোয়া যেতে পারে। তাই তাঁরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ক্ষমতায় তাঁদের থাকতেই হবে। মামলা-হামলা দেয়া হচ্ছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। মামলার পর মামলা দিয়ে বেগম জিয়াকে আটকে রাখা হয়েছে। কোর্ট জামিন দিলেও তিনি ছাড়া পাচ্ছেন না। অন্যদিকে তারেক রহমান নির্বাসিত। জামায়াতের প্রবীণ এবং শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপর জামায়াতের নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে। ’৭১ এ জামায়াত সংশ্লিষ্টতা না পেয়েও বর্তমান আমীর মকবুল আহমাদকে গ্রেফতার করে জেলে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি জামিনে থাকলেও মামলা থেকে রেহাই নেই। অন্য নেতৃবৃন্দকেও দৌড়ের মধ্যে রাখা হয়েছে। যখনতখন গ্রেফতার করে জেলে নেয়া হচ্ছে। মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। মঞ্জুর করা হচ্ছে রিমান্ড। শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিয়ে স্বস্তিতে নেই সরকার। মহানগরী ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত হামলা-মামলা করে জামায়াতের নেতাকর্মীদের জেলে পুরে রাখা হচ্ছে। কিন্তু কেন এতো ভয় এবং ভীতি? তারা কি এ দেশের নাগরিক নন? আর কদ্দিন মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে রাখা যাবে? ক্ষমতাসীনদের চাতুর্য কি জনগণের অজানা?
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইভিএম চাপিয়ে দেয়া হবে না। কিন্তু ইসি ইভিএম আনবার জন্য জোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। অন্তত ইভিএম এর মাধ্যমে ১০০ সিট ছিনতাই নিশ্চিত করা হবে। কারণ ইভিএম এর যে বোতামই চাপুন না কেন, সে ভোট নৌকাতেই পড়বে।
৫ জানুয়ারিতে ১৫৩ সিটে যেমন বিনা ভোটে জিতবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, ইভিএম তার বিকল্প ব্যবস্থা। অতএব নৌকাওলাদের নো চিন্তা। অন্যথায় পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ইভিএম বাতিল হলেও এখানে এর ব্যবহারে তাড়াহুড়ো কেন?
ক্ষমতা কারুর জন্য চিরস্থায়ী নয়। জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতা হাতের মুঠোয় আসে। না দিলে আবার চলেও যায়। কিন্তু এ দেশে জনগণ ভোট না দিলেও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকবার ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এর বিকল্প নেই। গণতন্ত্রের এ নতুন সংজ্ঞা চমৎকার বৈকি। ক্ষমতাসীনরা যেভাবে বলবেন, চলবেন সেটাই হবে গণতন্ত্র। অন্যের নাক গলানোর দরকার কী?
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৫৩০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/০৯/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast