www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ছাদাকা

যে পরিমাণ মালের মালিক হলে কুরবানি এবং যাকাত ওয়াজিব সে পরিমাণ মালের মালিক হলে সাদাকায়ে ফিতর দিতে হবে। পরিবারের যিনি কর্তা তিনি নিজের এবং তার উপর নির্ভরশীল সকল ব্যক্তির পক্ষ থেকে ফিতরা দেবেন। এ বছর ফিতরা সর্বনিম্ন ৭০ টাকা নির্ধারিত করা হয়েছে। এর বেশী ও দেয়া যাবে। আর যাকাত আরবি শব্দ। আভিধানিক অর্থ: পূত-পবিত্রতা, পরিশুদ্ধি পরিচ্ছন্নতা, সুচিন্তা এবং প্রবৃদ্ধি ক্রমবৃদ্ধি। যে ব্যক্তির সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা, অথবা সাড়ে সাত তোলা সোনার কিংবা এ পরিমাণ টাকার মালিক হয় এবং তার নিকট ঐ পরিমাণ মাল পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী থাকে, তার উপর যাকাত ফরয হয়। যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্ত : মুসলমান হওয়া, স্বাধীন হওয়া, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া, আকেল হওয়া, নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা, নিসাবের উপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া, মাল বর্ধনশীল হওয়া।যাকাতের অর্থ ব্যয়ের শরিয়ত নির্ধারিত ৮টি খাত: যাকাত নিজ ইচ্ছেমতো যাকে-তাকে দিলে আদায় হবে না। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে আল্লাহ খুব সুস্পষ্টভাবে বলেছেন।“যাকাত তো শুধু (১) দরিদ্র, (২) অক্ষম, (৩) যাকাত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মচারী, (৪) যাদের মন জয় করা প্রয়োজন, (৫) মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্যে, (৬) ঋণে জর্জরিত অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে, (৭) আল্লাহর পথে (জনকল্যাণমূলক কাজ, ধর্মপ্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে) এবং (৮) মুসাফিরদের জন্যে ব্যয় করা যাবে। (যাকাতের অর্থ ব্যয়ে) এটাই আল্লাহর বিধান। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তওবা : ৬০) ১ দরিদ্র: এমন মজুর ও শ্রমজীবী যে শারীরিক ও মানসিকভাবে কর্মক্ষম হওয়া সত্তে¦ও প্রতিকূল অবস্থার কারণে বেকার ও উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে। ছিন্নমূল মানুষ এবং শরণার্থীরাও এর মধ্যে পড়েন। ২ অক্ষম: বার্ধক্য, রোগ, বা পঙ্গুত্ব যাকে উপার্জনের সুযোগ হতে বঞ্চিত করেছে অথবা যে ব্যক্তি উপার্জন দ্বারা তার প্রকৃত প্রয়োজন পূরণ করতে অক্ষম এবং আশ্রয়হীন শিশু প্রমুখ। ৩ যাকাত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মচারী: যাকাত আদায় এবং তা বণ্টন করার কাজে যারা সার্বক্ষণিক নিযুক্ত থাকবে তাদের বেতন-ভাতা আদায়কৃত যাকাত থেকে দেয়া হবে। ৪ যাদের মন জয় করা প্রয়োজন : ইসলাম প্রচার-কাজ কোথাও প্রতিরোধের সম্মুখীন হলে সে ক্ষেত্রে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।

সংগতিহীন নও মুসলিমকেও স্বনির্ভর করার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় হতে পারে। ৫ মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্যে : দাসমুক্তি বা বন্দীদের মুক্ত করতে যাকাতের সম্পদ ব্যয় করা যাবে। এখানে দাস বা বন্দী বলতে বিখ্যাত তাফসীরকার আল্লামা আসআদের তাফসীরে যারা পরিস্থিতি বা পরিবেশের বন্দী বা শিকার তাদের কথাও বলা হয়েছে। অর্থাৎ ভূ-লুণ্ঠিত, অপরিচিত, দুর্গম-দূরবর্তী অভাবগ্রস্ত এলাকার দুঃস্থ-অসহায়দেরও যাকাত দেয়া যাবে। ৬ ঋণমুক্তি : যারা নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণ করতে গিয়ে ঋণ করে এবং সে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েছে, তাদেরকে যাকাতের সম্পদ হতে সাহায্য করা যাবে। যাদের বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়ে গেছে, বন্যা-প্লাবনে মাল-আসবাবপত্র ভেসে গেছে, তাদের পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণে যাকাতের সম্পদ দেয়া যাবে। ৭ আল্লাহর পথে (জনকল্যাণমূলক কাজ, ধর্মপ্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে) : যাকাতের ৭ম খাত হলো ‘ফি সাবী লিল্লাহ’ (আল্লাহর পথে)। ইসলামি চিন্তাবিদগণের সম্মিলিত মত হলো: আল্লাহ নির্দেশিত পথে প্রতিটি জনকল্যাণকর কাজে, দ্বীন ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যত কাজ করা সম্ভব সেসব ক্ষেত্রেই এ অর্থ ব্যয় করা যাবে। ৮ মুসাফির: যাকাতের ৮ম খাত হলো ‘ইবনুস সাবীল’ (নিঃস্ব পথিকদের জন্যে)। যেসব পথিক বা মুসাফির যাত্রাপথে নিঃসম্বল হয়ে পড়েছে, তাদেরকে যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে। যাকাতের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে যাকাত গ্রহীতাকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। যাকাত এমনভাবে আদায় করা উচিত যাতে এ বছর যে যাকাত গ্রহণ করলো, পরের বছর যাতে সে স্বাবলম্বী হয় এবং তাকে যেন আর যাকাত গ্রহণ করতে না হয়।

ব্যক্তিগতভাবে প্রতি বছরই কিছু শাড়ি, লুঙ্গি বা টাকা প্রদান করলে কখনো দারিদ্র্য বিমোচন হবে না। মহানবী সা: বলেছেন “যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত দেয়, সে তার সম্পদের দোষ দূর করে।” অন্য যায়গায় বলেছেন “যাকাত হলো ইসলামের সেতুবন্ধন”। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে যথাযথ নিয়মে যাকাত আদায় করার তৌফিক দান করুন।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৬৭৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০৬/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast