www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভারতবর্ষে মানুষ হত্যা

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঠেকাতে অনুপম নজির স্থাপন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের একটি মসজিদের ইমাম। সেখানে রাম নবমী নিয়ে চলা সহিংসতায় ইমাম মাওলানা ইমাদুল রশিদির ১৬ বছর বয়সী কিশোর ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু মাওলানা রশিদি প্রতিশোধ স্পৃহার কাছে আত্মসমর্পন করেননি। বরং, ছেলের জানাযায় উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, আপনারা যদি আমার ছেলের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে আমি এই মসজিদ ও শহর ছেড়ে চলে যাব।

খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার শহরের রেলপাড় এলাকায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলার পর ইমাদুল রশিদির ছেলে সিবতুল্লাহ রশিদিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বুধবার রাতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।বৃহস্পতিবার নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এই মৃতদেহ সিবতুল্লাহ রশিদির।

সন্দেহ করা হচ্ছে, দশম শ্রেণির পরীক্ষার্থী সিবতুল্লাহ রশিদিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মাওলানা রশিদি বলেন, ‘আমার ছেলেকে একদল দুর্বৃত্ত তুলে নিয়ে যায়। আমার বড় ছেলে তখন পুলিশকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু তাকে পুলিশ স্টেশনে বসিয়ে রাখা হয়। পরে আমরা জানতে পারি যে, পুলিশ একটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে সিবতুল্লাহ রশিদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ইমাম রশিদি শান্তির ডাক দেন। তিনি বলেন, ‘আমি শান্তি চাই। আমার ছেলে চলে গেছে। আমি চাই না আর কোনো পরিবার তাদের প্রিয় কাউকে হারাক। আমি চাই না আর কোনো ঘর পুড়ে ছারখার হোক।’ তিনি পরে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘আমি জানাজায় উপস্থিত সকলকে বলেছি, আমার ছেলে হত্যার জন্য কেউ যদি কোনো ধরণের প্রতিশোধ নিতে যায়, আমি আসানসোল ছেড়ে চলে যাবো। আমি তাদেরকে বলেছি যে, আপনারা যদি আমাকে ভালোবাসেন, তাহলে কেউ একটা আঙ্গুলও তুলবেন না।’

ইমাম রশিদি বলেন, জনগণের উদ্দেশ্যে শান্তির বার্তা দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি বলেন, ‘আসানসোলের মানুষ এমন নয়। এটা একটা ষড়যন্ত্র।’

আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, সিবতুল্লাহ রশিদির হত্যাকা- নিয়ে স্থানীয় মুসলমান যুবকরা উত্তেজিত ছিল। তাদেরকে শান্ত করতে ইমাম সাহেবের বার্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ইমাম সাহেবকে নিয়ে গর্বিত। নিজের ছেলে হারানোর যন্ত্রনায় দগ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, তিনি শান্তির ডাক দিয়েছেন।’

আসানসোলের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাসিম আনসারি বলেন, ‘এটি শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্যই নয়, পুরো দেশের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।’ তার ভাষ্য, ‘ইমাম রশিদি এই এলাকায় জনপ্রিয়। তিনি যদি শান্তি ডাক না দিতেন, তাহলে আসানসোলে আগুণ জ্বলতো।’

বৃহস্পতিবার হিন্দুত্ববাদী শাসক দল বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে সহিংসতা উপদ্রুত আসানসোলে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। রাম নবমীর একটি অনুষ্ঠান চলাকালে ধর্মীয় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ায় আসানসোল জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

সঙ্গীতশিল্পী থেকে রাজনীতিক হওয়া বাবুল সুপ্রিয়কে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা ও একজন পুলিশ কর্মকর্তার গায়ে হাত তোলার অভিযোগে তালিকাভুক্তও করেছে স্থানীয় পুলিশ। বিজেপি নেতা লকেট চট্টোপাধ্যায় ও অন্যদেরকেও আসানসোলে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। এ সময় বিজেপি কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সশস্ত্র কমব্যাট বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়।

সোমবার থেকে আসানসোল-রানিগঞ্জ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পুলিশ তখন থেকেই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বুধবার পশ্চিম বঙ্গ সরকারের কাছ থেকে এ নিয়ে প্রতিবেদন চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এদিকে সারা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা চলছেই। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দাঙ্গায় নিহত হয়েছেন আরো দুইজন। রবিবার হিন্দু ধর্মের উৎসব রাম নবমীকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া দাঙ্গা থামাতে ব্যর্থ হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।

রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ওই দাঙ্গায় এ পর্যন্ত মোট পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে তিনজন পশ্চিম বর্ধমানে, একজন পুরুলিয়াতে ও একজন উত্তর ২৪ পরগনায়।

বৃহস্পতিবার (২৯ তারিখ) নিহত একজনের নাম সিবতুল্লাহ। ১৭ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী কয়েকদিন আগেই এসএসসি পরীক্ষা শেষ করেছে। আরেকজনের নাম প্রতিমা দেবী (৪৫)। দাঙ্গার মধ্যে মায়ের কোল থেকে দুই মাসের এক শিশুকে টেনে ফেলে দেয়া হয়েছে। শিশুটিকে পরে হাসপাতালে নেয়া হয়।

সিবতুল্লাহর বাবা স্থানীয় ইমাম ইমাদুল্লাহ রশিদ তার ছেলের জানাজায় শান্তি রক্ষায় সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

স্থানীয় সাব-ডিভিশনাল কর্মকর্তা প্রলয় রায় বলেন, আমরা খুশি যে উভয় পক্ষই শান্তি চায়। হামলাকায় উস্কানীদাতাদের খুঁজে বের করতে এটা আমাদের সহায়তা করবে। এরইমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। আমরা দোষীদের বিচারের আওতায় আনবো।

এদিকে দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বাকি অংশের সঙ্গে আসানসোলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। এছাড়া বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুর সংবাদ ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আসানসোল শহর একটি মরুভূমিতে পরিণত হয়। দোকানপাটগুলো বন্ধ রয়েছে।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১১৪১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৩/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast