ব্রিটিশরা এমপিরা এতো বোকা নয়
নির্বাচন সামনে রেখে যুক্ত রাজ্যের এমপিদের সমর্থন চেয়ে শাসকদল আওয়ামী লীগের তরফ থেকে ৬৫০ জন বৃটিশ এমপি’র কাছে পত্র দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী চিঠিতে চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি ও জামায়াত সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে দেশকে অশান্ত করে তুলতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। দলটি এই সময়টিকে চ্যালেঞ্জিং সময় আখ্যা দিয়ে সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলার জন্য বৃটিশ এমপিদের সমর্থন কামনা করেছে। গত ১৩ মার্চ মঙ্গলবার দলমত নির্বিশেষে বৃটিশ পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের ৬৫০ জন প্রতিনিধির মধ্যে বিতরণের জন্য পত্রটি হাউজ অব কমন্স এর ডেচপাচ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে পত্র পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছে। চিঠিতে গত ৯ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জনের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি দাবি করা হয় যে দলটির পরিচালনাধীন বর্তমান সরকারের আমলে দেশের বিচার বিভাগ শাসন বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়েছে। দুর্নীতি দমনে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করে চিঠিতে বলা হয় যে দলীয় পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে বড় রাজনীতিকদেরও বিচার করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমানের বিচারের কথা এতে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। সন্ত্রাস দমন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে বর্তমান সরকার ইসলামী উগ্রবাদ ও আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এতে বলা হয় যে বিশেষ বিশেষ দল উগ্রবাদে মদদ দেয়ার কারণে কাজটি ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। এ প্রসঙ্গে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময়কার সহিংসতার কথা বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। বলা হয় ঐ বছর দল দু’টির সন্ত্রাসের কারণে প্রথম চার মাসে দু’হাজারেরও বেশী লোক নিহত হয়। প্রতি দিন দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয় ২৮৪ মিলিয়ন ডলার। ঐ সময় দেশের অর্থ খাত ২৫.৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির শিকার হয়। পত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে অনুমান করা হয় যে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে টানা সহিংসতার বিপদ রয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত যে কোন মূল্যে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। দলটি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বৃটিশ এমপিদের সমর্থন চান বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়। Confidential Coverage দিয়ে চিঠিগুলো পাঠানো হলেও এগুলো শেষ পর্যন্ত Confidential বা গোপন থাকেনি; ইতোমধ্যে সর্বত্র জানাজানি হয়ে গেছে। এতে জনগণের প্রতি আস্থা না রেখে বিদেশীদের সমর্থনের উপর আস্থা এবং দুটি জনপ্রিয় বিরোধী দলের ব্যাপারে বিদেশীদের কাছে যে নালিশ ও মু-পাত করা হয়েছে তাতে অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শাসক দলটি যেভাবে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বৈদেশিক হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তাতে হিতে বিপরীত হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের ধারণা দলটি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে প্রতিবেশী বৈরী শক্তির কাছে গচ্ছা রেখেই শান্ত হচ্ছে না বিদেশীদের কাছে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে তাদের গা মাড়িয়ে বিদেশীদের সমর্থনে ক্ষমতায় যাবার দিবাস্বপ্ন দেখতেও শুরু করেছে। পত্রের প্রতিপাদ্য ৫টি বিষয়। এগুলো হচ্ছে : অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিগত ৯ বছরে তাদের সাফল্য। এই সাফল্যটি দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবোধক। এই উন্নয়নে দেশব্যাপী রোড ও রেল নেট ওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে গেছে। যানজটে শহরের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে শুধু ঢাকা নয় সকল উল্লেখযোগ্য শহরে নৌকা ছাড়া চলা দায়। গর্তে পড়ে রিক্সাযাত্রীদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। মেগা প্রকল্পের নামে বড় বড় শহরে এক্সপ্রেস হাইওয়ে ওভারব্রিজ, রেল প্রভৃতির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এমন সব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে যেগুলো সাধারণ মানুষের কাজে আসে না এবং একবার শুরু হলে বছর বছর ব্যয় বরাদ্দই বৃদ্ধি করা হয় কিন্তু প্রত্যাশিত অগ্রগতি কখনোই লক্ষ্য করা যায় না। কৃষক শ্রমিক মজুরসহ নিম্ন ও স্থির আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা শুধু ব্যয়বহুল নয়, করুণও হয়ে পড়েছে। চাল ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য ৩০০ থেকে ৭০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের প্রতিবাদ করতে দেয়া হয় না। ব্যাংক, বীমা ও অর্থ প্রতিষ্ঠানসহ সমগ্র অর্থ খাত দুর্নীতির চাদরে ঢেকে গেছে। শত সহস্ররে অঙ্কে নয়; লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার অংকে এখন দুর্নীতি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা প্রভৃতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ চুরির ঘটনা দুনিয়ার ইতিহাসে নেই। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আট শতাধিক কোটি টাকা চুরি হয়ে গেছে। অবিশ্বাস্যভাবে এই তহবিলের নিরাপত্তার জন্য যারা দায়িত্বশীল তাদের কেউ টের পাননি। এর তদন্তও হয়নি এবং যারা দায়ী তাদের বিচারও হয়নি। ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে হরিলুট চলছে। বিনা জামানতে অবৈধভাবে দলীয় লোকদের মধ্যে অর্থ বণ্টন করে ব্যাঙ্কগুলোকে দেউলিয়া করে দেয়া হয়েছে। প্রথমত সরকারি ব্যাংকগুলো তাদের পুঁজি হারিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবস্থাও করুণ। ফারমার্স ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক আমানতকারীদের আমানত ফেরৎ দিতে পারছে না। দলীয় ভিত্তিতে নিয়োজিত ব্যাংক চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে গেছেন। সাড়ে ছয় লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হবার অভিযোগ উঠেছে। দেশী-বিদেশী তদন্ত সংস্থাগুলোতে এই ভয়াবহ অবস্থা উঠে আসলেও প্রতিকার নেই। ব্যাংক ও অর্থ প্রতিষ্ঠানসমূহ দলীয় স্বার্থে পরিবার তন্ত্রের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ভয়াবহ এই দুর্নীতি ও লুটপাট আর কখনো দেখা যায়নি। আবার যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও তাদের দলের দশ সহস্রধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ছিল এবং তিনিও তার নেতাকর্মীরা ক্ষমতাসীন হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই মামলাগুলো তুলে নিয়েছেন। কোয়াশ করিয়েছেন সেখানে একই সময়ে একই উদ্দেশে রুজু করা মামলায় বেগম জিয়া ও তার পুত্রকে শাস্তি দিয়ে দুর্নীতি দমনের দৃষ্টান্ত হিসেবে বিদেশীদের কাছে তা তুলে ধরাকে অনৈতিক ও প্রতারণা বলে মানুষ মনে করে। একই অবস্থা সন্ত্রাসের বেলায়। দেশে এখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে। হত্যা, গুম, ক্রসফায়ারের নামে এবং রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের দমন করা হচ্ছে। তারা প্রকাশ্যে রাজনীতির চর্চা করতে পারেন না, তাদের জন্য সকল গণতান্ত্রিক স্পেস রুদ্ধ। ঘরোয়া বৈঠকে বসলেও তাদের গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আনা হয়। যারা ১৫/২০ বছরে কখনো মিছিলে অংশ নেননি, বয়োবৃদ্ধ নেতা তাদের বিরুদ্ধেও জঙ্গি মিছিল এবং গাড়িঘোড়া দোকানপাট জ্বালানো ও মানুষ হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল আওয়ামী লীগের সেরা প্রহসন ও মসকরা। ১০০% ভোটারের মধ্যে সাড়ে চার পার্সেন্ট ভোটারের উপস্থিতিতে বিরোধীদলকে বাইরে রেখে তারা এই নির্বাচন করেছেন। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ আসনে কোনও নির্বাচনই হয়নি। এই আসনগুলোতে বিনা ভোটে সরকারদলীয়/সমর্থক প্রার্থীরা একতরফাভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ভোট বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ মানষ এর প্রতিবাদ করেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নির্মমভাবে প্রতিবাদকারীদের পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি দিয়ে দমন করেছে। এতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সরকারের কারণে তা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতকে এজন্য দায়ী করা সত্যের অপলাপ মাত্র। গণতন্ত্রের জন্য, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই দেশের জন্ম। সরকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে পদদলিত করার ফলে মানুষ ফুসে উঠেছিল। এখন তাদের এই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদকে ধর্মীয় উগ্রবাদের অপবাদ দেয়া সরকারের আরেকটি ধাপ্পাবাজি বই আর কিছুই নয়। আবারো দলটি আরেকটি ভোটারবিহীন ও একদলীয় নির্বাচন করতে যাচ্ছেন বলে মনে হয় এবং তা করতে গেলে অবশ্যই মানুষ বাধা দেবে। এর আলোকেই তথাকথিত নাশকতার আশংকা করে বৃটিশ এমপিদের সমর্থন কামনা করে এই পত্র। বৃটিশ এমপিরা যদি বোকা হন তা হলে খোঁজখবর না নিয়ে তাদের সমর্থন করবেন। কিন্তু তারা তা নন বলে আমার বিশ্বাস। আবার বিরোধীদলগুলো এই পত্রের প্রেক্ষাপটে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তাদের কাছে আরেকটি পত্র দিবেন বলেও মনে হয়। এভাবে ক্ষমতালিপ্সু একটি সরকারের বদৌলতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কাদা ছোঁড়াছুড়ি বৃটেনসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। বিরোধীদলগুলোকে খাঁচায় আবদ্ধ করে তারা হেলিকপ্টারে চড়ে ভোট ভিক্ষা করে চলবেন এর চেয়ে মজার আর কিছু আছে কি? সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে প্রধান বিচারপতি যেভাবে হুমকি ধামকী, মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের গালাগালি এবং নাকানি চুবানি খেয়ে দেশান্তরী হয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তা দেখে আওয়ামী সরকারের আমলে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন এ কথা কে বিশ্বাস করবে?
আসলে আওয়ামী লীগ কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে অন্যদের ক্ষমতায় আসার পথ রোধ করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা বিলোপ করে দলীয় মন্ত্রিসভা এবং সংসদকে বহাল রেখে মেয়াদ পূর্তির তিন মাস আগে নির্বাচনের বিধান রেখে সংবিধান সংশোধন করেছে। আবার সংবিধানের যেকোন ধারার বিরোধিতাকে তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতা গণ্য করে এতে ৭(ক) ধারাও সংযোজন করেছেন। নিবর্তনমূলক সব আইন তাদেরই তৈরি। এই অবস্থান থেকে সরে গেলে তারা মনে করছেন যে, পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এবং দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল জামায়াতে ইসলামীর উপর আওয়ামী লীগ সরকার নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এখন ৪০ হাজার মামলা ঝুলছে। জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আছে দেড় লক্ষের উপরে। উভয় দলের ১০ লক্ষেরও বেশি নেতাকর্মী এখন আসামী। উভয় দলের প্রধান যথাক্রমে জামায়াতের আমীর জনাব মকবুল আহমদ ও বেগম খালেদা জিয়া, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা এখন জেলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফাঁকা মাঠে এখন একা নির্বাচনী মাঠে প্রধান খেলোয়াড়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা (ছাত্র সংগঠনসহ) এখন দিন দিন হিংস্র থেকে হিংস্রতর হয়ে উঠছে। আন্দোলকারীদের ওপর বিষাক্ত গ্যাস, মরিচের গুঁড়া, জীবন বিধ্বংসী গ্রেনেড ও অন্যান্য মারাত্মক বস্তু ব্যবহারের কসরৎ আগেই একবার হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না যে, সরকার সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও ফলপ্রসূ নির্বাচন করতে চান। নিবর্তন নির্যাতনের জন্যই তাদের প্রস্তুতি যেন। এবং এ জন্যই বৃটিশ এমপিদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, ভারতের লোকসভার সদস্য এবং ইসরাইলের নেসেটের সদস্যদের কাছেও অনুরূপ পত্র হয়তো যেতে পারে। কাজেই সাধু সাবধান!
২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল আওয়ামী লীগের সেরা প্রহসন ও মসকরা। ১০০% ভোটারের মধ্যে সাড়ে চার পার্সেন্ট ভোটারের উপস্থিতিতে বিরোধীদলকে বাইরে রেখে তারা এই নির্বাচন করেছেন। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ আসনে কোনও নির্বাচনই হয়নি। এই আসনগুলোতে বিনা ভোটে সরকারদলীয়/সমর্থক প্রার্থীরা একতরফাভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ভোট বঞ্চিত বিক্ষুব্ধ মানষ এর প্রতিবাদ করেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নির্মমভাবে প্রতিবাদকারীদের পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি দিয়ে দমন করেছে। এতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সরকারের কারণে তা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতকে এজন্য দায়ী করা সত্যের অপলাপ মাত্র। গণতন্ত্রের জন্য, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এই দেশের জন্ম। সরকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে পদদলিত করার ফলে মানুষ ফুসে উঠেছিল। এখন তাদের এই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদকে ধর্মীয় উগ্রবাদের অপবাদ দেয়া সরকারের আরেকটি ধাপ্পাবাজি বই আর কিছুই নয়। আবারো দলটি আরেকটি ভোটারবিহীন ও একদলীয় নির্বাচন করতে যাচ্ছেন বলে মনে হয় এবং তা করতে গেলে অবশ্যই মানুষ বাধা দেবে। এর আলোকেই তথাকথিত নাশকতার আশংকা করে বৃটিশ এমপিদের সমর্থন কামনা করে এই পত্র। বৃটিশ এমপিরা যদি বোকা হন তা হলে খোঁজখবর না নিয়ে তাদের সমর্থন করবেন। কিন্তু তারা তা নন বলে আমার বিশ্বাস। আবার বিরোধীদলগুলো এই পত্রের প্রেক্ষাপটে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তাদের কাছে আরেকটি পত্র দিবেন বলেও মনে হয়। এভাবে ক্ষমতালিপ্সু একটি সরকারের বদৌলতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কাদা ছোঁড়াছুড়ি বৃটেনসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। বিরোধীদলগুলোকে খাঁচায় আবদ্ধ করে তারা হেলিকপ্টারে চড়ে ভোট ভিক্ষা করে চলবেন এর চেয়ে মজার আর কিছু আছে কি? সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে প্রধান বিচারপতি যেভাবে হুমকি ধামকী, মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের গালাগালি এবং নাকানি চুবানি খেয়ে দেশান্তরী হয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন তা দেখে আওয়ামী সরকারের আমলে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন এ কথা কে বিশ্বাস করবে?
আসলে আওয়ামী লীগ কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে অন্যদের ক্ষমতায় আসার পথ রোধ করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা বিলোপ করে দলীয় মন্ত্রিসভা এবং সংসদকে বহাল রেখে মেয়াদ পূর্তির তিন মাস আগে নির্বাচনের বিধান রেখে সংবিধান সংশোধন করেছে। আবার সংবিধানের যেকোন ধারার বিরোধিতাকে তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতা গণ্য করে এতে ৭(ক) ধারাও সংযোজন করেছেন। নিবর্তনমূলক সব আইন তাদেরই তৈরি। এই অবস্থান থেকে সরে গেলে তারা মনে করছেন যে, পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এবং দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল জামায়াতে ইসলামীর উপর আওয়ামী লীগ সরকার নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এখন ৪০ হাজার মামলা ঝুলছে। জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আছে দেড় লক্ষের উপরে। উভয় দলের ১০ লক্ষেরও বেশি নেতাকর্মী এখন আসামী। উভয় দলের প্রধান যথাক্রমে জামায়াতের আমীর জনাব মকবুল আহমদ ও বেগম খালেদা জিয়া, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা এখন জেলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফাঁকা মাঠে এখন একা নির্বাচনী মাঠে প্রধান খেলোয়াড়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় ক্যাডাররা (ছাত্র সংগঠনসহ) এখন দিন দিন হিংস্র থেকে হিংস্রতর হয়ে উঠছে। আন্দোলকারীদের ওপর বিষাক্ত গ্যাস, মরিচের গুঁড়া, জীবন বিধ্বংসী গ্রেনেড ও অন্যান্য মারাত্মক বস্তু ব্যবহারের কসরৎ আগেই একবার হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না যে, সরকার সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও ফলপ্রসূ নির্বাচন করতে চান। নিবর্তন নির্যাতনের জন্যই তাদের প্রস্তুতি যেন। এবং এ জন্যই বৃটিশ এমপিদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, ভারতের লোকসভার সদস্য এবং ইসরাইলের নেসেটের সদস্যদের কাছেও অনুরূপ পত্র হয়তো যেতে পারে। কাজেই সাধু সাবধান!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মীর মুহাম্মাদ আলী ২৮/০৩/২০১৮ভালো।
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ২৭/০৩/২০১৮কথা কি সত্য?