www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শ্রীলংকার মুসলিম

মুসলিম বিদ্বেষী কর্মকান্ডে প্রধান উস্কানিদাতার নাম অমিথ বিরাসিংঘে নামের এক সিংহলি। সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুসলিমবিরোধী প্রচারণায় লিপ্ত ছিল।
মুসলিমবিরোধী সহিংস ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শ্রীলংকার পর্যটন শিল্পে। ক্যান্ডির হোটেল পরিচালকরা বলছেন, তারা বিপুলসংখ্যক পর্যটকের রিজার্ভ বাতিলে মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। ক্যান্ডির ডিলাক্স হোটেলের পরিচালক বলেন, আমাদের হোটেলে ৮০ শতাংশ কক্ষ গ্রাহকে পূর্ণ থাকে, এখন তা ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংঘে বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ৩৭ বছরের গৃহযুদ্ধের পর পর্যটক খাত উন্নয়নে সরকারের প্রচেষ্টার প্রতি এই সহিংসতা বড় আঘাত হেনেছে।
শ্রীলংকার মুসলিম কংগ্রেস নেতা ও মন্ত্রী রউফ হাকিম সহিংসতা কবলিত এলাকায় কারফিউ বলবতে নিয়োজিত পুলিশ ও সেনাদেরকে দাঙ্গাকারীদের দেখামাত্র গুলী করার নির্দেশ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় সহিংসতা রোধে অনেক দুর্বলতা ছিল। হাকিম দাঙ্গা দমনে প্রস্তুতির অভাব ও গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। মিয়ানমারের পর শ্রীলংকায় যেভাবে মুসলমানদের ওপর হামলা চালানো হলো, তাতে প্রমাণিত হলো যে, বর্তমান পৃথিবীতে মুসলমানরাই সন্ত্রাসের বড় শিকার। আর এই বিষয়টিও প্রমাণিত হলো যে, ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ একথা বৌদ্ধরা এখন আর মানেন না। সভ্যতার শাসকরা এমন বাস্তবতার কি ব্যাখ্যা দেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সন্ত্রাস ও আতঙ্কের পরিবেশ থেকে মুক্ত নয় আমাদের দেশও। আতঙ্কের জীবন তো আমাদের কাম্য নয়। মানুষ তো আতঙ্কের পরিবেশে জীবন যাপনের জন্য সমাজবদ্ধ হয়নি। অথচ বর্তমান সময়ে আতঙ্ক আমাদের পিছু ছাড়ছে না। এ কারণেই হয়তো পত্রিকায় শিরোনাম হয় ‘পুলিশ পাহারায় আতঙ্কের জীবন!’ ১২ মার্চ পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, রাজধানীর শ্যামলীর ২ নম্বর সড়কের বাড়িটির সাড়ে আট কাঠা জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। এর জের ধরে এক সপ্তাহ আগে বাড়িতে বসবাসকারী পরিবারের চার সদস্য ও অতিথিসহ ছয়জনকে এ্যাম্বুলেন্সে করে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। সাড়ে চার ঘণ্টা তাদের এখানে-সেখানে ঘোরানো হয়। এই সময়ের মধ্যে তিনটি ট্রাকে করে তাদের মালামালগুলো সরিয়ে বাড়িটি খালি করা হয়। বাড়ির সামনে উচ্ছেদকারীরা জমির মালিকানার সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দেয়। পরে অবশ্য পুলিশের সহায়তায় পরিবারটি তাদের বাড়িতে ফিরে আসে। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা বাড়ির মালামালগুলোও ঘরে আনা হয়। তবে পরিবারটি এখনো সংসার আগের মতো সাজিয়ে নিতে পারেনি। পুলিশ পাহারা থাকলেও আতঙ্কে কাটছে তাদের দিন ও রাত।
পুলিশ বলছে, কেন্দ্রীয় যুবলীগের ও মোহাম্মদপুর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা ওই হামলা ও জমি দখলের সঙ্গে যুক্ত। ইতোমধ্যে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তৌফিক উর রেজাসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অন্যজনের নাম রাজন। নিরাপত্তা শঙ্কায় বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। হামলার শিকার বাড়িটির গৃহকর্তা মিহির বিশ্বাস বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তিনি স্ত্রী, ১০ বছরের ছেলে, বৃদ্ধা পিসিমা আর একজন গৃহকর্মীসহ ওই বাড়িতে থাকেন।
সন্ত্রাসী হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে মিহির বিশ্বাস বলেন, শনিবার সকাল সাতটার দিকে ছেলেকে স্কুলভ্যানে তুলে দিয়ে তিনি এসে শুয়েছেন মাত্র, এ সময় ১০ থেকে ১২ জন লোক তার বাড়িতে ঢুকে। তিনজন লোক তার ঘরে ঢুকে মুঠোফোনের চার্জার দিয়ে গলায় ফাঁস লাগায়। পরে টেনেহিঁচড়ে মেঝেতে নামায়। এরপর অপেক্ষমাণ এ্যাম্বুলেন্সে তাদের তোলা হয়। এদিকে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ঘটনার সঙ্গে যুবলীগের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক কামরান শাহিদ প্রিন্স মোহাব্বতের য্ক্তুতা পাওয়া গেছে তদন্তে। তিনি এখন পলাতক। এখানে বলার মতো বিষয় হলো, সরকারি দলের লোকজন তো দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন। তারা বাড়ি দখল ও আতঙ্ক সৃষ্টির মতো সন্ত্রাসী কর্মে যুক্ত থাকবেন কেন? এ ব্যাপারে প্রশাসন কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
হত্যা, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের করুণ শিকার হচ্ছে আমাদের শিশুরাও। গত দুই মাসে সারা দেশে কমপক্ষে ৬১ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে অন্তত ১১০ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের শিশু অধিকার লংঘন সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম এ তথ্য জানিয়েছে। শিশু অধিকার বিষয়ক ২৬৭টি সংগঠনের এই জোট বলছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছরের প্রথম দুই মাসে এই ধরনের অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
শিশু হত্যা ও ধর্ষণের মতো অপরাধ আমাদের সমাজের অন্ধকার দিককেই তুলে ধরে। আর চিন্তার বিষয় হলো, এ ধরনের অপরাধের মাত্রা কমার বদলে বরং বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী এডভোকেট সালমা আলী বলেন, শিশুদের সঙ্গে অপরাধমূলক ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে। অপরাধীরা আমাদের ঐতিহ্যগত আইনগুলোর ক্ষতিকর সুবিধা গ্রহণ করে বেরিয়ে আসছে। এতে তারা অপরাধ করতে উৎসাহিত হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করছে অপরাধীদের একটি গোষ্ঠী। আর পেশীশক্তি ব্যবহারকারীরাও এসব অপরাধে জড়িত হচ্ছে। পাশাপাশি শিশুদের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের অভাব অপরাধীদের এই অপরাধের সাথে জড়িত করতে সহায়তা করে। ফেসবুক, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত উৎসের নেতিবাচক ব্যবহারও এসব অপরাধের নেপথ্যে রয়েছে বলে মনে করেন সালমা আলী।
এমন বিশ্লেষণ থেকে উপলব্ধি করা যায়, আমাদের সমাজে শিশু-সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই? তাই সহজেই তারা হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আর এসব ঘটনার শিকার অধিকাংশ শিশুই দরিদ্র ও শক্তিহীন পরিবারের। তারা আইনি সহায়তাও পায় না। এ ব্যাপারে সরকার এগিয়ে এলে দরিদ্রদের দুঃখের মাত্রা কমতে পারে। ভাবতে অবাক লাগে, একটি স্বাধীন দেশের শিশুরা এভাবে হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হবে কেন? দেশে সরকার আছে, প্রশাসন আছে। আছে রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনও। এর মধ্যে দুর্বৃত্তরা তাদের নৃশংস অপরাধ চালিয়ে যায় কেমন করে? শুভশক্তি কি ঘুমিয়ে আছে? অপরাধীদেরও পরিবার আছে, সন্তান আছে। তারা শিশুদের হত্যা করে কেমন করে? মায়া-মমতা কিংবা মানবিক বোধ কি তাদের অন্তরে অবশিষ্ট নেই? তাহলে এখন তো এসব বিষয়ের চাষাবাদ জরুরি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি কি আমরা উপলব্ধি করবো না?
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৯৫২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০৩/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast