ভয়ংকর কথা
হবিগঞ্জ শহরের নিউফিল্ডে আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার পর ওই ছাত্রীর পা ধরে ক্ষমা চাইতে হয়েছে যুবক শাহ আলমকে। ১২ ফেব্রুয়ারি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, গত শনিবার রাত ১১টায় শহরের নিউ ফিল্ডের বাণিজ্য মেলায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসেন হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রী। কেনাকাটা করে বাসায় ফেরার সময় মেলা প্রাঙ্গণেই তাকে উত্ত্যক্ত করে শাহ আলম। এ সময় ছাত্রীর পরিবারের লোকজন যুবককে পাকড়াও করেন। খবর পেয়ে মেলা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ কর্তব্যরত পুলিশরা ছুটে আসেন। তখন মেলা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা শাহ আলমকে ছাত্রীর পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলেন। ওই যুবক তখন কলেজছাত্রীর পা ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
একজন যুবক একজন ছাত্রীর পা ধরে ক্ষমা চাইতে যাবে কেন? এতে কি যৌবনদীপ্ত মানুষটির অপমান হয় না? যৌবন তো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়টায় তো মানুষ মানুষের জন্য, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু করতে পারে। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করলাম ভিন্ন চিত্র। এখানে যৌবনের অপচয় হতে দেখলাম। যৌবন যেন এখানে পথ হারিয়েছে। শুধু এক শাহ আলম নয়, যৌবনে ভুল পথে হাঁটার মতো পথিকের সংখ্যা দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব যুবকরা তো ভিন গ্রহ থেকে এসে সমাজে ভুল কাজ করছে না। তারা তো আমাদের সমাজেই বসবাস করে থাকে এবং তাদের সাথে সম্পর্ক আছে পরিবারের, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, রাজনৈতিক সংগঠনেরও। এইসব সম্পর্ক কি ওদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে সমর্থ হচ্ছে না? তা হলে তো ওইসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেই প্রশ্ন জাগে।
সমাজের সব যুবক নষ্ট হয়ে যায়নি। যারা ভালো কিছু করতে চায়, বিবেকের ডাকে সাড়া দিতে চায়, তাদের তো উৎসাহিত করা উচিত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা হয় না। যেমন ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ধর্ষিতার উদ্ধারকারীদেরই আটক করলো পুলিশ’। এটি তো দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের উদাহরণ হতে পারে না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। আশুলিয়ায় গণধর্ষণের শিকার মেয়েটি যেন সুবিচার পায় এবং উদ্ধারকারীরাও যেন হেনস্তার হাত থেকে রক্ষা পায়। কারণ কোন সমাজে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় প্রতিরোধের অনুকূল পরিবেশ নির্মিত না হলে সেই সমাজ আর মানুষের বসবাসযোগ্য থাকে না। তেমন উদাহরণের এখন আর অভাব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়, পাড়ায়ও তা লক্ষ্য করা যায়।
‘শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করল ছাত্রলীগ’ শিরোনামে একটি খবর মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়, বাঁ চোখে তাকাতেই পারছিলেন না। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ঘুষিতে ফুলে গেছে সেটা। কপালে, ঠোঁটে লেগে আছে রক্তের দাগ। কালচে হয়ে গেছে প্রতিটি আঘাতের স্থান। কপাল ফুলে উঁচু হয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের এই ছাত্রের নাম এহসান রফিক। থাকেন সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের বারান্দায়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হল শাখার ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন চালায় তার ওপর। থেমে থেমে কিল-ঘুষিতো পড়েছেই, রড আর লাঠির আঘাতও ছিল সমানে। উল্লেখ্য যে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ২টা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে তিন দফা পেটানো হয়। শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি দিতে চাপ দেওয়া হয়। মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে চেক করা হয়। তার বাবা রফিকুল ইসলাম একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি। তারও ফেসবুক ঘাঁটাঘাটি করে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। কিছু না পেয়ে শেষমেশ হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তাহসান আহমেদের কক্ষে আটকে রাখা হয়। গত বুধবার সন্ধ্যায় এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আজ বেলা আড়াইটার দিকে তাহসান ভাইয়ের রুম থেকে পালিয়ে আসি। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু কোনভাবে শিবির প্রমাণ করতে না পেরে আমাকে আটকে রাখে। ছোট একটা ঘটনাকে ওরা রাজনৈতিকভাবে নিয়েছে।’
আহত এহসানের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক জানিয়েছেন তার ছেলের চোখের কর্নিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলোচ্য ঘটনায় শুধু নির্যাতিত একজন ছাত্রের কর্নিয়াই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-প্রশাসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিবেশ এবং ছাত্র রাজনীতিও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা আরো বহু ঘটেছে। কিন্তু তার তেমন কোন প্রতিকার হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের প্রশ্রয়ে ওদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত রয়েছে। যার অন্যতম উদাহরণ এহসান রফিক। এ ধরনের ঘটনা আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও রাজনীতির অধঃপতনের স্বাক্ষর বহন করে। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি উপলব্ধি করবেন কী? আজকাল প্রযুক্তি নিয়েও কেলেংকারি কম হচ্ছে না।
শব্দের যেমন প্রয়োগ এবং অপপ্রয়োগ আছে, প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তেমনি আছে ব্যবহার ও অপব্যবহারের বিষয়টি। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অপব্যবহারের বিষয়টি বেশ স্পষ্ট। মুঠোফোন ও আইপ্যাডের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে তো বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। এমন এক বাতাবরণে নিউজউইক জানালো, পুতিনের স্মার্টফোন নেই। খবরটি সচেতন মহলে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোনের জয়জয়কারের মধ্যেও এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় বেশ গর্বের সাথে পুতিন স্মার্টফোন ব্যবহার না করার কথা জানিয়েছেন। রুশ কাউন্সিল ফর সায়েন্স অ্যান্ড এডুকেশনের এক বৈঠকে জ্বালানি সাশ্রয়ের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চলছিল। সেখানে এক কর্মকর্তা একটি মোবাইল ভয়েস মেসেজ ও পানি ফুটানোয় কী পরিমাণ জ্বালানি পোড়ে তার তুলনা করছিলেন। রুশ কুর্শেতভ ইনস্টিটিউটের প্রধান মিখাইল কোভালচাক উক্ত আলোচনার সময় রাশিয়ায় প্রায় সবার হাতে স্মার্টফোন থাকার কথা বলছিলেন। তখন তার কথা কেড়ে নিয়ে পুতিন বলে ওঠেন, ‘আপনি বলেছেন সবার হাতেই স্মার্টফোন, ‘কই আমার তো স্মার্টফোন নেই, আপনারও তো নেই।’ আসলে যোগাযোগ করার জন্য অন্য মাধ্যমগুলো ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন পুতিন।
স্মার্টফোনে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না পুতিন। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন আরো ভয়ংকর কথা। স্মার্টফোন কিশোর মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। বিলগেটস ও স্টিভ জবস এর মতো প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা হয়তো মনোবিজ্ঞানীদের কথা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেছেন, মেয়ের বয়স ১৪ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে মুঠোফোন ধরতেই দেননি। ২০০৭ সালে মেয়ে একটি ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়লে তিনি বিধি-নিষেধ আরোপ করেন। আর ২০১১ সালে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টিভ জবস বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত আইপ্যাড সন্তানদের ব্যবহার করতে দেননি তিনি। জবস বলেন, আমরা বাড়িতে সন্তানদের প্রযুক্তি ব্যবহার সীমিত রেখেছিলাম। এদের কথায় তো কিছু বার্তা রয়েছে। বার্তা রয়েছে পুতিনের কথায়ও। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের অভিভাবকরা সেই বার্তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবো কী?
একজন যুবক একজন ছাত্রীর পা ধরে ক্ষমা চাইতে যাবে কেন? এতে কি যৌবনদীপ্ত মানুষটির অপমান হয় না? যৌবন তো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়টায় তো মানুষ মানুষের জন্য, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভালো কিছু করতে পারে। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করলাম ভিন্ন চিত্র। এখানে যৌবনের অপচয় হতে দেখলাম। যৌবন যেন এখানে পথ হারিয়েছে। শুধু এক শাহ আলম নয়, যৌবনে ভুল পথে হাঁটার মতো পথিকের সংখ্যা দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব যুবকরা তো ভিন গ্রহ থেকে এসে সমাজে ভুল কাজ করছে না। তারা তো আমাদের সমাজেই বসবাস করে থাকে এবং তাদের সাথে সম্পর্ক আছে পরিবারের, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, রাজনৈতিক সংগঠনেরও। এইসব সম্পর্ক কি ওদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে সমর্থ হচ্ছে না? তা হলে তো ওইসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেই প্রশ্ন জাগে।
সমাজের সব যুবক নষ্ট হয়ে যায়নি। যারা ভালো কিছু করতে চায়, বিবেকের ডাকে সাড়া দিতে চায়, তাদের তো উৎসাহিত করা উচিত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা হয় না। যেমন ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ধর্ষিতার উদ্ধারকারীদেরই আটক করলো পুলিশ’। এটি তো দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের উদাহরণ হতে পারে না। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। আশুলিয়ায় গণধর্ষণের শিকার মেয়েটি যেন সুবিচার পায় এবং উদ্ধারকারীরাও যেন হেনস্তার হাত থেকে রক্ষা পায়। কারণ কোন সমাজে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায় প্রতিরোধের অনুকূল পরিবেশ নির্মিত না হলে সেই সমাজ আর মানুষের বসবাসযোগ্য থাকে না। তেমন উদাহরণের এখন আর অভাব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়, পাড়ায়ও তা লক্ষ্য করা যায়।
‘শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করল ছাত্রলীগ’ শিরোনামে একটি খবর মুদ্রিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়, বাঁ চোখে তাকাতেই পারছিলেন না। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ঘুষিতে ফুলে গেছে সেটা। কপালে, ঠোঁটে লেগে আছে রক্তের দাগ। কালচে হয়ে গেছে প্রতিটি আঘাতের স্থান। কপাল ফুলে উঁচু হয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের এই ছাত্রের নাম এহসান রফিক। থাকেন সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের বারান্দায়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হল শাখার ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন চালায় তার ওপর। থেমে থেমে কিল-ঘুষিতো পড়েছেই, রড আর লাঠির আঘাতও ছিল সমানে। উল্লেখ্য যে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাত ২টা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে তিন দফা পেটানো হয়। শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি দিতে চাপ দেওয়া হয়। মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে চেক করা হয়। তার বাবা রফিকুল ইসলাম একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি। তারও ফেসবুক ঘাঁটাঘাটি করে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। কিছু না পেয়ে শেষমেশ হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি তাহসান আহমেদের কক্ষে আটকে রাখা হয়। গত বুধবার সন্ধ্যায় এহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আজ বেলা আড়াইটার দিকে তাহসান ভাইয়ের রুম থেকে পালিয়ে আসি। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু কোনভাবে শিবির প্রমাণ করতে না পেরে আমাকে আটকে রাখে। ছোট একটা ঘটনাকে ওরা রাজনৈতিকভাবে নিয়েছে।’
আহত এহসানের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক জানিয়েছেন তার ছেলের চোখের কর্নিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলোচ্য ঘটনায় শুধু নির্যাতিত একজন ছাত্রের কর্নিয়াই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-প্রশাসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিবেশ এবং ছাত্র রাজনীতিও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা আরো বহু ঘটেছে। কিন্তু তার তেমন কোন প্রতিকার হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের প্রশ্রয়ে ওদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত রয়েছে। যার অন্যতম উদাহরণ এহসান রফিক। এ ধরনের ঘটনা আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও রাজনীতির অধঃপতনের স্বাক্ষর বহন করে। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি উপলব্ধি করবেন কী? আজকাল প্রযুক্তি নিয়েও কেলেংকারি কম হচ্ছে না।
শব্দের যেমন প্রয়োগ এবং অপপ্রয়োগ আছে, প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও তেমনি আছে ব্যবহার ও অপব্যবহারের বিষয়টি। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অপব্যবহারের বিষয়টি বেশ স্পষ্ট। মুঠোফোন ও আইপ্যাডের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে তো বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। এমন এক বাতাবরণে নিউজউইক জানালো, পুতিনের স্মার্টফোন নেই। খবরটি সচেতন মহলে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোনের জয়জয়কারের মধ্যেও এই প্রযুক্তিটি ব্যবহার করেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় বেশ গর্বের সাথে পুতিন স্মার্টফোন ব্যবহার না করার কথা জানিয়েছেন। রুশ কাউন্সিল ফর সায়েন্স অ্যান্ড এডুকেশনের এক বৈঠকে জ্বালানি সাশ্রয়ের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চলছিল। সেখানে এক কর্মকর্তা একটি মোবাইল ভয়েস মেসেজ ও পানি ফুটানোয় কী পরিমাণ জ্বালানি পোড়ে তার তুলনা করছিলেন। রুশ কুর্শেতভ ইনস্টিটিউটের প্রধান মিখাইল কোভালচাক উক্ত আলোচনার সময় রাশিয়ায় প্রায় সবার হাতে স্মার্টফোন থাকার কথা বলছিলেন। তখন তার কথা কেড়ে নিয়ে পুতিন বলে ওঠেন, ‘আপনি বলেছেন সবার হাতেই স্মার্টফোন, ‘কই আমার তো স্মার্টফোন নেই, আপনারও তো নেই।’ আসলে যোগাযোগ করার জন্য অন্য মাধ্যমগুলো ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন পুতিন।
স্মার্টফোনে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না পুতিন। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন আরো ভয়ংকর কথা। স্মার্টফোন কিশোর মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। বিলগেটস ও স্টিভ জবস এর মতো প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা হয়তো মনোবিজ্ঞানীদের কথা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেছেন, মেয়ের বয়স ১৪ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে মুঠোফোন ধরতেই দেননি। ২০০৭ সালে মেয়ে একটি ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়লে তিনি বিধি-নিষেধ আরোপ করেন। আর ২০১১ সালে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টিভ জবস বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত আইপ্যাড সন্তানদের ব্যবহার করতে দেননি তিনি। জবস বলেন, আমরা বাড়িতে সন্তানদের প্রযুক্তি ব্যবহার সীমিত রেখেছিলাম। এদের কথায় তো কিছু বার্তা রয়েছে। বার্তা রয়েছে পুতিনের কথায়ও। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের অভিভাবকরা সেই বার্তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবো কী?
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ইবনে মিজান ১৮/০২/২০১৮ভুল এবং সঠিকের পার্থক্য নির্ধারণ করা প্রেমিক বয়সে খুব একটা সম্ভব হয় না। ভুল করেই ভুউল হয়ে যায়।
-
কামরুজ্জামান সাদ ১৬/০২/২০১৮আমাদের উপলব্ধি জ্ঞানটা অনেক কম।
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১৫/০২/২০১৮একটি সুন্দর লেখা।ধন্যবাদ প্রিয় .....