রাজনৈতিক কালাকানুন
২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে চরম দমনমূলক কালাকানুন অনুমোদন করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ অধিবেশনেই এই কালাকানুন আইনে পরিণত হবে। এবার এ আইনের নাম দেয়া হয়েছে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’। সরকারের তরফ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা ও সংবাদপত্র বা মিডিয়া যেসব খবর প্রচার করছে তাতে নানাভাবে মানুষের সম্মানহানি যেমন হচ্ছে তেমনি অযাচিত ও অনাকাক্সিক্ষত তথ্যাদি প্রকাশ হয়ে পড়ছে। তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অশালীন ভিডিও প্রকাশ করে নারিদের মান-সম্মান ক্ষুণœ করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যই এ আইন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
সরকার ইতিপূর্বে জারি করেছিল তথ্যপ্রযুক্তি আইন। তার ৫৭ ধারা নিয়ে দেশব্যাপী তুমুল বিতর্কের সূচনা হয়। বিভিন্ন অধিকার গ্রুপ ও সাংবাদিক সমাজ এই ৫৭ ধারার তীব্র সমালোচনা করতে শুরু করেন। তারা বলছিলেন, এই ধারাবলে মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হবে। সরকারের কোন সংবাদ পছন্দ না হলেই এই ধারায় সাংবাদিকদের কারারুদ্ধ করে কঠোর শাস্তি দিতে পারবে। যদিও বলা হয়েছিল যে, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এই ধারার কোনরূপ অপপ্রয়োগ হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, এই ধারার প্রধান ভিকটিম হচ্ছেন সাংবাদিকরাই। এই ধারায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দায়ের করেছিলেন। এতে বেশকিছু সাংবাদিককে জেলেও পোরা হয়। এতে পরিস্থিতি অসহনীয় রূপ নেয়। সাংবাদিকরা অব্যাহতভাবে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিরোধিতা করতে থাকেন। তখন সরকারের তরফ থেকেও বলা হয়, কোন্্ কোন্্ ক্ষেত্রে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ হচ্ছে এই ধারার পরিবর্তন করা হবে। তারপরই মন্ত্রিসভায় পাস করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮।
তাতে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা তো বিলুপ্ত হলোই না বরং তা আরও কঠোররূপে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত হলো। ৫৭ ধারার শাস্তিগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪টি ধারায় আরও কঠোর করে সন্নিবেশিত করা হলো। যদিও ৫৭ ধারায় কথা ছিল, এই আইনে কারও বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হবে।
কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সে অনুমোদন ব্যবস্থা তুলে নেয়া হয়েছে। ৫৭ ধারা অনুযায়ী কোন অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল ১০ বছর, জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সে সাজা বাড়িয়ে ১৪ বছর করা হয়। আর এই আইনে কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে আটক করার ক্ষমতা দেয়া হয় পুলিশের এসআই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। আটকের জন্য কারো অনুমোদন নেয়ার ব্যবস্থাও তুলে দেয়া হয়। ৫৭ ধারায় বিচার্য বিষয় ছিল মানহানি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো ও কোন কিছু ছেপে বা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচার করে এসব কাজ করা যাবে না। যাই হোক, ১৯১৫ সালে সাংবাদিক প্রবীর শিকদার গ্রেফতারের পর সাংবাদিকদের আন্দোলন ব্যাপকতর রূপ নেয়। তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সে স্ট্যাটাসে নাকি এক প্রভাবশালী মন্ত্রির মর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়েছিল। আর তাই প্রবীর শিকদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঝড় বয়ে যেতে থাকে। আর শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই এই ৫৭ ধারায় প্রবীর শিকদারের বিরুদ্ধে তিনশ’রও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পরে দেখা যায়, এর প্রায় ৯০ শতাংশই দুরভিসন্ধিমূলক। আর মামলাগুলোর ৯০ শতাংশই দায়ের করেছিল শাসক দলের বড় বড় নেতা বা তাদের লোকেরা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আইসিটি এ্যাক্টের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা নতুন নামে অব্যাহতই আছে। তাছাড়া ৫৭ ধারার অধীনে এ পর্যন্ত যে সাত শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সে মামলাগুলো চলবে। নতুন আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থা গঠিত হবে। তার প্রধান থাকবেন একজন মহাপরিচালক। এই মহাপরিচালকের কাজ হবে কোন সাইবার অপরাধ ঘটলে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তা বিটিআরসি কর্তৃপক্ষকে জানানো। সে ক্ষেত্রেও কার্যত তার কোন ক্ষমতা নেই। সকল ক্ষমতা দেয়া হয়েছে পুলিশকে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৩৪ ধারার অপরাধ জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। পুলিশ যদি মনে করে কেউ এসব ধারায় অপরাধ করেছে বা করতে পারে তাহলেই তাকে গ্রেফতার করতে পারবে। পুলিশ কোন কাজকে অপরাধ মনে করলেই তা অপরাধ হতে পারে না।
নতুন আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি অবৈধভাবে কোন তথ্য অবকাঠামোতে প্রবেশ করে তবে তার শাস্তি হবে সাত বছরের জেল, ২৫ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড। এ ধরনের অবকাঠামোর কোন ক্ষতিসাধন করলে তার শাস্তি হবে ১৪ বছরের জেল বা এক কোটি টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড। এই আইনের সকল ধারাই এখন বিপজ্জনক। তবে ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য ডিজিটাল বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ ও সংরক্ষণ করেন বা সহায়তা করেন তাহলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আমরা নানাভাবে সত্য প্রকাশের জন্য তথ্য সংগ্রহ করি। এখানে নিষিদ্ধ পদ্ধতিগুলো তার অন্যতম। এর লক্ষ্য, সমাজ ও প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করা। কিন্তু সরকার সংবাদ প্রকাশের সকল পথ বন্ধ করে দিতে চাইছে বলেই মনে হয় এর মূল লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে। এই আইন থেকে প্রমাণিত হয়, সরকারের ভেতর যে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে, জালিয়াতি চালিয়াতি যেভাবে বেড়েছে তাতে সরকার সকল দুর্নীতিবাজকে সুরক্ষা দিতে চাইছেন। তাতে গণতন্ত্রের কোন অস্তিত্ব দেশে আর থাকবে না। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, এ ধরনের আইনের মাধ্যমে দেশটাকে বার্মিজ গণতন্ত্র মডেলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ আইন চালু হলে আমরা দাউয়া গণতন্ত্র হয়ে যাবো।
সরকার ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দিচ্ছে না বটে, তবে তার ওপর সর্বগ্রাসী নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। যেসব তরুণ ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন তারা এই নিষ্ঠুর আইন সম্পর্কে কিছু জানতেও পারবে না। কিন্তু পুলিশ তাদের এই আইনে কোন্্ দিন যে তাকে গ্রেফতার করে ফেলবে তা সে টেরও পাবে না। তাছাড়া এই তরুণদের কার এক কোটি টাকা জরিমানা দেওয়ার ক্ষমতা আছে? যে নি¤œমধ্যবিত্ত তরুণের পরিবার কষ্টেসৃষ্টে দিনাতিপাত করে তারা বাপের জন্মে কোটি টাকার স্বপ্নও দেখে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ বলেছেন, মন্ত্রি-এমপিদের মান-ইজ্জত রক্ষার জন্য এই আইন জারি করা হয়েছে। আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি যে, দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। পত্র-পত্রিকায় দুর্নীতিবাজ মন্ত্রি-এমপিদের দুর্নীতির খবর হামেশাই প্রকাশিত হয়, প্রকাশিত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। এই আইন পাস হলে তা আর প্রকাশ করা যাবে না। খেলারাম খেলে যাবে। তোফায়েল সাহেবরা মন্ত্রি-এমপিদের দুর্নীতি রোধ করতে পারবেন না, বরং তা যেন জনসমক্ষে প্রকাশিত না হতে পারে তার ব্যবস্থা করতে নিষ্ঠুর আইন করবেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, মন্ত্রি-এমপিদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ হলে তাদের ইজ্জত যায়। অতএব খবরই বন্ধ। কিন্তু অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
সর্বশেষ, নির্বাচনের আগে আগে এই আইন জারির অর্থ আগামী নির্বাচনও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো কারচুপিময় হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কারচুপি, জালিয়াতি, ভোট ডাকাতি, প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসারদের সীলমারাÑ সব কুকর্মের খবরই প্রকাশিত হয়েছিল। এবার যাতে তা না পারে সেটাও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণয়নের আর একটি উদ্দেশ্য।
সরকার ইতিপূর্বে জারি করেছিল তথ্যপ্রযুক্তি আইন। তার ৫৭ ধারা নিয়ে দেশব্যাপী তুমুল বিতর্কের সূচনা হয়। বিভিন্ন অধিকার গ্রুপ ও সাংবাদিক সমাজ এই ৫৭ ধারার তীব্র সমালোচনা করতে শুরু করেন। তারা বলছিলেন, এই ধারাবলে মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হবে। সরকারের কোন সংবাদ পছন্দ না হলেই এই ধারায় সাংবাদিকদের কারারুদ্ধ করে কঠোর শাস্তি দিতে পারবে। যদিও বলা হয়েছিল যে, সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এই ধারার কোনরূপ অপপ্রয়োগ হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, এই ধারার প্রধান ভিকটিম হচ্ছেন সাংবাদিকরাই। এই ধারায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দায়ের করেছিলেন। এতে বেশকিছু সাংবাদিককে জেলেও পোরা হয়। এতে পরিস্থিতি অসহনীয় রূপ নেয়। সাংবাদিকরা অব্যাহতভাবে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিরোধিতা করতে থাকেন। তখন সরকারের তরফ থেকেও বলা হয়, কোন্্ কোন্্ ক্ষেত্রে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ হচ্ছে এই ধারার পরিবর্তন করা হবে। তারপরই মন্ত্রিসভায় পাস করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮।
তাতে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা তো বিলুপ্ত হলোই না বরং তা আরও কঠোররূপে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত হলো। ৫৭ ধারার শাস্তিগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪টি ধারায় আরও কঠোর করে সন্নিবেশিত করা হলো। যদিও ৫৭ ধারায় কথা ছিল, এই আইনে কারও বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হবে।
কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সে অনুমোদন ব্যবস্থা তুলে নেয়া হয়েছে। ৫৭ ধারা অনুযায়ী কোন অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল ১০ বছর, জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সে সাজা বাড়িয়ে ১৪ বছর করা হয়। আর এই আইনে কাউকে বিনা ওয়ারেন্টে আটক করার ক্ষমতা দেয়া হয় পুলিশের এসআই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। আটকের জন্য কারো অনুমোদন নেয়ার ব্যবস্থাও তুলে দেয়া হয়। ৫৭ ধারায় বিচার্য বিষয় ছিল মানহানি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো ও কোন কিছু ছেপে বা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচার করে এসব কাজ করা যাবে না। যাই হোক, ১৯১৫ সালে সাংবাদিক প্রবীর শিকদার গ্রেফতারের পর সাংবাদিকদের আন্দোলন ব্যাপকতর রূপ নেয়। তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সে স্ট্যাটাসে নাকি এক প্রভাবশালী মন্ত্রির মর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়েছিল। আর তাই প্রবীর শিকদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঝড় বয়ে যেতে থাকে। আর শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই এই ৫৭ ধারায় প্রবীর শিকদারের বিরুদ্ধে তিনশ’রও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পরে দেখা যায়, এর প্রায় ৯০ শতাংশই দুরভিসন্ধিমূলক। আর মামলাগুলোর ৯০ শতাংশই দায়ের করেছিল শাসক দলের বড় বড় নেতা বা তাদের লোকেরা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আইসিটি এ্যাক্টের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা নতুন নামে অব্যাহতই আছে। তাছাড়া ৫৭ ধারার অধীনে এ পর্যন্ত যে সাত শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সে মামলাগুলো চলবে। নতুন আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থা গঠিত হবে। তার প্রধান থাকবেন একজন মহাপরিচালক। এই মহাপরিচালকের কাজ হবে কোন সাইবার অপরাধ ঘটলে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তা বিটিআরসি কর্তৃপক্ষকে জানানো। সে ক্ষেত্রেও কার্যত তার কোন ক্ষমতা নেই। সকল ক্ষমতা দেয়া হয়েছে পুলিশকে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৩৪ ধারার অপরাধ জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। পুলিশ যদি মনে করে কেউ এসব ধারায় অপরাধ করেছে বা করতে পারে তাহলেই তাকে গ্রেফতার করতে পারবে। পুলিশ কোন কাজকে অপরাধ মনে করলেই তা অপরাধ হতে পারে না।
নতুন আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি অবৈধভাবে কোন তথ্য অবকাঠামোতে প্রবেশ করে তবে তার শাস্তি হবে সাত বছরের জেল, ২৫ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড। এ ধরনের অবকাঠামোর কোন ক্ষতিসাধন করলে তার শাস্তি হবে ১৪ বছরের জেল বা এক কোটি টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড। এই আইনের সকল ধারাই এখন বিপজ্জনক। তবে ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য ডিজিটাল বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ ও সংরক্ষণ করেন বা সহায়তা করেন তাহলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আমরা নানাভাবে সত্য প্রকাশের জন্য তথ্য সংগ্রহ করি। এখানে নিষিদ্ধ পদ্ধতিগুলো তার অন্যতম। এর লক্ষ্য, সমাজ ও প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার জন্য সরকারকে সহযোগিতা করা। কিন্তু সরকার সংবাদ প্রকাশের সকল পথ বন্ধ করে দিতে চাইছে বলেই মনে হয় এর মূল লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে। এই আইন থেকে প্রমাণিত হয়, সরকারের ভেতর যে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে, জালিয়াতি চালিয়াতি যেভাবে বেড়েছে তাতে সরকার সকল দুর্নীতিবাজকে সুরক্ষা দিতে চাইছেন। তাতে গণতন্ত্রের কোন অস্তিত্ব দেশে আর থাকবে না। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, এ ধরনের আইনের মাধ্যমে দেশটাকে বার্মিজ গণতন্ত্র মডেলের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ আইন চালু হলে আমরা দাউয়া গণতন্ত্র হয়ে যাবো।
সরকার ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দিচ্ছে না বটে, তবে তার ওপর সর্বগ্রাসী নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। যেসব তরুণ ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন তারা এই নিষ্ঠুর আইন সম্পর্কে কিছু জানতেও পারবে না। কিন্তু পুলিশ তাদের এই আইনে কোন্্ দিন যে তাকে গ্রেফতার করে ফেলবে তা সে টেরও পাবে না। তাছাড়া এই তরুণদের কার এক কোটি টাকা জরিমানা দেওয়ার ক্ষমতা আছে? যে নি¤œমধ্যবিত্ত তরুণের পরিবার কষ্টেসৃষ্টে দিনাতিপাত করে তারা বাপের জন্মে কোটি টাকার স্বপ্নও দেখে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ বলেছেন, মন্ত্রি-এমপিদের মান-ইজ্জত রক্ষার জন্য এই আইন জারি করা হয়েছে। আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি যে, দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। পত্র-পত্রিকায় দুর্নীতিবাজ মন্ত্রি-এমপিদের দুর্নীতির খবর হামেশাই প্রকাশিত হয়, প্রকাশিত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। এই আইন পাস হলে তা আর প্রকাশ করা যাবে না। খেলারাম খেলে যাবে। তোফায়েল সাহেবরা মন্ত্রি-এমপিদের দুর্নীতি রোধ করতে পারবেন না, বরং তা যেন জনসমক্ষে প্রকাশিত না হতে পারে তার ব্যবস্থা করতে নিষ্ঠুর আইন করবেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, মন্ত্রি-এমপিদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ হলে তাদের ইজ্জত যায়। অতএব খবরই বন্ধ। কিন্তু অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?
সর্বশেষ, নির্বাচনের আগে আগে এই আইন জারির অর্থ আগামী নির্বাচনও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো কারচুপিময় হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কারচুপি, জালিয়াতি, ভোট ডাকাতি, প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসারদের সীলমারাÑ সব কুকর্মের খবরই প্রকাশিত হয়েছিল। এবার যাতে তা না পারে সেটাও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণয়নের আর একটি উদ্দেশ্য।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রেজাউল রেজা (নীরব কবি) ১৪/০২/২০১৮বাস্তব সত্য।ধন্যবাদ
-
একনিষ্ঠ অনুগত ০৯/০২/২০১৮ক্ষমতা আর অর্থ এ দুটোর জন্য মানুষ কত কিছুই না করতে পারে।।