খাবার পানি সংকট
পুরনো নলকূপে পানি উঠে না। নতুন নলকূপ স্থাপনেও আগের তুলনায় বাড়ানো হচ্ছে গভীরতা। গ্রামের অনেক এলাকায় গর্ত করে ৮/১০ ফুট গভীরে গিয়ে বসানো হচ্ছে চাপকল। এ চিত্র এখন সারা দেশের। অর্থাৎ আশংকাজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। ব্যবহারের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির বিকল্প উৎসের সন্ধান ও তা ব্যবহার করতে না পারলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে সারা দেশেই পানির সংকটে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশংকা করা হচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে অনেক আগে থেকেই ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প উৎস সন্ধান এবং ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহারের তাদিগ দেয়া হচ্ছে। সরকারও বিষয়টিকে আমলে নিয়ে হাল সময়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকাতেই কয়েক বছর আগে থেকেই পানির এই সংকটের তীব্রতা অনুভব করছেন সেই এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে পানির অভাবে সেখানকার কৃষি ও বনজ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে কৃষি মৌসুমে পানির অভাবে সেচ ব্যবস্থারও ত্রাহি অবস্থা। শুকিয়ে গেছে নদীনালা। খাল পুকুরেও পানি থাকে না। গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি কৃষি বা সেচ এবং যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম নদী খালও দখল হয়ে গেছে। স্থানীয়দের ভাষায় উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় আগে থেকেই মরুকরণ শুরু হয়ে গেছে।
এদিকে দেড় কোটি মানুষের আবাসস্থল রাজধানী ঢাকায় পানির স্তর প্রতিবছর ২ থেকে ৩ মিটার করে নিচে নামছে। গত প্রায় ১০ বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। এ ধারাবাহিকতা আরও পাঁচ বছর চললে ঢাকার বিশাল এলাকা থেকে পানি উত্তোলন করা আর সম্ভব হবে না। আর এ সময়ের মধ্যে পানির বিকল্প উৎস সৃষ্টি করতে না পারলে মারাত্মক সামাজিক সংকট তৈরি করবে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে ঢাকাবাসীকে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প পথ আর থাকবে না।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় খবরে বেশি আতংকের তৈরি হয়েছে রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ঘিরে। বিশাল বসতি নিয়ে গড়ে উঠা নগরীতে ওয়াসা সুপেয় পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভূ-গর্ভস্থ স্তর থেকে পানি উত্তোলনে বাধ্য হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর নদীগুলোর পানি মাত্রাতিরিক্ত দূষিত হয়ে পড়ায় তা পরিশোধন করে ব্যবহার করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর যে বাড়তি চাপ পড়ছে তা অশনিসংকেত বলে বিবেচিত হচ্ছে। রাজধানীর পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাওয়ায় বিপদ সৃষ্টি হচ্ছে অন্য দিক থেকেও। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগের দূষিত পানি ভূগর্ভের শূন্য স্থানে প্রবেশ করে নাগরিক জীবনের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। এ ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারকারীরা নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে।
পানি ও পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ পানির যে সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে তার প্রধান কারণ উজানে পানি প্রত্যাহারের ঘটনা। নদ-নদীর পানির ধারণক্ষমতা হ্রাসও এ বিপদের জন্য দায়ী। নদী দূষণ অবস্থাকে ভয়াবহভাবে বিপজ্জনক করে তুলছে। অস্তিত্বের স্বার্থে উজানে পানি প্রত্যাহার রোধে সরকারকে সক্রিয় হতে হবে। নদ-নদীর ধারণক্ষমতা বাড়ানো ও দূষণ বন্ধে নিতে হবে জোরালো পদক্ষেপ।
সাম্প্রতিক সময়ের এক গবেষণায় জানা গেছে, সারা বিশ্বেই পানির উৎস প্রতিদিনই কমছে। আশংকা করা হচেছ আগামী দিনে পানি সংকটের মুখে পড়বে সমগ্র মানব জাতি। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা (নাসা) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর ভূগর্ভে পানির যত মজুদ আছে তার এক-তৃতীয়াংশই মানুষের কর্মকান্ডের কারণে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভের বাকি দুই-তৃতীয়াংশ পানির সঠিক পরিমাণ কত তা স্পষ্টভাবে জানা না থাকায় তা জানা এবং সে পানি কত সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে তা বের করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। নাসার মতে, পৃথিবীর ৩৭টি বৃহৎ পানির স্তরের মধ্যে ২১টির পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে। এ স্তরগুলোর অবস্থান ভারত ও চীন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সীমানার মধ্যে। নাসা বলছে, বৈষয়িক কারণে পানির মোট ৩৭ টি স্তরের মধ্যে ১৩টি পানির স্তর এখন চরম সংকটাপন্ন এবং এগুলোর প্রায় সবগুলোই প্রায় শুকিয়ে গেছে। এ স্তরগুলো ব্যবহার উপযোগী করা অর্থাৎ প্রাকৃতিক উপায়ে স্তরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ করার সম্ভাবনাও প্রায় ক্ষীণ।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পানির উৎস ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বাংলাদেশের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং বিকল্প উৎস সন্ধান নিয়ে দৈনিক সংগ্রামকে জানান, বিগত ৩০ বছর আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু পানির বিকল্প উৎস সন্ধান নিয়ে আশানুরূপ কাজ হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শুধু সরকার নয় জনসাধারণের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে বেশ সচেতনতা তৈরি হয়েছে। সরকার পানির বিকল্প উৎস সন্ধানে বড় বাজেটের প্রকল্পও হাতে নিচেছ। শুধুমাত্র ভূ- গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর না করে ঢাকা ওয়াসা বিকল্প উৎস খুঁজছে। তিনি আরো বলেন, গ্রামে গঞ্জেও এখন টিউবওয়েল বসিয়ে পানি তোলা যায় না। অনেক এলাকায় ২৫/২৬ মিটার নিচে পানির স্তর চলে গেছে। সংকট উত্তরনে একটি মাত্রই সমাধান আর তা হলো পানির বিকল্প উৎস সন্ধান করতে হবে। ভূ-উপরিভাগের পানি ধরে রেখে তার ব্যবহার করতে হবে।
ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশংকাজনকভাবে নিচে নেমে যাওয়ার প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, গত কয়েক বছরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে। সুপেয় পানি ও কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অধিক হারে নির্ভরশীলতার কারণে এ স্তর নেমে যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, সংকট উত্তরণে সরকার প্রাথমিকভাবে ৩শ’ ৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৮০৯ টি পুকুর পুনঃখনন করা হবে। এছাড়া পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ১৪৩ টি পুকুর পুনঃখনন ও ২০০টি পুকুর নতুনভাবে খনন করা হবে। এসব পুকুরের মাধ্যমে পন্ড স্যান্ড ফিল্টার পদ্ধতিতে দেশের সব জেলায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে।
অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার পানির সংকট সমাধানের বিষয়ে মন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে ঢাকা ওয়াসা মাস্টারপ্লান প্রণয়ন করেছে। এ প্ল্যানের আওতায় ২০২১ সাল নাগাদ ঢাকায় ৭০ ভাগ পানি ভূ উপরিস্থ পানির উৎস থেকে সরবরাহ করার জন্য কাজ করছে। ঢাকা ওয়াসা তিনটি বৃহৎ পানি শোধনাগার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসা ‘ শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ নামে একটি পানি শোধনাগার চালু করেছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির উৎসের নির্ভরতা কমে ৫৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ হয়েছে। আরও তিনটি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং পানীয় জলের সংকট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ‘ঢাকা ওয়াসার দেয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানান, ওয়াসার মতে ঢাকা শহরের দৈনিক পানির চাহিদা ২৩০-২৩৫ কোটি লিটার। আর ঢাকা ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা ২৪০-২৪২ কোটি লিটার। যদিও সরবরাহ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে সারা বছরই ঢাকা শহরে কমবেশি পানি সংকট থাকে। তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা নগরবাসীর বর্তমান পানির চাহিদা পূরণ করতে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে ৭৮ ভাগ পানি উত্তোলন করছে। আর ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে ২২ ভাগ পানি সংগ্রহ করে থাকে। ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনুযায়ী এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থেকে ন্যূনতম ৮০ ভাগ পানি সংগ্রহ করার সক্ষমতা অর্জন না করতে পারলে পানির ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে। সেটা মোকাবেলা করার মতো কোনো সক্ষমতা থাকবে না ঢাকা ওয়াসার।
ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) এর গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকা শহরের পানির স্তর প্রতিবছর ২-৩ মিটার করে নিচে নেমে যাচ্ছে। বর্তমানে মধ্য ঢাকার পানির স্তর বিপদসীমায় পৌঁছেছে। এর লাগাম টেনে না ধরলে ৫-৬ বছরের ব্যবধানে ঢাকা শহরের বড় একটি অংশে পানি পাওয়া খুবই দুষ্কর হয়ে যাবে। সে সময় ঢাকা শহরের বসবাস করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকাতেই কয়েক বছর আগে থেকেই পানির এই সংকটের তীব্রতা অনুভব করছেন সেই এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে পানির অভাবে সেখানকার কৃষি ও বনজ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে কৃষি মৌসুমে পানির অভাবে সেচ ব্যবস্থারও ত্রাহি অবস্থা। শুকিয়ে গেছে নদীনালা। খাল পুকুরেও পানি থাকে না। গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি কৃষি বা সেচ এবং যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম নদী খালও দখল হয়ে গেছে। স্থানীয়দের ভাষায় উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় আগে থেকেই মরুকরণ শুরু হয়ে গেছে।
এদিকে দেড় কোটি মানুষের আবাসস্থল রাজধানী ঢাকায় পানির স্তর প্রতিবছর ২ থেকে ৩ মিটার করে নিচে নামছে। গত প্রায় ১০ বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। এ ধারাবাহিকতা আরও পাঁচ বছর চললে ঢাকার বিশাল এলাকা থেকে পানি উত্তোলন করা আর সম্ভব হবে না। আর এ সময়ের মধ্যে পানির বিকল্প উৎস সৃষ্টি করতে না পারলে মারাত্মক সামাজিক সংকট তৈরি করবে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে ঢাকাবাসীকে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প পথ আর থাকবে না।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় খবরে বেশি আতংকের তৈরি হয়েছে রাজধানী ঢাকা এবং এর আশপাশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ঘিরে। বিশাল বসতি নিয়ে গড়ে উঠা নগরীতে ওয়াসা সুপেয় পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভূ-গর্ভস্থ স্তর থেকে পানি উত্তোলনে বাধ্য হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর নদীগুলোর পানি মাত্রাতিরিক্ত দূষিত হয়ে পড়ায় তা পরিশোধন করে ব্যবহার করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ভূগর্ভস্থ পানির ওপর যে বাড়তি চাপ পড়ছে তা অশনিসংকেত বলে বিবেচিত হচ্ছে। রাজধানীর পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাওয়ায় বিপদ সৃষ্টি হচ্ছে অন্য দিক থেকেও। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগের দূষিত পানি ভূগর্ভের শূন্য স্থানে প্রবেশ করে নাগরিক জীবনের জন্য বিপদ ডেকে আনছে। এ ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারকারীরা নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে।
পানি ও পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ পানির যে সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে তার প্রধান কারণ উজানে পানি প্রত্যাহারের ঘটনা। নদ-নদীর পানির ধারণক্ষমতা হ্রাসও এ বিপদের জন্য দায়ী। নদী দূষণ অবস্থাকে ভয়াবহভাবে বিপজ্জনক করে তুলছে। অস্তিত্বের স্বার্থে উজানে পানি প্রত্যাহার রোধে সরকারকে সক্রিয় হতে হবে। নদ-নদীর ধারণক্ষমতা বাড়ানো ও দূষণ বন্ধে নিতে হবে জোরালো পদক্ষেপ।
সাম্প্রতিক সময়ের এক গবেষণায় জানা গেছে, সারা বিশ্বেই পানির উৎস প্রতিদিনই কমছে। আশংকা করা হচেছ আগামী দিনে পানি সংকটের মুখে পড়বে সমগ্র মানব জাতি। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা (নাসা) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর ভূগর্ভে পানির যত মজুদ আছে তার এক-তৃতীয়াংশই মানুষের কর্মকান্ডের কারণে দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভের বাকি দুই-তৃতীয়াংশ পানির সঠিক পরিমাণ কত তা স্পষ্টভাবে জানা না থাকায় তা জানা এবং সে পানি কত সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে তা বের করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। নাসার মতে, পৃথিবীর ৩৭টি বৃহৎ পানির স্তরের মধ্যে ২১টির পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে। এ স্তরগুলোর অবস্থান ভারত ও চীন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সীমানার মধ্যে। নাসা বলছে, বৈষয়িক কারণে পানির মোট ৩৭ টি স্তরের মধ্যে ১৩টি পানির স্তর এখন চরম সংকটাপন্ন এবং এগুলোর প্রায় সবগুলোই প্রায় শুকিয়ে গেছে। এ স্তরগুলো ব্যবহার উপযোগী করা অর্থাৎ প্রাকৃতিক উপায়ে স্তরগুলো পানিতে পরিপূর্ণ করার সম্ভাবনাও প্রায় ক্ষীণ।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পানির উৎস ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বাংলাদেশের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং বিকল্প উৎস সন্ধান নিয়ে দৈনিক সংগ্রামকে জানান, বিগত ৩০ বছর আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু পানির বিকল্প উৎস সন্ধান নিয়ে আশানুরূপ কাজ হয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শুধু সরকার নয় জনসাধারণের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে বেশ সচেতনতা তৈরি হয়েছে। সরকার পানির বিকল্প উৎস সন্ধানে বড় বাজেটের প্রকল্পও হাতে নিচেছ। শুধুমাত্র ভূ- গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর না করে ঢাকা ওয়াসা বিকল্প উৎস খুঁজছে। তিনি আরো বলেন, গ্রামে গঞ্জেও এখন টিউবওয়েল বসিয়ে পানি তোলা যায় না। অনেক এলাকায় ২৫/২৬ মিটার নিচে পানির স্তর চলে গেছে। সংকট উত্তরনে একটি মাত্রই সমাধান আর তা হলো পানির বিকল্প উৎস সন্ধান করতে হবে। ভূ-উপরিভাগের পানি ধরে রেখে তার ব্যবহার করতে হবে।
ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশংকাজনকভাবে নিচে নেমে যাওয়ার প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, গত কয়েক বছরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩ থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে। সুপেয় পানি ও কৃষিকাজে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অধিক হারে নির্ভরশীলতার কারণে এ স্তর নেমে যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, সংকট উত্তরণে সরকার প্রাথমিকভাবে ৩শ’ ৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৮০৯ টি পুকুর পুনঃখনন করা হবে। এছাড়া পল্লী অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় ১৪৩ টি পুকুর পুনঃখনন ও ২০০টি পুকুর নতুনভাবে খনন করা হবে। এসব পুকুরের মাধ্যমে পন্ড স্যান্ড ফিল্টার পদ্ধতিতে দেশের সব জেলায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে।
অন্যদিকে রাজধানী ঢাকার পানির সংকট সমাধানের বিষয়ে মন্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে ঢাকা ওয়াসা মাস্টারপ্লান প্রণয়ন করেছে। এ প্ল্যানের আওতায় ২০২১ সাল নাগাদ ঢাকায় ৭০ ভাগ পানি ভূ উপরিস্থ পানির উৎস থেকে সরবরাহ করার জন্য কাজ করছে। ঢাকা ওয়াসা তিনটি বৃহৎ পানি শোধনাগার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ওয়াসা ‘ শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ নামে একটি পানি শোধনাগার চালু করেছে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির উৎসের নির্ভরতা কমে ৫৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ হয়েছে। আরও তিনটি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং পানীয় জলের সংকট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ‘ঢাকা ওয়াসার দেয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানান, ওয়াসার মতে ঢাকা শহরের দৈনিক পানির চাহিদা ২৩০-২৩৫ কোটি লিটার। আর ঢাকা ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা ২৪০-২৪২ কোটি লিটার। যদিও সরবরাহ ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে সারা বছরই ঢাকা শহরে কমবেশি পানি সংকট থাকে। তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা নগরবাসীর বর্তমান পানির চাহিদা পূরণ করতে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে ৭৮ ভাগ পানি উত্তোলন করছে। আর ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে ২২ ভাগ পানি সংগ্রহ করে থাকে। ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনুযায়ী এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থেকে ন্যূনতম ৮০ ভাগ পানি সংগ্রহ করার সক্ষমতা অর্জন না করতে পারলে পানির ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে। সেটা মোকাবেলা করার মতো কোনো সক্ষমতা থাকবে না ঢাকা ওয়াসার।
ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) এর গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকা শহরের পানির স্তর প্রতিবছর ২-৩ মিটার করে নিচে নেমে যাচ্ছে। বর্তমানে মধ্য ঢাকার পানির স্তর বিপদসীমায় পৌঁছেছে। এর লাগাম টেনে না ধরলে ৫-৬ বছরের ব্যবধানে ঢাকা শহরের বড় একটি অংশে পানি পাওয়া খুবই দুষ্কর হয়ে যাবে। সে সময় ঢাকা শহরের বসবাস করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মধু মঙ্গল সিনহা ২৯/১২/২০১৭সঠিক বললেন।