দেস্তের পাশে কে আছো হে মানব
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার (বার্মা) থেকে জীবন বাঁচাতে সাগর পথে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান নারী, পুরুষ ও শিশুদের মানবিক পুনর্বাসন ও খাদ্য সংস্থান করতে গিয়ে সরকার দেশে গেল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কোটি মানুষের দুঃখ-দুর্ভোগের বিষয়টি পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে। গত আগস্ট মাসের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ৩৭ জেলায় পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও সে কাজ এখনো চোখে পড়ার মতো নয়। সাধারণত বন্যার পানি ধীরে ধীরে নেমে যাওয়ার পর বন্যার্ত মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে পড়ে। লাখ লাখ মানুষের ঘর-বাড়ি, মাঠের ফসল, হাঁস-মোরগ, গবাদি পশু, পুকুর-খামারের মাছ হারানোর পাশাপাশি কর্মহীন বেকার হয়ে পড়ে মানুষ। এ সময়ে দুর্গত ও চরম দারিদ্র্যপীড়িত মানুষদের পুনর্বাসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হলেও তার কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সারাদেশে বন্যা কবলিত এলাকার দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ, প্রান্তিক কৃষক, নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লাখ লাখ মানুষ নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করছে। সর্বস্বহারা মানুষগুলো নিত্যঅভাব-অনটনের মধ্যে পড়ে কোনো রকমে একবেলা খাবার জোগাড় করতে পারলেও আরেক বেলার খাবার জোগাড় করতে পারছে না। পরিবারের বয়স্কদের অনেকেই রাতে না খেয়ে ঘুমাতে যায়। কাজ ও আয় না থাকায় অনেকে সহায়-সম্বল পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছে। অনেকে চড়া সুদে ঋণ করে চলছে। প্রয়োজনীয় পুঁজি ও বীজের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ফসল উৎপাদন করতে পারছে না। আমাদের দেশে সাধারণত ভাদ্র, আশ্বিন ও কার্তিক মাসে উত্তরাঞ্চল ও হাওরাঞ্চলের মানুষ নিদারুণ অভাবে পড়ে। এ অভাব তীব্র করে তুলেছে ভারতের পাহাড়ী ঢল ও বন্যা। এ সময়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি সরকারি তরফে চালু করার কথা থাকলেও তা এখনো শুরুই করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সরকার যেসব কর্মসূচি নিয়েছে, তা খুবই সামান্য। আবার অনেক কর্মসূচি চালু করা হবে বলে বলা হচ্ছে। সরকার কবে চালু করবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এতে দুর্গত মানুষের দিন কাটছে চরম দুর্ভোগের মধ্যে। অথচ বন্যা কবলিত এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিতে গিয়ে বন্যা কবলিত কোটি মানুষের কথা যেন সরকার উপেক্ষাই করে গেছে।
ভারতের পাহাড়ী ঢলের পানিতে হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যায় প্রায় সব আধাপাকা ধান তলিয়ে যাওয়াসহ ব্যাপক ক্ষতির পরপরই উত্তর ও মধ্য অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে দেশের প্রায় গোটা উত্তরাঞ্চল বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৪ লাখ কিলোমিটার রাস্তা বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের পাশে সরকার, সরকারি দলসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের যেভাবে দাঁড়ানোর কথা, সেভাবে দাঁড়াতে দেখা যায়নি কেন? এ পরিস্থিতিতে বার্মার অসহায় রোহিঙ্গাদের ঢল বাংলাদেশে আছড়ে পড়ে। মানবিক কারণে সরকারসহ প্রায় সবার দৃষ্টি রোহিঙ্গাদের দিকে নিয়ে যায়। দেশের বন্যা কবলিত লাখ লাখ অনাহারি মানুষের সরকারি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। জনদরদী (?) সরকারের দৃষ্টির আড়ালে চলে যাওয়া বন্যাকবলিত অসহায় মানুষগুলোর দুর্ভোগ-দুর্দশা চরমে উঠে। এখন পর্যন্ত তাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানে সরকারের জোড়ালো কোনো ভূমিকা নেই কেন? এর সাথে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায় চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সর্বত্র। সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা জরিপ প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, গ্রামের মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহর-গ্রাম সর্বত্র সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্টের জীবনযাপন করছে। যাদের সামান্য সঞ্চয় ছিল, তা ভেঙ্গে খরচ মেটাচ্ছে। ধার-কর্য করে ও দোকানে বাকিতে খাদ্যপণ্য কিনে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, শাক-সবজি সব কিছুর দাম কোটি কোটি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এ অবস্থার মধ্যেই সম্প্রতি পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১৪৬৫ ডলার থেকে বেড়ে ১৬১০ ডলার হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এ তথ্য উপস্থাপন করেন। তবে এ পরিসংখ্যানের সাথে বাস্তবতার কতটুকু মিল রয়েছে, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। আওয়ামী সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়টি বরাবরই তুমুল বিতর্কের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে যে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের গতি বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তার চিত্রটি বড়ই করুণ। দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বলতে কিছুই নেই। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত বিনিয়োগের এ স্থবিরতা কাটিয়ে উঠার আশু কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। স্বাভাবিক কারণেই বেকার মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের আয়-রোজগারও কমে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে সামাজিক অস্থিরতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিও চরম অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এর উপর প্রতিবেশী বার্মার রোহিঙ্গা সমস্যার এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বন্যা কবলিত অসহায় মানুষের সহায়তার উপর তারা ভাগ বসিয়েছে। আমাদের কথা হচ্ছে, সরকার রোহিঙ্গাদের পাশে মানবিক কারণে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে না কেন? যেহেতু সরকার জোর গলায় বলছে জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং অর্থনীতিও ভালো অবস্থায়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং গ্রামীণ জনগণের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
ভারতের পাহাড়ী ঢলের পানিতে হাওর অঞ্চলে অকাল বন্যায় প্রায় সব আধাপাকা ধান তলিয়ে যাওয়াসহ ব্যাপক ক্ষতির পরপরই উত্তর ও মধ্য অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে দেশের প্রায় গোটা উত্তরাঞ্চল বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৪ লাখ কিলোমিটার রাস্তা বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের পাশে সরকার, সরকারি দলসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের যেভাবে দাঁড়ানোর কথা, সেভাবে দাঁড়াতে দেখা যায়নি কেন? এ পরিস্থিতিতে বার্মার অসহায় রোহিঙ্গাদের ঢল বাংলাদেশে আছড়ে পড়ে। মানবিক কারণে সরকারসহ প্রায় সবার দৃষ্টি রোহিঙ্গাদের দিকে নিয়ে যায়। দেশের বন্যা কবলিত লাখ লাখ অনাহারি মানুষের সরকারি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। জনদরদী (?) সরকারের দৃষ্টির আড়ালে চলে যাওয়া বন্যাকবলিত অসহায় মানুষগুলোর দুর্ভোগ-দুর্দশা চরমে উঠে। এখন পর্যন্ত তাদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানে সরকারের জোড়ালো কোনো ভূমিকা নেই কেন? এর সাথে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়ায় চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি। এর প্রভাব পড়েছে দেশের সর্বত্র। সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা জরিপ প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, গ্রামের মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহর-গ্রাম সর্বত্র সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্টের জীবনযাপন করছে। যাদের সামান্য সঞ্চয় ছিল, তা ভেঙ্গে খরচ মেটাচ্ছে। ধার-কর্য করে ও দোকানে বাকিতে খাদ্যপণ্য কিনে কোনোরকমে সংসার চালাচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, শাক-সবজি সব কিছুর দাম কোটি কোটি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এ অবস্থার মধ্যেই সম্প্রতি পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১৪৬৫ ডলার থেকে বেড়ে ১৬১০ ডলার হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এ তথ্য উপস্থাপন করেন। তবে এ পরিসংখ্যানের সাথে বাস্তবতার কতটুকু মিল রয়েছে, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। আওয়ামী সরকারের জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়টি বরাবরই তুমুল বিতর্কের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে যে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের গতি বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তার চিত্রটি বড়ই করুণ। দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বলতে কিছুই নেই। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত বিনিয়োগের এ স্থবিরতা কাটিয়ে উঠার আশু কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। স্বাভাবিক কারণেই বেকার মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের আয়-রোজগারও কমে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে সামাজিক অস্থিরতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিও চরম অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এর উপর প্রতিবেশী বার্মার রোহিঙ্গা সমস্যার এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বন্যা কবলিত অসহায় মানুষের সহায়তার উপর তারা ভাগ বসিয়েছে। আমাদের কথা হচ্ছে, সরকার রোহিঙ্গাদের পাশে মানবিক কারণে দাঁড়ানোর পাশাপাশি দেশের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে না কেন? যেহেতু সরকার জোর গলায় বলছে জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং অর্থনীতিও ভালো অবস্থায়। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং গ্রামীণ জনগণের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ২১/০৯/২০২৩এক্কেবারে সঠিক
-
মোঃআব্দুল্লাহ্ আল মামুন ১০/১২/২০১৭ঠিক বলেছেন ।।।