www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কার স্বার্থে চুক্তি

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে তাদের স্বদেশে অর্থাৎ বার্মার রাখাইন রাজ্যে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বৃহস্পতিবার ২৩ নবেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তিটি স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশের পররাস্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মিয়ানমার গিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার চুক্তি স্বাক্ষর করে তিনি ঢাকা ফিরে এসেছেন। চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ এই লেখার সময় পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো দৈনিক পত্রিকায় বলা হয়েছে যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলী একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ জনগণের কাছে প্রকাশ করবেন। শুক্রবার যখন এই লেখাটি শুরু করেছি তখন পর্যন্ত মন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলন হয়নি। আসলে চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ না করলে তার ওপর সঠিক মন্তব্য করা যায় না। জাতির জন্য রোহিঙ্গা মুসলমান ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই জাতীয় স্বার্থে যেটাই ভালো হবে সেটাই আমরা বলবো। কিন্তু চুক্তির বিস্তারিত, বিশেষ করে শর্তাবলী, না জানলে কি বলব? অতীতে দেখা গেছে, এই সরকার অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে যেসব চুক্তি করেছে সেগুলো জনগণের কাছে প্রকাশ করা হয় নাই। এমনকি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে যে তীব্র বিতর্কিত জাতীয় সংসদ গঠন করা হয়েছে তেমন একটি অপ্রতিনিধিত্বশীল জাতীয় সংসদেও ঐসব রিপোর্ট পেশ করা হয়নি। অর্থাৎ এই সরকার তাদের খেয়াল খুশি মত সৃষ্ট জাতীয় সংসদকেও আস্থায় নেয় না। সরকার তার সংসদকে আস্থায় নিক বা না নিক, এই চুক্তি নিয়ে ইতিমধেই জাতির মনে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।

গতকাল শনিবার অন লাইন পত্রিকাসমূহে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পর্কে যা প্রকাশিত হয়েছে সেটি আমরা ওপরে তুলে দিলাম। এই চুক্তি সম্পর্কে মনে হয় আর কোন কথা বলার অবকাশ নাই। পররাষ্ট্র মন্ত্রীতো নিজেই বলেছেন যে, মিয়ানমার চেয়েছে তাই এই চুক্তি হয়েছে। বড় অদ্ভুত কথা! মিয়ানমার যা চাইলো তাই হলো, কিন্তু বাংলাদেশ যা চাইলো তাহলো না কেন? বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীতো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, রোহিঙ্গারা ফেরত যাচ্ছে, এটিই সবচেয়ে বড় কথা। রোহিঙ্গারা কোথায় ফেরত যাচ্ছে? ফেরত যাওয়ার পর তাদের অবস্থা কি হবে? তাদেরকে কি সিংহের গুহায় ঠেলে দেয়া হচ্ছে? তাদেরকে কি নাগরিকত্ব দেয়া হচ্ছে ? জাতিসংঘ বা অন্য কোনো বৃহৎ শক্তি কি এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জড়িত হচ্ছে? ১৯৯২ সালের চুক্তিকে মানদ- ধরা হয়েছে। জানা গেছে, এই মানদ- অনুসারে মাত্র কয়েক হাজার মায়ানমারে ফেরার উপযুক্ত। এসব বিষয় মন্ত্রীরও সামনে ছিল কিনা? এই ধরনের অসংখ্য প্রশ্নের জবাব এই চুক্তিতে নাই।
চার. এটি দুমাস আগের ঘটনা। এ’দুমাসে রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং জাতিগত নিধন বন্ধ হয়নি। তিনি চেয়েছিলেন যে জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব অবিলম্বে রাখাইনে একটি অনুসন্ধানী টিম পাঠান। সে টিম তো দূরের কথা, কোন টিমকেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইনে ঢুকতে দেয়নি। তার তৃতীয় দাবি ছিল, মিয়ানমারের সব ধর্মের এবং নৃতাত্বিক জাতিগোষ্ঠীকে রক্ষা করা হোক। এজন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে একটি নিরাপদ অঞ্চল গঠন করা হোক। সেই প্রস্তাব সম্পূর্ণ উপেক্ষিত হয়েছে। অপর দাবি ছিল, কফি আন্নানের রিপোর্ট অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করা হোক। সবশেষে দাবি ছিল, তারা যে ফেরত যাবে সেটি যেন স্থায়ী হয়।
কফি আনানের রিপোর্টে ছিল, রাখাইন মুসলমানদের নাগরিকত্বকে বিভিন্নভাবে যাচাই বাছাই করা, আইনের চোখে তাদের সমান অধিকার, সমগ্র মিয়ানমারের তাদের অবাধ চলাচল, তাদেরকে অন্যান্য নাগরিকের মত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়া ইত্যাদি। লক্ষ্য করার বিষয় এইযে কফি আনান কমিশনের রিপোর্টে প্রধান ফোকাস ছিল নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নাগরিকত্ব। এই নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয় ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে। তখন ছিল বার্মায় সামরিক আইন। ক্ষমতায় ছিলেন সেনা প্রধান জেনারেল নে উইন।
দেখা যাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা সাবেক মহাসচিব কফি আনান-কারো দাবি বা সুপারিশ বা রিপোর্টকে এই চুক্তিতে মোটেই পাত্তা দেয়া হয়নি। নাগরিকত্বের ইস্যুটির ধারের পাশে যাওয়া হয়নি। বার্মায় ফিরে গেলে তাদের ওপর আবার যে পাশবিক অত্যাচার, জুলুম, ধর্ষণ, খুন, অগ্নিসংযোগ এবং গণহত্যা চালানো হবে না, তারো কোন নিশ্চয়তা এই চুক্তিতে নাই। তাহলে কার স্বার্থে এই চুক্তি করা হলো? এই চুক্তি করা হয়েছে মিয়ানমারের স্বার্থে। পররাষ্ট্র মন্ত্রী সাংবাদিক সন্মেলনে বলেছেন যে, কোন চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থে যাচ্ছে কি না, সেটি কে দেখবে তারমতে, সেটি নাকি দেখবে সরকার। মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনার সাথে এক মত হতে পারলাম না। চুক্তি বা কোন বিষয় বাংলাদেশের স্বার্থে গেল কি না সেটি দেখবে জনগণ। এই চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষিত হয়নি। রক্ষিত হয়েছে বার্মা এবং ভারতের স্বার্থ।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৮৬৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/১১/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast