নারী নেতৃত্ত্ব
আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে ঐ গ্লাস সিলিংটিতে আমরা এত বড় ফাটল ধরাতে পেরেছি," ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার পর আমেরিকার নারীদের প্রতি এই ছিল হিলারি ক্লিনটনের মন্তব্য, "আমি সম্ভবত প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হবো কিন্তু আপনাদের মধ্যে একজন নিশ্চিতভাবেই হবেন আমার পরবর্তী নারী প্রেসিডেন্ট।" কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও সেই গ্লাস সিলিং ভাঙতে পারেননি।
সমান যোগ্যতা থাকার পরও বিশেষভাবে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোন মানুষের উন্নতির পথে তৈরি করা যে অদৃশ্য বাধা তাকেই ইংরেজিতে বলা হয় 'গ্লাস সিলিং'।
ক্ষমতা এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই শব্দটি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার রাতে মিসেস ক্লিনটন ছিলেন নিউ ইয়র্কের জাভিটস সেন্টারে।
সেটাও কিন্তু কাকতালীয় ছিল না। কারণ, নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে বড় কাঁচের ছাদ বা গ্লাস সিলিং রয়েছে এই ভবনে।
মিসেস ক্লিনটন ভোটে হেরে গেলেও বিশ্বব্যাপী সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছেন এমন নারীর সংখ্যা গত এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে ক্ষমতাসীন ১৫ জন নারী নেতার মধ্যে আটজনই তাদের দেশের প্রথম নারী নেতা।
কিন্তু এর পরও জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১০%-এরও কম দেশের নেতৃত্বে রয়েছেন নারীরা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, যেখানে নারী নেতৃত্ব রয়েছে সেখানে নারীদের অবস্থার কি উন্নতি হয়েছে?
ভারতের স্থানীয় রাজনীতিতে যে কোটা ব্যবস্থা রয়েছে তার থেকে এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
ভারতে ২০১২ সালের হাজার হাজার তরুণ এবং তাদের বাবা-মায়ের ওপর এক গবেষণা চালানো হয়।
এতে দেখা গিয়েছে, গ্রামের তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে নারী নেতৃত্বের একটা সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
জরিপে যখন দম্পতিকে জিজ্ঞেস করা হয়, শিক্ষা এবং চাকরির বিবেচনায় তারা প্রথম সন্তান হিসেবে কাকে বেছে নেবেন?
বেশিরভাগ উত্তরদাতা বলেছিলেন তারা ছেলে সন্তান কামনা করেন। কিন্তু যেসব গ্রামে অন্তত দুটি নির্বাচনে নারী নেতৃত্ব ছিল সেখানে ছেলে শিশু এবং মেয়ে শিশুর মধ্যে এই বিভেদ ২৫% কমে গিয়েছে বলে ঐ জরিপে উঠে আসে।
সুইটজারল্যান্ডে ২০১২ সালে আরেকটি গবেষণা চালানো হয়। এতে জানা যায়, উপযুক্ত নারী আদর্শ থাকলে তা অন্য নারীদেরও প্রেরণা যোগায়।
এই গবেষণায় একদল ছাত্র- ছাত্রীকে চারটি দলে ভাগ করে একটি ঘরে ঢোকানো হয়। একটি ঘরে ছিল জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেলের ছবি। আরেকটি ঘরে ছিল তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ছবি। অন্য একটি ঘরে ছিল বিল ক্লিনটনের ছবি। শেষ ঘরে কোন ছবি ছিল না।
এই গবেষণায় দেখা যায়, সফল নারী নেতৃত্বের ছবি ছাত্রীদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। পুরুষ নেতার ছবি দেখে ছাত্রীরা খুব একটা অনুপ্রাণিত বোধ করেননি।
গবেষণার ফলাফলে মন্তব্য করা হয়: "রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব শুধু সমতার আকাঙ্ক্ষাই বাড়ায় না, নারী নেতৃত্বের কারণে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা আরও বাড়ে।"
নারীদের আরো বেশি হারে রাজনীতিতে আসার সঙ্গে সার্বিকভাবে নারী-পুরুষের সমতার একটা যোগাযোগ রয়েছে বলেও বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম লিঙ্গ বৈষম্যের ওপর যে রিপোর্ট তৈরি করে তার ভিত্তি হচ্ছে চারটি: স্বাস্থ্য ও অকাল মৃত্যু রোধের হার, শিক্ষায় সাফল্য, অর্থনীতিতে যোগদান এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণ।
এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে লিঙ্গ বৈষম্য সবচেয়ে কম ছিল যেসব দেশে - আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড এবং নরওয়ে - সেখানে ক্ষমতায় ছিল নারী নেতৃত্ব।
এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেসব দেশে নারীরা রাজনীতিতে জড়িত বেশি সেসব দেশের নারীদের সার্বিক উন্নতিও বেশি হয়।
নারী নেতৃত্বের সাথে দেশের নারীদের জীবনমানের সার্বিক উন্নতির সরাসরি যোগাযোগ প্রমাণ করা বেশ কঠিন কাজ। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো, গত কয়েক দশকে প্রায় সব দেশেই জীবন-মানের কিছু উন্নতি ঘটেছে, তা সে দেশের ক্ষমতায় নারী নেতৃত্ব থাকুক বা নাই থাকুক।
দ্বিতীয় কারণটি হলো, অনেক দেশেই নারী নেতৃত্ব ক্ষমতায় রয়েছে অল্পদিন হলো। ফলে তাদের কারণেই বাকি নারীদের উন্নতি হয়েছে তা প্রমাণ করাও মুশকিল।
তবে প্রমাণ দিয়ে যে কথাটি বলা যায় তা হলো, যেখানে নারীরা ঐ গ্লাস সিলিং ভাঙতে পেরেছেন, সেখানে অন্য নারীও অনুপ্রাণিত হয়েছেন বেশি। আর সে সব দেশে নারীদের জীবনের মানও বদলেছে গেছে বেশি। সূত্র: বিবিসি।
সমান যোগ্যতা থাকার পরও বিশেষভাবে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোন মানুষের উন্নতির পথে তৈরি করা যে অদৃশ্য বাধা তাকেই ইংরেজিতে বলা হয় 'গ্লাস সিলিং'।
ক্ষমতা এবং লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই শব্দটি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার রাতে মিসেস ক্লিনটন ছিলেন নিউ ইয়র্কের জাভিটস সেন্টারে।
সেটাও কিন্তু কাকতালীয় ছিল না। কারণ, নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে বড় কাঁচের ছাদ বা গ্লাস সিলিং রয়েছে এই ভবনে।
মিসেস ক্লিনটন ভোটে হেরে গেলেও বিশ্বব্যাপী সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছেন এমন নারীর সংখ্যা গত এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে ক্ষমতাসীন ১৫ জন নারী নেতার মধ্যে আটজনই তাদের দেশের প্রথম নারী নেতা।
কিন্তু এর পরও জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১০%-এরও কম দেশের নেতৃত্বে রয়েছেন নারীরা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, যেখানে নারী নেতৃত্ব রয়েছে সেখানে নারীদের অবস্থার কি উন্নতি হয়েছে?
ভারতের স্থানীয় রাজনীতিতে যে কোটা ব্যবস্থা রয়েছে তার থেকে এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
ভারতে ২০১২ সালের হাজার হাজার তরুণ এবং তাদের বাবা-মায়ের ওপর এক গবেষণা চালানো হয়।
এতে দেখা গিয়েছে, গ্রামের তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে নারী নেতৃত্বের একটা সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
জরিপে যখন দম্পতিকে জিজ্ঞেস করা হয়, শিক্ষা এবং চাকরির বিবেচনায় তারা প্রথম সন্তান হিসেবে কাকে বেছে নেবেন?
বেশিরভাগ উত্তরদাতা বলেছিলেন তারা ছেলে সন্তান কামনা করেন। কিন্তু যেসব গ্রামে অন্তত দুটি নির্বাচনে নারী নেতৃত্ব ছিল সেখানে ছেলে শিশু এবং মেয়ে শিশুর মধ্যে এই বিভেদ ২৫% কমে গিয়েছে বলে ঐ জরিপে উঠে আসে।
সুইটজারল্যান্ডে ২০১২ সালে আরেকটি গবেষণা চালানো হয়। এতে জানা যায়, উপযুক্ত নারী আদর্শ থাকলে তা অন্য নারীদেরও প্রেরণা যোগায়।
এই গবেষণায় একদল ছাত্র- ছাত্রীকে চারটি দলে ভাগ করে একটি ঘরে ঢোকানো হয়। একটি ঘরে ছিল জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেলের ছবি। আরেকটি ঘরে ছিল তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ছবি। অন্য একটি ঘরে ছিল বিল ক্লিনটনের ছবি। শেষ ঘরে কোন ছবি ছিল না।
এই গবেষণায় দেখা যায়, সফল নারী নেতৃত্বের ছবি ছাত্রীদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। পুরুষ নেতার ছবি দেখে ছাত্রীরা খুব একটা অনুপ্রাণিত বোধ করেননি।
গবেষণার ফলাফলে মন্তব্য করা হয়: "রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব শুধু সমতার আকাঙ্ক্ষাই বাড়ায় না, নারী নেতৃত্বের কারণে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা আরও বাড়ে।"
নারীদের আরো বেশি হারে রাজনীতিতে আসার সঙ্গে সার্বিকভাবে নারী-পুরুষের সমতার একটা যোগাযোগ রয়েছে বলেও বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম লিঙ্গ বৈষম্যের ওপর যে রিপোর্ট তৈরি করে তার ভিত্তি হচ্ছে চারটি: স্বাস্থ্য ও অকাল মৃত্যু রোধের হার, শিক্ষায় সাফল্য, অর্থনীতিতে যোগদান এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণ।
এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে লিঙ্গ বৈষম্য সবচেয়ে কম ছিল যেসব দেশে - আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড এবং নরওয়ে - সেখানে ক্ষমতায় ছিল নারী নেতৃত্ব।
এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেসব দেশে নারীরা রাজনীতিতে জড়িত বেশি সেসব দেশের নারীদের সার্বিক উন্নতিও বেশি হয়।
নারী নেতৃত্বের সাথে দেশের নারীদের জীবনমানের সার্বিক উন্নতির সরাসরি যোগাযোগ প্রমাণ করা বেশ কঠিন কাজ। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো, গত কয়েক দশকে প্রায় সব দেশেই জীবন-মানের কিছু উন্নতি ঘটেছে, তা সে দেশের ক্ষমতায় নারী নেতৃত্ব থাকুক বা নাই থাকুক।
দ্বিতীয় কারণটি হলো, অনেক দেশেই নারী নেতৃত্ব ক্ষমতায় রয়েছে অল্পদিন হলো। ফলে তাদের কারণেই বাকি নারীদের উন্নতি হয়েছে তা প্রমাণ করাও মুশকিল।
তবে প্রমাণ দিয়ে যে কথাটি বলা যায় তা হলো, যেখানে নারীরা ঐ গ্লাস সিলিং ভাঙতে পেরেছেন, সেখানে অন্য নারীও অনুপ্রাণিত হয়েছেন বেশি। আর সে সব দেশে নারীদের জীবনের মানও বদলেছে গেছে বেশি। সূত্র: বিবিসি।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মধু মঙ্গল সিনহা ০৫/১০/২০১৭শুভকামনা রইল।
-
কামরুজ্জামান সাদ ০৫/১০/২০১৭গবেষণাধর্মী লেখা
-
আজাদ আলী ০৫/১০/২০১৭Valo katha likhechen. Thanks