www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

যারা সারা বিশ্বে গো মাংশ পাঠায়

কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারপত্রিকা জানিয়েছে, গরু এখন দেশটির ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। আঠাশ নম্বর ন্যাশনাল হাইওয়ে। গোরক্ষপুর থেকে লক্ষেèৗ যাবার পথে ফৈজাবাদের কাছে আচমকা ব্রেক কষলেন ড্রাইভার পাপ্পু ইয়াদব। কয়েক ফুট সামনে হঠাৎ ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়েছে। কী ব্যাপার? সামনে সড়কের ওপর শুয়ে পড়েছে গরুর পাল। পুরো তিন শ’ কিলোমিটার সড়কজুড়ে একই সমস্যা। কোথাও গরুর পাল আচমকা রাস্তার ধার থেকে গাড়ির সামনে এসে পড়ে। কোথাও পুরো রাস্তাজুড়েই শুয়ে যায়। এটা ড্রাইভার পাপ্পু ইয়াদবের অভিজ্ঞতা। এ অবস্থা সারা উত্তর প্রদেশেরই। উল্লেখ্য, মোদি সরকারের তিনবছর গরুজবাই, এর বেচাবিক্রি এবং পরিবহন ইত্যাদি নিয়ে কড়াকড়িতো ছিলই। এরপর ইয়োগী আদিত্যনাথ উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতায় বসেই গরু-মোষ জবাইয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞা এলান করেন। আদিত্যনাথের গোরক্ষপুর মন্দির এখন মস্ত গোশালায় পরিণত হলেও গোপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রীর দাপটে চাষি ও গোয়ালাদের উঠেছে নাভিশ্বাস। তারা কসাইখানা বা হাটে গরু নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ রাস্তাঘাটে গরুসহ কাউকে দেখলেই গোরক্ষাবাহিনীর লোকেরা বেধড়ক পিটুনি দেয়। হিন্দু-মুসলিম কোনও বাছবিচার নেই। কারুর কাছে গরু পেলেই হয়। ইতোমধ্যে গরুবহনকারী অনেকে এ বাহিনীর হাতে পিটুনি খেয়ে মারাও গেছেন। বিজেপি এবং আরএসএস বাহিনীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশও ছুটে আসে। অথচ বুড়ো হয়ে যাওয়াতে দুধ দেয় না কিংবা হালটানতে অক্ষম এমন গরু বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর সামর্থ্য গরিব চাষি ও গোয়ালাদের নেই। তাই বাধ্য হয়ে তারা বুড়ো গাভি আর বলদগুলো রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন। এতেই ঘটছে বিপত্তি।
ছেড়ে দেয়া গরুতে জাতীয় মহাসড়ক গিজগিজ করছে। আটকা পড়ছে যানবাহন। বলা যায়, সড়ক-মহাসড়কগুলো এখন মৃত্যুফাঁদ। বিশেষত রাতে ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। পুলিশও বেসামাল। মালিকবিহীন গরুগুলো চাষের জমিতে ঢুকে ফসল নষ্ট করছে। গোরক্ষপুর, ফৈজাবাদ, বাস্তি, বড়াবাঁক্তি সব জায়গাতেই চাষিরা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, তাদের নিজেরই পেট চলে না। তারপর ঋণের বোঝা মাথায়। তাদের পক্ষে অকেজো গরু গোয়ালে রেখে খাওয়ানো মুশকিল। এদ্দিন বয়স্ক গরু বেচে সে অর্থে আবার নতুন কম বয়সের গরু কেনা যেতো। সে রাস্তা সরকার রুখে দিয়েছে। ভারতের সরকারি আর্থিক সমীক্ষাতেও বলা হয়েছে, গোরক্ষায় চাষিদেরই বিপদ। জওহরলাল নেহ্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রফেসর বিকাশ রাওয়াল বলেন, এভাবে চললে মানুষ গরু-মোষ পোষাই বন্ধ করে দেবে। কারুর ছেড়ে দেয়া গরু অন্যের ফসল নষ্ট করলে গ্রামে অশান্তি সৃষ্টি হবে। ফলে অনেকে গরুকে উপোস রেখে মেরে ফেলবে। গোবর, গোমূত্র নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে বটে। কিন্তু এজন্য শুধু কেউ গরু পোষে না। চাষিদের দাবি, সরকারি ব্যবস্থাপনায় গোশালা স্থাপন করে বেওয়ারিশ গরুর দায়িত্ব নেয়া হোক। রাজ্যের জেলমন্ত্রী জয়কুমার সিংহ ঘোষণা দিয়েছেন, জেলখানাগুলোতে গোশালা নির্মাণ করা হবে। সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা গরু দেখভাল করবে। কিন্তু কোটি কোটি অকেজো গরু জেলখানায় পালন করা কি আদৌ সম্ভব? এর পেছনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে তাইবা আসবে কোত্থেকে?
প্রকৃত অর্থে গরুকে দেবতা না বানালে এমন উটকো ঝামেলা পোহাতে হতো না ভারতীয়দের। গরু একটা প্রাণি মাত্র। এ প্রাণি পেলেপুষে মানুষ উপকৃত হবে। এর গোশত খেয়ে মানুষ জীবনধারণ করবে। দেহের অপুষ্টি পূরণ করবে। এর চামড়া দিয়ে পাদুকা প্রস্তুত করবে। ব্যাগ বানাবে। গরুর গোশত যেমন সুস্বাদু খাবার, তেমনই দারুণ পুষ্টিকরও। এছাড়া গরুর গোশ্ত ভারতীয় শাস্ত্রাদিতে খেতে মানাও নেই। এমনকি শাস্ত্রীয় যজ্ঞাদিতে ব্রাহ্মণদের বিশেষ খাবার হিসেবে গোমাংস ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। তাহলে ভারতীয়দের এতো গোমাংসবিদ্বেষ কেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। যাইহোক, গরু ভারতের অর্থকরী সম্পদ। গোমাংস রফতানি করে দেশটি হাজার হাজার কোটি রুপি উপার্জন করে। এছাড়া ভারতে এর অভ্যন্তরীণ চাহিদাও প্রচুর। শুধু মুসলমানরাই গরুগোশ্ত খান এমনও নয়। খৃস্টানসহ আরও অনেক সম্প্রদায়েরই গোমাংস প্রিয়খাদ্য। তাই বিশাল ভারতের গুরুত্বপূর্ণ গোসম্পদ যাতে ধ্বংস না হয় সেজন্য ভারতীয়দের এখনই আত্মঘাতী চিন্তাচেতনা ছুঁড়ে ফেলতে হবে।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৭৬২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/০৮/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast