মুরগী খামারে শেয়াল পাহারা
ক্ষমতাবান দুর্নীতিবাজ লুটেরা চক্র প্রতি বছর দেশ থেকে গড়ে ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করে আসছে। দেশে যখন গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক সুশাসন নেই, সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই, নেই কোন বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক বাণিজ্যেও মন্দাবস্থা তখন এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাবান দুর্নীতিবাজ লুটেরা চক্র প্রতি মাসেই প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করে আসছে। এটা সত্যিই উদ্বেগজনক। দেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা যদিও কোন নতুন নয়। এ পর্যন্ত প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী সেনা সমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচারের মাত্রা পূর্বের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অর্থ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) রিপোর্টে গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার একটি বছর ওয়ারি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ২০০৩ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৩১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশী টাকায় তা প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। পাচার হয়ে যাওয়া টাকার এই অংক বাংলাদেশের চলতি জাতীয় বাজেটের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ। লুটেরা চক্র প্রতি বছরই এভাবে বিদেশে টাকা পাচার করে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় দেশে নাকি বেশি দুর্নীতি হয়েছে এবং সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টিআই রিপোর্টে দুর্নীতির র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশকে পরপর কয়েকবার শীর্ষে অবস্থান দেখানো হলেও ঐ সময় দেশ থেকে এতো টাকা পাচার হয়নি। ২০০৫ সালে যেখানে একশ’ ৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছিল, সেখানে ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে যথাক্রমে ২৬৬ ও ২৪৩ কোটি ডলার পাচার হয়। এরপর ২০১২ সালে এসে আগের বছরের ৫৯ কোটি ডলার থেকে হঠাৎ করে তিনগুণ বেড়ে ১৭৮ কোটি ডলারে উঠে যায়। প্রধানত মিথ্যা ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেই বেশির ভাগ টাকা পাচার হয়েছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। এছাড়া বিদেশে মোটা অংকের বিনিয়োগ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম প্রকল্পের নামেও কোটি কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে। জিএফআই’র তালিকাভুক্ত ১৪৭টি দেশের মধ্যে অর্থ পাচারে বাংলাদেশের অবস্থান ৫১তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। একদিকে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্ভাবনাসমূহ স্থবির হয়ে পড়া; অন্যদিকে রাষ্ট্রের ক্ষমতাবান দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ-দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও লুটপাট করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়ার এই বাস্তব অপরাধ গোটা জাতি মেনে নিতে পারে কি? অতীতে দেশে দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিং নিয়ে অনেক রাজনীতি ও মামলাবাজি হয়েছে। আগের সরকারের দুর্নীতি নিয়ে রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা ও শ্লোগানবাজির ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ঘুষ-দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি, লুটপাট ও বিদেশে অর্থপাচার বন্ধ করতে আওয়ামী সরকার শুধু ব্যর্থই হয়নি, বরং আগের তুলনায় শত শত গুণ কেবল বেড়েই চলছে।
সাধারণত দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় বৈদেশিক মুদ্রায় দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার হওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতা থাকলেও বিগত ২০১২ সালের জিএফআই পরিসংখান আমাদেরকে ভিন্ন ম্যাসেজ দেয়। প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট প্রভাবশালী আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরাই অর্থপাচারের সাথে জড়িত। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের সাথে চুক্তি বাতিলের কারণে আওয়ামী সরকার যখন পদ্মাসেতু নির্মাণের বিনিয়োগ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছিল, তখন দেশ থেকে পৌনে দুশ’ কোটি ডলারেরও বেশি মুদ্রা বিদেশে প্রচার হয়ে গেছে, যা দিয়ে পদ্মাসেতুর সামগ্রিক ব্যয়ের অর্ধেক নির্বাহ করা সম্ভব ছিল। জিএফআই’র অর্থনীতিবিদ যোসেফ স্পেনজার্গ বলেন, ২০১২ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তা দিয়ে এসব দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে বিরাট অবদান রাখা সম্ভব ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৩ সালব্যাপী দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল, সে কারণেই মুদ্রা পাচার হঠাৎ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সালে আরো বেপরোয়াভাবে মুদ্রা পাচার বেড়ে যায়। পাশাপাশি মানি লন্ডারিং ঠেকাতে এবং পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক অনুমোদন এবং নিয়োগের ফলে সে খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছে। একইভাবে তারা শেয়ার বাজার, টেলিকম সেক্টরসহ বিভিন্ন খাত থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে এবং এখনো পাচার করে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা তো নেয়নি বরং সরকারি দলের সবাইকে দুর্নীতির অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দিয়ে যেন বিশ্ব শিরোপা অর্জন করেছে। আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের সদিচ্ছা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। জিএফআই প্রতিবেদনে দুর্নীতি ও অর্থপাচার প্রতিরোধে সুস্পষ্ট গাইডলাইন তুলে ধরা হয়েছে। এরপরও কি দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে সর্বত্র বেপরোয়া দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থপাচার রুখা হবে না? দেশ ও জাতিদ্রোহী ক্ষমাহীন অপরাধের প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনে নিরপেক্ষ বিদেশী সংস্থার মাধ্যমে বিগত ৮ বছরের তদন্ত করে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ এবং কোন্্ কোন্্ দেশে, কখন কিভাবে টাকা পাচার করেছে, কারা পাচার করেছে, তার তথ্য বের করা প্রয়োজন। একই সাথে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে বিদেশে পাচারকৃত সমস্ত টাকা দেশে ফেরত আনতে হবে।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় দেশে নাকি বেশি দুর্নীতি হয়েছে এবং সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টিআই রিপোর্টে দুর্নীতির র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশকে পরপর কয়েকবার শীর্ষে অবস্থান দেখানো হলেও ঐ সময় দেশ থেকে এতো টাকা পাচার হয়নি। ২০০৫ সালে যেখানে একশ’ ৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছিল, সেখানে ২০০৬ এবং ২০০৭ সালে যথাক্রমে ২৬৬ ও ২৪৩ কোটি ডলার পাচার হয়। এরপর ২০১২ সালে এসে আগের বছরের ৫৯ কোটি ডলার থেকে হঠাৎ করে তিনগুণ বেড়ে ১৭৮ কোটি ডলারে উঠে যায়। প্রধানত মিথ্যা ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেই বেশির ভাগ টাকা পাচার হয়েছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। এছাড়া বিদেশে মোটা অংকের বিনিয়োগ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম প্রকল্পের নামেও কোটি কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে। জিএফআই’র তালিকাভুক্ত ১৪৭টি দেশের মধ্যে অর্থ পাচারে বাংলাদেশের অবস্থান ৫১তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। একদিকে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্ভাবনাসমূহ স্থবির হয়ে পড়া; অন্যদিকে রাষ্ট্রের ক্ষমতাবান দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ-দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও লুটপাট করে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়ার এই বাস্তব অপরাধ গোটা জাতি মেনে নিতে পারে কি? অতীতে দেশে দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিং নিয়ে অনেক রাজনীতি ও মামলাবাজি হয়েছে। আগের সরকারের দুর্নীতি নিয়ে রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা ও শ্লোগানবাজির ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ঘুষ-দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতি, লুটপাট ও বিদেশে অর্থপাচার বন্ধ করতে আওয়ামী সরকার শুধু ব্যর্থই হয়নি, বরং আগের তুলনায় শত শত গুণ কেবল বেড়েই চলছে।
সাধারণত দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় বৈদেশিক মুদ্রায় দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার হওয়ার স্বাভাবিক প্রবণতা থাকলেও বিগত ২০১২ সালের জিএফআই পরিসংখান আমাদেরকে ভিন্ন ম্যাসেজ দেয়। প্রধানত ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট প্রভাবশালী আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরাই অর্থপাচারের সাথে জড়িত। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের সাথে চুক্তি বাতিলের কারণে আওয়ামী সরকার যখন পদ্মাসেতু নির্মাণের বিনিয়োগ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছিল, তখন দেশ থেকে পৌনে দুশ’ কোটি ডলারেরও বেশি মুদ্রা বিদেশে প্রচার হয়ে গেছে, যা দিয়ে পদ্মাসেতুর সামগ্রিক ব্যয়ের অর্ধেক নির্বাহ করা সম্ভব ছিল। জিএফআই’র অর্থনীতিবিদ যোসেফ স্পেনজার্গ বলেন, ২০১২ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে তা দিয়ে এসব দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে বিরাট অবদান রাখা সম্ভব ছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৩ সালব্যাপী দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল, সে কারণেই মুদ্রা পাচার হঠাৎ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সালে আরো বেপরোয়াভাবে মুদ্রা পাচার বেড়ে যায়। পাশাপাশি মানি লন্ডারিং ঠেকাতে এবং পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক অনুমোদন এবং নিয়োগের ফলে সে খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছে। একইভাবে তারা শেয়ার বাজার, টেলিকম সেক্টরসহ বিভিন্ন খাত থেকেও হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে এবং এখনো পাচার করে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা তো নেয়নি বরং সরকারি দলের সবাইকে দুর্নীতির অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দিয়ে যেন বিশ্ব শিরোপা অর্জন করেছে। আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের সদিচ্ছা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। জিএফআই প্রতিবেদনে দুর্নীতি ও অর্থপাচার প্রতিরোধে সুস্পষ্ট গাইডলাইন তুলে ধরা হয়েছে। এরপরও কি দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে সর্বত্র বেপরোয়া দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থপাচার রুখা হবে না? দেশ ও জাতিদ্রোহী ক্ষমাহীন অপরাধের প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনে নিরপেক্ষ বিদেশী সংস্থার মাধ্যমে বিগত ৮ বছরের তদন্ত করে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ এবং কোন্্ কোন্্ দেশে, কখন কিভাবে টাকা পাচার করেছে, কারা পাচার করেছে, তার তথ্য বের করা প্রয়োজন। একই সাথে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে বিদেশে পাচারকৃত সমস্ত টাকা দেশে ফেরত আনতে হবে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এ এস এম আব্দুল্লাহ ১২/০৫/২০১৭সুন্দর
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১১/০৫/২০১৭তথ্য পূর্ণ আলোচনা।