www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সভ্যতা ও গণপিটুনী

ক্রমাবনতিশীল আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ও নগরায়ণের ফলে দুর্বৃত্তরাও বড় বেশি দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে বেড়েছে জনতার রোষ। দীর্ঘদিনের চাপা রোষ, মেটাতেই ঘটাচ্ছে একের পর এক ঘটনা। কেননা ছিনতাইকারীদের হাতে পথচারী নিহতের ঘটনাও কম নয়। এছাড়া ঘরে ফেরা একজন গার্মেন্টস শ্রমিক বা কলমপেষা কেরানির মাসশেষের বেতনের পুরো টাকাটা যখন একজন ছিনতাইকারী ছিনিয়ে নেয়, তখন বুঝতে হবে তার মানসিক অবস্থা। সুতরাং একটু সুযোগ পেলে সে তার রাগটা ঝালিয়ে নেবে এটাই স্বাভাবিক। এ পরিস্থিতির পেছনে আরও যে মনস্তত্ত্ব কাজ করছে তা হলো আইন-শৃংখলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা, বিচার প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা ও দীর্ঘসূত্রতা সর্বোপরি পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সংখ্যতার অভিযোগ। এছাড়া ভিড়ের একটা বিধ্বংসী চরিত্র আছে। আর সেই ভিড় যদি হয় আইন প্রয়োগকারীদের প্রতি আস্থাহীন মানুষের তাহলে গণপিটুনির মতো ঘটনা বিচিত্র কিছু নয়। যেসব মানুষ গণপিটুনিতে অংশ নেন তাদেরকে আলাদা আলাদা করে জিজ্ঞাসা করলে হয়তো জানা যাবে তারা নিরীহ নির্বিরোধী। কিন্তু ভিড়ের উত্তেজনা তাদেরকে কেন হিংস্র করে তুলেছিলো তা তারা নিজেরাও জানে না। একদিকে নির্বিকার অপরাধপ্রবণতা ও অন্যদিকে ভিড়ের এ হিংস্রতা নিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা এ যাবৎ কম গবেষণা করেননি। সভ্যতার বিবর্তনের পাশাপাশি এ ধরনের পাশবিকতা সমাজ বিজ্ঞানীদের যুগে যুগে ভাবিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অপরাধপ্রবণতা ও হিংস্রতার উদ্ভব যে সমাজেই ঘটুক বুঝতে হবে সেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট। একটি অবস্থা থেকে অন্য একটি অবস্থায় যাওয়ার সময় অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে; যেগুলোর বেশিরভাগই অমানবিক ও অনভিপ্রেত। আর্থিক উচ্চাশা যখন উগ্র হয়ে ওঠে, তখনই মানুষ বিপথে পা বাড়ায়।
মানুষ যখন প্রত্যক্ষ করে যে, আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর একটি অংশ সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তখন তাদের হতাশ হওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকে না। যে দেশে পুলিশকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়, যে দেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কেউ কেউ খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি-চাঁদাবাজির মতো সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং জনসম্মুখে তা নগ্নভাবে প্রকাশিত হয় সেই দেশের পুলিশ বাহিনীর পক্ষে দেশ জাতির প্রত্যাশা পূরণ কতোটা সম্ভব তা আর ব্যাখ্যার কোনো অবকাশ রাখে না। সম্প্রতি পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী কণ্ঠেই একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায়। পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘পুলিশের আন্তরিকতা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ আছে, এটা পুলিশ ও সরকার কারো জন্যই সুখকর নয়।’
তবে দুর্মুখেরা বলেন, সন্ত্রাসী না থাকলে বিত্ত-বৈভবের মালিক হবেন কিভাবে? দেশের পুলিশ যখন সন্ত্রাসীচক্রের সহযোগী ও বন্ধু হিসেবে অবতীর্ণ হয়, তখন সব প্রত্যাশা হোঁচট খায়। তবে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির এ অবনতি একদিনে তৈরি হয়নি, দীর্ঘসময়ের ধারাবাহিকতায় এ অবস্থার জন্ম। এজন্য মূলত রাজনৈতিক পরিস্থিতিই দায়ী।
তবে সব কথার শেষ কথা হচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই এ জাতীয় নৃশংস ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। কেননা এটি হিংস্রতা ও বর্বতার আদিম রূপ। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার ফলে দেশ নৈাজ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অপরাধের মাত্রা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সকল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এসব বর্বর ঘটনায় শুধু অপরাধই নয়, অনেক ভালো মানুষও ঘটনার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া যেকোনো অপরাধীর আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার রয়েছে। এটা মানবাধিকার। আর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে আইনের শাসনকে বিপন্ন করে তুলবে। এমনকি এই প্রবণতা সামাজিক শৃঙ্খলা, রাজনীতি, গণতন্ত্রের জন্যেও হুমকিস্বরূপ। এছাড়া এই নির্মমতা ও বর্বরতা সভ্য সমাজের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অতএব বন্ধ হোক এই বর্বরতা।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ১০২৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast