অভিবাসী
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত সোমালি বংশোদ্ভূত প্রথম রাজনীতিবিদ ইলহান ওমরকে এক ট্যাক্সি চালক লাঞ্ছিত করেছেন। উল্লেখ্য যে, ইলহান যুক্তরাষ্ট্রের মিনোসোটা হাউজের নবনির্বাচিত প্রতিনিধি। ইলহান তাঁর হোটেল থেকে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার পথে এই ঘটনা ঘটে। ইলহান তার ফেসবুকে জানিয়েছেন, হোটেল থেকে তিনি ট্যাক্সি করে হোয়াইট হাউজে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ট্যাক্সিচালক তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। তাঁকে আইএস বলে কটূক্তি করেন এবং তাঁর হেজাব খুলে ফেলার হুমকি দেন। এমনকি ভবিষ্যতেও তাঁকে হিজাব পরতে নিষেধ করেন ওই ট্যাক্সিচালক।
ইলহান ওই ঘটনায় ভীষণ মর্মাহত হন। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, যখন ছোট ছিলাম তখন সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধ দেখেছি। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করার আগে শৈশবে কেনিয়ার শরণার্থী শিবিরেও আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। ট্যাক্সিতে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা তাকে আবারও ছোটবেলার সেই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দৃশ্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বলে ইলহান উল্লেখ করেন। তিনি প্রার্থনা করেন মানুষের হৃদয় থেকে যেন বর্ণবাদী সকল ঘৃণা মুছে যায়।
ইলহান প্রার্থনা করেছেন, মানুষের হৃদয় থেকে যেন বর্ণবাদী সকল ঘৃণা মুছে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত এই প্রতিনিধির প্রার্থনায় মার্কিন সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে। আমরা জানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সভ্যতার সবচেয়ে বড় প্রতিনিধি। মার্কিন নেতারা সব সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে থাকেন। বর্ণবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তো তারা রীতিমতো জেহাদ ঘোষণা করেছেন। অথচ দুঃখের বিষয় হলো, প্রদীপের নিচেই যেন অন্ধকার। সাম্প্রতিককালে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় ও বর্ণবাদী বিদ্বেষের ঘটনা লক্ষ্য করেছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ওই উগ্র প্রবণতা আরো বেড়ে চলেছে। তারই শিকার হলেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম রাজনীতিবিদ ইলহান ওমর। আমরা জানি, মানবাধিকার যে কোনো মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চার গ্যারান্টি দেয়। তা হলে মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন যুক্তরাষ্ট্রে একজন ট্যাক্সিচালক কী করে একজন মুসলিম মহিলা রাজনীতিবিদকে শুধুমাত্র হিজাব পরার কারণে লাঞ্ছিত করার সাহস পান? যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের সংজ্ঞা কি বদলে গেছে? একজন সামান্য ট্যাক্সিচালকের এমন ঔদ্ধত্যে উপলব্ধি করা যায় যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ম ও বর্ণবিদ্বেষ কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পতো এমন বিদ্বেষের পালে হাওয়া দিয়েছেন। এখন তা সামলাবার দায়িত্বটাও তার ঘাড়েই বর্তিয়েছে। দেখার বিষয় হলো, তিনি সঙ্গত দায়িত্ব পালনে সমর্থ হন কিনা।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে তো নেতিবাচক প্রচারণার কোনো কমতি নেই। তাই আজ এখানে একটি ইতিবাচক বিষয় তুলে ধরতে চাই। লন্ডনের কয়েক হাজার মুসলিম ১০ টন খাদ্য বিতরণ করলেন গৃহহীনদের সাহায্যার্থে। গত শুক্রবার নামাযের পর পূর্ব লন্ডন মসজিদে এই খাবার সংগ্রহ করা হয়। খাবার বিতরণের এই কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিলেন হাজারো মুসলিম। খাবার তৈরি ও বিতরণের কাজে সব মিলিয়ে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৫শ’। জুমা নামায পড়ার পর স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার সরবরাহ শুরু করেন। স্থানীয় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে খাবার পাঠানো হয়। সমস্ত খাবার অভাবী মানুষদের মধ্যে, বিশেষ করে রাস্তায় বসবাস করা মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হয়। আর খাবার যারা গ্রহণ করেন তাদের ৯০ ভাগই ছিলেন অমুসলিম। অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের নেতারাও মুসলমানদের এই সেবাকর্মে অংশগ্রহণ করেন। খৃস্টান রেভারেন্ড গ্যারি ব্র্যাডলি বলেন, মানবতার খাতিরে সকল ধর্মের মানুষের এক হওয়ার চমৎকার উদাহরণ এই খাবার বিতরণ কর্মসূচি।
আমরা জানি পাশ্চাত্যে বড় দিনের উৎসব হলো সবচাইতে বড় উৎসব। সমগ্র খৃস্টজগতে এই সময় সাড়া পড়ে যায়। বড় দিনকে কেন্দ্র করে আলোকসজ্জা হয়, ঝলমলে উৎসব হয়, খাবার-দাবারেরও ব্যাপক আয়োজন হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এমন উৎসবের সময়ও কিছু মানুষের খাবার থাকে না, থাকে না মাথা গোঁজার ঠাঁইও। ফলে তাদের জীবনযাপন করতে হয় রাস্তাতেই। মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এই মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের। বঞ্চিত ওইসব মানুষের সাহায্যে এই সময় লন্ডনের মুসলমানরা এগিয়ে এসে এক উজ্জ্বল মানবিক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আমরা এমন মানবিক কর্তব্য পালনের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
লন্ডনের খৃস্টান রেভারেন্ড গ্যারি ব্র্যাডলি মুসলমানদের ওই সেবাকর্মের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, মানবতার সেবায় সকল ধর্মের মানুষের এক হওয়ার এটি একটি চমৎকার উদাহরণ। তিনি যথার্থই বলেছেন। হযরত আদম (আ:) ও হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (স:)সহ সব নবী-রাসূলের মূল আহ্বান ছিল একই। সবাই মহান স্রষ্টার আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নাজিলকৃত বিধিবিধানের আলোকে জীবন পরিচালিত করতে বলেছেন। আর সেই বিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানুষের সেবা করা। বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে মানুষ বিশেষ করে বিশ্ব নেতারা যদি মহান স্রষ্টার নির্দেশনার আলোকে মানুষের সেবায়, কল্যাণে ব্রতী হন, তাহলে এই পৃথিবী আবার সব মানুষের বসবাস উপযোগী হয়ে উঠতে পারে।
প্রসঙ্গত এখানে পোপ ফ্রান্সিস-এর বক্তব্য উল্লেখ করা যায়। খৃস্টীয় বড়দিনের প্রকৃত তাৎপর্য বস্তুগত ভোগ-বিলাসের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। শনিবার ভ্যাটিকানে বড়দিনের আগের দিনে সন্ধ্যার প্রার্থনা সভায় রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রধান পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বব্যাপী শিশুদের নিরবচ্ছিন্ন দুর্ভোগেরও নিন্দা জানান। বিবিসি পরিবেশিত খবরে আরো বলা হয়, ক্ষুধার্ত, অভিবাসন রুটগুলোতে বিপন্ন মানুষ এবং আলেপ্পোসহ সিরিয়ার শহরগুলোতে বোমাবর্ষণের শিকার মানুষদের কথাও স্মরণ করেন পোপ। তিনি আরো বলেন, বস্তুগত বিষয়গুলো ক্রিসমাস পর্বকে জিম্মি করে ফেলেছে। তাই এবারের পর্বে আরো নম্রতা আসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যখন বাণিজ্যের আলো স্রষ্টার আলোকে ছায়া বানিয়ে ফেলেছে। আমরা গিফটের জন্য অধীর থাকলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে করি শীতল ব্যবহার। বিগত বছরগুলোতেও অভিবাসীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ। এবারও একই আহ্বান জানিয়ে পোপ বলেন, যিশু ও একজন অভিবাসী ছিলেন, বিষয়টি যেন খৃস্টানরা স্মরণে রাখে। বড়দিন উপলক্ষে পোপ যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে পাশ্চাত্যের বর্তমান ত্রুটিপূর্ণ মনোভঙ্গি ও জীবন চেতনা যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বলেছেন, বড়দিনের তাৎপর্য বস্তুগত ভোগবিলাসের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেছেন, বাণিজ্যের আলো খোদার বা স্রষ্টার আলোকে ছায়া বানিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে বস্তুগত ভোগবিলাস ও বাণিজ্যলিপ্সা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে মানুষের মনে স্রষ্টার আলোকিত বার্তা পৌঁছতে পারছে না। বস্তুবাদী এমন স্বার্থান্ধ মানুষ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে কেমন করে? এমন চেতনার ক্ষমতাধর মানুষদের কারণেই এখন দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধ-বিগ্রহ। ফলে প্রতিদিনই পৃথিবীতে বাড়ছে অভিবাসীদের সংখ্যা। অথচ তাদের প্রতিও মানবিক আচরণে ব্যর্থ হচ্ছে বর্তমান সভ্যতা। এ কারণেই হয়তো পোপ খৃস্ট জগতকে স্মরণ করতে বলেছেন যে, যিশুখৃস্টও একজন অভিবাসী ছিলেন। এখন দেখার বিষয় হলো, খৃস্ট-জগৎ তথা পাশ্চাত্য পোপের বার্তা কতটা উপলব্ধি করে এবং নিজেদের ত্রুটিপূর্ণ সভ্যতার সংস্কারে কতটা সক্রিয় হয়।
ইলহান ওই ঘটনায় ভীষণ মর্মাহত হন। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, যখন ছোট ছিলাম তখন সোমালিয়ায় গৃহযুদ্ধ দেখেছি। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করার আগে শৈশবে কেনিয়ার শরণার্থী শিবিরেও আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। ট্যাক্সিতে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা তাকে আবারও ছোটবেলার সেই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের দৃশ্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বলে ইলহান উল্লেখ করেন। তিনি প্রার্থনা করেন মানুষের হৃদয় থেকে যেন বর্ণবাদী সকল ঘৃণা মুছে যায়।
ইলহান প্রার্থনা করেছেন, মানুষের হৃদয় থেকে যেন বর্ণবাদী সকল ঘৃণা মুছে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত এই প্রতিনিধির প্রার্থনায় মার্কিন সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র ফুটে উঠেছে। আমরা জানি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সভ্যতার সবচেয়ে বড় প্রতিনিধি। মার্কিন নেতারা সব সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে থাকেন। বর্ণবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তো তারা রীতিমতো জেহাদ ঘোষণা করেছেন। অথচ দুঃখের বিষয় হলো, প্রদীপের নিচেই যেন অন্ধকার। সাম্প্রতিককালে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় ও বর্ণবাদী বিদ্বেষের ঘটনা লক্ষ্য করেছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ওই উগ্র প্রবণতা আরো বেড়ে চলেছে। তারই শিকার হলেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম রাজনীতিবিদ ইলহান ওমর। আমরা জানি, মানবাধিকার যে কোনো মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ চর্চার গ্যারান্টি দেয়। তা হলে মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন যুক্তরাষ্ট্রে একজন ট্যাক্সিচালক কী করে একজন মুসলিম মহিলা রাজনীতিবিদকে শুধুমাত্র হিজাব পরার কারণে লাঞ্ছিত করার সাহস পান? যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের সংজ্ঞা কি বদলে গেছে? একজন সামান্য ট্যাক্সিচালকের এমন ঔদ্ধত্যে উপলব্ধি করা যায় যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ম ও বর্ণবিদ্বেষ কোন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পতো এমন বিদ্বেষের পালে হাওয়া দিয়েছেন। এখন তা সামলাবার দায়িত্বটাও তার ঘাড়েই বর্তিয়েছে। দেখার বিষয় হলো, তিনি সঙ্গত দায়িত্ব পালনে সমর্থ হন কিনা।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে তো নেতিবাচক প্রচারণার কোনো কমতি নেই। তাই আজ এখানে একটি ইতিবাচক বিষয় তুলে ধরতে চাই। লন্ডনের কয়েক হাজার মুসলিম ১০ টন খাদ্য বিতরণ করলেন গৃহহীনদের সাহায্যার্থে। গত শুক্রবার নামাযের পর পূর্ব লন্ডন মসজিদে এই খাবার সংগ্রহ করা হয়। খাবার বিতরণের এই কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিলেন হাজারো মুসলিম। খাবার তৈরি ও বিতরণের কাজে সব মিলিয়ে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৫শ’। জুমা নামায পড়ার পর স্বেচ্ছাসেবীরা খাবার সরবরাহ শুরু করেন। স্থানীয় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে খাবার পাঠানো হয়। সমস্ত খাবার অভাবী মানুষদের মধ্যে, বিশেষ করে রাস্তায় বসবাস করা মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হয়। আর খাবার যারা গ্রহণ করেন তাদের ৯০ ভাগই ছিলেন অমুসলিম। অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের নেতারাও মুসলমানদের এই সেবাকর্মে অংশগ্রহণ করেন। খৃস্টান রেভারেন্ড গ্যারি ব্র্যাডলি বলেন, মানবতার খাতিরে সকল ধর্মের মানুষের এক হওয়ার চমৎকার উদাহরণ এই খাবার বিতরণ কর্মসূচি।
আমরা জানি পাশ্চাত্যে বড় দিনের উৎসব হলো সবচাইতে বড় উৎসব। সমগ্র খৃস্টজগতে এই সময় সাড়া পড়ে যায়। বড় দিনকে কেন্দ্র করে আলোকসজ্জা হয়, ঝলমলে উৎসব হয়, খাবার-দাবারেরও ব্যাপক আয়োজন হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এমন উৎসবের সময়ও কিছু মানুষের খাবার থাকে না, থাকে না মাথা গোঁজার ঠাঁইও। ফলে তাদের জীবনযাপন করতে হয় রাস্তাতেই। মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এই মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের। বঞ্চিত ওইসব মানুষের সাহায্যে এই সময় লন্ডনের মুসলমানরা এগিয়ে এসে এক উজ্জ্বল মানবিক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আমরা এমন মানবিক কর্তব্য পালনের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
লন্ডনের খৃস্টান রেভারেন্ড গ্যারি ব্র্যাডলি মুসলমানদের ওই সেবাকর্মের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, মানবতার সেবায় সকল ধর্মের মানুষের এক হওয়ার এটি একটি চমৎকার উদাহরণ। তিনি যথার্থই বলেছেন। হযরত আদম (আ:) ও হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (স:)সহ সব নবী-রাসূলের মূল আহ্বান ছিল একই। সবাই মহান স্রষ্টার আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নাজিলকৃত বিধিবিধানের আলোকে জীবন পরিচালিত করতে বলেছেন। আর সেই বিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানুষের সেবা করা। বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে মানুষ বিশেষ করে বিশ্ব নেতারা যদি মহান স্রষ্টার নির্দেশনার আলোকে মানুষের সেবায়, কল্যাণে ব্রতী হন, তাহলে এই পৃথিবী আবার সব মানুষের বসবাস উপযোগী হয়ে উঠতে পারে।
প্রসঙ্গত এখানে পোপ ফ্রান্সিস-এর বক্তব্য উল্লেখ করা যায়। খৃস্টীয় বড়দিনের প্রকৃত তাৎপর্য বস্তুগত ভোগ-বিলাসের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। শনিবার ভ্যাটিকানে বড়দিনের আগের দিনে সন্ধ্যার প্রার্থনা সভায় রোমান ক্যাথলিক গির্জার প্রধান পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বব্যাপী শিশুদের নিরবচ্ছিন্ন দুর্ভোগেরও নিন্দা জানান। বিবিসি পরিবেশিত খবরে আরো বলা হয়, ক্ষুধার্ত, অভিবাসন রুটগুলোতে বিপন্ন মানুষ এবং আলেপ্পোসহ সিরিয়ার শহরগুলোতে বোমাবর্ষণের শিকার মানুষদের কথাও স্মরণ করেন পোপ। তিনি আরো বলেন, বস্তুগত বিষয়গুলো ক্রিসমাস পর্বকে জিম্মি করে ফেলেছে। তাই এবারের পর্বে আরো নম্রতা আসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যখন বাণিজ্যের আলো স্রষ্টার আলোকে ছায়া বানিয়ে ফেলেছে। আমরা গিফটের জন্য অধীর থাকলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে করি শীতল ব্যবহার। বিগত বছরগুলোতেও অভিবাসীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ। এবারও একই আহ্বান জানিয়ে পোপ বলেন, যিশু ও একজন অভিবাসী ছিলেন, বিষয়টি যেন খৃস্টানরা স্মরণে রাখে। বড়দিন উপলক্ষে পোপ যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে পাশ্চাত্যের বর্তমান ত্রুটিপূর্ণ মনোভঙ্গি ও জীবন চেতনা যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বলেছেন, বড়দিনের তাৎপর্য বস্তুগত ভোগবিলাসের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেছেন, বাণিজ্যের আলো খোদার বা স্রষ্টার আলোকে ছায়া বানিয়ে ফেলেছে। অর্থাৎ বর্তমান সময়ে বস্তুগত ভোগবিলাস ও বাণিজ্যলিপ্সা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে মানুষের মনে স্রষ্টার আলোকিত বার্তা পৌঁছতে পারছে না। বস্তুবাদী এমন স্বার্থান্ধ মানুষ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে কেমন করে? এমন চেতনার ক্ষমতাধর মানুষদের কারণেই এখন দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধ-বিগ্রহ। ফলে প্রতিদিনই পৃথিবীতে বাড়ছে অভিবাসীদের সংখ্যা। অথচ তাদের প্রতিও মানবিক আচরণে ব্যর্থ হচ্ছে বর্তমান সভ্যতা। এ কারণেই হয়তো পোপ খৃস্ট জগতকে স্মরণ করতে বলেছেন যে, যিশুখৃস্টও একজন অভিবাসী ছিলেন। এখন দেখার বিষয় হলো, খৃস্ট-জগৎ তথা পাশ্চাত্য পোপের বার্তা কতটা উপলব্ধি করে এবং নিজেদের ত্রুটিপূর্ণ সভ্যতার সংস্কারে কতটা সক্রিয় হয়।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
গুরুপদ নেয়ে ১৪/০১/২০১৭এটি কোনো রকম ভাবেই প্রবন্ধের মধ্যে পড়ে না তবে সংবাদ(REPORT)এর দলে ফেলা যেতে পারে!
-
মোহাম্মদ ০২/০১/২০১৭সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক লিখার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ!