গুম রিপাবলিক ২০১৬
২০১৬ সালের শেষ প্রান্তে এসে এবারও যথারীতি বছরের হিসাব-নিকাশের পালা শুরু হয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যমের কোনো খবরেই আশান্বিত বা নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। প্রকাশিত হচ্ছে বরং ভীতিকর বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যান। যেমন একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে জানা গেছে, বছরজুড়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে চার হাজার ৫২৬ জন নারী ও কন্যাশিশু। এদের অনেককে মেরেও ফেলেছে বখাটেরা। এদিকে মানবাধিকার সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে দৈনিক সংগ্রামের এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বছরের নবেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দেশের বিভিন্নস্থানে ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিদের সংখ্যা ৭০-এ পৌঁছেছে। এই ৭০ জনের মধ্যে অন্তত ৩৪ জনকে গুম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যারা বলেছেন তারা অভিযোগের আঙুল উঠিয়েছেন সরকারের দিকে। অর্থাৎ রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে সরকারই ৩৪ জনকে গুম করিয়েছে।
গুম হওয়াদের মধ্যে প্রাধান্যে এসেছে বিএনপির নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমানের নাম। দু’জনই স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে দন্ডিত দুই বিশিষ্টজনের সন্তান। প্রথমজন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এবং দ্বিতীয়জন বাংলাদেশে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং-এর প্রবর্তক ও প্রাণপুরুষ মীর কাসেম আলীর ছেলে। এই দু’জনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে এবং সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে কর্মরত অবস্থায় বরখাস্ত হয়ে যাওয়া আবদুল্লাহিল আমান আযমীর নামও উচ্চারিত হচ্ছে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে। তাকে এবং ব্যারিস্টার মীর আরমানকে পরিবারের বাসভবন থেকে রাতের অন্ধকারে তুলে নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে রাজপথে রীতিমতো ছিনতাইয়ের ঢঙে গাড়ি থেকে নামিয়ে ধরে নিয়ে গেছে সাদা পোশাক পরা লোকজন। তিনি তার মায়ের সঙ্গে একটি মামলায় হাজিরা দেয়ার জন্য আদালতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে আদালতের কাছে একটি সড়ক থেকেই তাকে উঠিয়ে নেয়া হয়। তিনজনের ক্ষেত্রেই আগত মারমুখী ব্যক্তিরা নিজেদের আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছে, যদিও কারো গায়েই কোনো বাহিনীর পোশাক বা ইউনিফর্ম ছিল না। তা সত্ত্বেও বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, তাদের আসলে সরকারই পাঠিয়েছিল। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়টি হলো, তিনজনকেই আগস্ট মাসে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে ৯ আগস্ট, ব্যারিস্টার আরমানকে ৪ আগস্ট এবং আব্দুল্লাহিল আযমীকে ২২ আগস্ট ধরে নিয়ে গেছে সাদা পেশাকের লোকজন।
রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে রিপোর্টে তিনজনের নাম উল্লেখ করা হলেও একইভাবে গুম করা হয়েছে অন্যদেরকেও। উদ্বেগের কারণ হলো, কারো ব্যাপারেই পুলিশ বা কোনো আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হয়নি। জনগণকে স্তম্ভিত করে বরং অভিন্ন ভাষায় জানানো হয়েছে, গুম হওয়াদের বিষয়ে সরকার কিছুই জানে না! ওদিকে ঘটনাপ্রবাহে গুমের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে নতুন একটি শব্দ- ‘নিখোঁজ’। সাদা পোশাকধারীরা কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর জানানো হচ্ছে, ওই ব্যক্তি নাকি ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছেন! অথচ স্বজনসহ পরিচিত ও তথ্যাভিজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তাকে সরকারের কোনো বাহিনী উঠিয়ে নিয়েছে। কথিত এসব নিখোঁজ ব্যক্তির অনেককে দেশের বিভিন্ন স্থানে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কে বা কারা কেন তাদের হত্যা করেছে সে প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে নিখোঁজ এবং গুম হয়ে যাওয়া ২০ জনের পরিবার সদস্যরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের দুঃখ ও কষ্টের কথা শুনিয়েছেন। স্বজনদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আকুল আবেদন জানিয়েছেন। অন্যদিকে গুম ও নিখোঁজ করার কর্মকা- এখনো বন্ধ হয়নি বরং মাত্র দিন কয়েক আগে পাবনা থেকে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে আটজন কলেজ ছাত্র।
বলার অপেক্ষা রাখে না, গুম ও নিখোঁজের কোনো একটি ঘটনাকেই হাল্কাভাবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, বিশ্বের সভ্য এবং গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্রেই এ ধরনের নজীর পাওয়া যায় না। অন্যদিকে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশে গুম-খুনের পাশাপাশি নিখোঁজ করে ফেলার কর্মকা- শুরু হয়েছে। এখনো তার শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আশংকার কারণ হলো, দায় স্বীকার করার এবং গুম হয়ে যাওয়াদের ফিরিয়ে দেয়ার পরিবর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্বশেষ উপলক্ষেও বলেছেন, দেশে গুম বলে কোনো শব্দ নেই। যারা গুম হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, তারা নাকি বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন! অতীতে যারা গুম হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল তাদের অনেকে নাকি আবার ফিরেও এসেছেন!
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে সত্য বলেননি তার প্রমাণ দেয়ার জন্য হুম্মাম চৌধুরী, ব্যারিস্টার আরমান এবং আবদুল্লাহিল আযমীর পাশাপাশি বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী এবং রাজধানীর সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যায়, বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও যাদের হদিস পাওয়া যায়নি। বাস্তবে পরিস্থিতি এত বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন বাংলাদেশে গুম ও খুনের কোনো হিসাবই রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্যই সত্য আড়াল বা অস্বীকার করার পরিবর্তে সরকারের উচিত দায়দায়িত্ব স্বীকার করে নেয়া এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাহিনীকে সংযত করা। তাদের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায় করার দায়িত্বও সরকারের। আমরা চাই, দেশে যেন গুম ও খুনের আর একটি ঘটনাও না ঘটে। আর একজনও যেন ‘নিখোঁজ’ না হয়ে যায়। আমরা আশা করতে চাই, ক্ষমতাসীনরা একথা বুঝতে ভুল করবেন না যে, মাত্র ১১ মাসে ৭০ জনের নিখোঁজ হওয়ার এবং ৩৪ জনের গুম হওয়ার তথ্য কোনো সাধারণ বিষয় নয় এবং এর ফলে আর যা-ই হোক, সরকারের কৃতিত্ব বা সাফল্যের তালিকায় শুভ কিছু যুক্ত হবে না।
গুম হওয়াদের মধ্যে প্রাধান্যে এসেছে বিএনপির নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম আরমানের নাম। দু’জনই স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে দন্ডিত দুই বিশিষ্টজনের সন্তান। প্রথমজন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এবং দ্বিতীয়জন বাংলাদেশে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং-এর প্রবর্তক ও প্রাণপুরুষ মীর কাসেম আলীর ছেলে। এই দু’জনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে এবং সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে কর্মরত অবস্থায় বরখাস্ত হয়ে যাওয়া আবদুল্লাহিল আমান আযমীর নামও উচ্চারিত হচ্ছে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে। তাকে এবং ব্যারিস্টার মীর আরমানকে পরিবারের বাসভবন থেকে রাতের অন্ধকারে তুলে নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে রাজপথে রীতিমতো ছিনতাইয়ের ঢঙে গাড়ি থেকে নামিয়ে ধরে নিয়ে গেছে সাদা পোশাক পরা লোকজন। তিনি তার মায়ের সঙ্গে একটি মামলায় হাজিরা দেয়ার জন্য আদালতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে আদালতের কাছে একটি সড়ক থেকেই তাকে উঠিয়ে নেয়া হয়। তিনজনের ক্ষেত্রেই আগত মারমুখী ব্যক্তিরা নিজেদের আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছে, যদিও কারো গায়েই কোনো বাহিনীর পোশাক বা ইউনিফর্ম ছিল না। তা সত্ত্বেও বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, তাদের আসলে সরকারই পাঠিয়েছিল। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়টি হলো, তিনজনকেই আগস্ট মাসে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে ৯ আগস্ট, ব্যারিস্টার আরমানকে ৪ আগস্ট এবং আব্দুল্লাহিল আযমীকে ২২ আগস্ট ধরে নিয়ে গেছে সাদা পেশাকের লোকজন।
রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে রিপোর্টে তিনজনের নাম উল্লেখ করা হলেও একইভাবে গুম করা হয়েছে অন্যদেরকেও। উদ্বেগের কারণ হলো, কারো ব্যাপারেই পুলিশ বা কোনো আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হয়নি। জনগণকে স্তম্ভিত করে বরং অভিন্ন ভাষায় জানানো হয়েছে, গুম হওয়াদের বিষয়ে সরকার কিছুই জানে না! ওদিকে ঘটনাপ্রবাহে গুমের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে নতুন একটি শব্দ- ‘নিখোঁজ’। সাদা পোশাকধারীরা কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর জানানো হচ্ছে, ওই ব্যক্তি নাকি ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছেন! অথচ স্বজনসহ পরিচিত ও তথ্যাভিজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তাকে সরকারের কোনো বাহিনী উঠিয়ে নিয়েছে। কথিত এসব নিখোঁজ ব্যক্তির অনেককে দেশের বিভিন্ন স্থানে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কে বা কারা কেন তাদের হত্যা করেছে সে প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে নিখোঁজ এবং গুম হয়ে যাওয়া ২০ জনের পরিবার সদস্যরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের দুঃখ ও কষ্টের কথা শুনিয়েছেন। স্বজনদের ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আকুল আবেদন জানিয়েছেন। অন্যদিকে গুম ও নিখোঁজ করার কর্মকা- এখনো বন্ধ হয়নি বরং মাত্র দিন কয়েক আগে পাবনা থেকে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে আটজন কলেজ ছাত্র।
বলার অপেক্ষা রাখে না, গুম ও নিখোঁজের কোনো একটি ঘটনাকেই হাল্কাভাবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, বিশ্বের সভ্য এবং গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্রেই এ ধরনের নজীর পাওয়া যায় না। অন্যদিকে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশে গুম-খুনের পাশাপাশি নিখোঁজ করে ফেলার কর্মকা- শুরু হয়েছে। এখনো তার শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আশংকার কারণ হলো, দায় স্বীকার করার এবং গুম হয়ে যাওয়াদের ফিরিয়ে দেয়ার পরিবর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্বশেষ উপলক্ষেও বলেছেন, দেশে গুম বলে কোনো শব্দ নেই। যারা গুম হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, তারা নাকি বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন! অতীতে যারা গুম হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছিল তাদের অনেকে নাকি আবার ফিরেও এসেছেন!
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে সত্য বলেননি তার প্রমাণ দেয়ার জন্য হুম্মাম চৌধুরী, ব্যারিস্টার আরমান এবং আবদুল্লাহিল আযমীর পাশাপাশি বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী এবং রাজধানীর সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যায়, বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও যাদের হদিস পাওয়া যায়নি। বাস্তবে পরিস্থিতি এত বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন বাংলাদেশে গুম ও খুনের কোনো হিসাবই রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্যই সত্য আড়াল বা অস্বীকার করার পরিবর্তে সরকারের উচিত দায়দায়িত্ব স্বীকার করে নেয়া এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাহিনীকে সংযত করা। তাদের কাছ থেকে জবাবদিহিতা আদায় করার দায়িত্বও সরকারের। আমরা চাই, দেশে যেন গুম ও খুনের আর একটি ঘটনাও না ঘটে। আর একজনও যেন ‘নিখোঁজ’ না হয়ে যায়। আমরা আশা করতে চাই, ক্ষমতাসীনরা একথা বুঝতে ভুল করবেন না যে, মাত্র ১১ মাসে ৭০ জনের নিখোঁজ হওয়ার এবং ৩৪ জনের গুম হওয়ার তথ্য কোনো সাধারণ বিষয় নয় এবং এর ফলে আর যা-ই হোক, সরকারের কৃতিত্ব বা সাফল্যের তালিকায় শুভ কিছু যুক্ত হবে না।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।