www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বায়ু দূষণ

বায়ুতে নানা প্রকারের ভাসমান দূষিত পদার্থের মধ্যে কার্বন, সিসা ও অ্যালুমনিয়াম প্রধান। তাছাড়া শহরের বায়ুতে প্রচুর পরিমাণ ধূলিকণাও থাকে। বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার মধ্যে যেগুলোর ব্যাস ১০ মাইক্রোমিটার সেসব বস্তুকণাকে পার্টিকুলার ম্যাটার (পিএম)-১০ এবং যেসেব বস্তুকণার ব্যাস দুই দশমিক পাঁচ মাইক্রোমিটার সেগুলোকে পার্টিকুলার ম্যাটার (পিএম)-২.৫ এই দুই ভাগে ভাগ করে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়। আর এই দু শ্রেণীর বস্তুকণার বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে কত মাইক্রোগ্রাম আছে তা পরিমাপ করা হয় পার্টস পার মিলিয়ন বা পিপিএম এককে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বাতাসের একিউআই মাত্রা শূন্য থেকে ৫০ পিপিএম হলে তাকে সবুজ বা স্বাস্থ্যকর বায়ু বলা হয়। একিউআই মাত্রা ৫১ থেকে ১০০ পিপিএম হলে তাকে মধ্যম বায়ু বলা হয়। যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। মাত্রা ১০১ থেকে ১৫০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে সতর্ককতামূলক বায়ু বলা হয়। যেটা মানুষের জন্য মৃদু ক্ষতিকর। একিউআই মাত্রা ১৫১ থেকে ২০০ পিপিএম হলে সে বায়ুকে অস্বাস্থ্যকর শ্রেণীতে ফেলা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ পিপিএম একউিআই মাত্রার বাতাসকে খুবই অস্বাস্থ্যকর শ্রেণীতে এবং ৩০১ থেকে ৫০০ পিপিএম মাত্রার বাতাসকে চরম পর্যায়ের অস্বাস্থ্যকর বায়ু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ভয়াবহ এই অবস্থা রোধে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং ক্লিন এয়ার কোয়ালিশন (সিসিএসি) বিশ্বব্যাপী সচেতনতা গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছে। বায়ু দূষণের ভয়াবহতা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে ‘ব্রিদ লাইফ’ নামে বিশ্বব্যাপী একটি প্রচারণাও শুরু করেছে। দূষিত বায়ু রক্তে অক্সিজেন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়- যা স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। দুই হাজার শহরের ওপর গবেষণা করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এমন অনেক শহরে মানুষজন বসবাস করছে, যেখানে বায়ু দূষণ স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রার ওপরে চলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক তাদের এক গবেষণায় দেখিয়েছে, বায়ু দূষণ বৃদ্ধির কারণে মস্তিষ্কের আকৃতি হ্রাস পায়। আর এর ফলে হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ডের টিএইচ চ্যান পাবলিক স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও বোস্টনের বেথ ইসরায়েল ডিয়াকোনেস মেডিকেল সেন্টারের গবেষকরা বায়ু দূষণের সঙ্গে মস্তিষ্কের আকৃতি হ্রাসের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষকরা এক হাজার রোগাক্রান্ত মানুষের ওপর গবেষণা করেন। এসব রোগীর মস্তিষ্ক স্ক্যান করে ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হয়। এতে দেখা যায় কম বায়ু দূষণ বা দূষণহীন আবহাওয়ায় থাকাদের চেয়ে দূষণের মধ্যে থাকা রোগাক্রান্তদের মস্তিষ্কের আকৃতি বেশি হ্রাস পেয়েছে। কম বায়ু দূষণে দীর্ঘ সময় উপস্থিতির কারণেও মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। পরীক্ষায় অংশ নেয়া রোগীদের সবার বয়স ছিল ৬০ বা তদূর্ধ্ব। আর স্ট্রোক ও স্মৃতিহারোনো রোগীদের এই পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, বাতাসে দুই মাইক্রোগ্রাম (এক গ্রাম = দশ লাখ মাইক্রোগ্রাম) ধাতব কণার উপস্থিতি বৃদ্ধির কারণে মানুষের মস্তিষ্কের ঘনত্ব কমে দশমিক ৩২ শতাংশ। গবেষকরা বলেন, দূষিত বায়ুর মধ্যে দীর্ঘ সময় কাটালে মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এমনকি অত্যন্ত কম দূষণেও দীর্ঘ সময় কাটালে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। অত্যন্ত দূষিত বায়ুতে দীর্ঘদিন বসবাসকারীদের মস্তিষ্কের মধ্যকার ঘনত্ব ও আকৃতি অন্যদের তুলনায় বেশ কম। আর মস্তিষ্কের আকৃতি ও ঘনত্ব হ্রাসের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। ধূমপান যেভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে, দূষিত বায়ু ঠিক একইভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৮৮৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৫/১২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast