শেষের কবিতা
#শেষের কবিতা
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উপন্যাস "শেষের কবিতা" এই উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র হল অমিত রায়। তিনি প্রথা বিরোধী এবং বাউন্ডেলে প্রকৃতির একজন মানুষ। বিলেত হতে ব্যারিস্টারী পাশ করলেও চাকুরী না করে বাউন্ডেলের ন্যায় ঘুরে-ফিরে বেড়ান। প্রকৃতি প্রেমী, সাহিত্য বোদ্ধাও তাকে বলা যায়। মূল নারী চরিত্র হল লাবন্য। তিনি পিতা অবনিশের (শিক্ষক) নিকট হতে সাহিত্য ও জ্ঞান অর্জনের বাতিক পেয়েছিলেন, তিনি তা ছিলেন ও বটে।
অমিত ও লাবণ্যের দেখা হয় মেঘালয়ের রাজধানী 'শিলঙে'। আকষ্মিকভাবে দেখা এবং ধীরে ধীরে তা প্রেমের পর্যায়ে গড়ায়। এই প্রেম নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে বিচ্ছেদের রূপ নেয়। লাবণ্য অমিতকে সর্বশেষ একটি চিঠি দেন যাকে লাবণ্যের বিবাহ'র সংবাদ ও একটি কবিতা লিখা ছিল। এখানেই 'শেষের কবিতা' নামকরণের তাৎপর্য নিহিত। কবিতাটির শেষের দিকটি এমন____
❛তোমারে যা দিয়াছিনু সে তোমারি দান;
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
হে বন্ধু, বিদায়। ❜
#বুক রিভিউ শুরু হতে শুরু করা যাক:
অমিত রায় বিলেতে পড়াশোনা করা একজন ব্যারিস্টার। পিতাও আইন ব্যবসা করে অঢেল টাকা পয়সার মালিক হয়েছিলেন তাই অমিতকে টাকা পয়সার কোন চিন্তাই করতে হয়নি। অমিত ঘোরা-ফেরা আর বাউন্ডেলেপনা করেই জীবন পার করছিলেন। অমিত রায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পছন্দ করেন না। (এখানে রবী ঠাকুর স্বয়ং নিজে নিজের বিরোধিতা করে লিখেছেন) 'নীবারণ চক্রবর্তী' ছদ্মনামে অমিত নিজে ভিন্ন ধাঁচের কবিতা রচনা করেন। কবিতার একটি সভাতে অমিত লেখক নিয়ে কথা উঠলে, নীবারণ চক্রবর্তীর নাম উল্লেখ করেন। নীবারণকে অমিত একজন স্টাইলিশ লেখক বলে উল্লেখ করেন। রবীন্দ্রনাথের লেখায় কোন স্টাইল নেই, রবী বুড়ো হয়ে গেছে তার লেখালেখি এখন বন্ধ করা উচিৎ এমনটি মনে করেন অমিত।
অমিতের দুজন বোন, সিসি আর লিসি। তারা ভ্রমনের জন্য চলে গেল দার্জিলিঙ আর অমিত গেল শিলঙ পাহাড়ে। এ দিকে পিতার সাথে মনোমালিন্য করে লাবন্য 'যোগমায়া' নামে একজন গৃহকত্রীর সন্তানকে পড়াশোনা করানোর জন্য গৃহ শিক্ষক হিসেবে শিলঙে আসলেন। লাবন্য সাহিত্য প্রমী তা আগেই বলা হয়েছে এক্ষনে এই কথাটি বলতেই হবে যে, লাবণ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার একান্ত ভক্তও ছিল বটে।
গাড়ির একটি দুর্ঘটনার সুত্র ধরে অমিত আর লাবণ্যের পরিচয় ঘটে। অমিত মিশুক হওয়ার সুবাদে দুজনার সম্পর্ক দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে। লাবণ্য ও সাহিত্য প্রেমী এবং বুদ্ধিমতী তাই অন্য একজন সাহিত্য প্রেমী ও বুদ্ধিমানের সাথে ভাল সময় পার হতে থাকে। অমিত তার মনের মত মেয়ে পেয়ে বিবাহ করতে আগ্রহী হয়। সে গৃহকত্রী যোগমায়ার নিকট সেকথা জানালেন। যোগমায়া পূর্বেই অমিতের উচ্চ পরিবার সম্পর্কে জানত, তাই না না বলেও একপর্যায়ে তিনি রাজি হন। কিন্তু লাবণ্য বিবাহ করতে রাজি হননি। অবশেষে লাবণ্যও রাজি হন এবং অমিত বিবাহের আয়োজনের কথা চিন্তা করতে থাকে।
অমিত বিবাহের জন্য কলকাতায় গিয়ে বন্দোবস্ত করবে ভেবেছিল তখনি টেলিগ্রাফ আসে যে, তার বোন সিসি এবং কেতকী নামে অমিতের বিলেতে থাকাকালিন এক প্রেমিকা আসছে (বিলেতে থাকার সময় কেতকীকে অমিত হীরের আঙটিও দিয়েছিল)। এখানে এসে তারা লাবণ্য ও অমিতের বিষয়টা জানতে পেরে যোগমায়ার গৃহে চলে আসেন আর অমিত সেদিন কলকাতা থেকে অর্ডার করে লাবণ্যর জন্য আঙটি আনান। সেই দিনই অমিত, বোন সিসি ও কেতকীর সামনে আঙটি পরিয়ে দেন লাবণ্যের হাতে। তখন কেতকী কান্না করে বলে, তাহলে আমাকে কেন তুমি আঙটি দিয়েছিলে আর বিলেতের ঘটনাগুলো বর্ণনা করেন। লাবণ্য অবস্থা বুঝতে পেরে কৌশলে অমিতকে এড়িয়ে যোগমায়কে নিয়ে কোথায় যেন চলে যান।
লাবণ্যকে ছোট বেলা থেকেই ভালবাসত শোভনলাল যাকে কেন্দ্র করে লাবণ্য পিতার সাথে মনোমালিন্য করে ঘর ছেড়েছিলেন। সেই শোভনলালের সঙ্গে রামগড়ের পাহাড়ে লাবণ্যের বিবাহ হবে তা শেষের চিঠিটিতে জানিয়েছিল। অমিত ও শেষমেষ কেতকীর সঙ্গে সংসার পাতেন। আর কেতকী কে নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। লাবণ্য সর্বশেষ চিঠির মাধ্যমে বিদায় চেয়ে নিল প্রিয় অমিতের নিকট হতে।
শেষের কবিতাটি অসাধারন একটি উপন্যাস। বলা যায় যে, এই উপন্যাসটি কালজয়ী একটি উপন্যাস। এখানে মূল ঘটনাবাদেও যেসব বিষয় এবং ফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা সত্যি অনবদ্য। জীবনকে দেখার নতুন দৃষ্টিকোণ তৈরী হবে এই উপন্যাসটি পাঠে।
মানুষের পরিবর্তন নিয়ে সুন্দর একটি উক্তি তুলে ধরছি,
"পাঁচ বছর পূর্বেকার ভাল-লাগা পাঁচ বছর পরেও যদি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে, বেচারা জানতে পারেনি যে সে মারা গেছে।"
এরকম নানা আইডিয়া আপনি পাবেন এই উপন্যাসটিতে যা আপনার জ্ঞানকে শানিত করবে। আরেকটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি,
"কমল-হীরের পাথরটাকেই বিদ্যা বলে আর ওর থেকে যে আলো ঠিকরে পড়ে তাকেই বলে কালচার।"
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত উপন্যাস "শেষের কবিতা" এই উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র হল অমিত রায়। তিনি প্রথা বিরোধী এবং বাউন্ডেলে প্রকৃতির একজন মানুষ। বিলেত হতে ব্যারিস্টারী পাশ করলেও চাকুরী না করে বাউন্ডেলের ন্যায় ঘুরে-ফিরে বেড়ান। প্রকৃতি প্রেমী, সাহিত্য বোদ্ধাও তাকে বলা যায়। মূল নারী চরিত্র হল লাবন্য। তিনি পিতা অবনিশের (শিক্ষক) নিকট হতে সাহিত্য ও জ্ঞান অর্জনের বাতিক পেয়েছিলেন, তিনি তা ছিলেন ও বটে।
অমিত ও লাবণ্যের দেখা হয় মেঘালয়ের রাজধানী 'শিলঙে'। আকষ্মিকভাবে দেখা এবং ধীরে ধীরে তা প্রেমের পর্যায়ে গড়ায়। এই প্রেম নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে বিচ্ছেদের রূপ নেয়। লাবণ্য অমিতকে সর্বশেষ একটি চিঠি দেন যাকে লাবণ্যের বিবাহ'র সংবাদ ও একটি কবিতা লিখা ছিল। এখানেই 'শেষের কবিতা' নামকরণের তাৎপর্য নিহিত। কবিতাটির শেষের দিকটি এমন____
❛তোমারে যা দিয়াছিনু সে তোমারি দান;
গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
হে বন্ধু, বিদায়। ❜
#বুক রিভিউ শুরু হতে শুরু করা যাক:
অমিত রায় বিলেতে পড়াশোনা করা একজন ব্যারিস্টার। পিতাও আইন ব্যবসা করে অঢেল টাকা পয়সার মালিক হয়েছিলেন তাই অমিতকে টাকা পয়সার কোন চিন্তাই করতে হয়নি। অমিত ঘোরা-ফেরা আর বাউন্ডেলেপনা করেই জীবন পার করছিলেন। অমিত রায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পছন্দ করেন না। (এখানে রবী ঠাকুর স্বয়ং নিজে নিজের বিরোধিতা করে লিখেছেন) 'নীবারণ চক্রবর্তী' ছদ্মনামে অমিত নিজে ভিন্ন ধাঁচের কবিতা রচনা করেন। কবিতার একটি সভাতে অমিত লেখক নিয়ে কথা উঠলে, নীবারণ চক্রবর্তীর নাম উল্লেখ করেন। নীবারণকে অমিত একজন স্টাইলিশ লেখক বলে উল্লেখ করেন। রবীন্দ্রনাথের লেখায় কোন স্টাইল নেই, রবী বুড়ো হয়ে গেছে তার লেখালেখি এখন বন্ধ করা উচিৎ এমনটি মনে করেন অমিত।
অমিতের দুজন বোন, সিসি আর লিসি। তারা ভ্রমনের জন্য চলে গেল দার্জিলিঙ আর অমিত গেল শিলঙ পাহাড়ে। এ দিকে পিতার সাথে মনোমালিন্য করে লাবন্য 'যোগমায়া' নামে একজন গৃহকত্রীর সন্তানকে পড়াশোনা করানোর জন্য গৃহ শিক্ষক হিসেবে শিলঙে আসলেন। লাবন্য সাহিত্য প্রমী তা আগেই বলা হয়েছে এক্ষনে এই কথাটি বলতেই হবে যে, লাবণ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার একান্ত ভক্তও ছিল বটে।
গাড়ির একটি দুর্ঘটনার সুত্র ধরে অমিত আর লাবণ্যের পরিচয় ঘটে। অমিত মিশুক হওয়ার সুবাদে দুজনার সম্পর্ক দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে। লাবণ্য ও সাহিত্য প্রেমী এবং বুদ্ধিমতী তাই অন্য একজন সাহিত্য প্রেমী ও বুদ্ধিমানের সাথে ভাল সময় পার হতে থাকে। অমিত তার মনের মত মেয়ে পেয়ে বিবাহ করতে আগ্রহী হয়। সে গৃহকত্রী যোগমায়ার নিকট সেকথা জানালেন। যোগমায়া পূর্বেই অমিতের উচ্চ পরিবার সম্পর্কে জানত, তাই না না বলেও একপর্যায়ে তিনি রাজি হন। কিন্তু লাবণ্য বিবাহ করতে রাজি হননি। অবশেষে লাবণ্যও রাজি হন এবং অমিত বিবাহের আয়োজনের কথা চিন্তা করতে থাকে।
অমিত বিবাহের জন্য কলকাতায় গিয়ে বন্দোবস্ত করবে ভেবেছিল তখনি টেলিগ্রাফ আসে যে, তার বোন সিসি এবং কেতকী নামে অমিতের বিলেতে থাকাকালিন এক প্রেমিকা আসছে (বিলেতে থাকার সময় কেতকীকে অমিত হীরের আঙটিও দিয়েছিল)। এখানে এসে তারা লাবণ্য ও অমিতের বিষয়টা জানতে পেরে যোগমায়ার গৃহে চলে আসেন আর অমিত সেদিন কলকাতা থেকে অর্ডার করে লাবণ্যর জন্য আঙটি আনান। সেই দিনই অমিত, বোন সিসি ও কেতকীর সামনে আঙটি পরিয়ে দেন লাবণ্যের হাতে। তখন কেতকী কান্না করে বলে, তাহলে আমাকে কেন তুমি আঙটি দিয়েছিলে আর বিলেতের ঘটনাগুলো বর্ণনা করেন। লাবণ্য অবস্থা বুঝতে পেরে কৌশলে অমিতকে এড়িয়ে যোগমায়কে নিয়ে কোথায় যেন চলে যান।
লাবণ্যকে ছোট বেলা থেকেই ভালবাসত শোভনলাল যাকে কেন্দ্র করে লাবণ্য পিতার সাথে মনোমালিন্য করে ঘর ছেড়েছিলেন। সেই শোভনলালের সঙ্গে রামগড়ের পাহাড়ে লাবণ্যের বিবাহ হবে তা শেষের চিঠিটিতে জানিয়েছিল। অমিত ও শেষমেষ কেতকীর সঙ্গে সংসার পাতেন। আর কেতকী কে নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। লাবণ্য সর্বশেষ চিঠির মাধ্যমে বিদায় চেয়ে নিল প্রিয় অমিতের নিকট হতে।
শেষের কবিতাটি অসাধারন একটি উপন্যাস। বলা যায় যে, এই উপন্যাসটি কালজয়ী একটি উপন্যাস। এখানে মূল ঘটনাবাদেও যেসব বিষয় এবং ফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা সত্যি অনবদ্য। জীবনকে দেখার নতুন দৃষ্টিকোণ তৈরী হবে এই উপন্যাসটি পাঠে।
মানুষের পরিবর্তন নিয়ে সুন্দর একটি উক্তি তুলে ধরছি,
"পাঁচ বছর পূর্বেকার ভাল-লাগা পাঁচ বছর পরেও যদি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে, বেচারা জানতে পারেনি যে সে মারা গেছে।"
এরকম নানা আইডিয়া আপনি পাবেন এই উপন্যাসটিতে যা আপনার জ্ঞানকে শানিত করবে। আরেকটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি,
"কমল-হীরের পাথরটাকেই বিদ্যা বলে আর ওর থেকে যে আলো ঠিকরে পড়ে তাকেই বলে কালচার।"
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মুহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন ০৯/১২/২০১৯
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৮/১২/২০১৯ভালো লাগার মতো কাহিনী।
-
নুর হোসেন ০৮/১২/২০১৯পড়লাম, ভাল লাগলো।
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ০৮/১২/২০১৯অপূর্ব সুন্দর কথন |
শুভেচ্ছা রইলো।