www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেসবুক আমি এবং একজন প্রিন্সেস আদিয়াতঃ তৃতীয় পর্ব

পূর্বসূত্রঃ

[ প্রিন্সেসঃ হুম... আবোল তাবোল ...পুরনো হয়ে গেছে এসব ।
নতুন কিছু বলেন । মিঃ ল্যাপি ? উনি কি ফরেনার ?
আমি আসলে আপনার পেশার কথা জানতে চাচ্ছিলাম ।

.................................................................................

.................................................................................

আমিঃ ইস আপনার জন্য ভারী দুঃখ হচ্ছে । আপনি এতদিন পর আমার
দেখা পেলেন ...... মিঃ রাইট, দ্যা কিলার ...

প্রিন্সেসঃ হুম... তাই নাকি... কিছু তো ফিল করছি না, কিভাবে বুঝবো ?]

তৃতীয় পর্বঃ টেস্ট ম্যাচ
( পাঠকের ধৈর্যের পরীক্ষা )

আমিঃ এতো তাড়াতাড়ি কি করে বুঝবে, বালি খুব তাড়াতাড়ি গরম হয়
বলে আবার খুব তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডাও হয়ে যায়। কিন্তু দেখো সাগরের
পানি গরম হতে যেমন সময় নেয় তেমনি সহজে ঠাণ্ডা হয় না।
আবার ধরো তুমি তোমার রুমে একটি ফটো ফ্রেম টাঙাবে এজন্য
একটি লোহা গাড়তে গেলে, যদি লোহাটি বিনা আয়েশে, সামান্য
একটু বাড়ি দিতেই ঢুকে যায় তাহলে দেখবে সেটা তেমন মজবুত
হবে না, একটু চাপ বা টান পড়লেই সেটা উঠে আসবে কিন্তু ঐ
লোহাটি যদি ঢুকাতে অনেক বেগ পেতে হয় তাহলে দেখবে সেটা
অনেক মজবুত হবে, উঠাতেও অনেক বেগ পেতে হবে । আবার
ধরো তুমি একটি নলকূপ বসাবে, যদি মাটির অল্প গভীরেই পানির
লেয়ার পেয়ে যাও দেখবে সে পানির স্বাদ ভালো হবে না । পানি যত
গভীর থেকে আসবে তার স্বাদ ততো ভালো হবে । মানুষের সম্পর্কও
তেমনি, যেটা হুট করে হয়ে যায়, সেটার গভীরতা তত বেশী থাকে
না । এই সব সম্পর্ক বাইরে থেকে যত মধুরই মনে হোক না কেন,
তা আবার হুট করে একদিন ভেঙ্গেও যায়। তাই সময় নিয়ে ধীরে
এগোনই ভালো । এই ভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভেতর দিয়ে যে
সম্পর্ক গড়ে উঠে তা অনেক মজবুত হয় । এসব সম্পর্কে সাময়িক
আবেগ উত্তেজনা থাকে কম কিন্তু সম্পর্ক অনেক গভীর, প্রশান্ত হয় ।
এই দেখুন কখন যে আপনাকে তুমি করে বলে ফেলেছি...
(আবার দার্শনিক হয়ে উঠি সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাথে সাথে সুপার
কুইকার ফ্লাইটেট ডেলিভারী দেই, ১০০০ কিলোমিটার বেগবান ঝড়ে
পরিণত হয়ে আপনি থেকে তুমি ঝেড়ে দেই প্রথম সুযোগেই । সত্যি
বলতে গেলে সুযোগ বানিয়ে নেই। তবে এটা একটা রিস্কি বোলিং ।
ফ্লাইট বেশী বলে উনার স্ট্রোক খেলার প্রবণতা দেখা দিতে পারে । )

প্রিন্সেসঃ হুম ... কথা আর কাজে স্ববিরোধিতা হয়ে গেলো না মিঃ দার্শনিক
স্যার, বালি, সমুদ্রের পানি, লোহা, নলকূপের পানি এই সব থেকে
যে মেসেজ পেলাম তা হলো ধীরে চলো, আর আপনি থেকে তুমিতে
আসার ক্ষেত্রে যেটা ঘটতে দেখলাম তা কি সেই হিসাবে একটু দ্রুত
হয়ে গেলো না ? ঐ দ্রুত বালি গরম হবার, সহজে লোহা ঢুকে যাবার
বা অনায়াসে নলকূপের পানির লেয়ার পেয়ে যাবার মতো । সেক্ষেত্রে
কোন মেসেজটা নেবো, কথার না কাজের ? গুণী জনেরা তো বলেন
“Example is better than precept”
(আমার সুপার কুইকার ডেলিভারীর গতি ও ফ্লাইটটাকে কাজে লাগিয়ে
উনি হুক করে বলটাকে কাভারের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে ওভার বাউন্ডারী
হাঁকান । নিজের বলের গতি ও ফ্লাইটই আমার জন্য কাল হয়ে দাড়ায়।
বল হাত থেকে বেরিয়ে গেছে, অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া
এই মুহূর্তে আমার আসলে আর কিছুই করার থাকে না । )

আমিঃ হুম ...আপনি তুমির ক্ষেত্রে আমার দৃষ্টিভঙ্গি প্রচলিত থেকে একটু
ভিন্ন ।আমি মনে করি না যে আপনি বলা মানে দুরের সম্পর্ক আর
তুমি বললেই কাছের মানুষ হয়ে ওঠা যায়। যেমন ধরো ডাকার সময়
রিকশাওয়ালা, মালী, ধোপা, মুচি এদের তো সাধারণত তুমি ডাকা
হয় এরা কি আমাদের কাছের মানুষ ? তুমি হয়তো বলবে এদেরকে
তুচ্ছার্থে তুমি ডাকা হয়। কিন্তু আমার কাছে ব্যপারটা তা নয়,এই সৃষ্টি
জগতের কোন প্রাণকেই আমি অবহেলার চোখে দেখি না, হোক সে
ক্ষুদ্র একটি পিপীলিকা বা ঘাসপোকা, কিম্বা সমজের চোখে অস্পৃশ্য
সুইপার বা আয়া শ্রেণীর লোক । সৃষ্টির অংশ বলে তারা কোন
ভাবেই অবহেলার পাত্র নয় । জীব জগতে যে যার নির্ধারিত দায়িত্ব
পালন করে যাচ্ছে বলেই না এটা ঠিকঠাক চলছে । তাই যার যেটুকু
সন্মান তাকে তা দিতে হবে । যদি আমি তা দিতে না পারি তাহলে
তার ফলে তার কোন সন্মান হানী হবে না । তার প্রাপ্য সন্মানটুকু
যদি তাকে না দিতে পারি সেটা হবে আমার অযোগ্যতা । অন্যকে
প্রাপ্য সন্মান দিতে না পারলে আমিও অন্যদের কাছ থেকে সন্মান
পাবো না । ছায়াকেও সালাম বা লাথি যা দাও, সে ফেরত দেবে।
আবার ধরো, আমাদের কাজিন গ্রুপটা বেশ বড়। সবচেয়ে বড় যে
কাজিন সে আমার থেকে প্রায় দুই দশকের বড় তাকে কিন্তু আমরা
“ধ্রুব ভইয়া, তুমি কেমন আছো” এই ভাবেই ডাকি। তার মানে কি
তাকে অসন্মান করি । মোটেও না ।
আবার সিএ স্টুডেন্ট সার্কেলে আমাদের জুনিয়র মোস্ট স্টুডেন্টদেরও
আপনি বলি । তারা কি আমাদের দুরের লোক বা আপনি বলি বলে
কি তাদের শ্রদ্ধা করছি, মোটেও না, আপনি বলে তাদের কাজের
নির্দেশ, বকা দিচ্ছি – অসন্মান নয় ছোট বড় ভাই সুলভ সম্পর্ক ।
আমাদের প্রফেশনে Seniority সবসময় কঠোরভাবে মেনে
চলা হয় অনেকটা সামরিক বাহিনীর মতো ।
আপনি তুমি নিয়ে আমার কোন সংস্কার নেই,এখন কি আর সেই
পুরনো যুগ আছে । এই আধুনিক যুগে সেই আগের দিনের মত
আপনি তুমিটা আসলে তেমন বড় বিষয় নয় । যেমন ইংরেজরা
দেখো আপনি, তুমি তুইর ঝামেলায় না গিয়ে শুধু তুমি(YOU)
দিয়ে কি সুন্দর সব কাজ চালিয়ে নিচ্ছে ।
আর একটা ঘটনা বলি আমার ছোট মামি তাদের বিয়ের পাঁচ বছর
পর এখনও ছোট মামাকে আপনি বলে ডাকে । মামার সাথে আমার
খুব ক্লোজ সম্পর্ক, মামা তাই একদিন কথা প্রসঙ্গে দুঃখ করে
বলেছিলেন,আমার খুব প্রিয় একটা গান, উত্তম সুচিত্রার “ওগো,
তুমি যে আমার” । আমার ইচ্ছে ছিল আমার বউ অর্থাৎ তোমার
ছোট মামী আমাকে এই গানটা গেয়ে শোনাবে । তোমার মামীকে
যদি গানটা গাইতে বলি সেতো রাজীই হবে না । আর যদি গাইতে
রাজী হয়ও তাহলে তো গানটা হবে, “ওগো, আপনি যে আমার,
ওগো, আপনি যে আমার, কানে কানে শুধু একবার বলেন, ওগো,
আপনি যে আমার ” । গানটা কি জমবে বল ?

আমি মনে করি আপনি বা তুমি সম্বোধন দিয়ে কাছাকাছি আসা
বোঝায় না । তুমি সম্বোধনটা জাস্ট সম্পর্কটা সহজ করে খোলাখুলি
শেয়ারিং ও বোঝাপড়ার কাজটা সহজ করে দেয় । সম্পর্ক একটি
ভিন্ন জিনিস যা কয়েকটি বিশেষ বিষয় ও অবস্থার সমন্বয়।

( আমি এবার টেস্ট ম্যাচ খেলে পরিস্থিতি সামাল দেই, ক্ষতি পূরণ করার
চেষ্টা করি, তুমি অব্যহত থাকে, আমার স্বতন্ত্র চিন্তা ধারার জানান দিয়ে
তার মনে একটি আলাদা স্থান করে নিতে সচেষ্ট হই।এবার আর তাড়াহুড়া
করে সর্ট পিচ বল দেই না ।ধীরে ধীরে তার মনের জমিনে আমার নোঙ্গর
ফেলি । আস্তে আস্তে তার মনের দেয়ালে পেরেক ঢুকাতে থাকি, মনের
গভীরে স্বচ্ছ জলের ধারার খোঁজ করি।)

প্রিন্সেসঃ হুম... আপনি তুমি নিয়ে আমার ভেতরও কোন পুরনো বা অন্ধ

সংস্কার নেই, ঠিক আছে, তুমি চলতে পারে । কিন্তু এর অন্য
কোন মানে করতে যেও না যেন । তুমি স্রেফ তুমি, জাস্ট একটা
সম্বোধন এর বাইরে আর কিছু না। ঠিক আছে ?
(সব ভালো যার শেষ ভালো । আমার টেস্ট খেলা সার্থক হয় ।
অন্তত এই পর্যায়ে। প্রথম দিন হিসেবে ভালো অগ্রগতি । )

আমিঃ ধন্যবাদ, তুমি বলার জন্য। আচ্ছা, তুমি অবসরে কি করো ?
( আমি তাকে দিয়ে তার নিজের কথা বলাতে সচেষ্ট হই । একটি
মেয়েকে যদি তোমার প্রেমে ফেলতে চাও তাহলে প্রথম ধাপটি
কি ? তাকে মন খুলে তার নিজের কথা বলতে দাও । তুমি খুব
ভালো একজন শ্রোতা হয়ে যাও । তাকে বলে যেতে দাও, মাঝে
মাঝে তাল দিয়ে যাও । সুযোগ থাকলে প্রশংসা কর বা বল তুমিও
এটা কর বা তোমারও এটা খুব পছন্দ ইত্যাদি ইত্যাদি আর ছোট
ছোট প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে তার কথার ধারা অব্যহত রাখো। নিজের
কথা বলতে সে খুব এঞ্জয় করবে, প্রায় সবাই করে, এভাবে এক
সময় যখন তোমাকে নিজের কথা, ভালো লাগা, মন্দ লাগা ইত্যাদি
ইত্যাদি বিষয় গুলো বলা হয়ে যাবে সে তখন সে মানসিক ভাবে
তোমার অনেক কাছাকাছি চলে আসবে, সে সত্যিকার ভাবে মন
থেকে তোমাকে তার কাছের মানুষ ভাবতে শুরু করবে । তবে
একটি মেয়ে সাধারণত প্রথমেই একটি ছেলের সাথে তার নিজের
ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করার মতো মানসিক অবস্থায় থাকে না,
পারিপার্শ্বিকতা, পুরুষ শাসিত সমাজ, রক্ষণশীলতা, ধর্মীয়
অনুশাসন পারিবারিক শিক্ষা, সংস্কার, সহজাত প্রবৃত্তি ও মেয়েলী
অহংবোধ, শারীরিক ও মানসিক গঠন তাকে একটি রক্ষণশীল
রূপদান করে, সে শামুকের খোলসের মতো নিজেকে গুটিয়ে রাখে,
রক্ষণশীলতার চাদরে নিজেকে ঢেকে রাখে, পুরুষের সামনে নিজেকে
মেলে ধরে না । মেয়েটাকে তৈরি করে নিতে হয়, সংকোচ দূর করে
ক্ষেত্র তৈরি করে নিতে হয়,এখন আমার ক্ষেত্র সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ।
শুধু ঠিকঠাক খেলে যেতে হবে । যত কঠিনই হোক না কেন
বরফ একসময় ঠিকই গলবে । কোন ভুল নেই । বহু পরীক্ষিত। )


বিদ্রঃ এটি মূলত ফেসবুক নির্ভর নতুন ঘরানার একটি গদ্য কবিতা । তালমিল বা ছন্দের ভেতর নয়, কাব্যিকতা খুঁজতে বলবো ভাষার ব্যবহার, উত্তর প্রতি উত্তর ও স্বগতোক্তির ছন্দের ভেতর। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না যেন । ধন্যবাদ ।
বিষয়শ্রেণী: কবিতা
ব্লগটি ১৪৯২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ১০/০২/২০১৫
    হুম ।
    অনেক সুন্দর ।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ১০/০২/২০১৫
    আমার কাছে দারুণ লাগলো.....................।অন্যরকম
    স্বাদ পেলাম.........।।মুগ্ধ হলাম......
 
Quantcast