সময় ও ভালবাসা
--- অনেকদিন পর তোমার সাথে দেখা, তাই না? কখনো ভাবতেও পারিনি এভাবে দেখা হয়ে যাবে আমাদের। তুমি যে এতটা স্বাভাবিক ব্যবহার করছো - সেটাও অবাক লাগছে। তুমি অবিকল আগের মত রয়ে গেছো। আগের মতোই স্বতঃস্ফূর্ত, আগের মতোই সুন্দর!
.
--- তুমিও বদলাওনি খুব একটা। তবে চুল মনে হচ্ছে পেকে গেছে। ঘটনা কী?
.
--- বয়স তো হচ্ছে। সময় তো আর থেমে নেই। যা হোক, আছো কেমন? তোমার ছেলেমেয়ে কী?
.
--- আমার দুই মেয়ে। আর কেমন আছি? বিয়ের পর পৃথিবীর সমস্ত মেয়েরা যেমন থাকে, আমিও তেমন আছি। এই সুখ তো এই দুঃখ, এই অভিযোগ তো এই শুকরিয়া।
.
--- আমার তো মনে হয় তুমি হাসব্যান্ডের সাথে ঝগড়াটগড়া করোনা।
.
--- এরকম মনে হওয়ার কারণ?
.
--- তোমার মনে আছে? - আমি প্রায় তোমার সাথে ঝগড়া করতাম। নানা অভিযোগ-অনুযোগে ক্লান্ত করে ফেলতাম তোমাকে। তুমি কিন্তু আশ্চর্যরকম শান্ত ছিলে। আমার রাগ পরে গেলে তারপর বুঝাতে। তোমার কনভিন্স করার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। একদিন তোমাকে মজা করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "মেয়েরা তো খুব ঝগড়াটে হয়। এটাই ওদের নেচার। তুমি করোনা কেন? তুমি কি মহামানবী?" তুমি হেসে উত্তর দিয়েছিলে "ঝগড়া করাটা কুৎসিত তবে সহজ, আপোষ করতে পারাটাই সুন্দর কিন্তু কঠিন। কঠিন হলেও আমি সুন্দরকে বেছে নিলাম।" কথাটা আমার এত ভাল লেগেছিল যে আমি কোনদিন এ কথা ভুলবোনা।
.
--- হুম! তুমি তো দেখছি ভালই মনে রেখেছো আমায়। মাঝেমধ্যে মনে হয় তুমি আমাকে ভুলে যাচ্ছো। যদিও কেউ কাউকে মনে রাখা না রাখায় সত্যিই কিছু আসে যায়না। তবু তুমি আমায় ক্রমশ ভুলে যাচ্ছো - এই ভাবনাটা আমাকে কষ্ট দেয়।
.
--- আমাকে তোমার মনে পড়ে রুনা?
.
--- হুম.. মনে পড়ে। মনে পড়বেনা কেন? মেয়েরা ভালবাসা ভুলতে পারেনা। ভালবাসাবাসির প্রতিটা মধুর মুহুর্ত সে মনে রাখে। তুমি তো প্রায় আমাকে চিঠি লিখতে। তার অধিকাংশই এখনো আমার সংগ্রহে আছে। একটা চিঠিতে তুমি লিখেছো, "যতবার আকাশ ভাসিয়ে চাঁদ ওঠবে, আমি চাঁদ দেখবো, তুমিও দেখো প্লিজ! তাহলে আমরা দুজন যত দূরেই থাকিনা কেন, চাঁদের দেশে গিয়ে আমাদের চারচোখ মিলিত হবে!" বিয়ের পর আমেরিকায় আছি ১০ বছর হল। ওখানে যখন চাঁদ ওঠে, এখানে তখন দিন। তবুও আমি চাঁদের দিকে তাকাই। তোমাকে ভেবে তাকাই। জানি আলাদা সময় তবু একটাই তো চাঁদ ...
.
--- তুমি সুখী তো রুনা?
.
--- হা হা! সুখ কী? সুখ কাকে বলে? বলতে পারো রাহাত?
.
--- যা চাই তা পাওয়ার নামই সুখ। জীবন থেকে যা চেয়েছিলে তা কি তুমি পেয়েছো?
.
--- যা চাই তা পাওয়ার নামই সুখ? এত সহজ? আমি যা চেয়েছি কিন্তু পায়নি, অন্য কেউ না কেউ তো তা পেয়েছে। সে কি সুখী হতে পেরেছে? আর আমি কী চেয়েছিলাম রাহাত? তুমি চিরকাল আমাকে ভুল বুঝে গেলে। কখনো নিজের ভুলগুলির দিকে তাকাওনি। বাদ দাও। এসব কথা বলতে চাইনা। ঘটনাক্রমে ঘন্টাখানিকের জন্য আমাদের দেখা হয়েছে। কার দোষে কে কষ্ট পাচ্ছে, সে তর্কে গিয়ে সময়টা তিক্ত করতে চাইনা।
.
--- তুমি অবিকল আগের মতো রয়ে গেছো। একটুও বদলাওনি। আগে যেভাবে কথা বলতে, এখনো সেভাবে বলছো। তোমার মনে আছে? বন্ধুদের আমি বলতাম, "আমার প্রেমিকা একজন মহিলা দার্শনিক।"
.
--- হুম মনে আছে ... আচ্ছা তুমি বিয়ে করছোনা কেন?
.
--- আর বিয়ে! একের পর এক বিপদে দৌড়ের উপর আছি। বোনের বিয়ে, লোনের টাকা, মায়ের অসুখ, প্রতিবেশীর মামলা-মোকদ্দমা। বিয়ে করার সময় কোথায়? তুমি তো প্রায় সবকিছুই জানো।
.
--- একটা কথা বল তো রাহাত, তুমি কি আমার জন্য বিয়ে করছোনা? ... চুপ করে থেকোনা প্লিজ। যদি তা হয় নিজেকে সারাজীবন অপরাধী মনে হবে। যদিও তুমি ভাল করেই জানো - আমার কোন দোষ নেই, আমার কোন দোষ নেই!
.
--- আরে না! সত্যি বলছি নানা পারিবারিক ঝামেলায় বিয়ে করতে পারছিনা। তাছাড়া করব আর কি! ছেলেরা একটু দেরিতে বিয়ে করলে তেমন সমস্যা নাই। মেয়ে হলে বিপদে পরতাম।
.
--- আজ আমি যাই রাহাত। আর কোনদিন দেখা হবে কিনা জানিনা। তবে আমাদের আর দেখা না হওয়ায় ভাল। ভাল থেকো।
.
--- চলে যাবে? আর একটু থাকো।
.
--- আর একটু থেকে কী হবে রাহাত? কেবল মায়া বাড়বে। প্রত্যেক সময়েরই একটা সঠিক কাজ থাকে আর প্রত্যেক কাজের একটা সঠিক সময়। আমরা সেই সময়টা হারিয়ে ফেলেছি। তোমার সাথে আর একটুখানি থাকলেই সে সময়টা ফিরে আসবেনা। শুধু শুধু বেদনাদায়ক মায়া বাড়িয়ে কী লাভ? যেখানেই থাকো ভাল থেকো - এ আমার আন্তরিক প্রার্থনা। খোদা হাফেজ।
.
--- তুমিও ভাল থেকো রুনা। তোমার মতো সুন্দর করে তো বলতে পারিনা। তবে আমিও সবসময় চাই, তুমি সুখে থাকো। খোদা হাফেজ।
.
--- তুমিও বদলাওনি খুব একটা। তবে চুল মনে হচ্ছে পেকে গেছে। ঘটনা কী?
.
--- বয়স তো হচ্ছে। সময় তো আর থেমে নেই। যা হোক, আছো কেমন? তোমার ছেলেমেয়ে কী?
.
--- আমার দুই মেয়ে। আর কেমন আছি? বিয়ের পর পৃথিবীর সমস্ত মেয়েরা যেমন থাকে, আমিও তেমন আছি। এই সুখ তো এই দুঃখ, এই অভিযোগ তো এই শুকরিয়া।
.
--- আমার তো মনে হয় তুমি হাসব্যান্ডের সাথে ঝগড়াটগড়া করোনা।
.
--- এরকম মনে হওয়ার কারণ?
.
--- তোমার মনে আছে? - আমি প্রায় তোমার সাথে ঝগড়া করতাম। নানা অভিযোগ-অনুযোগে ক্লান্ত করে ফেলতাম তোমাকে। তুমি কিন্তু আশ্চর্যরকম শান্ত ছিলে। আমার রাগ পরে গেলে তারপর বুঝাতে। তোমার কনভিন্স করার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। একদিন তোমাকে মজা করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "মেয়েরা তো খুব ঝগড়াটে হয়। এটাই ওদের নেচার। তুমি করোনা কেন? তুমি কি মহামানবী?" তুমি হেসে উত্তর দিয়েছিলে "ঝগড়া করাটা কুৎসিত তবে সহজ, আপোষ করতে পারাটাই সুন্দর কিন্তু কঠিন। কঠিন হলেও আমি সুন্দরকে বেছে নিলাম।" কথাটা আমার এত ভাল লেগেছিল যে আমি কোনদিন এ কথা ভুলবোনা।
.
--- হুম! তুমি তো দেখছি ভালই মনে রেখেছো আমায়। মাঝেমধ্যে মনে হয় তুমি আমাকে ভুলে যাচ্ছো। যদিও কেউ কাউকে মনে রাখা না রাখায় সত্যিই কিছু আসে যায়না। তবু তুমি আমায় ক্রমশ ভুলে যাচ্ছো - এই ভাবনাটা আমাকে কষ্ট দেয়।
.
--- আমাকে তোমার মনে পড়ে রুনা?
.
--- হুম.. মনে পড়ে। মনে পড়বেনা কেন? মেয়েরা ভালবাসা ভুলতে পারেনা। ভালবাসাবাসির প্রতিটা মধুর মুহুর্ত সে মনে রাখে। তুমি তো প্রায় আমাকে চিঠি লিখতে। তার অধিকাংশই এখনো আমার সংগ্রহে আছে। একটা চিঠিতে তুমি লিখেছো, "যতবার আকাশ ভাসিয়ে চাঁদ ওঠবে, আমি চাঁদ দেখবো, তুমিও দেখো প্লিজ! তাহলে আমরা দুজন যত দূরেই থাকিনা কেন, চাঁদের দেশে গিয়ে আমাদের চারচোখ মিলিত হবে!" বিয়ের পর আমেরিকায় আছি ১০ বছর হল। ওখানে যখন চাঁদ ওঠে, এখানে তখন দিন। তবুও আমি চাঁদের দিকে তাকাই। তোমাকে ভেবে তাকাই। জানি আলাদা সময় তবু একটাই তো চাঁদ ...
.
--- তুমি সুখী তো রুনা?
.
--- হা হা! সুখ কী? সুখ কাকে বলে? বলতে পারো রাহাত?
.
--- যা চাই তা পাওয়ার নামই সুখ। জীবন থেকে যা চেয়েছিলে তা কি তুমি পেয়েছো?
.
--- যা চাই তা পাওয়ার নামই সুখ? এত সহজ? আমি যা চেয়েছি কিন্তু পায়নি, অন্য কেউ না কেউ তো তা পেয়েছে। সে কি সুখী হতে পেরেছে? আর আমি কী চেয়েছিলাম রাহাত? তুমি চিরকাল আমাকে ভুল বুঝে গেলে। কখনো নিজের ভুলগুলির দিকে তাকাওনি। বাদ দাও। এসব কথা বলতে চাইনা। ঘটনাক্রমে ঘন্টাখানিকের জন্য আমাদের দেখা হয়েছে। কার দোষে কে কষ্ট পাচ্ছে, সে তর্কে গিয়ে সময়টা তিক্ত করতে চাইনা।
.
--- তুমি অবিকল আগের মতো রয়ে গেছো। একটুও বদলাওনি। আগে যেভাবে কথা বলতে, এখনো সেভাবে বলছো। তোমার মনে আছে? বন্ধুদের আমি বলতাম, "আমার প্রেমিকা একজন মহিলা দার্শনিক।"
.
--- হুম মনে আছে ... আচ্ছা তুমি বিয়ে করছোনা কেন?
.
--- আর বিয়ে! একের পর এক বিপদে দৌড়ের উপর আছি। বোনের বিয়ে, লোনের টাকা, মায়ের অসুখ, প্রতিবেশীর মামলা-মোকদ্দমা। বিয়ে করার সময় কোথায়? তুমি তো প্রায় সবকিছুই জানো।
.
--- একটা কথা বল তো রাহাত, তুমি কি আমার জন্য বিয়ে করছোনা? ... চুপ করে থেকোনা প্লিজ। যদি তা হয় নিজেকে সারাজীবন অপরাধী মনে হবে। যদিও তুমি ভাল করেই জানো - আমার কোন দোষ নেই, আমার কোন দোষ নেই!
.
--- আরে না! সত্যি বলছি নানা পারিবারিক ঝামেলায় বিয়ে করতে পারছিনা। তাছাড়া করব আর কি! ছেলেরা একটু দেরিতে বিয়ে করলে তেমন সমস্যা নাই। মেয়ে হলে বিপদে পরতাম।
.
--- আজ আমি যাই রাহাত। আর কোনদিন দেখা হবে কিনা জানিনা। তবে আমাদের আর দেখা না হওয়ায় ভাল। ভাল থেকো।
.
--- চলে যাবে? আর একটু থাকো।
.
--- আর একটু থেকে কী হবে রাহাত? কেবল মায়া বাড়বে। প্রত্যেক সময়েরই একটা সঠিক কাজ থাকে আর প্রত্যেক কাজের একটা সঠিক সময়। আমরা সেই সময়টা হারিয়ে ফেলেছি। তোমার সাথে আর একটুখানি থাকলেই সে সময়টা ফিরে আসবেনা। শুধু শুধু বেদনাদায়ক মায়া বাড়িয়ে কী লাভ? যেখানেই থাকো ভাল থেকো - এ আমার আন্তরিক প্রার্থনা। খোদা হাফেজ।
.
--- তুমিও ভাল থেকো রুনা। তোমার মতো সুন্দর করে তো বলতে পারিনা। তবে আমিও সবসময় চাই, তুমি সুখে থাকো। খোদা হাফেজ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এনামুল হক পাইলট ২২/১১/২০১৮nice
-
আরাফাত বিন হাসান ২১/১১/২০১৮পুরোনো সেই দিনের কথা ভুলবি.........।
সুন্দর হয়েছে। শুভ কামনা.... -
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ১৯/১১/২০১৮বেশ সুন্দর
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৯/১১/২০১৮গল্প।