www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্কুল ড্রেস

রাফি আর তার চাচাতো ভাই ফয়সাল, একসঙ্গে প্রচুর ঘোরাফেরা আর আড্ডাবাজিতে মেতে থাকে প্রায়ই। তবে ওদের অবসর বিনোদনের সবচেয়ে পছন্দের জায়গাটা হচ্ছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র পেরিয়ে পাহাড় থেকে মাইল তিনেক পূর্বে ছোটো একটা ব্রিজ।
.
ব্রিজের পাশেই একটা চায়ের দোকান রয়েছে। আশেপাশের ৫ মাইলের ভিতর আর কোন দোকান নেই। জনবসতিগুলোও বেশ দূরে। কিন্ত দিনেরবেলা মানুষজন পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসে। ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা আড্ডা দেয়। যদিও গ্রামীণ পরিবেশ, কনজারভেটিভ এলাকা, তবু ২০১৮ সাল এটা - প্রেমিক-প্রেমিকারাও কম আসেনা।
.
ফয়সাল ট্রেইনি এডভোকেট। বাবার সাথে অনিয়মিত কোর্টে যায় ও। আইন পেশাটাকে ওর ঠিক পছন্দ হচ্ছেনা। বাবা কষ্ট পাবেন বলে মুখের উপর বলতেও পারছেনা যে সে ওকালতি করবেনা, অন্য যে কোন চাকরী-টাকরি করবে।
.
এদিকে ইংরেজিতে অনার্স শেষ করে বেকার বসে আছে রাফি। মাস্টার্স করতে মন চাইছে না ওর। বিসিএস দেবার ইচ্ছে আর স্ট্যামিনা কোনটাই নেই ওর মধ্যে। তাছাড়া সবাই করছে বলে ওকেও করতে হবে এ ধরণের মনোভাব থেকেও সে মুক্ত। বাবা বিদেশ থাকে। ঘরের বড় ছেলে হওয়ায় অনায়াসেই অনেক দায়িত্ব ওর ঘাড়ের উপর এসে পড়েছে। কাজেই চাকরি-ব্যবসা না করলেও নিখাদ বেকারও বলা যায়না ওকে।
.
বাইরে চমৎকার বিকেল। তারউপর শুক্রবার। প্রচুর লোকজন এদিকে বেড়াতে এসেছে আজ।
.
রাফি মোটরসাইকেলটা ব্রিজের একপাশে রাখল। ব্রিজের পাশের একমাত্র দোকানটার বেঞ্চিতে গিয়ে বসল ওরা দুজন। দোকানদার দুই কাপ চা আর একটা পিরিচে দুটো ড্রাই কেক রাখলো ওদের সামনে।
.
কখন যে সন্ধ্যা নেমে গেল আর লোকজনও যে যার গন্তব্যে চলে গেল টেরই পেলনা ওরা। টের পেল তখনই যখন দোকান বন্ধ করার আয়োজন শুরু করেছে দোকানদার। ফয়সাল বলল "এত তাড়াহুড়ো করছেন কেন কবির ভাই"

"অন্ধকার হয়ে গেছে তো। আপনারা ছাড়া আর কেউ আছে? থেকে কী করব?

"তাও ঠিক"

"আপনারা রাত ১০টা ১১ টা পর্যন্ত থাকেন। ভয় লাগেনা?

"ভয় লাগার কী আছে? বাড়ী তো কাছেই। মোটরসাইকেলে ৫ মিনিটের পথ।"
.
দোকানদার চলে যাওয়ার পর ওরা ব্রিজের উপর এসে বসল। আকাশে চাঁদ নেই, আবার মেঘও নেই, তাই অজস্র তারায় ঝিকমিক করছে অসীম আকাশ। ঠাণ্ডা হাওয়া খেতে-খেতে গল্প চলছে ওদের আর তাকিয়ে আছে ঝিকিমিকি তারার দিকে।
.
প্রিয় জায়গাটায় বসে নানান আলাপে মশগুল ওরা। এসময়ই একটা ৮/৯ বছরের বাচ্চা মেয়েকে আসতে দেখল ওরা। কাছাকাছি হতেই দেখল ফুটফুটে একটা মেয়ে। পরনে স্কুল ড্রেস, পিঠে স্কুল ব্যাগ। এত রাতে মেয়েটাকে এখানে দেখে ওরা খুবই অবাক হল। কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল, "তুমি এখানে কী করছ?"

"আমি বন্ধুর সাথে হাঁটতে হাঁটতে এখানে এসেছিলাম। ওর বাড়ী ওইখানে"
.
পশ্চিম দিকে দূরের পাহাড়টা দেখাল ও। মিটমিট আলো জ্বলছে ওখানে।
"কোথায় যাবে তুমি?" প্রশ্ন করল রাফি

"ফকির মসজিদের পাশেই আমাদের বাসা।"

"ওমা সে তো কম দূর নয়। একা হেঁটে হেঁটে যাবে! চল আমরা পৌছে দিচ্ছি। ১০ ১৫ মিনিট লাগবে। তোমার মা বাবা হয়ত অনেক টেনশন করছে। চল চল।"
.
মেয়েটিকে দেখে এমনিতেই মায়া হচ্ছে। তারপর আবার মনে হলো এ রাতের বেলা এমন নির্জন পথে হেঁটে গেলে নির্ঘাত কোন বিপদে পড়বে। যে যুগ আসছে শিশুরাও আর নিরাপদ নয় কোন কোন নরপশুদের কাছ থেকে। কাজেই রাফি ওকে ওর মোটরসাইকেলে করে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
.
মেয়েটাকে ফকির মসজিদে নামিয়ে দিয়ে এসে আবারও ব্রিজে এসে গল্পে মেতে উঠল ওরা।
মেয়েটাকে নামিয়ে দিয়ে আসার পর ১০ মিনিটও পার হয়নি। ওদের ঘুম-ঘুম ভাব আসতে শুরু করেছে । বাসায় ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতে শুরু করল ওরা। এসময়ই অন্ধকারে ওরা একটা কাঠামোকে আসতে দেখল! আগের মেয়েটা যেদিক থেকে এসেছে সেদিক থেকেই। তারপরই অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করল সেই স্কুল ড্রেস, পিঠে সেই স্কুল ব্যাগ! সেই একই মেয়েটাই এগিয়ে এল ওদের দিকে,যাকে অল্প আগে ফকির মসজিদে নামিয়ে দিয়ে এসেছিল!
.
দুজনই বড় রকমের একটা ধাক্কা খেল। মনে হলো যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে ওরা। নড়তে পর্যন্ত পারছেনা। মাত্র ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে একটা মেয়ের পক্ষে এখানে আসা সম্ভব নয়, কিংবা সে আসবেইবা কেন!
.
দোয়া-দরুদ কিছুই মনে আসছেনা ওদের, কিন্তু হঠাৎ করেই যেন ঘোর কেটে গেল রাফির। ধাক্কা দিয়ে ফয়সালকেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনল ও। তারপর মোটরসাইকেলে উঠে দ্রুত স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করল রাফি। কিন্তু গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছেনা। আতংকিত হয়ে ওরা লক্ষ্য করল, মেয়েটা ওদের দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে, ফুটফুটে মুখটার ঠোঁটে ক্রুর হাসি লেগে আছে।


পরদিন সকালে ব্রিজটাকে ঘিরে প্রচুর মানুষ জমে গেছে। পুলিশও এসেছে। রাফির মোটরসাইকেল ব্রিজের এক কোনায় পরে আছে। মোটরসাইকেল থেকে একটু দূরে দুটো লাশ। লোকজন পুলিশকে লাশদুটোর পরিচয় দিল - রাফি আর ফয়সাল। পুলিশ আর প্রত্যক্ষদর্শী সবাই খেয়াল করল লাশগুলোর গায়ে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। অদ্ভুত ব্যাপার হল - দুজনের পিঠেই স্কুলব্যাগ, দুজনেরই পরনে মেয়েদের স্কুল-ড্রেস!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬২৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৫/১০/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast